সার্টিফিকেট সংশোধনের নিয়ম এখন পরিবর্তন হয়েছে। এখন অনলাইনের মাধ্যমে আপনি আপনার সার্টিফিকেটে নিজের নাম, পিতার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা সহ যেকোনো তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন। সেজন্য আপনাকে স্বশরীরে কোথাও যেতে হবে না। আপনি যে বোর্ডের অধীনে হোন না কেন, সেই বোর্ডের মাধ্যমে আপনি আপনার সার্টিফিকেট সংশোধন করতে পারবেন। আজকের ব্লগ পোষ্টে দেখাবো কিভাবে আপনি আপনার JSC, SSC এবং HSC পরীক্ষার সার্টিফিকেট সংশোধন করতে পারবেন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
Table of Contents
সার্টিফিকেট সংশোধন কিভাবে করবেন
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে আপনি যেই বোর্ডের অধীনে পাশ করছেন সেই বোর্ডের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। বর্তমান বাংলাদেশে ৯টি শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। সেগুলো হল যথাক্রমে- ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চিটাগাং, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। প্রথমে দেখাবো, আপনি যদি ঢাকা বোর্ডের অধীনে হন, বা ঢাকা বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট সংশোধন করতে চান তাহলে কিভাবে করবেন?
এজন্য আপনার পছন্দনীয় যে কোন ব্রাউজার ওপেন করে সার্চবারে লিখুন dhaka education borad এবং তারপর ইন্টার বাটনে প্রেস করুন। প্রথমে যে লিংকটি আসবে সেটাতে ক্লিক করুন। অথবা সরাসরি ঢাকা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি এরকম একটি ইন্টারফেইস দেখতে পাবেন।
তারপর উপরের চিত্রে দেখানো মত On-line Application অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি আরেকটি পেইজে যাবেন যেটা দেখতে এরকম।
এখান থেকে নাম ও বয়স সংশোধনের আবেদন অপশনে ক্লিক করলে একরডিয়ন মেনুটি ওপেন হবে, সেখান থেকে আবেদন ফরম অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি ঢাকা বোর্ডের ই-অফিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের লগইন পেইজ দেখতে পাবেন।
এখানে আপনি দেখতে পাচ্ছেন লগইন করার জন্য আপনার দুইটা তথ্য প্রয়োজন, EIIN এবং Password. এই দুইটা তথ্য আপনি যেই স্কুল বা কলেজ থেকে পরীক্ষা সেই স্কুল বা কলেজ থেকে দিতে পারবে। এজন্য আপনাকে কষ্ট করে আপনার স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে একটু যোগাযোগ করতে হবে। যেহেতু আমাদের কাছে এই দুইটা তথ্য নেই, সেহেতু আমরা লগইন করার পর কি করতে হবে সেটা দেখাচ্ছি।
তবে তার আগে একটা বিষয় লক্ষ্য করুন, এই পোস্টে ঢাকা ছাড়াও যশোর এবং সিলেট বোর্ডের অধীনে যারা আছেন তারা তাদের সার্টিফিকেটে নাম ও অন্যান্য তথ্য অর্থাৎ সার্টিফিকেট সংশোধন কিভাবে করবেন সেটাও দেখাবো। সেখানে কিন্তু EIIN এবং Password লাগবে না। তাহলে ঢাকা বোর্ডের অধীনে যারা আছেন তাদের সার্টিফিকেট সংশোধনের প্রক্রিয়াটা শেষ করি। তো ঢাকা বোর্ডের ই-অফিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে EIIN এবং Password দিয়ে লগইন করার পরে আপনি এরকম একটি ইন্টারফেইস দেখতে পাবেন।
উপরের ছবিতে আপনি দেখতে পাচ্ছেন স্ক্রিনশটটি আমি একটি পিডিএফ থেকে নিয়েছি, অর্থাৎ সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য ঢাকা বোর্ড একটি অফিসিয়াল পিডিএফ তৈরি করে দিয়েছে, যেটা আপনি এই লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমে পেতে পারেন। পিডিএফটিতে ধাপে ধাপে বর্ণনা করা আছে কিভাবে আপনি আপনার সার্টিফিকেট সংশোধন করতে পারবেন, যদি না বুঝতে পারেন তাহলে পোস্টটি পড়তে থাকুন।
অন্যান্য বোর্ডের অধীনে শিক্ষার্থীরা কিভাবে সার্টিফিকেট সংশোধন করবেন
প্রায় প্রতিটা শিক্ষা বোর্ডের সার্টিফিকেট সংশোধনের প্রক্রিয়া একই। তাদের ওয়েবসাইটে ডিজাইন একটু-এদিক ওদিক আছে, তাছাড়া পদ্ধতি সব একই। যেমন সিলেট বোর্ডের ওয়েবসাইটের হোম পেইজে বাম পাশের মেনুতে এটা আছে Online Application নামে, যশোর বোর্ডের ওয়েবসাইটে এটা আছে Name & Age Correction নামে।
অর্থাৎ আপনাকে আপনার শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে খুঁজে নিতে হবে যে সার্টিফিকেট সংশোধনের অপশনটি কোথায় আছে। তারপরেও যদি আপনি না পান, এই ওপোষ্টের নিচে কমেন্ট করলে আমরা আপনাকে লিংকটি দিয়ে দিব।
তাহলে এখন আমরা দেখব অন্যান্য বোর্ডের অধীনের শিক্ষার্থীরা কিভাবে তাদের সার্টিফিকেট সংশোধন করতে পারেন। এজন্য আপনি যে বোর্ডের অধীনে আপনার সার্টিফিকেট সংশোধন করতে চাচ্ছেন উপরে বর্ণিত একই নিয়মে [your_board_name] education borad লিখে গুগলে সার্চ দিবেন। তারপর প্রথম যে লিংক আসবে সেটাতে ক্লিক করবেন। আমি এখানে যশোর শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট দিয়ে দেখাচ্ছি। যশোর শিক্ষা বোর্ড ওয়েবসাইট https://www.jessoreboard.gov.bd-এ আসার পর উপরের ছবিতে দেখানো Name & Age Correction অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি এরকম একটি ইন্টারফেইস দেখতে পাবেন।
এখানে আপনার পরীক্ষার নাম Exam, যে বছরে পাশ করছেন Passing Year, আপনার পরীক্ষার রোল নাম্বার Roll, রেজিস্ট্রেশন নম্বর Reg. No এবং Center Name & Code দিয়ে Find🔍 বাটনে প্রেস করুন। তাহলে আপনার সনদ অনুযায়ী সমস্ত তথ্য দেখতে পাবেন, যেটা উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
এখানে আপনার মোবাইল নাম্বার Student Mobile, বর্তমান ঠিকানা Present Address এবং স্থায়ী ঠিকানা Permanent Address দিয়ে স্ক্রল করে একটু নিচের দিকে প্রার্থিত তথ্য সেকশনে আসুন। এখানে আপনি যেই যেই তথ্য সংশোধন করতে চান সেটাতে টিক দিন। যেমন নিচের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন আমি আমার নাম সংশোধনের জন্য Name অপশনে টিক দিয়েছি।
আপনি যেই অপশন গুলোতে টিক দিবেন নিচে সেই অপশন গুলোর তথ্য সংশোধনের ফিল্ড অ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে। তো সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য এখানে দিয়ে দিন, তারপরে স্ক্রল করে আরো একটু নিচের দিকে আসুন। নিচের ছবিতে লক্ষ্য করুন সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আপনার কি কি ডকুমেন্টস বা কাগজ-পাতি লাগবে।
সার্টিফিকেট সংশোধনীর কাজ সহজ করতে আগে থেকে উক্ত ডকুমেন্টস গুলোর ছবি তুলে আপনার কম্পিউটারের একটা ফোল্ডারে রেখে দিন। তারপর একে একে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো আপলোড করে দিন। সর্বশেষ Submit বাটনে ক্লিক করুন।
Submit বাটনে ক্লিক করার পর পরবর্তী স্ক্রিনে আপনি আপনার আবেদন দেখতে পারবেন। আবেদনটি প্রিন্ট করে নিন। আবেদনের কাজ শেষ করতে সোনালী স্লিপ-এ ক্লিক করে ফি পরিশোধের জন্য সোনালী স্লিপ টি প্রিন্ট করে যেকোন সোনালী ব্যাংকে গিয়ে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন। ফি পরিশোধ ছাড়া সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আপনার আবেদনটি গৃহীত হবে না।
উপরে যে মোবাইল নাম্বারটি দিয়েছেন সেই নাম্বারে আপনার সার্টিফিকেট সংশোধন আবেদনের সমস্ত আপডেট এসএমএস-এর মাধ্যমে বোর্ড জানিয়ে দিবে। এভাবে যেকোনো বোর্ডের অধীনে অনলাইনের মাধ্যমে আপনি আপনার সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
সার্টিফিকেট সংশোধন করতে কতদিন লাগে
ডকুমেন্টসগুলো আপলোড করে সাবমিট ক্লিক করলেই যে আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে এমনটা নয়। এরপরে সোনালি ব্যাংকে গিয়ে সার্টিফিকেট সংশোধনের ফি পরিশোধ করতে হবে। এরপর বড় কোন পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজনের জন্য মিটিংয়ের তারিখ এবং সময় নির্দ্ধারণ হলে সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে SMS এর মাধ্যমে মিটিংয়ের তারিখ এবং সময় জানানো হবে এবং সে মোতাবেক সকল সনদ পত্রের মূল, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ, এভিডেভিট, প্রাথমিক সমাপনী সনদ, সিটি/পৌর মেয়র/ কাউন্সিলরের প্রত্যয়ন পত্র, বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে সিভিল সার্জন কর্তৃক বয়স প্রমাণের সনদ, আবেদনকারী, অভিভাবক, প্রধান শিক্ষক ভর্তি বহিসহ মিটিংয়ে হাজির হতে হবে।
এই সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগে। এটা মূলত বোর্ডের উপর নির্ভর করে, অনেকের আবার ১/২ মাসেও হয়ে যায়। আপডেট পেতে আপনার মোবাইল এসএমএস খেয়াল করুন। এছাড়া ওয়েবসাইট থেকে আবেদনের স্ট্যাটাস জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন। তারপর Application ID ও Password দিয়ে Find বাটনে ক্লিক করুন।
সার্টিফিকেট সংশোধন করা কেন প্রয়োজন
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের জন্য সার্টিফিকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চাকরির আবেদন, উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ, বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু অনেক সময় ভুলের কারণে সার্টিফিকেটে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। নাম, জন্মতারিখ, বাবার নাম, মায়ের নাম, রোল নম্বর, প্রতিষ্ঠানের নাম ইত্যাদিতে ভুল থাকতে পারে। এমন ভুল থাকলে নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হতে পারে।
সুতরাং, নিম্নলিখিত কারণে সার্টিফিকেটে ত্রুটি থাকলে দ্রুত সংশোধন করা উচিতঃ
১. ভুল তথ্যের কারণে সমস্যাঃ
- ভুল তথ্যের কারণে চাকরির আবেদন বাতিল হতে পারে।
- ভুল তথ্যের কারণে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে সমস্যা হতে পারে।
- ভুল তথ্যের কারণে ভবিষ্যতে ঋণ গ্রহণ, জমি কেনা, বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে সমস্যা হতে পারে।
- ভুল তথ্যের কারণে আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে হতে পারে।
২. সঠিক তথ্য প্রদানঃ
- সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ সার্টিফিকেট আপনার যোগ্যতার সঠিক প্রতিফলন ঘটায়।
- সঠিক তথ্য আপনার পেশাদার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
- সঠিক তথ্য ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে।
৩. মানসিক শান্তিঃ
- ভুল ত্রুটিমুক্ত সার্টিফিকেট থাকলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
- ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ কমে যায়।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
৪. আইনি বৈধতাঃ
- সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ সার্টিফিকেট আইনিভাবে বৈধ।
- ভবিষ্যতে কোন আইনি জটিলতায় পড়লে সঠিক সার্টিফিকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এজন্য সার্টিফিকেট সংশোধন করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরী। সার্টিফিকেট সংশোধন সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।