বয়স ৩০ এর পর সুস্থ থাকতে কি খাবেন

বয়স ৩০ এর পর সুস্থ থাকতে কি খাবেন-cybersheba.com.png
হাড়ের ক্ষয় শুরু হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুস্থ থাকতে কি খাবেন এবং কি খাবেন না এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় যখন আপনার বয়স ত্রিশ পার হয়ে যায়। আমরা যখন সুস্থ থাকি তখন আমরা বুঝতে পারি না আমাদের শরীরের ভেতরে কোন রোগ বাসা বেধেছে কিনা। তবে সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে এবং জীবনের লম্বা সময় নীরোগ থাকতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন তাহলে আপনার শরীরের ভিতরে অনেক জটিল ও কঠিন রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। তাই স্বাস্থ্যকর জীবন পাওয়ার জন্য একজন ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তির কোন খাবার গুলো খাওয়া উচিত এবং কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত – তা আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানবো।

সুস্থ থাকতে কি খাবেন

সুস্থ থাকার জন্য আমরা সকলেই জানি যে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। কিন্তু আমরা সকলেই জানি না যে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য গুলোর মধ্যে কোন খাদ্যটি স্বাস্থ্যকর এবং কোন খাদ্যটি স্বাস্থ্যকর না, কোন খাদ্যে কোন ভিটামিন রয়েছে এবং সেটা কি কাজে লাগে ইত্যাদি। তাই সুস্থ থাকতে কি খাবেন তার একটা তালিকা নিচে দেওয়া হলো।

দুধ ও দুধের তৈরি খাবার

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের হাড় ক্ষয়ের সমস্যা দেখা দেয়। যার দরুণ, হাটু ও মাজায় খুব ব্যথা হয়। হাড় ক্ষয়ের এই সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্য দুধ ও দুধের তৈরি খাবার একটু উৎকৃষ্ট মাধ্যম। কারণ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা আমাদের হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করে। তাই চেষ্টা করুন দুধ নিয়মিত খেতে। তবে খেয়াল রাখবেন, খাওয়ার সময় দুধের সাথে চিনি মিশাবেন না। যদি মিষ্টি খেতে মনে চায়, তাহলে বাজার থেকে মিষ্টান্ন কিনে খাওয়ার পরিবর্তে অল্প চিনি দিয়ে বাসায় তৈরি করে খান।

শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ ও কাজ করানোর জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। আপনার শরীর যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি পায়, এজন্য প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট রোদে থাকার চেষ্টা করুন। এ সময় কোন সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করবেন না। আমাদের দেশে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের হাড় ক্ষয় রোগ বেশি হয়, এজন্য এই ব্যাপারে মহিলাদের আরও বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন।

শাক-সবজি-সুস্থ-থাকতে-কি-খাবেন-cybersheba.com

সবুজ শাকসবজি

শাক-সবজির ভেতরে প্রায় সকল ভিটামিন উপস্থিত। এজন্য সুস্থ থাকতে কি খাবেন বোঝার জন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখুন। বিশেষ করে আশ সমৃদ্ধ শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন। আর বেশি পাওয়া যায় এমন কিছু সবজি হল-লাল শাক, পুঁইশাক, সিম ইত্যাদি। এছাড়া ডাল, মটরশুঁটি, বাধাকপি ও বিন ইত্যাদি সবজি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। যদি হজমের সমস্যা না থাকে তাহলে সবজি কিন্তু রাতেও খাওয়া যায়। কোন সমস্যা হয় না। তবে খেয়াল রাখবেন, যে সব সবজি মাটির নিচে জন্মে সেগুলো এড়িয়ে চলার। মাটির নিচে জন্মে এমন কিছু সবজি হল- আলু, শালগম, কচু, মুলা, গাজর ইত্যাদি। আর মাটির উপর জন্মালেও মিষ্টি কুমড়া খুব বেশি খাওয়া যাবে না।

রান্নায় কম তেলের ব্যবহার

রান্নায় তেল এতটুকু পরিমাণ ব্যবহার করুন, যতটুকু ব্যবহার না করলেই নয়। রান্নার সময় তেলের ব্যবহার খুবই সীমিত রাখুন। সুস্থ থাকতে কি খাবেন এটা বোঝার জন্য রান্নার সময় অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী তেল বা পাম ওয়েল বেছে নিতে পারেন। অল্প পরিমাণ সর্ষের তেলের ব্যবহারও করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সরিষার তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়; বরং স্বাস্থ্যঝুকির কারণ হতে পারে। যদি অন্য কোন তেল ব্যবহার করতে না পারেন তাহলে সয়াবিন তেল ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু পরিমাণের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। যদি কোন ভাজা-পোড়া খেতে মনে চায়, তাহলে দোকান বা রেস্টুরেন্ট থেকে না কিনে বাসায় তৈরি করে খান। আর খেয়াল রাখবেন, একবার রান্না করা হয়েছে এমন তেল দ্বিতীয়বার আর ব্যবহার করবেন না।

ফলমূল-সুস্থ থাকতে কি খাবেন-cybersheba.com

ফলমূল

সুস্থ থাকতে কি খাবেন এটার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফলমূল। যে কোন ফলের রস করে খাওয়ার চেয়ে কেটে খাওয়া ভালো। এজন্য ব্লেন্ড করে খাওয়ার চেয়ে ফল কেটে খেতে হবে। মিষ্টি স্বাদের চেয়ে যেসব ফল টক এবং পানসে স্বাদের সেগুলো প্রচুর পরিমাণে খাবেন। যেসব ফল খোসা সহ খাওয়া যায় সেগুলোর খোসা ফেলে দিবেন না, খোসা সহই খেয়ে নিবেন। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন দুই/তিনটা করে খেজুর খেতে পারেন।

বাদাম, ডিম, ছোলা ও ডাল

ক্যালসিয়ামের প্রাকৃতিক উৎস হিসাবে প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারেন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে দুধ এবং ডিমের চেয়ে চিয়া সীডে ৫ গুণ বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। এটার পাশাপাশি দেশি কাঠবাদাম বা চীনা বাদাম ও কিসমিস তালিকায় রাখতে পারেন। তবে চেষ্টা করবেন কাজু বাদাম কম করে খাওয়ার। আর যদি এর সাথে আখরোট খেতে পারেন, সেটা অনেক স্বাস্থ্যকর একটি খাবার হবে।

মাছ-সুস্থ থাকতে কি খাবেন-cybersheba.com

প্রোটিনের চাহিদা পূরণে মুরগি ও মাছ

বয়স ৩০ পার হলেও কিন্তু শরীরে আমিষের চাহিদা থাকে। তাই সুস্থ থাকতে কি খাবেন এটা বোঝার জন্য এটা বোঝার জন্য খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন দেশি মুরগির গোশ রাখতে পারেন। যদি ফার্মের মুরগি খেতে হয় তাহলে চেষ্টা করুন এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ভিতরে মুরগি কিনতে। সকল প্রকার চর্বি বর্জনীয়। কিন্তু মাছের তেল আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর। তবে সামুদ্রিক মাছ আরো বেশি স্বাস্থ্যকর। আমাদের মধ্যে অনেকে ছোট মাছ খেতে না চাইলেও এই মাছ কিন্তু চোখের জন্য খুবই উপকারী। তবে সকল প্রকার রেড মিট বা লাল গোশত এড়িয়ে চলবেন। নিতান্ত খুব ইচ্ছে হলে সামান্য পরিমাণে খেতে পারেন।

হোল গ্রেইন বা গোটা শস্যের তৈরি খাবার

গোটা শস্য বলতে ওই খাবারগুলোই বোঝায় যেগুলোর কোন অংশ বাদ না দিয়েও খাওয়া যায়। বিশেষ করে উদ্ভিদের বীজ। যেমন- গম, চাল, ওটস, জোয়ার, বার্লি, ভুট্টা ইত্যাদি। পাশাপাশি লাল আটার রুটি, মোটা চাল বা লাল চালের ভাত ইত্যাদি খেতে পারেন। তবে সকল প্রকার রিফাইন্ড বা পরিশোধিত শস্য জানা পরিহার করে চলবেন।

সুস্থ থাকতে কি খাবেন – পুরো পোস্ট করার পরে আপনি সেটা বুঝতে পারছেন। সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ নিরোগ জীবন সকলেই চায়। কিন্তু সুস্থ থাকতে কি খাবেন এবং কি খাওয়া যাবেনা এই বিষয়ে আমাদের ধারণা খুবই কম। আজকের পোস্ট আশা করি আমাদের জানার সেই ঘাটতি টুকু পূরণ করবে।

তথ্যসূত্রঃ
শম্পা শারমিন খান
সহযোগী অধ্যাপক, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স, ঢাকা।

ছবিঃ পেক্সেলস

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/