স্টারলিংক সংযোগ প্রক্রিয়া গতকাল ২০ মে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। স্টারলিংক হচ্ছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স কোম্পানির একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য তৈরি হয়েছে।
স্টারলিংক সংযোগ এমন একটি বিশেষ সুবিধা যা গ্রামীণ বা দুর্গম এলাকায়, যেখানে সাধারণ ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছানো কঠিন, সেখানকার মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে। আজকের লেখায় স্টারলিংক সংযোগ কিভাবে নিবেন, কত খরচ ও ভাগাভাগি করে কিভাবে ব্যবহার করবে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
Table of Contents
বাংলাদেশে স্টারলিংক সংযোগ
গতকাল ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশে স্টারলিংক সংযোগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এখন বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আগ্রহীরা অর্ডার করতে পারছেন। এটি মূলত দেশের প্রযুক্তি খাতে এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
স্টারলিংক সংযোগের জন্য অর্ডার করবেন যেভাবে
স্টারলিংকের সংযোগ পাওয়ার জন্য আপনাকে যেতে হবে স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। সেখানে গিয়ে আপনার লোকেশন দিয়ে চেক করতে হবে সংযোগ আপনার এলাকায় আছে কি না। এরপর আপনি অর্ডার নেওয়ার অপশন পাবেন। পছন্দমতো প্যাকেজ নির্বাচন করে আপনার নাম, ঠিকানা ও পেমেন্টের তথ্য পূরণ করে অর্ডার নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর ব্যবহারকারীর সামনে দুটি বিকল্প আসবে — ‘রেসিডেনশিয়াল’ এবং ‘রোম’।
‘রেসিডেনশিয়াল’ অপশন থেকে ‘অর্ডার নাউ’ বাটনে ক্লিক করে নিজের অবস্থান নির্বাচন করতে হবে। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনো ‘রোম’ বা ভ্রাম্যমাণ ইন্টারনেট সেবার অনুমোদন দেয়নি।
অর্ডার নিশ্চিত করতে হলে ‘চেকআউট’ অপশনে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ ও অর্থ পরিশোধ করে ‘প্লেস অর্ডার’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
একবার অর্ডার সম্পন্ন হলে, তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ সেটআপ কিট গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। স্টারলিংক জানিয়েছে, ব্যবহারকারী সহজেই নিজে থেকেই সংযোগটি চালু করে নিতে পারবেন।
অর্ডারের জন্য যা যা লাগবে
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের স্ক্যান কপি
- বাংলাদেশে ইস্যুকৃত ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড
- স্থায়ী বা ডেলিভারি ঠিকানা
- ইমেইল এবং মোবাইল নাম্বার
স্টারলিংক সংযোগের ইন্সটলেশন প্রক্রিয়া
অর্ডার দেওয়ার পর স্টারলিংক তাদের রাউটার, ডিস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিবে। সাধারণত ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে ডেলিভারি সম্পন্ন হয়। প্যাকেজের মধ্যে থাকে একটি ডিস, একটি রাউটার, পাওয়ার কেবল, মাউন্ট এবং ইনস্টলেশন গাইড। কেউ চাইলে আলাদা করে মাউন্ট, পাইপ বা অ্যাডাপ্টরও কিনে নিতে পারেন।
স্টারলিংকের খরচ কত
বাংলাদেশে স্টারলিংক সংযোগ নিতে মোট খরচ পড়বে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৪৯,৮০০ টাকা। এই খরচের মধ্যে রয়েছেঃ
- স্টারলিংক স্ট্যান্ডার্ড কিট – ৪৭,০০০ টাকা
- শিপিং চার্জ – ২,৮০০ টাকা
অতিরিক্ত যন্ত্রাংশের দামঃ
- পিভট মাউন্ট – ৬,৭০০ টাকা
- ওয়াল মাউন্ট – ৫,৯০০ টাকা
- পাইপ অ্যাডাপ্টর – ২,৬০০ টাকা
মাসিক খরচ এবং প্যাকেজ সমূহ
স্টারলিংক প্রাথমিকভাবে দুটি প্যাকেজ চালু করেছে – স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। রেসিডেন্স প্যাকেজের মাসিক খরচ প্রায় ৬,০০০ টাকা এবং রেসিডেন্স লাইটের জন্য প্রায় ৪,২০০ টাকা। সংযোগ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে এককালীন খরচ হবে প্রায় ৪৭,০০০ টাকা। এই সংযোগে কোনো নির্ধারিত গতি বা ডেটার সীমাবদ্ধতা নেই; ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস গতিতে আনলিমিটেড ইন্টারনেট উপভোগ করতে পারবেন।
স্টারলিংক সংযোগ ভাগাভাগি করে ব্যবহার
যেহেতু স্টারলিংক সংযোগের খরচ কিছুটা বেশি, তাই একাধিক পরিবার বা ব্যবহারকারী মিলে এই সংযোগ ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন হবে একটি ভালো রেঞ্জের ওয়াই-ফাই রাউটার এবং একটি নির্দিষ্ট নিয়মাবলীঃ
- সংযোগ পয়েন্ট এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে, যেখান থেকে সবাই সহজে সংযুক্ত হতে পারেন।
- ভিন্ন ভিন্ন ফ্লোর বা ভবনে সংযোগ ছড়াতে হলে Wi-Fi repeater ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ভাগাভাগি করে খরচ নির্ধারণের জন্য সবাই মিলে মাসিক বা ত্রৈমাসিক চুক্তি করতে পারেন।
বিশেষ করে গ্রামে, যেখানে ব্রডব্যান্ড অপশন সীমিত, সেখানে পাঁচ-ছয়টি পরিবার মিলে স্টারলিংক সংযোগের সুবিধা নিতে পারেন।
স্টারলিংক সংযোগের সুবিধা
- দ্রুতগতির ইন্টারনেট
- বৃষ্টিবাদল বা আবহাওয়াজনিত সমস্যার প্রভাব কম
- গ্রামাঞ্চলে পৌঁছাতে সক্ষম
- ইউনিফর্ম কানেক্টিভিটি
- কম ল্যাটেন্সি
- একাধিক ব্যবহারকারীর জন্য একই সংযোগের সুবিধা
শেষ কথা
স্টারলিংক সংযোগ বাংলাদেশে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যারা গ্রাম বা দূরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন এবং ব্রডব্যান্ড সংযোগ পান না, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ সমাধান হতে পারে। যদিও প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি, কিন্তু যদি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যায় তাহলে এই সংযোগ হতে পারে একটি অর্থনৈতিক এবং কার্যকর সমাধান।
অতএব, আপনি যদি নিরবিচারে দ্রুত ইন্টারনেট চান এবং প্রচলিত ব্রডব্যান্ড অপশনগুলো আপনার এলাকায় সীমিত, তবে স্টারলিংক সংযোগ নেওয়া হতে পারে আপনার জন্য বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত।