অনলাইনে শিক্ষক বদলির আবেদন ২০২৪

যখন বিভিন্ন কারণবশতঃ সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন তখন শিক্ষক বদলির আবেদন প্রয়োজন হয়। সাধারণতঃ একজন শিক্ষক তার উপজেলার ভেতরেই নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কিন্তু যাতায়াত সমস্যা, বিভিন্ন পারিবারিক বিষয়ের কারণে একজন শিক্ষক অন্য স্কুলের যাওয়ার জন্য শিক্ষক বদলির আবেদন করতে পারেন।

আজকের পোস্টে দেখাবো সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক কিভাবে এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলের অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষক বদলির আবেদন করতে পারেন।

শিক্ষক বদলির আবেদন করার জন্য যেসব শর্ত মানতে হয়

চাইলেই একজন শিক্ষক যেকোনো স্কুলে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন না, অথবা যখন তখন ইচ্ছা করলেই শিক্ষক বদলির আবেদন করা যায় না। এজন্য অনলাইনে শিক্ষক বদলির আবেদন করার জন্য কিছু শর্ত মানতে হয়, যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

• শিক্ষকগণ তাদের পছন্দের ক্রমানুসারে সর্বোচ্চ ৩টি বিদ্যালয় পছন্দ করতে পারবেন।
• তবে কোন কারণে ৩টি পছন্দ না থাকলে ১টি বা ২টি প্রতিষ্ঠানও পছন্দ করতে পারেন।
• একজন সহকারী শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ যদি নূন্যতম ২ বছর পূর্ণ হয় তাহলে তিনি অনলাইনে শিক্ষক বদলির আবেদন করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে এই দুই বছরের মধ্যে যদি একই থানা বা উপজেলায় পদ শূন্য থাকে তাহলেই মাত্র বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
• অনলাইনে শিক্ষক বদলির আবেদন করার পর তা যদি অনুমোদন পায় অর্থাৎ নতুন প্রতিষ্ঠানে বদলির আদেশ জারি হয়ে যায় তবে তা বাতিল করার জন্য আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে তিন বছর পর পুনরায় আবেদন করতে পারবেন।
• শিক্ষকগণের পছন্দক্রম অনুযায়ী বদলি হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা একই বিদ্যালয়ে একই পদে একাধিক শিক্ষক যদি বদলির জন্য আবেদন করেন। তাহলে তাদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য আবেদনকারীকে সফটওয়্যার এর সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচিত করা হয়।

অনলাইনে শিক্ষক বদলির আবেদন করবেন যেভাবে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের বদলির আবেদন একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করতে হয়। বদলির আবেদন ওয়েবসাইটের লিংকটি হচ্ছে https://ops.ipemis.dpe.gov.bd/tms/transfer/my-applications

অনলাইন বদলি সফটওয়্যার TTMS-এ লগইন করার নিয়ম

• অনলাইন বদলি সিস্টেমে আবেদন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সিস্টেমটিতে লগইন করতে  হলে ব্যবহারকারীর ধরন থেকে শিক্ষকের ধরন (সহকারী শিক্ষক অথবা প্রধান শিক্ষক) নির্বাচন করুন।
• ইউজার আইডি হিসেবে আপনার আইপিইএমআইএস সিস্টেম এর ইউজার নেম অর্থাৎ আপনার মোবাইল নম্বরটি টাইপ করুন।
• এবারে পরবর্তী ঘরে পাসওয়ার্ড হিসাবে আপনার pemis এর পাসওয়ার্ডটি দিয়ে দিন।
• এরপর আপনি লগইন বাটনে ক্লিক করুন।

এ সিস্টেমটিতে প্রতিবার লগইনের সময় আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য টাইপ করে লগইন করতে হবে, কারণ সিস্টেমটি আপনার তথ্য মনে রাখবেনা। ipemis লগইন পিন বা পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে সিস্টেমের এডমিনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

এই TTMS সফটওয়্যার থেকে আপনার বদলির আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

শিক্ষক বদলি নীতিমালা

২০২৪ সালে অনলাইনে শিক্ষক বদলি আবেদন করতে পারবেন নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য (বদলি নীতিমালা ২০২৩ অনুযায়ী)।
প্রথম বদলির পর তিন বছর পূর্ণ না হলে দ্বিতীয় বদলি করা যাবে না। প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্তির পর দুই বছর পর বদলি সম্ভব। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা মোতাবেক করা হবে।

প্রাথমিক শিক্ষকরা পাঁচটি নির্দিষ্ট কারণে অনলাইনে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আসুন বিস্তারিত দেখে নেই।

১. বদলির সময়কালঃ
প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য বদলি সাধারণত প্রতি শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে করা হবে। এতে একই উপজেলা/থানা, আন্তঃউপজেলা/থানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি কর্পোরেশন এবং আন্তঃবিভাগের মধ্যে বদলি সম্ভব।

২. বদলির কর্তৃপক্ষঃ
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, তার অধিক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশ অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষকদের আন্তঃবিদ্যালয় বদলির অনুমোদন দিতে পারবেন। পরে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে, উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার এই বদলির আদেশ জারি করবেন।

৩. বিবাহের কারণে বদলিঃ
যেসব শিক্ষক চাকরি লাভের পর বিবাহ করেছেন, তারা তাদের স্বামী/স্ত্রীর ঠিকানায় বদলি হতে চাইলে, আবেদন জমা দিয়ে শূন্য পদের বিপরীতে বদলি হতে পারবেন।

৪. প্রশাসনিক কারণে বদলিঃ
প্রশাসনিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে, যে কোনো সময়ে যে কোনো শিক্ষককে বদলি করা যেতে পারে।

৫. সমন্বয় বদলিঃ
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে, একই উপজেলার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক-ছাত্র সংখ্যার অনুপাত সমন্বয়ের জন্য শিক্ষক বদলি করতে পারবেন। শিক্ষকদের সুষম বন্টনের লক্ষ্যে শিক্ষা অফিসারের সাথে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সংযুক্তিঃ
ডিপি ইন এড/সি ইন এড প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ অথবা সাময়িক বরখাস্তজনিত বা মাতৃত্বকালিন ছুটির কারণে শিক্ষক স্বল্পতার ক্ষেত্রে, কোনো বিদ্যালয়ের পাঠদান বিঘ্নিত হলে সংযুক্তিতে বদলি করা যাবে।

বিবিধঃ
কোনো শিক্ষক চাকরি চলাকালীন জীবনঘাতি ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে, তার চিকিৎসার সুবিধার্থে অন্যত্র বদলি করা যেতে পারে।

প্রাথমিক শিক্ষক অনলাইন বদলি ২০২৪ঃ
যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষক বদলি আবেদন শুরু হবে, তখন প্রাথমিক শিক্ষক বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

১. আবেদন প্রাপ্তির পর, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তা অনুমোদন করে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠাবেন।
২. উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবেদন যাচাই করে বদলির যোগ্যতা নিশ্চিত হলে, তা জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠাবেন।
৩. জেলা শিক্ষা অফিসার, সমন্বিত বদলি নীতিমালা অনুযায়ী, আবেদন যাচাই করে অনুমোদন করবেন এবং তা উপজেলা বরাবর পাঠাবেন।
৪. উপজেলা শিক্ষা অফিসার বদলির আদেশ জারি করে তা অনলাইনে প্রকাশ করবেন।

এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে হবে, তাই শিক্ষকদের জন্য কোনো হয়রানির সুযোগ নেই। প্রতিটি ধাপে সংশ্লিষ্ট অফিসার তিন দিনের মধ্যে আবেদন অনুমোদন বা রিজেক্ট করবেন, না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে।