মাদক মামলার আসামি কি বিদেশ যেতে পারবে – এমন প্রশ্ন অনেকের। বাংলাদেশে মাদক মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাদক মামলার আসামি বিদেশে যেতে পারবে কি না?
এই প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই জটিল এবং সেটি নির্ভর করে মামলা কী অবস্থায় আছে, আদালত কোনো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কি না, এমনকি বিদেশি ভিসা প্রাপ্তির জটিলতার উপরও। এই পোস্টে আমরা এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করবো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। তাই মাদক মামলার আসামি কি বিদেশ যেতে পারবে – জানার জন্য পুরো পোস্টটি পড়ুন।
Table of Contents
বাংলাদেশে মাদক মামলার আইনি অবস্থান
বাংলাদেশে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের বিচার হয় ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী। এই আইনের আওতায় কোনো ব্যক্তি মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং শাস্তি হিসেবে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও।
এ ধরনের মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় একজন আসামির বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ হতে পারে, বিশেষত যদি তদন্ত চলছে কিংবা আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে থাকে।
সংবিধান অনুযায়ী বিদেশে যাওয়ার অধিকার
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিকের দেশে চলাচল ও বিদেশে যাতায়াতের অধিকার রয়েছে। তবে, এই অধিকার যৌক্তিক ও আইনি ভিত্তিতে সীমিত করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকে, তবে তদন্ত সংস্থা বা আদালত প্রয়োজন অনুযায়ী বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও ভ্রমণ
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আদালত কোনো ব্যক্তিকে তার মামলার তদন্ত বা বিচারাধীন অবস্থায় বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিশেষ করে যখন মনে করা হয় যে, ওই ব্যক্তি বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বা মামলার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন। তখন তাকে “No Objection Certificate (NOC)” বা অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে দেওয়া হয় না।
মাদক মামলার আসামির ব্যাপারে হাইকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায়
সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে কাউকে বিদেশ যেতে নিষেধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালত স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যথাযথ আইন বা বিধি ছাড়া কাউকে বিদেশ যেতে বাধা দেওয়া সংবিধান ও আইনসম্মত নয়। রায়ের একটি অংশে বলা হয়, “কেবল চিঠির মাধ্যমে কাউকে বিদেশে যেতে নিষেধ করা যাবে না”।
ইমিগ্রেশন বিভাগ ও পুলিশি নির্দেশনা
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ অনেক সময় মাদক মামলার তদন্তাধীন আসামির নামে সংশ্লিষ্ট সংস্থার চিঠি পেলে তাকে বিদেশ গমনে বাধা দেয়। যদিও হাইকোর্টের মতে, এই প্রক্রিয়াটি আদালতের অনুমতি ছাড়া যথাযথ নয়। তবে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই ইমিগ্রেশন বিভাগ এমন চিঠি অনুসরণ করে আসছে।
ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা
যদি কারও বিরুদ্ধে মাদক মামলার অভিযোগ থাকে এবং সেটি বিদেশি দূতাবাসে প্রকাশিত হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। অনেক দেশ তাদের অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা আরোপ করেছে, যেখানে ফৌজদারি মামলার আসামিদের জন্য ভিসা দেওয়া হয় না বা অতিরিক্ত যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
এছাড়াও, যদি ভিসা আবেদন ফর্মে সঠিক তথ্য না দেওয়া হয় (যেমনঃ মিথ্যা তথ্য বা মামলা গোপন), তাহলে তা ভবিষ্যতে ব্ল্যাকলিস্ট বা স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞার কারণ হতে পারে।
মাদক মামলার আসামির ব্যাপারে আইনজীবীদের মতামত
কাকন চন্দ্র দে নামের একজন মন্তব্য করেছেন, “আমি একজন আইনজীবী নই, কিন্তু মাদকের মামলা সহ বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু সাধারণ তথ্য জানি। এমন পরিস্থিতিতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।”
Sharof নামে একজন ল’ইয়ার [আইনজীবি] বলেছেন, “মামলা থাকলে বিদেশে না যাওয়া ই ভালো। আগে মামলা শেষ করুন পরে বিদেশে যান। কারণ আপনি হাজিরা না দিলে বা অনুপস্থিত থাকলে মামলা আপনার বিপক্ষে যেতে পারে।”
এ ধরনের মতামতই বলে দেয়, এই বিষয়টি অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর এবং ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।
মাদক মামলার আসামিদের জন্য পরামর্শ
বেশ কিছু তথ্য-উপত্রের ভিত্তিতে মাদক মামলার আসামি বিদেশ যেতে পারবে কিনা সে জন্য নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলোঃ
- মামলা বিচারাধীন অবস্থায় আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকুন।
- ইমিগ্রেশন বা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের আগে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
- বিদেশ ভ্রমণের আগে আদালতে অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারেন।
- ভিসা আবেদন ফর্মে সব তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
- আদালতের শর্ত বা জামিনের শর্ত ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
তাই মাদক মামলার আসামি থাকা কালীন সময় আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এতে করে আপনার জামিন বাতিল সহ আরো আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন।
শেষ কথা
সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায়, মাদক মামলার আসামি বিদেশ যেতে পারেন কি না, তা নির্ভর করে মামলা কোন পর্যায়ে আছে, আদালতের নির্দেশনা কী, এবং বিদেশি দূতাবাস কী তথ্য চায় তার উপর। এক্ষেত্রে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় কিছুটা স্পষ্টতা দিয়েছে। তবে, সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব এখনো সমস্যার জায়গা। তাই এই ধরনের পরিস্থিতিতে একজন যোগ্য আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।