মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে কি করবেন

মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে কি করবেন - cybersheba.com
মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে ধৈর্য, দূরদর্শিতা, ও শরী‘আতের দিকনির্দেশনা মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়াই উত্তম।

মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে তখন কি করবেন তা আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এসময় অভিভাবকেরা তাদের সন্তানের অবস্থা ও সমাজে তাদের মান-সম্মানের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।

সমাজে অনেক সময় দেখা যায়, একটি মেয়ে পরিবারকে না জানিয়ে বা পিতার অনুমতি না নিয়ে অন্য একটি ছেলের সাথে পালিয়ে যায় এবং পরে তারা বিয়ে করে সংসার শুরু করে। এই ধরনের ঘটনায় পরিবারে বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পিতা-মাতা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং অনেক সময় মেয়েকে ত্যাজ্য করতেও বাধ্য হন। এই পরিস্থিতিতে ইসলামের নির্দেশনা কী, সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে করণীয় কী, এবং ভবিষ্যতে এর প্রতিরোধ কীভাবে করা যায়—এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

শরী‘আতের দৃষ্টিতে পালিয়ে বিয়ে

ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র চুক্তি, যার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। একটি মেয়ে যদি বৈধ অভিভাবকের (ওলি) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে, তবে সেই বিয়ে ইসলামী দৃষ্টিতে বাতিল। যেমনটি সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, “ওলির অনুমতি ছাড়া কোন মেয়ের বিয়ে শুদ্ধ নয়” (আবু দাউদ হা/২০৮৩)। এমন বিয়েতে না ইনসাফ হয়, না সম্মান থাকে এবং তা গুনাহের কাজ হিসেবেই বিবেচিত হয়।

মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে করণীয়

যদি মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে, তবে প্রথমেই সংযম ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা উচিত। এজন্য নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেঃ

  1. প্রথমে মেয়ের অবস্থান ও তার সঙ্গে থাকা ছেলেটির পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন। মেয়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা ও তার অবস্থা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অনেক সময় মেয়ে অন্য ছেলের সাথে না বুঝেই চলে যায় বা ভুল প্ররোচনায় পড়ে।
  2. এরপর দেখতে হবে বিয়ে বৈধভাবে হয়েছে কিনা। যদি বৈধ অভিভাবকের অনুমতি এবং শরীয়তের অন্যান্য শর্ত পূরণ না করে বিয়ে হয়, তাহলে সেটি শরীয়ত মোতাবেক বাতিল বিবেচিত হবে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিয়ে যদি সহিহ না হয়, তবে অভিভাবকের উচিত তাকে বুঝিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈধভাবে নতুন করে বিবাহ সম্পাদন করানো।
  3. মেয়েকে ভালোভাবে বোঝানো প্রয়োজন যে, মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে যাওয়ার এই পথ কখনোই ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। তাকেও বুঝতে হবে যে, নিজের ইচ্ছামতো বিয়ে করলেও সেটি যদি শারঈ শর্ত পূরণ না করে হয়, তাহলে তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।
  4. যদি তার অবস্থান না জানা সম্ভব হয় তাহলে পুলিশের সহায়তা নেওয়া। পুলিশের মাধ্যমে জিডি করে খোঁজ চালানো আইনসম্মত পথ। তবে এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি যাতে মেয়েটির সম্মানহানি না ঘটে।

অনেক সময় মেয়েরা তাদের ক্লোজ বান্ধবীদের সাথে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করে। তাই যাদের সাথে মেয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল, তাদের সাথে কথা বলুন। বিশেষ করে ক্লোজ বান্ধবীদের মাঝে একজন নির্ভরযোগ্য কাউকে বুঝিয়ে বা আবেগের মাধ্যমে তার কাছ থেকে তথ্য বের করার চেষ্টা করুন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়ে অন্য ছেলের সাথে কোথায় গেছে বা তার পরবর্তী পরিকল্পনা সেই বান্ধবী জানে।

এই সময় পরিবার ও সমাজের অন্যান্য সদস্যদের ধৈর্য ধারণ করা ও কৌশলে সহযোগিতা করাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অভিভাবক হিসেবে মেয়ের দোষ না ধরে, তার ভবিষ্যৎ ঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

তওবা ও নতুনভাবে বিয়ে করার পরামর্শ

তওবা ও নতুন ভাবে বিয়ে করার পরামর্শ - মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে কি করবেন - cybersheba.com

মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে যদি দেখা যায়, পালিয়ে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ইসলামি বিধান মানা হয়নি, তবে উভয়কে আন্তরিকভাবে তওবা করতে হবে। এরপর অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে নতুনভাবে বিয়ের আয়োজন করা উচিত। এতে করে তারা জিনা বা অনৈতিক সম্পর্ক থেকে মুক্ত হয়ে বৈধ ও সম্মানজনক দাম্পত্য জীবন শুরু করতে পারবেন।

ইসলামের মূল উদ্দেশ্য পরিবার ও সমাজকে নিরাপদ রাখা এবং প্রতিটি সম্পর্ককে আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত করা।

ইসলামী বিয়ের শর্ত ও প্রক্রিয়া

একটি বৈধ ইসলামী বিয়েতে নিচের বিষয়গুলো আবশ্যকঃ

  • মেয়ের ওলির সম্মতি (সাধারণত পিতা, না থাকলে নিকটতম পুরুষ অভিভাবক)
  • দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী
  • মোহর নির্ধারণ
  • সততা ও ইচ্ছার ভিত্তিতে কনসেন্ট

এই শর্তগুলো পূরণ না হলে বিয়েটি শুদ্ধ হবে না। অতএব, মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব শর্ত পূরণ হয় না এবং তা শরী‘আত অনুযায়ী বৈধ বিবেচিত হয় না।

পিতা মেয়েকে ত্যাজ্য করলে শরী‘আতের নির্দেশনা

শরী‘আতে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার দায়িত্ব ও দায়িত্বশীলতার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কোন সন্তান ভুল করলে বা পাপের পথে গেলে তার জন্য তওবার দরজা খোলা, কিন্তু মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে তাকে ত্যাজ্য করার কোনো শরয়ী অনুমোদন নেই। কুরআন-হাদীসের বহু নির্দেশনায় রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ “যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (বুখারী হা/৫৯৮৪, মুসলিম হা/২৫৫৬)। অতএব, পিতা যদি মেয়েকে ত্যাজ্য করেন, তা গ্রহণযোগ্য নয় এবং উল্টো তিনি নিজেই কবীরা গুনাহে লিপ্ত হবেন।

বিয়ে অবৈধ হলে কি করবেন

মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে যদি বিয়ে অবৈধ হয়, তাহলে উভয়ের উপর ফরয হবে একে অপর থেকে আলাদা হওয়া এবং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। এরপর ইসলামী নিয়মে ওলির অনুমতি নিয়ে বিয়ের আয়োজন করতে হবে।

যদি ছেলে দ্বীনদার ও চরিত্রবান হয়, তাহলে পরিবারের উচিত তাকে মেনে নেওয়া ও মেয়েকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। তবে যদি ছেলেটি দুশ্চরিত্র বা বিপথগামী হয়, তাহলে সন্তানের ঈমানী চেতনার জাগরণ ঘটিয়ে তাকে সত্য পথে ফিরিয়ে আনাই হবে অভিভাবকের দায়িত্ব।

সামাজিক ও মানসিক বিবেচনা

মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে তা সামাজিকভাবে চরম অপমানের কারণ হতে পারে। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের চোখে সম্মান হারিয়ে যায়। কিন্তু এই অবস্থায় কেবল সামাজিক চাপের কারণে চরম সিদ্ধান্ত না নিয়ে, পরিস্থিতির গভীরে যেয়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত।

মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে এক্ষেত্রে ইসলামই আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ পথ দেখায়—ভুল স্বীকার, সংশোধন, এবং সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে। তাই সর্বদা ইসলামের ভিতর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।

ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে করণীয়

মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেলে পরিবারের সবাই খুবী মর্মাহত ও ডিপ্রেশড হয়ে যায়। এরূপ ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সেজন্য পরিবারের করণীয় বিষয়গুলো হলঃ

  • সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া।
  • খোলামেলা পারিবারিক পরিবেশ রাখা যাতে সন্তানরা ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়।
  • বয়সন্ধিকালে সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা।
  • মোবাইল, ইন্টারনেট ব্যবহারে পর্যবেক্ষণ রাখা।
  • উপযুক্ত বয়সে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধভাবে বিয়ের উদ্যোগ গ্রহণ।

শেষ কথা

মেয়ে যদি অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে যায়, তবে তা শুধু পারিবারিক নয় বরং ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি গুরুতর ইস্যু। এই ক্ষেত্রে ধৈর্য, দূরদর্শিতা, ও শরী‘আতের দিকনির্দেশনা মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়াই উত্তম। শরীয়ত অনুযায়ী গঠনমূলক ও সহনশীল আচরণ দ্বারা সম্পর্ক রক্ষা করা যেমন সম্ভব, তেমনি সন্তানকেও ঈমানী চেতনাতে ফিরিয়ে আনা যায়। অভিভাবক হিসেবে মেয়ের দোষ না ধরে, তার ভবিষ্যৎ ঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। তাই রাগ ও ত্যাজ্যের পথ নয়, বরং সংশোধনের পথই হোক পিতা-মাতার আদর্শিক ভূমিকা।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/