স্বামীর পরকীয়া থেকে কিভাবে ফেরাবেন

স্বামীর পরকীয়া থেকে কিভাবে ফেরাবেন-cybersheba.com
অনেকেই মনে করেন, বিয়ের পর রোমান্স হারিয়ে যায়, তবে এটি পুরোপুরি সঠিক নয়।

স্বামীর পরকীয়া একটি সামাজিক ও পারিবারিক সংকট, যা অনেক স্ত্রীকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে তোলে। কিন্তু ধৈর্য, সচেতনতা এবং সঠিক কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব।

স্বামীর পরকীয়া বিষয়টা একজন স্ত্রীর জন্য সত্যিই কষ্টদায়ক। এই পোস্টে আমরা জানবো কীভাবে একজন স্ত্রী স্বামীকে পরকীয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তবে এজন্য আপনাকে পুরো পোষ্টটি পড়ে দেখতে হবে।

স্বামীর পরকীয়ার লক্ষণগুলো কীভাবে বুঝবেন

স্বামী যদি আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন আনেন, ফোনে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকেন, আপনার সঙ্গে অকারণে বিরক্ত হন, কিংবা অপ্রাসঙ্গিক মিথ্যা বলেন – তাহলে আপনাকে সচেতন হতে হবে। তবে প্রমাণ ছাড়া তাকে দোষারোপ না করাই শ্রেয়।

কারণ, কিছু ক্ষেত্রে, স্বামী হয়তো কাজের চাপ, মানসিক অস্থিরতা অথবা পারিবারিক সমস্যা থেকে বিরক্ত থাকতে পারে। তাই স্বামীর পরকীয়ার লক্ষণ দেখা গেলে প্রথমেই স্বামীর সঙ্গে খোলামেলা এবং বিনয়ের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

কিন্তু যখন স্বামী তার ফোনের পাসওয়ার্ড গোপন করেন, দীর্ঘ সময় ফোন ব্যবহার করেন, রাতের বেলা বাড়ির বাইরে অতিরিক্ত সময় কাটান বা আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান, তখন তা হতে পারে পরকীয়ার লক্ষণ। স্বামী যদি আপনার কাছে নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা শেয়ার না করে, তবে এটি সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি করতে পারে, যা পরকীয়া সৃষ্টির মূল কারণ। সম্পর্কের মাঝে অব্যক্ত কথাগুলো এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব এস্বামীর পরকীয়াকে শক্তিশালী করে তোলে।

স্বামীর পরকীয়ার লক্ষণগুলো কীভাবে বুঝবেন - স্বামীর পরকীয়া থেকে কিভাবে ফেরাবেন-cybersheba.com

তবে, পরকীয়ার বিষয়টি দ্রুত উন্মোচিত হতে পারে না। মাঝে মাঝে, স্বামী শুধুমাত্র মনোযোগ বা অনুভূতির অভাব থেকে একঘেয়ে অনুভব করেন। তাই, তার কাছে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা এবং অনুভূতি শেয়ার করার মাধ্যমে তাকে পরকীয়ার পথ থেকে ফেরানো যেতে পারে। আপনি যদি লক্ষ্য করেন, তার আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা অথবা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে, তবে তাকে দোষারোপ না করে, তার পাশে দাঁড়িয়ে, সম্পর্ককে মজবুত করার দিকে মনোযোগ দিন।

সন্দেহ নয়, সচেতন হোন

অনেক নারী স্বামীকে অকারণে সন্দেহ করে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেন, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। সন্দেহের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া কখনোই ভালো নয়, কারণ এটি স্বামীর ওপর একধরনের চাপ সৃষ্টি করে এবং উভয়ের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব তৈরি করতে পারে। এর পরিবর্তে, সম্পর্কের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর আচরণ বা মনোভাব পরিবর্তন হলে, তাকে দোষারোপ না করে, সঠিকভাবে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা উচিত।

স্বামী যদি স্বাভাবিক আচরণ না করে, তার মনোযোগ কোথাও অন্যদিকে চলে যায়, তবে তা কখনোই তাড়াতাড়ি সন্দেহের ভিত্তিতে বিচার করা উচিত নয়। বরং, স্বামীর সাথে শান্তভাবে কথা বলে এবং তার মানসিক অবস্থা, চাপ বা সমস্যাগুলো বুঝতে চেষ্টা করা দরকার। অনেক সময়ই, সম্পর্কের মধ্যে গভীর বোঝাপড়ার অভাব বা কোনো অপরিচিত চাপের কারণে একে অপরের প্রতি মনোযোগ কমে যায়, যা পরকীয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এছাড়া, সন্দেহ করলে আপনি আরো বেশি অস্থিরতা অনুভব করবেন, যা সম্পর্কের মধ্যে আরো বেশি দুরত্ব সৃষ্টি করবে। তাই, সন্দেহের বদলে সচেতন হওয়া উচিত। সম্পর্কের প্রতি ভালোবাসা ও আস্থা রাখলে, সমস্যার সমাধান সহজেই বেরিয়ে আসবে। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তবে সেটি একসাথে সমাধান করার পথ খুঁজে বের করুন, যেন আপনার স্বামীকে পরকীয়ার দিকে ঠেলে না দেয়।

প্রথমে নিজেকে পরিবর্তন করুন

বিয়ের পর অনেক নারী নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলেন—সৌন্দর্য, ব্যবহারে এমনকি আত্মবিশ্বাসেও। অনেক সময়ই এই পরিবর্তন স্বাভাবিক, তবে তা কখনো কখনো সম্পর্কের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্বামী আপনার আগের চরিত্র, সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বকে ভালোবেসে আপনাকে বিয়ে করেছে, তাই তার সেই ভালোবাসার কারণগুলো বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পর নিজের যত্ন নেওয়া, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা খুবই প্রয়োজনীয়, কারণ এটি আপনার আত্মবিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত।

আপনার সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিত্ব ঠিক রাখতে শুধু বাহ্যিক চেহারা নয়, বরং অন্তর থেকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আপনি যদি নিজের শখ ও পছন্দ অনুযায়ী জীবনযাপন করেন, তবে সেই আত্মবিশ্বাস আপনার স্বামীকে আকৃষ্ট করবে। এটি শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন নয়, বরং নিজের সঙ্গে সৎ থাকা, নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখা এবং একে অপরকে মূল্য দেয়া সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিজেকে পরিবর্তন করা মানে নিজেকে আরো সুন্দর, উন্নত এবং আরো আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলা। যখন আপনি নিজেকে ভালোবাসবেন এবং নিজের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবেন, তখন স্বামীও আপনাকে তেমনভাবে মূল্য দেবে। আত্মবিশ্বাসী, হাসিখুশি এবং যত্নশীল হলে স্বামী আপনার কাছে ফিরে আসবে, এবং এই পরিবর্তন তাকে পরকীয়ার মতো খারাপ সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখবে।

স্বামীকে আবেগিকভাবে জড়িয়ে রাখুন

স্বামীকে আবেগিকভাবে জড়িয়ে রাখুন - স্বামীর পরকীয়া থেকে কিভাবে ফেরাবেন-cybersheba.com

স্বামী বা স্ত্রীর সম্পর্ক শুধুমাত্র শারীরিক এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আবেগিক দিকেও গভীর সংযোগ থাকা জরুরি। একজন স্বামী বাইরে অনেক চাপের মধ্যে থাকতে পারেন – কাজের চাপ, পারিবারিক দায়-দায়িত্ব, সামাজিক উদ্বেগ এবং আরও অনেক কিছু। এই সকল চাপের মধ্যে তিনি যদি আবেগিক সহায়তা না পান, তবে তার মন অন্য কোথাও চলে যেতে পারে।

আপনার জন্য এটি একটি সুযোগ, স্বামীকে আবেগিকভাবে জড়িয়ে ধরার এবং তাকে মনোযোগ দেওয়ার। আপনি যদি তার কথা শুনে যান, তাকে উৎসাহ দেন এবং তার আবেগের চাহিদাগুলো বুঝে সাড়া দেন, তাহলে তিনি আপনার দিকে ফিরে আসবেন। তাকে শ্রদ্ধা, সমর্থন ও ভালোবাসা প্রদান করলে তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে, এবং কখনোই পরকীয়ার দিকে আকৃষ্ট হবে না।

এই ধরনের আবেগিক সংযোগে তার মনে যে এক ধরনের নিরাপত্তা তৈরি হবে, তা তাকে বাহ্যিক সম্পর্ক থেকে দূরে রাখবে। যখন একজন মানুষ তার সঙ্গীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আবেগিক সমর্থন পায়, তখন সে বাইরের সম্পর্কের প্রয়োজন অনুভব করে না। সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখা, আবেগিক সমর্থন ও বন্ধন তৈরি করা, স্বামীর পরকীয়ার মতো সম্পর্ক থেকে ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দাম্পত্য জীবনে রোমান্স বজায় রাখুন

বিয়ের পর সম্পর্কের মধ্যে রোমান্স বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন, বিয়ের পর রোমান্স হারিয়ে যায়, তবে এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। সম্পর্কের প্রাথমিক রোমান্টিক মুহূর্তগুলো সময়ের সাথে সঙ্গী হয়ে চলে যায়, কিন্তু তা মানে এই নয় যে সম্পর্কের রোমান্স শেষ হয়ে গেছে। বরং, দাম্পত্য জীবনে রোমান্স বজায় রাখতে মনোযোগী হওয়া উচিত, যাতে সম্পর্কের গুণমান বাড়ানো যায় এবং স্বামী/স্ত্রীর প্রতি প্রেমের অনুভূতি বাড়ে।

রোমান্স বজায় রাখার জন্য ছোট ছোট চমক, যেমন প্রিয়জনের জন্য একটি সুন্দর নোট লেখা, অথবা একসাথে কোন ভালো সিনেমা দেখা বা বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা এবং অনুভূতি বজায় রাখে। এছাড়া, স্বামী বা স্ত্রীর প্রশংসা করা, ভালোবাসার কথাগুলো একে অপরকে জানানো, সম্পর্কের মধ্যে গাঢ় বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে।

তদুপরি, যৌন সম্পর্কের আন্তরিকতা ও ভালোবাসাপূর্ণ মুহূর্তগুলোও রোমান্স বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একসাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে স্বামী/স্ত্রী একে অপরের কাছে ফিরে আসে এবং সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়। এইভাবে, সম্পর্কের মধ্যে রোমান্স জিইয়ে রেখে, একে অপরকে ভালোবাসার প্রতি আন্তরিকতা এবং দায়িত্বের অনুভূতি বজায় রাখা যায়, যা দাম্পত্য জীবনে স্বামীর পরকীয়া এবং সম্পর্কের অন্যান্য বিপদ থেকে সুরক্ষা দেয়।

সংসারকে করুন শান্তির আবাস

একটি শান্তিপূর্ণ এবং সজীব সংসারই দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত্তি। যদি ঘরটি শান্তির আবাস হয়, যেখানে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং সহানুভূতির পরিবেশ থাকে, তবে কোনো বাহ্যিক শক্তি বা প্রলোভন তাদের সম্পর্ক থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। একে অপরের প্রতি সম্মান এবং আস্থা রাখা, সম্পর্কের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। যখন স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরকে শান্তির উৎস হিসেবে অনুভব করেন, তখন তারা বাইরের সম্পর্কের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি খুঁজে পান।

অন্যদিকে, যদি সংসারে অবিচ্ছিন্ন ঝগড়া, অপমান বা অবহেলা চলতে থাকে, তবে সেটি স্বামী বা স্ত্রীর মন থেকে ঘরকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে রূপান্তরিত হতে বাধা দেয়। এসব নেতিবাচক পরিস্থিতি স্বামীকে বা স্ত্রীকে পরকীয়া বা অন্য কোনো সম্পর্কের দিকে ধাবিত করতে পারে, যেখানে তারা শান্তি এবং প্রশান্তি খোঁজে। এজন্য সংসারকে শান্তির আবাসে পরিণত করতে দরকার একে অপরের অনুভূতির মূল্য দেওয়া এবং সম্পর্কের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা।

এভাবেই, একটি সুস্থ, সুখী এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব যা সম্পর্কের মাধুর্য এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।

সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে একে অপরকে সম্মান এবং কৃতজ্ঞতা জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীকে ছোট করা, তার কাজ বা উপার্জন নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করা, কিংবা অহংকারের সঙ্গে কথা বলা সম্পর্কের মধ্যে অশান্তি এবং অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে। বরং, স্বামীর ভালো দিকগুলো স্বীকার করা এবং তার প্রচেষ্টা বা সফলতার জন্য প্রশংসা জানানো সম্পর্কের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি সৃষ্টি করে। যখন আপনি তার অবদান এবং পরিশ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন, তখন সে আরও ভালোবাসা এবং সহানুভূতি অনুভব করবে, যা তাকে আপনার প্রতি আরও নিবেদিত এবং যত্নশীল করে তুলবে।

এছাড়া, যদি স্বামী আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তবে তাকে আপনার প্রশংসা জানানো আপনার দাম্পত্য সম্পর্কের মাঝে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে। নিজের অহংকার এবং অবমাননা দূরে রেখে একে অপরকে সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখানোই সম্পর্কের ভিত্তি শক্তিশালী করে তোলে। তাই, সম্পর্কের মাঝে যত বেশি সম্মান এবং কৃতজ্ঞতা থাকবে, ততই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী এবং সুন্দর হবে। অতএব স্বামীর পরকীয়া  থেকে দূরে রাখতে তার প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

শ্বশুরবাড়ির সাথে সম্পর্ক উন্নত রাখুন

শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা স্বামীর সাথে আপনার সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তোলে। এটি শুধু সম্পর্কের মান উন্নত করে না, বরং স্বামীর মনে আপনার মর্যাদা এবং গুরুত্বও বাড়ায়। যখন আপনি তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সদয় হন, তখন স্বামীও আপনার প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করলে আপনি পরিবারে এক সদস্য হিসেবে সম্মানিত হন, যা স্বামীকে আপনার প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞ এবং ভালোবাসা প্রদর্শনে উৎসাহিত করে।

শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কারণ এটি দাম্পত্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিবারে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা অবিশ্বাসের সৃষ্টি হলে তা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই স্বামীর পরকীয়া থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করুন, স্বামীর পরিবারে যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখতে এবং সকলের সাথে সুন্দর সম্পর্ক রাখার মাধ্যমে নিজের স্থান শক্তিশালী করে তুলতে। এটি শুধু সম্পর্কের উন্নতি নয়, পরিবারের মধ্যে ঐক্যও বৃদ্ধি পাবে, যা স্বামীকে আপনার প্রতি আরও আগ্রহী করবে।

ধর্মীয় ও নৈতিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করুন

স্বামীর পরকীয়া থেকে তাকে ফেরানোর জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম, এবং অন্যান্য ধর্মও, পরকীয়াকে একেবারে নিষিদ্ধ করেছে এবং এটি একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। পরকীয়ার প্রভাব শুধু দাম্পত্য জীবনে নয়, পুরো সামাজিক কাঠামোতেও ক্ষতিকর। তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্বামীকে সচেতন করা এবং তার কাছে আল্লাহর পথের উপর গুরুত্ব আরোপ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

ধর্মীয় ও নৈতিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করুন- স্বামীর পরকীয়া থেকে কিভাবে ফেরাবেন-cybersheba.com

আপনি স্বামীকে উপদেশ দেওয়ার সময় যতটা সম্ভব ভালোবাসা, সহানুভূতি ও শান্তিপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখুন। তাকে কোরআন ও হাদীসের মাধ্যমে পরকীয়া সম্পর্কিত নির্দেশনা জানান, যাতে সে জানে এর ফলাফল কী হতে পারে। একসাথে নামাজ পড়া, ধর্মীয় আলোচনা করা, এবং ইসলামী বই পড়া এসব কাজের মাধ্যমে সম্পর্কের ভিত আরও শক্তিশালী হবে এবং সম্পর্ক আল্লাহর নৈকট্যের দিকে এগিয়ে যাবে।

ধর্মীয় জীবনযাত্রার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে, স্বামী নিজের পরকীয়া জীবনযাত্রার পথ থেকে ফিরে এসে সঠিক পথ অবলম্বন করতে পারে। তাই, ধর্মীয় দিকনির্দেশনার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি এবং স্বামীর পরকীয়া থেকে মুক্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

স্বামীর পরকীয়া ধরতে পারলে কিভাবে আলোচনা করবেন

স্ত্রী তার স্বামীর পরকীয়া ধরতে পারলে স্বামীর সাথে খোলামেলা আলোচনায় বসবে। তখন স্ত্রী তার স্বামীকে নিন্মোক্ত কথাগুলো বলতে পারেনঃ

“আমি আজ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই। আমি জানি আমরা দুজনেই মানুষ, ভুল-ভ্রান্তি হয়। কিন্তু তোমার আচরণ—যেটা আমি পরকীয়া বলি—তা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। এটা শুধু আমার মন ভেঙে দেয়নি, আমাদের সম্পর্ক, আমাদের বিশ্বাস, এবং আমাদের ভবিষ্যৎ সবকিছুকেই নাড়িয়ে দিয়েছে।

আমি তোমাকে দোষ দিয়ে শুরু করতে চাই না। বরং জানতে চাই, কী এমন ছিল যা আমাদের মধ্যে তুমি হারিয়ে ফেলেছিলে? আমি কি কিছু কম দিয়েছি? আমি কি তোমার পাশে ঠিকভাবে থাকতে পারিনি? যদি সত্যিই কিছু ছিল, আমি তা জানতে চাই এবং শোনার জন্য প্রস্তুত।

তবে এটাও বলছি—এই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে চাইলে আমাদের দুজনকেই চেষ্টা করতে হবে। আমি একা পেরে উঠবো না। যদি তুমি সত্যিই আমাদের জন্য ফিরে আসতে চাও, তাহলে আমাকে সেটা তোমার কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে, শুধু কথায় নয়।

আমি এখনও তোমাকে সম্মান করি, ভালোবাসি বলেও হয়তো আজ বলছি। কিন্তু আমি নিজেকে আর ভাঙতে চাই না। আমি শুধু সত্য, সম্মান, ও ভালোবাসাভিত্তিক একটি সম্পর্ক চাই। সেটা তুমি দিতে পারবে কি না—সেটা এখন তোমার সিদ্ধান্ত।”

স্বামীর পরকীয়া থেকে বাঁচানোর জন্য এই কথাগুলো বলার সময় আপনাকে শান্ত, আত্মবিশ্বাসী এবং সংযত থাকতে হবে। রাগ বা কান্না যেন আলোচনার পথ আটকে না দেয়, বরং আপনার কথার গাম্ভীর্য যেন স্পষ্ট হয়। স্বামীর পরকীয়া থেকে ফেরানোর জন্য আপনাকে স্থির ও বুদ্ধি সম্পন্ন আচরণ করতে হবে।

সবশেষে মনে রাখবেন, পরিবর্তন এক দিনে আসে না। ধৈর্য, ভালোবাসা ও কৌশলে আপনি স্বামীর পরকীয়া থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *