প্রবাসীরা সৌদি আরবের মেয়ে বিয়ে করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করতে হবে। সৌদি আরব শরিয়াহ আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই সেখানে বিয়ের ক্ষেত্রেও শরিয়া আইন মেনে করতে হবে।
Table of Contents
সৌদি আরবের মেয়েরা কেমন হয়
আমরা জানি অঞ্চল ও দেশভেদে প্রতিটা মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও কৃষ্টি-কালচার আলাদা হয়ে থাকে। যেহেতু সেখানে শরিয়া আইন প্রচলিত, তাই সৌদি আরবের মেয়েরা রক্ষণশীল ধরনের হয়ে থাকে। তারা পর্দা প্রথা মেনে চলে।
শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি সৌদি আরবের মেয়েদের আগ্রহ আছে। বেশিরভাগ সৌদি আরবের মেয়েরাই শিক্ষিত, রুচিশীল ও মার্জিত বোধ সম্পন্ন। বাড়িতে কোন অতিথি আসলে তারা আগ্রহ চিত্তে অতিথি আপ্যায়ন করে। বড় পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে তারা অভ্যস্ত।
কিভাবে সৌদি আরবের মেয়ে বিয়ে করা যায়
আমি আগেই বলেছি সৌদি আরবে শরিয়া আইন পরিচালিত এবং সে দেশের মেয়েরা পর্দা প্রথা মেনে চলে। তাই আপনি সরাসরি কোন সৌদি আরবের মেয়ে সাথে তার বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করতে পারবেন না। এজন্য আপনার একটা মাধ্যম প্রয়োজন।
আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে বা কোন সামাজিক মাধ্যমে কোন মেয়ের সাথে পরিচিত হন এবং আপনারা দু’জন যদি বিয়েতে আগ্রহী হন – তাহলে ছেলেকে ঐ মেয়ের পিতার কাছ থেকে বিয়ের অনুমতি নিতে হবে। অথবা আপনি নেটোয়ার্কিং করতে পারেন। যেমন- আপনি যদি সৌদি কোন পুরুষ বন্ধু থাকে তাহলে তার মাধ্যমে কোন মেয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারেন।
এভাবে প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার ঐ পুরুষ বন্ধুটি যেন মেয়ের পরিবারের কোন আত্নীয় বা নিকটের কেউ হয়।
এটা ছাড়াও সৌদি আরবের মেয়ে বিয়ে করতে গেলে আপনাকে ঐ দেশে বৈধ ভাবে থাকতে হবে এবং ওখানে কোন ব্যবসা থাকতে হবে। কোন অপরাধের সাথে যুক্ত থাকা তো যাবেই না, উপরন্ত অতীতেও কোন ক্রাইম রেকর্ড থাকতে পারবেনা।
বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন
সৌদি আরবের মেয়েদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা সাধারণত ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা এবং সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক, যেমন নিকাহ, মোহর, এবং অন্যান্য ধর্মীয় দায়িত্ব পালন। অনেক ক্ষেত্রে, ছেলে পক্ষকেই মেয়ের বাড়ীর বিয়ের খরচাদি বহন করতে হয়, যা বিয়ের প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সৌদিতে মোহরানা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- ধর্মীয় গুরুত্বঃ মোহরানা ইসলামী বিবাহের একটি আবশ্যক অংশ। এটি ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও দায়িত্বের প্রতীক হিসেবে দেওয়া হয়।
- মোহরানার পরিমাণঃ মোহরানার পরিমাণ সাধারণত মেয়ে পরিবারের সাথে আলোচনা করে নির্ধারণ করা হয়। এটি প্রায়শই অর্থ, সোনা, বা অন্য কোন মূল্যবান উপহার হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মোহরানা ন্যূনতম পরিমাণে রাখা হয়, তবে এটি ব্যক্তিগত এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে।
- বিয়ের চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তঃ মোহরানা বিয়ের চুক্তিতে উল্লেখ করা হয় এবং বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি স্ত্রীকে তার অধিকার হিসেবে প্রদান করা হয় এবং সাধারণত বিয়ের পরে সরাসরি প্রদান করা হয়।
- আইনগত দিকঃ সৌদি আরবে মোহরানা আইনি দিক থেকে গুরুত্ব পূর্ণ এবং এটি সৌদি আরবের পরিবার আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।
মোহরানা ইসলামী বিবাহের একটি মৌলিক অংশ হওয়ায়, সৌদি আরবে এটি সঠিকভাবে সম্পাদন করা এবং স্থানীয় আইন ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোহরের পরিমাণ সাধারণতঃ ৫০ হাজার রিয়াল থেকে শুরু করে ১ লক্ষাধিক রিয়াল পর্যন্ত হতে পারে।
বিদেশী নাগরিকদের জন্য সৌদি আরবের মেয়ে বিয়ে
সৌদি আরবের বিবাহ আইন বিদেশী নাগরিকদের জন্য বিশেষ কিছু বিধি-নিষেধ ও শর্তারোপ করেছে, যা বিদেশী পুরুষদের সৌদি মেয়েদের সাথে বিবাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বিদেশী পুরুষের বয়স ৩০ বছরের বেশি হতে হবে, তার রেসিডেন্সি পারমিট এবং পাসপোর্ট বৈধ থাকতে হবে, এবং বয়সের পার্থক্য ১৫ বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়। এছাড়া, তার পূর্বে সৌদি মেয়ের সাথে বিবাহ না থাকার প্রমাণ প্রদান করতে হবে এবং তার চাকরি ও মাসিক আয়ের প্রমাণ দিতে হবে। সৌদি স্বাক্ষীদের অনুমোদনও প্রয়োজন এবং যদি পুরুষ ইতিমধ্যেই অন্য কোনো বিদেশী মহিলার সাথে বিবাহিত থাকে, তাহলে প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে।
সৌদির নতুন বিবাহ আইন
২০২২ সালের শুরুতে সৌদি আরব সরকার পার্সোনাল স্টেটাস ল‘তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন অনুমোদন করেছে। নতুন আইন অনুযায়ী, বিবাহের চুক্তি করার সময় মহিলার সম্মতির প্রমাণ প্রদান করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া, বিবাহের জন্য পারস্পরিক সম্মতি অপরিহার্য, এবং ১৮ বছরের নিচে কাউকে বিবাহের অনুমতি দেওয়া যাবে না, যদি না আদালত অনুমোদন দেয়।
বিবাহের চুক্তি সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষ দ্বারা নথিভুক্ত করা আবশ্যক এবং গার্ডিয়ান বা মহিলার অক্ষমতার কারণে আদালতের অধিক্ষেত্রে বিবাহ স্থানান্তর করা যেতে পারে।
মহিলার ভরণপোষণের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে, এমনকি যদি তিনি আর্থিকভাবে অবস্থাসম্পন্ন হন তবুও। এছাড়া, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে মহিলার বিবাহ চুক্তি বাতিল করার অধিকার রয়েছে। স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করতে ব্যর্থ হন, তবে তাকে স্ত্রীর ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
আইনের ১৭ নং ধারা অনুসারে গার্ডিয়ানকে, এমনকি যদি তিনি বাবা হন, মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে করতে নিষেধ করে। ২৯ নং ধারা অনুযায়ী, বিবাহ চুক্তিতে কোন সংশোধনী ধারা যুক্ত হলে, যা বিবাহের ধারাবাহিকতা বিরোধী, তা বিবাহ চুক্তি অবৈধ করবে।
সৌদিতে বিবাহের রেজিস্ট্রেশন
সৌদি আরবের মেয়েদের বিবাহের রেজিস্ট্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। বিয়েটা যে আইনগতভাবে বৈধ এবং অফিসিয়াল সেটার জন্য নথিভুক্ত করতে হয়। বিবাহের রেজিস্ট্রেশন করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হয়। বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রদান করতে হয়-
- পাসপোর্ট ও রেসিডেন্সি পারমিটঃ বিবাহে অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষের বৈধ পাসপোর্ট এবং রেসিডেন্সি পারমিট।
- মেডিকেল সার্টিফিকেটঃ প্রি-ম্যারিটাল মেডিকেল পরীক্ষা সার্টিফিকেট।
- ডিভোর্স সার্টিফিকেটঃ পূর্বের বিবাহিতদের জন্য ডিভোর্স সার্টিফিকেট।
- গার্ডিয়ানের সম্মতিঃ মেয়ের গার্ডিয়ানের উপস্থিতি এবং সম্মতি।
- চার কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটোঃ উভয় পক্ষের জন্য।
- বিবাহের সাক্ষীঃ বিবাহের জন্য দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতি।
বিবাহের রেজিস্ট্রেশন সৌদির নাজিস পোর্টালে এন্ট্রি করতে হয়। এবং এন্ট্রির প্রক্রিয়া শেষে বিবাহের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, বিদেশী নাগরিকদের জন্য তাদের দেশের কনস্যুলেট থেকে বিবাহের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।