অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার উপায় (২০২৪)

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার একাধিক উপায় আছে। পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন, যেকোন অনুষ্ঠান বা সমাবেশে যোগদান, ইউনিভার্সিটি এক্সামিনেশন অথবা কম খরচে দেশভ্রমণ সহ  যেকোন প্রয়োজনে বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকেট বুকিং করার নিয়ম জানা দরকার। অনলাইনে ট্রেনের টিকেট আপনি এপের মাধ্যে করতে পারেন বা ওয়েব সাইটের মাধ্যমেও করতে পারেন। এপ দিয়ে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটা সহজ। কিন্ত অনেকের মোবাইল ক্যাপাসিটি বা বিভিন্ন কারণে এপ ইন্সটল নাও থাকতে পারে। তাই মোবাইল দিয়ে ওয়েবের মাধ্যমে কিভাবে কাজটি করতে পারেন তাই আজকে দেখাব। কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়া কিভাবে হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে আপনি বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকেট বুকিং করবেন সেটা চলুন জেনে নেওয়া যাক।

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট বুকিং একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন

হাতে থাকে স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে খুব সহজে অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং করতে পারবেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকেট বুকিং করতে প্রথমে ফোনের ইন্টারনেট সংযোগটি চালু করুন। তারপর যেকোন ব্রাউজারের এড্রেসবারে Bangladesh railway ticket লিখে সার্চ করুন। সবার প্রথমে একটি ওয়েবসাইট পেয়ে যাবেন। সেই ওয়েবসাইটে ঢুকে ডান পাশের ওপরের 3-লাইন (☰) আইকনে ক্লিক করলে মেনু প্রদর্শিত হবে।

সেখান থেকে REGISTER মেনুতে ক্লিক করুন।

এখানে আপনার মোবাইল নাম্বার, জন্ম তারিখ, এন.আই.ডি নাম্বার দিয়ে এবং I’m not a robot ক্যাপচাটি পূরণ করে Verify বাটনে ক্লিক করুন।

তারপর আপনার মোবাইল নম্বরে ৬ ডিজিটের OTP গেলে সেটি দিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে। এভাবে আপনার একাউন্ট রেজিস্ট্রেশনেরর কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।

সফলভাবে একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে Login অথবা Already Registered? বাটনে ক্লিক করে আপনার মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে LOGIN বাটনে ক্লিক করে লগইন করে নিন। আপনার একাউন্টটি সফলভাবে তৈরি হয়েছে কিনা সেটি জানতে 3-লাইন (☰) আইকনে ক্লিক করে নিচে দেখুন।

একাউন্ট তৈরি হলে আপনার নামটি দেখা যাবে। যাই হোক এখন আপনি হোম পেইজে এরকম একট পেইজ দেখতে পাবেন। যেখান থেকে আপনি টিকেট কাটতে পারবেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকেট বুকিং দেওয়ার নিয়ম

এখন আপনি যদি অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং করতে চান তাহলে হোমপেইজ থেকে আপনার লোকেশন সিলেক্ট করুন। From ঘরে আপনি কোথা থেকে ট্রেনে উঠতে চাচ্ছেন সেটি Type করুন। যেমন: ঢাকা, চট্টগ্রাম, লাকসাম ইত্যাদি এবং To ঘরে আপনি কোথায় যেতে চাচ্ছেন সেটি Type করুন যেমন: খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ইত্যাদি।

Date of journey ঘরে আপনি কখন সফর করতে চান সেই তারিখ সিলেক্ট করুন। তারপর সর্বশেষ Choose class ঘরে ট্রেনের ধরণ সিলেক্ট করে SEARCH TRAINS বাটনে ক্লিক করুন। Choose class সিলেক্ট করার সময় নিচের ট্রেন গুলো সিলেক্ট করতে পারেন। সেগুলো কম খরচে ও অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং করতে পারবেন।

কিন্তু ওপরের ট্রেন গুলো VIP লোকদের জন্য। তাই ঐগুলো দামেও বেশি এবং অনলাইনে নাও পেতে পারেন। SEARCH TRAINS বাটনে ক্লিক করার পর  আপনার দেওয়া লোকেশন ও তথ্য অনুযায়ী কোন ট্রেন Available থাকলে সেটি দেখতে পাবেন।

এখন টিকেট বুকিং করতে Book Now বাটনে ক্লিক করুন। আপনার সামনে ট্রেনের সকল ফাঁকা সিট গুলো দেখাবে। এখন আপনি যেই সিটটি বুকিং করতে চান সেটি সিলেক্ট করুন এবং নিচের দিকে স্ক্রোল করুন। এবার আপনি আপনার টিকিটের মূল্য দেখতে পাবেন।

এরপর আরো কিছু তথ্য চাইবে, সেগুলা দিয়ে দিন।

অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং পেমেন্ট করার নিয়ম

এপর্যায়ে আপনাকে টিকের জন্য পেমেন্ট করতে হবে। পেমেন্ট কনফর্ম হলে আপনার টিকেট বুকিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। পেমেন্ট করার জন্য Continue purchase /Continue payment  বাটনে ক্লিক করুন। আপনার সামনে আপনার একাউন্ট, টিকেট ও পেমেন্ট সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দেখতে পাবেন। সব গুলো দেখে কনফর্ম হলে নিচে থেকে বিকাশ, রকেট ও নগদে বিল পরিশোধ করুন।

আপনি যদি বিকাশে বিল পরিশোধ করতে চান তাহলে বিকাশ অপশন সিলেক্ট করুন। তারপর আপনার বিকাশ নম্বর, OTP ও পিন দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।

পেমেন্ট করার পর আপনার সামনে পেমেন্ট রিসিট PDF ফাইল শো করবে। সেটি ডাউনলোড করে মোবাইলে রেখে দিতে পারেন। অথবা কম্পিউটার দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট তারিখে কাউন্টারে গিয়ে পেমেন্ট স্লিপটি দেখিয়ে আপনার আসন নিশ্চিত করতে পারবেন।

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার সুবিধা

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার প্রক্রিয়া তীব্রতর জীবনযাপনের ধারায় যাত্রীদের অসাধারণ সুবিধা এবং কার্যকারিতা প্রদান করছে। এই প্রণালী যাত্রার প্রস্তুতি অনেক আগে থেকে সহজ এবং নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। নিম্নে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার বিস্তারিত সুবিধাগুলি উল্লেখ করা হলোঃ

১. সময় ও শক্তি সাশ্রয়ঃ ট্রেনের স্টেশনে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো এবং টিকেট কোনার অপেক্ষা করা এড়িয়ে চলা যায়, যা সময় ও শক্তির অপচয় হ্রাস করে।

২. আরামদায়কঃ অনলাইনে যেকোন স্থান থেকে এবং যেকোন সময়ে ট্রেনের টিকেট কেনা যায়, যা যাত্রার প্রস্তুতিকে আরামদায়ক করে তোলে।

৩. সহজ প্রক্রিয়াঃ অনলাইনে টিকেট কাটার প্রক্রিয়া সহজ এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব। কাঙ্খিত ট্রেনের তথ্য, তারিখ, সময় এবং শ্রেণী নির্বাচন করে কয়েক ক্লিকেই টিকেট ক্রয় করা সম্ভব।

৪. অগ্রিম বুকিংঃ অনলাইনে অগ্রিমে ট্রেনের টিকেট কাটা যায়, যা যাত্র‍ার সময় টিকেটের জন্য চাপ মুক্তি প্রদান করে।

৫. তাৎক্ষণিক নিশ্চয়তাঃ অনলাইনে টিকেট বুকিং করার মাধ্যমে যাত্রীদের তাত্ক্ষণিক নিশ্চয়তা মেলে যে তাঁরা সীট সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। এটি মানসিক শান্তি প্রদান করে।

৬. অনলাইন পেমেন্টের সুবিধাঃ ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং, মোবাইল ব্যাঙ্কিং বা ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সহজেই টিকেটের মূল্য পরিশোধ করা যায়। এই প্রক্রিয়া বিশ্বস্ত এবং দ্রুত।

৭. ই-টিকেটিংঃ অনলাইনে টিকেট কাটলে সেটি ই-টিকেট আকারে ইমেইল বা মোবাইলে পাঠানো হয় যা সহজেই প্রিন্ট কিংবা ডিজিটালি দেখানো যায়।

৮. টিকেট পরিবর্তন ও বাতিলঃ অনলাইনে কেনা টিকেট পরিবর্তন বা বাতিল করাও অনেক সহজ। নির্দিষ্ট নিয়মাবলী মেনে টিকেট পরিবর্তন বা ফেরত দেওয়া যায়।

৯. অফার এবং ডিসকাউন্টঃ অনলাইন বুকিং পোর্টালগুলি প্রায়ই বিশেষ অফার, প্রোমোশনাল কোড এবং ডিসকাউন্ট দেয়, যা যাত্রীদের টিকেটের উপর অতিরিক্ত সাশ্রয় করতে সহায়তা করে।

১০. আসন নির্বাচনঃ অনলাইনে টিকেট বুক করার সময় যাত্রীরা তাদের আসন নির্বাচনের সুবিধা পায়। তারা নিজেদের পছন্দমত জানালা পাশের আসন বা গলি ধরে যেকোনো আসন পছন্দ করতে পারেন, যা তাঁদের যাত্রাকে আরও সুখময় করে তোলে।

১১. স্থানের এবং সময়ের স্বাধীনতাঃ অনলাইনে টিকেট কাটতে গেলে কোনো ভৌগোলিক বা সময়ের বিধিনিষেধ নেই। ঘরে বসে, অফিসে বা যাত্রার পথে থাকায় অকেন সহজেই টিকেট কাটা যায়।

১২. পরিবেশ বান্ধবঃ অতিরিক্ত কাগজের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে কারণ ই-টিকেট ডিজিটাল ফরম্যাটে বহন করা হয় এবং ছাপার দরকার পড়ে না।

১৩. নিরাপদ লেনদেনঃ অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমগুলি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত হয়, যা যাত্রীদের আর্থিক লেনদেনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদান করে।

১৪. প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবেদনঃ যদি কোনো সমস্যা বা অভিযোগ থাকে, তাহলে অনলাইন পোর্টালে তা সহজেই প্রতিবেদন করা যায় এবং গ্রাহক সেবা দ্রুত সাড়া দেয়।

১৫. ট্রেকিংঃ অনলাইন টিকেটের মাধ্যমে যাত্রীদের টিকেটের অবস্থান জানা, বুকিং অবস্থা পরীক্ষা করা এবং নিজের অবস্থান ট্রেকিং করা সম্ভব হয়।

শেষ কথাঃ এটা ছিল মোটামুটি অনলাইন ট্রেন টিকেট বুকিং প্রক্রিয়া। আশা করি আজকের পোস্টটি রেলওয়ে টিকেট বুকিং করতে আপনাকে যথেষ্ট হেল্প করেছে। এরকম কনটেন্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে এবং পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনদের সাথে শেয়ার করুন, ধন্যবাদ।