ফৌজদারি মামলা থাকলে বিদেশে যাওয়া যায় না। তবে দেওয়ানী মামলা থাকলে যাওয়া যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার সময় ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মামলা থাকলে বিদেশে যাওয়া যায় কিনা – বিদেশ গমনেচ্ছু প্রতিটা ব্যক্তির নিকট এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে মামলা থাকলে কি বিদেশ যাওয়া যায় – এই প্রশ্নের উত্তর কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, তাই এই এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবেনা। আজকের পোষ্ট পুরোটা পড়ার পর এই বিষয়ে আপনার ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
Table of Contents
মামলা থাকলে কি বিদেশ যাওয়া যায়
বিদেশ যাত্রার পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কিনা। অনেকেই জানতে চান, মামলা থাকলে কি বিদেশ যাওয়া যায়? এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনার মামলার ধরণ এবং এর প্রভাবের উপর।
বিদেশ যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রমাণ করে যে আপনি একজন সুনাগরিক। তবে, মামলার ধরণ ও অবস্থা অনেক সময় আপনাকে বিদেশ যাত্রায় বাঁধা হয়ে দেখা দিতে পারে।
মামলার ধরণ ও গুরুত্ব
প্রথমেই জানতে হবে আপনার মামলা কোন ধরণের। মামলাগুলো সাধারণত দুই প্রকার হতে পারেঃ ফৌজদারি মামলা এবং দেওয়ানী মামলা। বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে এই দুই ধরণের মামলার গুরুত্ব এবং প্রভাব আলাদা আলাদা হতে পারে।
রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা, খুন বা মার্ডার, মারামারি-কাটাকাটি, জালিয়াতি বা প্রতারণার মামলা ইত্যাদি হল ফৌজদারি মামলা। এই ধরনের মামলাগুলো সাধারণত বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে এবং এই ধরনের মামলা থাকলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যাবে না।
ফৌজদারি মামলা ও বিদেশ যাত্রা
ফৌজদারি মামলা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধের সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ- খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, জালিয়াতি ইত্যাদি। যদি আপনার নামে এমন কোনও মামলা থাকে, তবে এটি বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।
ফৌজদারি মামলায় যদি আদালতে দোষ প্রমাণিত হয়, তবে আপনার বিদেশ যাত্রার অনুমতি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। মামলা থাকলে কি বিদেশ যাওয়া যায় – এক্ষেত্রে বলতে হয় ফৌজদারী মামলা থাকলে বিদেশ যাওয়া যাবেনা।
দেওয়ানী মামলা ও বিদেশ যাত্রা
দেওয়ানী মামলা সাধারণত সম্পত্তি, জমিজমা, চুক্তিভঙ্গ বা পারিবারিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। এই ধরণের মামলাগুলোর প্রভাব ফৌজদারি মামলার তুলনায় কম গুরুতর।
দেওয়ানী মামলার কারণে বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে সাধারণত বড় কোনও বাধা সৃষ্টি হয় না, তবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়া কিছুটা কঠিন হতে পারে। কিন্ত যেকোনো অপরাধ ছোট থেকে বড় হতে পারে। তাই ফৌজদারী বা দেওয়ানী – যেকোন অপরাধ হতে নিজে এবং পরিবারকে দূরে রাখুন।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও মামলার প্রভাব
বিদেশ যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হলো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। এই সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে, যা আপনার বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা নেই বলে নিশ্চিত করে।
যদি আপনার নামে কোনও ফৌজদারি মামলা থাকে, তবে এই সার্টিফিকেট পাওয়া কঠিন হতে পারে, এবং সেটি আপনার বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে উল্লেখিত কারণে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাতিল হতে পারে-
অনলাইনে আবেদন করার সময় ব্যক্তিগত তথ্য বা ঠিকানার ক্ষেত্রে কোনো ভুল থাকলে, অথবা পাসপোর্টের প্রথম পাতার কপি ১ম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার দ্বারা সত্যায়িত না করলে আবেদনটি বাতিল হতে পারে।
ডকুমেন্ট আপলোডের সময় নির্ধারিত ফরম্যাট (JPG/PNG/GIF/PDF) ও সাইজের (সর্বোচ্চ 200KB) মধ্যে থাকতে হবে, এবং ছবি A4 সাইজের হতে হবে। দেশের বাইরে অবস্থান করলে, পাসপোর্টের তথ্য পাতা বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশন দ্বারা সত্যায়িত করে আপলোড করতে হবে।
চালানের তথ্য সঠিকভাবে প্রদান এবং সঠিক ঠিকানা উল্লেখ করা জরুরি; অন্যথায় আবেদন বাতিল হতে পারে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার আগে সমস্ত তথ্য যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া উচিত যাতে কোনো ভুল না থাকে এবং আবেদনটি সফলভাবে গৃহীত হয়।
আদালতের সিদ্ধান্ত ও বিদেশ যাত্রা
আদালত যদি আপনার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে, তবে আপনি বিদেশ যেতে পারবেন না। এছাড়া, যদি জামিনে থাকেন এবং আদালত আপনার বিদেশ যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাহলে আপনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। তবে, আদালতের অনুমতি পেলে আপনি বিদেশ যাত্রার সুযোগ পেতে পারেন।
আইনি পরামর্শ ও করণীয়
আপনার নামে মামলা থাকলে, বিদেশ যাত্রার আগে আইনি পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন দক্ষ আইনজীবীর সাহায্য নিয়ে আপনি জানতে পারবেন আপনার মামলার বর্তমান অবস্থা এবং বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে কি করণীয়। এছাড়া, আপনার বিরুদ্ধে মামলা থাকলে কিভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় সেই বিষয়েও পরামর্শ পাবেন।
শেষ কথা
মামলা থাকলে কি বিদেশ যাওয়া সম্ভব, তা নির্ভর করে আপনার মামলার ধরণ এবং এর প্রভাবের উপর। ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে বিদেশ যাত্রা কঠিন হতে পারে, তবে দেওয়ানী মামলায় সাধারণত বড় কোন বাধা সৃষ্টি হয় না। তবে, মামলার প্রভাব এবং আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি, এবং আইনি পরামর্শ গ্রহণ করে আপনার বিদেশ যাত্রা নিশ্চিত করা উচিত।