টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নতুন নিয়ম ২০২৪

টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য কর কমিশনার বরাবর একটা আবেদন করতে হয়। উক্ত আবেদনপত্রে টিন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয় পত্র, আবেদন ফরম এবং জিরো রিটার্ন রিসিট সংযুক্ত করে দিতে হয়।

টিন (TIN) সার্টিফিকেট বাতিল করার বিষয়টি বাংলাদেশের কর ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। গত কয়েক বছরে টিন সার্টিফিকেটের ব্যবহার এবং তার নিয়মাবলি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এসেছে।

২০২৪ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, টিন সার্টিফিকেট বাতিলের প্রক্রিয়া এবং শর্তাবলী কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। এই আর্টিকেলে আমরা টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নতুন নিয়মগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব, যা আপনাকে নিজের টিন (TIN) সার্টিফিকেট বাতিল করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন কিভাবে

২০২৪ সালের নতুন বাজেট এবং কর আইন অনুসারে, টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নিয়মগুলো নিম্নরূপঃ

• ন্যূনতম করের বিধানঃ এখন থেকে, টিন সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও করযোগ্য আয় না থাকলে, প্রতি বছর ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর পরিশোধ করতে হবে। এই নিয়মটি টিনধারীদের জন্য বাধ্যতামূলক।
• শুন্য রিটার্ন জমা দেওয়াঃ টিন সার্টিফিকেট থাকলে, করযোগ্য আয় না থাকলে তিন বছর ধরে শুন্য রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
• টিন বাতিলের আবেদনঃ চার বছর ধরে শুন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার পর, আপনি উপ-কর কমিশনারের কাছে টিন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন।

টিন সার্টিফিকেট বাতিলের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য নির্ধারিত প্রক্রিয়া নিম্নরূপঃ

• আবেদনের লিখিত চিঠিঃ টিন বাতিল করার জন্য আপনাকে একটি লিখিত আবেদন করতে হবে, যেখানে আপনার টিন সার্টিফিকেটের তথ্য ও বাতিল করার কারণ উল্লেখ করতে হবে।
• দলিল ও প্রমাণপত্রঃ আবেদনপত্রের সাথে পূর্ববর্তী তিন বছরের জিরো রিটার্নের রিসিট, টিন সার্টিফিকেটের কপি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।
• কর কমিশনারের নিকট আবেদনঃ আবেদনটি উপ-কর কমিশনারের নিকট জমা দিতে হবে, কর্তৃপক্ষ যাচাই করবে যে আপনার টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যায় কিনা।

করদাতা মারা গেলে টিন বাতিল করার প্রক্রিয়া

যদি টিনধারী ব্যক্তি মারা যান এবং টিন সার্টিফিকেট কোনো ধরনের কার্যক্রমে ব্যবহৃত না হয়, তবে এটি বাতিল করার প্রক্রিয়াঃ

• ওয়ারিশ কর্তৃক আবেদনঃ মৃত করদাতার ওয়ারিশগণ টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আবেদন করতে পারেন।
• মৃত্যুর সনদ ও অন্যান্য দস্তাবেজঃ আবেদনপত্রের সাথে করদাতার মৃত্যু সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিন সার্টিফিকেট এবং পূর্ববর্তী আয়কর রিটার্নের রিসিট জমা দিতে হবে।
• কর কমিশনারের অনুমোদনঃ আবেদন করার পর উপ-কর কমিশনার আবেদনের ভিত্তিতে টিন সার্টিফিকেট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

টিন বাতিলের ক্ষেত্রে সাধারণ শর্তাবলী

কিছু শর্ত রয়েছে যা টিন বাতিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যঃ

• বিভিন্ন প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেটঃ টিন সার্টিফিকেট বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কাজে ব্যবহৃত হতে পারে, তাই এটি বাতিল করার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে এটি আপনার কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় নয়।
• ফিরে আসার প্রক্রিয়াঃ সাধারণত টিন বাতিলের পর এটি পুনরায় চালু করা সম্ভব। তবে, এটি পুনরায় চালু করতে হলে পুনরায় আবেদন করতে হতে পারে।

টিন সার্টিফিকেটের সুবিধা ও অসুবিধা

টিন সার্টিফিকেটের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছেঃ

• সুবিধাঃ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা গ্রহণ, কর প্রদান সহজ করা, এবং বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের জন্য টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজনীয়।
• অসুবিধাঃ যদি আপনার আয় না থাকে, তবে প্রতি বছর কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা এবং নিয়মিত রিটার্ন জমা দেওয়া বেশ ঝামেলার।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূল উপাদান

টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবেঃ

• প্রয়োজনীয়তাঃ আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে টিন সার্টিফিকেট রাখা বা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিন।
• আইনি বাধ্যবাধকতাঃ টিন বাতিল করার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনি নতুন আইনি বাধ্যবাধকতাগুলি পূরণ করেছেন।

টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার আবেদন পত্রের নমুনা

টিন সার্টিফিকেট কিভাবে বাতিল করা যায় সেটার একটা আবেদনপত্রের নমুনা নিচে দেওয়া হল। এর ফলে কারো সাহায্য ছাড়াই আপনি আপনার নিজের টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার আবেদন করতে পারবেন।

জেনে রাখুন, টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে কোন টাকা লাগে না। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য টিন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয় পত্র, আবেদন ফরম এবং জিরো রিটার্ন জমা ডকুমেন্টস লাগে। এজন্য আপনাকে কাগজ-পত্র নিয়ে স্ব-শরীরে গিয়ে কর কমিশনের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।