একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্য ইউনিক আইডিতে স্বাক্ষর প্রদান করা বাধ্যতামূলক। ইউনিক আইডিতে স্বাক্ষর কিভাবে দিবেন, কোথায় দিবেন সেটার বিস্তারিত বিবরণ আপনাদের জন্য এই পোস্টটিতে বলব। আসুন আমরা খুব সহজে কিভাবে এটা করতে পারি সেটা জানি।
কিভাবে শিক্ষক ইউনিক আইডিতে স্বাক্ষর প্রদান করবেন
ইউনিক আইডিতে স্বাক্ষর করার জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে লগ-ইন করতে হবে। লগ-ইন করার জন্য প্রয়োজন হবে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ডের, যা কিভাবে পাবেন সেটার ব্যাপারে ওয়েবসাইটে একটি আলাদা পোস্ট রয়েছে। আপনি ইচ্ছা করলে এখানে ক্লিক করে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন। যদি কোনো শিক্ষক তাঁর ইউনিক আইডির স্বাক্ষর করতে চান, তাহলে তাকে প্রথমে উক্ত ইউনিক আইডির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে নিতে হবে। লগ-ইন করার পর, মেনুবারে শিক্ষকের স্বাক্ষর অপশনটিতে ক্লিক করলে নীচের মতো একটি পেইজ প্রদর্শিত হবে।
উক্ত পেইজে আমরা দুইটি সেকশন দেখতে পেয়েছি, যেটা ১ ও ২ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। প্রথম অংশে আমরা যে প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষকের স্বাক্ষর আপডেট করতে চাইছি, সেই প্রতিষ্ঠানের তথ্য ঠিক মতো আছে কিনা তা যাচাই করব। উদাহরণ স্বরূপ, বিদ্যালয়ের ইএমআইএস কোড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা সঠিক আছে কিনা তা দেখা।
এক নাম্বার সেকশনে সব কিছু সঠিক থাকলে এবার দুই নম্বর সেকশনে শিক্ষকের তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। শিক্ষকের যে তথ্যগুলো পূরণ করতে হবে সেগুলো নিম্নরূপঃ
প্রথমত, শিক্ষকের জন্ম তারিখ ইনপুট করুন যা আপনি টাইপিং করে অথবা ক্যালেন্ডার থেকে নির্বাচন করে দিতে পারেন। পরবর্তীতে, শিক্ষকের জাতীয় পরিচয় পত্রের সংখ্যার ডিজিট নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্রের সংখ্যার যে ডিজিট আছে, তা নির্বাচন করে দেওয়া আবশ্যক। আগে জাতীয় পরিচয় পত্রে ১৭ ডিজিট হতো, কিন্তু বর্তমানে নতুন দেওয়া স্মার্ট কার্ডে ১০ ডিজিটের ব্যবহার করা হয়।
এবার পরের ঘরে শিক্ষকের জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বারটি লিখে পাশের সার্চ (🔍) আইকনে ক্লিক করব। এখানে উল্লেখ করার মত একটি বিষয় হলো, যদি কোন শিক্ষকের এনআইডি নাম্বার ১৩ ডিজিটের হয় সেক্ষেত্রে তার জন্মসাল প্রথমে প্রদান করতে হবে এবং তারপরে ১৩ডিজিটের সংখ্যা প্রদান করতে হবে।
যদি শিক্ষক তাঁর জন্মতারিখ এবং এনআইডি নম্বর সঠিকভাবে দিয়ে থাকেন, জন্ম নিবন্ধন সার্ভার থেকে তাঁর নাম বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই প্রদর্শিত হবে। তারপর, আমাদের শিক্ষকের স্বাক্ষর আপলোড করার জন্য Choose file অপশনে ক্লিক করা। স্বাক্ষর আপলোড করার বিষয়টি দুই পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যায়। প্রথমত, শিক্ষকের হাতে লেখা স্বাক্ষরটি কাগজে করে তা স্ক্যান করে কম্পিউটারে আপলোড করা যায়। দ্বিতীয়ভাবে, পাশে দেওয়া ক্যামেরা আইকনে ক্লিক করে সরাসরি স্বাক্ষরের একটি ছবি তুলে তা ইউনিক আইডি সিস্টেমে আপলোড করা যায়।
যদি কোনো কারণে কোন ভুল স্বাক্ষর আপলোড হয়ে যায়, তাহলে পাশের মুছুন বাটনে ক্লিক করে আগের স্বাক্ষরটি মুছে ফেলা যাবে, এবং পুনরায় সঠিক স্বাক্ষরটি উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে আপলোড করা যাবে। আপলোড সম্পূর্ণ হওয়ার পর, নিচে দেওয়া সেভ বাটনে ক্লিক করলে, একটি পপ-আপ উইন্ডো প্রদর্শিত হবে যেটিতে বার্তা দেখানো হবে যে, ‘স্বাক্ষরের ছবি সফলভাবে সংরক্ষণ হয়েছে’। এরপর পপ-আপ বক্সে থাকা OK বাটনে ক্লিক করলে ইউনিক আইডির ডাটাবেইজ দিয়ে শিক্ষকের স্বাক্ষর জমা হয়ে যাবে।
ইউনিক আইডিতে শিক্ষকের স্বাক্ষর প্রদানের গুরুত্ব
ইউনিক আইডি তথা অনন্য পরিচিতি নম্বর একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত সনাক্তকরণের এক অপরিহার্য মাধ্যম। শিক্ষা বিস্তারে গুণগত মানের উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য শিক্ষকের স্বাক্ষর প্রদান অত্যন্ত জরুরি।
শিক্ষকের ইউনিক আইডিতে স্বাক্ষর প্রদানের প্রাথমিক গুরুত্ব হল সনাক্তকরণ এবং বৈধতা। এর দ্বারা, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, এবং প্রশংসাপত্রে শিক্ষকের স্বাক্ষরের সাথে জড়িত যে কোনো দলিলের সত্যতা অনুযায়ী নিশ্চিত করা যায়।
পাশাপাশি, ডিজিটাল যুগে ইলেকট্রনিক নথি প্রদান এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে, শিক্ষকদের ইউনিক আইডিতে স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে নিরাপদ এবং নির্ভুল প্রচার্যের আশ্বাস মিলে। এভাবে, শিক্ষা প্রদানের সকল ধাপে সক্রিয় জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং আইনি বৈধতা অর্জনের বিশাল অবদান রাখে।
উপরন্তু, ইউনিক আইডিতে স্বাক্ষর প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষকের কর্মক্ষেত্রের প্রতিবেদন, বার্ষিক মূল্যায়ন ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে এক কঠোর প্রমাণীকরণ এবং জবাবদিহি অনুধাবন করা যায়। ইউনিক আইডি স্বাক্ষর দ্বারা শিক্ষকের দায়িত্ববোধ, আচার-আচরণ এবং কর্মজীবনের বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে স্বচ্ছ ও যাচাইযোগ্য রাখা সম্ভব হয়।
ইউনিক আইডিতে স্বাক্ষরের অর্থ হল সুনির্দিষ্ট এবং অব্যর্থ তথ্যের উৎস হিসাবে একটি ডিজিটাল অভিজ্ঞান তৈরি করা। এটি শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই তরফের জন্য ন্যায়বিচার এবং পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করে। এর ফলে সকল শিক্ষকের কর্মকাণ্ড এবং তাঁদের করা যে কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের উপর ইউনিক আইডি নির্ভর করে একটি আঁটসাঁট নিয়ন্ত্রণ সৃষ্টি হয়।
অতঃপর, ইউনিক আইডি অনুযায়ী স্বাক্ষর করা একজন শিক্ষকের পেশাগত উন্নতির ভিত্তি রচনা করতে পারে। এই পদ্ধতি শিক্ষকের কর্মক্ষেত্রে অবদান ও অগ্রগতির একটি ডিজিটাল চিত্র তৈরি করে যা অধ্যাপকের পরিচালনার দক্ষতা পরিমাপ এবং শিক্ষাবৃত্তিতে নিযুক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
সব শেষে, ইউনিক আইডির মাধ্যমে স্বাক্ষর প্রদান ডিজিটাল সাক্ষরতার একটি প্রমাণ এবং বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মৌলিক পরিবর্তনের দিকে এক উন্নত পদক্ষেপ। যে কোনো প্রশিক্ষণ বা শিক্ষামূলক কর্মশালা ছাড়াও, ইউনিক আইডি দ্বারা প্রদান করা স্বাক্ষর শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য এক চাঞ্চল্যকর সাধনা হিসেবে কাজ করে। এতে না শুধু শিক্ষা গুণগত মানের প্রতিশ্রুতি বাড়ে, বরং এটি শিক্ষকের সম্মান এবং পেশাগত মর্যাদার প্রতি আরো বেশি সমর্থন জোগায়।
একইভাবে, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মাইক্রো এবং ম্যাক্রো উভয় স্তরে ইউনিক আইডির স্বাক্ষর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এডুকেশনাল ডাটা অ্যানালিটিক্সে বিশেষ অবদান রাখে, যার ফলে শিক্ষণ কর্মক্ষেত্রের এবং ছাত্রী সংবেদনশীলতার উন্নতি অভিমুখে অনেক বড় ধাপ অগ্রসর হয়। পাশাপাশি, এডুকেশনাল পলিসি পরিমার্জন এবং শিক্ষা উন্নয়নে প্রাসঙ্গিক গবেষণার জন্য এটি শিক্ষকদের বর্তমান মানসম্পন্নতা এবং তাঁদের পেশাগত প্রসারের রেকর্ড হিসেবে কাজ করে।
এভাবে একজন অনুমোদিত শিক্ষক ইউনিক আইডিতে শিক্ষকের স্বাক্ষর খুব সহজে https://crvs.dpe.gov.bd/ ওয়েবসাইটে আপলোড করতে পারবেন।
