মেয়েরা বাসের ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে কিভাবে রক্ষা পাবেন

ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে কিভাবে রক্ষা পাবেন-cybersheba.com
ভীড় বাসে যাতায়াতের সময় মেয়েরা প্রায়ই অযাচিত স্পর্শের শিকার হন, যা তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে হীনমন্যতায় ভোগায়।

ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ নারীদের হীনমন্যতায় ফেলে দেয়। ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি এমন একটি সমস্যা, যা বর্তমান সমাজে নারীদের জন্য একটি বড় ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসে বা পাবলিক প্লেসে অযাচিত স্পর্শ, অশালীন মন্তব্য, টিপ্পনী কাটা – এসবই ইভটিজিংয়ের মধ্যে পড়ে।

ইভটিজিং নারীদের মানসিক এবং সামাজিক অগ্রযাত্রার পথে বাধা সৃষ্টি করে। সমাজে যখন নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ বেড়ে যায়, তখন সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা প্রকট হয়ে পড়ে। আজকের পোষ্টে মেয়েরা বাসের ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

বাসে ভীড়ের মধ্যে মেয়েরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন

ভীড় বাসে যাতায়াতের সময় মেয়েরা প্রায়ই অযাচিত স্পর্শের শিকার হন, যা তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে হীনমন্যতায় ভোগায়। এটি একটি গুরুতর সমস্যা, কারণ নারীরা সাধারণত এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পান না এবং তাদের প্রতিবাদ করার সাহস কম থাকে।

নিম্নে এরকম কিছু সাধারণ সমস্যার কথা আলোচনা করা হলো, যা মেয়েরা ভীড় বাসে অযাচিত স্পর্শের কারণে সম্মুখীন হনঃ

  • শারীরিক হয়রানিঃ ভীড় বাসে মেয়েরা বিশেষত অযাচিত স্পর্শের শিকার হন। সাধারণত, একজন পুরুষ অন্যদের ভিড়ের মধ্যে অজুহাত হিসেবে মেয়েদের শরীরের নানা অংশে স্পর্শ করে, যা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। এটি মেয়েদের শারীরিক অস্বস্তি ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • মানসিক আঘাতঃ অযাচিত স্পর্শ শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও নারীদের আঘাত করে। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে, এবং তাদের মনে একটা নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি তৈরি করে। এমন পরিস্থিতিতে নারীরা প্রায়ই অন্যের কাছে তাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে কষ্ট পান।
  • নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতিঃ ভীড় বাসে এই ধরনের স্পর্শের কারণে মেয়েরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করেন। তাদের মনে হয় যে, কখনও না কখনও তারা আবার এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন। এটি তাদের আস্থা ও সাধারণ জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে ।
  • প্রতিবাদ করার অক্ষমতাঃ  ভীড় বাসে মেয়েরা সাধারণত প্রতিবাদ করার সাহস পান না। বাসের অগণিত যাত্রীদের সামনে প্রতিবাদ করা কিংবা অপরাধীকে প্রকাশ্যে চিহ্নিত করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। এজন্য অনেক সময় মেয়েরা চুপচাপ এ ধরনের ঘটনা সহ্য করে চলে যান।
  • সামাজিক কলঙ্কঃ অনেক মেয়েই ভয়ে এবং লজ্জায় এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ করেন না। সামাজিক কলঙ্কের ভয়ে তারা চুপ থেকে যায়। তাদের মনে হয় যে, কেউ তাদের বিশ্বাস করবে না অথবা সমাজ তাদের উপর দোষ চাপাবে।
  • সহানুভূতির অভাবঃ এ ধরনের ঘটনায় মেয়েরা অনেক সময় সহানুভূতি বা সমর্থন পায় না। আশেপাশে বসে থাকা যাত্রীরা সাধারণত কিছুই করেন না, এবং কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরাই ভুলে যান যে, তাদের পক্ষ থেকে সাহায্য পাওয়া সম্ভব।
  • আইনি পদক্ষেপের অভাবঃ বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য এখনও যথেষ্ট আইনি পদক্ষেপের অভাব রয়েছে, যা তাদের এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগ দেয়। অনেক ক্ষেত্রে মামলা করা বা অভিযোগ দায়ের করা খুবই কঠিন এবং আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে।

এই সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পর, মেয়েরা অনেক সময় বাস বা পাবলিক পরিবহনে ভ্রমণ করতে এক ধরনের আতঙ্কিত অনুভব করে। তাদের জন্য এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শক্তিশালী আইন এবং সামাজিক সচেতনতা জরুরি।

বাসের ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়

Move with relative - ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে কিভাবে রক্ষা পাবেন-cybersheba.com

মেয়েরা বাসের ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নিচের কিছু সহজ পদক্ষেপ নিতে পারেনঃ

  • ফোনের মাধ্যমে সংকেত পাঠানোঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে বা কোনো ধরনের অস্বস্তি বা বিপদের সম্মুখীন হলে, ফোনের মাধ্যমে নিকটবর্তী আত্মীয় বা বন্ধুদের জানিয়ে দিতে পারেন।
  • নিরাপদ জায়গায় দাঁড়ানো বা বসাঃ ভীড়ের মধ্যে থাকলেও নিজের জায়গা রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতটুকু সম্ভব আপনার ব্যক্তিগত জায়গা বেছে নিন এবং দূরত্ব বজায় রেখে অন্যদের কাছাকাছি থাকুন। যদি আপনার আশেপাশে কেউ খুব কাছাকাছি চলে আসে, তবে একটু দূরে সরে আসুন বা প্রতিবাদ জানান।
  • ব্যাগ ব্যবহার করুন বাধা হিসেবেঃ আপনার ব্যাগ বা অন্য কোন বড় জিনিস ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্পেস রক্ষা করুন। যদি কেউ খুব কাছাকাছি চলে আসে, তবে ব্যাগটি সামনে রেখে একটু দূরে সরে আসুন। ব্যাগটি শরীরের সামনে বা পাশে ধরে রাখলে আপনি আরো সুরক্ষিত অনুভব করবেন।
  • সরাসরি স্পর্শ থেকে এড়িয়ে চলুনঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য যতটা সম্ভব সরাসরি স্পর্শ থেকে এড়িয়ে চলুন। যদি আপনি খেয়াল করেন যে কেউ আপনার শরীরের অপ্রত্যাশিত জায়গায় স্পর্শ করছে, তবে মৃদু কিন্তু দৃঢ়ভাবে সরে আসুন এবং সেই ব্যক্তিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
  • বন্ধু বা পরিবারের সাথে ভ্রমণ করুনঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য যতটা সম্ভব একা ভ্রমণ করার পরিবর্তে বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভ্রমণ করুন। ভীড় বাসে একা থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায়, কিন্তু একাধিক লোক থাকলে, একে অপরকে রক্ষা করতে সহজ হবে এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে।
  • দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলুনঃ যদি কেউ আপনার সঙ্গে অযাচিত আচরণ করে, তবে তার প্রতি দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলুন। কখনও কখনও স্পষ্টভাবে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে আপনি অপরাধীকে বুঝিয়ে দিতে পারবেন যে এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
  • আপনার অধিকার জানুনঃ আপনার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকুন। ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি সম্পর্কে আইনগত পদক্ষেপের ব্যাপারে জানলে আপনি পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আরো আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন। আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য নারীরা বিভিন্ন সংস্থায় যোগাযোগ করতে পারেন।

এই সকল পদক্ষেপ অনুসরণ করলে মেয়েরা ভীড় বাসে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। তবে, সামাজিক সচেতনতা ও শক্তিশালী আইনগত ব্যবস্থা ছাড়া এই সমস্যা পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়। তাই সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যাতে নারীরা সকল জায়গায় নিরাপদে চলাচল করতে পারেন।

বাসে ভীড়ের মধ্যে অযাচিত স্পর্শের শিকার হলে নারীদের জন্য আইনগত সুরক্ষা পাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি একটি গুরুতর অপরাধ, যার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। নারী এবং শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

  • আইনগত সুরক্ষাঃ যদি কোনো নারী বাসে অযাচিত স্পর্শ বা যৌন হয়রানির শিকার হন, তাহলে প্রমাণ সহ তিনি স্থানীয় থানায় অভিযোগ করতে পারেন। এটি অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং শাস্তির ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।
  • ২৪/৭ হেল্পলাইনঃ নারীদের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ একটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে, যার মাধ্যমে তারা যেকোনো সময় সাহায্য পেতে পারেন।
  • এমবোল্ড/উইম্যান হেল্পলাইনের সেবাঃ এমবোল্ড/উইম্যান হেল্পলাইনের সেবা নারীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ কিছু হেল্পলাইন এবং সেবা প্রদানকারী সংস্থা রয়েছে, যারা ভিকটিমদের আইনি সহায়তা এবং উপযুক্ত সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।

যোগাযোগ নাম্বার

  • বাংলাদেশ পুলিশ হেল্পলাইন (৯৯৯): বাংলাদেশের পুলিশ হেল্পলাইন নম্বর ৯৯৯ সার্বক্ষণিকভাবে সক্রিয় থাকে এবং যেকোনো ধরনের জরুরি অবস্থা, অপরাধ বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যায় দ্রুত সহায়তা প্রদান করে। এটি বিশেষভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনি বাসে বা জনবহুল স্থানে কোনো অযাচিত স্পর্শের শিকার হন। এক্ষেত্রে আপনি ৯৯৯ নম্বরে কল করে অবিলম্বে পুলিশ সহায়তা পেতে পারেন।
  • নারী নির্যাতন বিরোধী সেল (০১৭১১০৫৫৫৫৫): নারী নির্যাতন বিরোধী সেলটি বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট, যা নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, এবং অন্যান্য নারী সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই সেলটি ২৪ ঘণ্টা কর্মরত থাকে এবং নারীদের আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদানে সহায়তা করে। আপনি যদি কোনো ইভটিজিং বা অযাচিত স্পর্শের শিকার হন, তখন এই নম্বরে কল করতে পারেন।
  • উইম্যান হেল্পলাইন (Embassy of Women) (০১৮৪৭৪৭০০৭০): উইম্যান হেল্পলাইন (Embassy of Women) একটি সংগঠন, যা নারীদের যেকোনো ধর্ষণ, ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি সহায়তায় কাজ করে। এই হেল্পলাইন নম্বরটি আপনাকে আইনি সহায়তা, নিরাপত্তা এবং মানসিক সহায়তা প্রদানে সাহায্য করবে। আপনি যদি কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে ০১৮৪৭৪৭০০৭০ নম্বরে যোগাযোগ করে আপনি জরুরি সহায়তা পেতে পারেন।
  • জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (০১৭১২০০০৭৭৭): জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি নারীদের আইনি অধিকার রক্ষার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে। এটি নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, এবং অন্যান্য অপরাধের শিকার নারীদের আইনি পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান করে। তাদের ফোন নম্বর ০১৭১২০০০৭৭৭, যা দিয়ে আপনি আইনি সহায়তা ও পরামর্শ নিতে পারেন।

এলাকা ভিত্তিক নারী নির্যাতন বিরোধী সেল সমূহঃ

  • রাজশাহী- ০১৭১৮০০৪০২
  • খুলনা- ০১৭১৮০০৪০৩
  • সাতক্ষীরা- ০১৭১৮০০৪০৪
  • যশোর- ০১৭১৮০০৪০৫
  • বেনাপোল- ০১৭১৮০০৪০৮
  • ঢাকা- ০১৭১৮০০৪০০, ০১৭১৮০০৪০১, ০১৭১৮০০৪০৬, ০১৭১৮০০৪০৭, ০১৭১৩৩৩৫৯৯১

এছাড়াও, ইভটিজিং বা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন এনজিও এবং সামাজিক সংগঠন সাহায্য প্রদান করে থাকে। নারী নির্যাতন বিরোধী বিভিন্ন আইন ও সুরক্ষার মাধ্যমে আপনি সহজেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। সুতরাং, এধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইনগত সহায়তা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ইভটিজিং প্রতিরোধের টিপস

ভীড় বাসে মেয়েদের অযাচিত স্পর্শের শিকার হওয়া একটি দুঃখজনক কিন্তু পরিচিত ঘটনা। ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে বাঁচতে কিছু কার্যকরী টিপস মেনে চললে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হতে পারে। নিচে এমন কিছু প্রতিরোধমূলক টিপস তুলে ধরা হলো যা আপনাকে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবেঃ

  • মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন কোর্স বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য আত্মরক্ষার কৌশল শেখা নারীদের আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতা বাড়ায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, যা বিপদের সময় কাজে আসতে পারে।
  • বাসের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ এবং তত্ত্বাবধানে রাখাঃ বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নারী যাত্রীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস, এবং নির্দিষ্ট স্টপেজে নিরাপত্তা কর্মী থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
  • সমাজে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করাঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ, এবং কমিউনিটিতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা ইভটিজিং প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে সঠিক আচরণ সৃষ্টি করাঃ ছোটবেলা থেকেই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মূল্যবোধ ও নারীর প্রতি সম্মানবোধ শেখাতে হবে। পরিবারের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য নেওয়াঃ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হলে তাৎক্ষণিকভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য নেওয়া উচিত। আইনজীবীদের পরামর্শ এবং সহায়তা নিতে ভয়ের কিছু নেই।
  • চাপা স্বরে প্রতিবাদ না করে সাহসিকতার সাথে প্রতিরোধ করাঃ নির্যাতনের শিকার হলে চুপ থাকার বদলে জোরে প্রতিবাদ জানান। আপনার কণ্ঠস্বর অপরাধীকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে এবং অন্যদের সহায়তা পেতে সাহায্য করতে পারে।
  • বন্ধু বা পরিবারের কারো সাথে যোগাযোগ রাখুনঃ যখনই সম্ভব, বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। কোন স্থানে গেলে আপনাকে খেয়াল রাখতে বলুন।
  • নিজেকে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলাঃ  নিজের ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন করার মাধ্যমে মেয়েরা নিজেদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াতে পারে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে মেয়েরা নিজেকে আরও ক্ষমতাবান করে তুলতে পারে।
  • ব্যাগে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখাঃ  নিজের নিরাপত্তার জন্য ব্যাগে পেপার স্প্রে বা ছোট কোনো আত্মরক্ষার সরঞ্জাম রাখতে পারেন। বিপদের মুহূর্তে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।

অযাচিত স্পর্শ বা যৌন হয়রানীর ঘটনা রিপোর্ট করার গুরুত্ব

ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে বা ইভটিজিংয়ের শিকার হলে অনেক মেয়েই ভয়ে বা সামাজিক বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য চুপ থাকেন। কিন্তু, এই ধরনের ঘটনা রিপোর্ট করার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। এতে নিজেকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করা সম্ভব।

  • আইনগত সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগঃ যখন কোনো নির্যাতনের শিকার হন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানালে অপরাধীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। রিপোর্ট করার মাধ্যমে আইনের সুরক্ষার অধিকার পাওয়া সম্ভব হয় এবং অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া যায়।
  • অপরাধ কমানোর সম্ভাবনাঃ অপরাধীরা জানে যে, তারা ধরা পড়বে না বা শাস্তি পাবে না, তাই তারা সাহস পায়। রিপোর্ট করা হলে অপরাধীরা ভয় পাবে এবং একই কাজ করার সাহস কমে যাবে।
  • আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা একজন নারীকে আরও সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এতে নিজের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • অন্যদের জন্য একটি উদাহরণ সৃষ্টিঃ যখন একজন মেয়ে সাহসের সঙ্গে ঘটনা রিপোর্ট করেন, তা অন্য নারীদেরও একইভাবে প্রতিবাদ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এটি একটি সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
  • পরিবহন ব্যবস্থায় সচেতনতা বৃদ্ধিঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য রিপোর্ট করা হলে পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেবে এবং যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অতএব, নিজের ও অন্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ইভটিজিং বা অযাচিত স্পর্শের ঘটনা রিপোর্ট করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি

ভিড়ের মধ্যে অযাচিত স্পর্শ বা ইভটিজিং প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে সচেতনতার অভাবের কারণে অনেক সময় অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। তাই, ইভটিজিং প্রতিরোধে সামাজিকভাবে সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

  • সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিঃ  সামাজিক মাধ্যম, গণমাধ্যম, ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইভটিজিংয়ের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা জরুরি। এতে সবাই বুঝতে পারবে কেন এ ধরনের কাজ অন্যায় এবং এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কেন গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রশিক্ষণ ও কর্মশালাঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ, ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মরক্ষা এবং সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও শেখানো উচিত কীভাবে নারীদের সম্মান করতে হয় এবং ইভটিজিং থেকে বিরত থাকতে হয়।
  • কমিউনিটি প্রোগ্রামঃ স্থানীয় কমিউনিটিতে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম বা ক্যাম্পেইন আয়োজন করে সবাইকে সচেতন করা যেতে পারে। এতে প্রত্যেক সদস্যের দায়িত্ব সম্পর্কে সবাই অবগত থাকবে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে একসঙ্গে দাঁড়াতে পারবে।
  • ইভটিজিংয়ের বিরোধিতায় ভূমিকাঃ প্রত্যেক ব্যক্তি যদি ইভটিজিংয়ের ঘটনা দেখে প্রতিবাদ জানায়, তাহলে অপরাধীরা সহজে সাহস পাবে না। এজন্য প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
  • নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠাঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য নারীদের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা এবং সমাজে নারীর অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।
  • গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করাঃ ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য প্রশাসনকে সচেতন করতে হবে যাতে তারা গণপরিবহনে সিসিটিভি ক্যামেরা, মহিলা বাস সেবা, এবং সচেতন ড্রাইভার ও কন্ট্রাক্টরদের দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করে।

সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি একটি ধীর প্রক্রিয়া হলেও এটি ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করতে পারে। সবাই মিলে সচেতন হলে ইভটিজিংয়ের হার অনেকটাই কমানো সম্ভব।

বাসের ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য পুরুষেরা কীভাবে সাহায্য করতে পারেন

ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ নারীদের খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরুষদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিচে কিছু উপায় দেওয়া হলো যেগুলোর মাধ্যমে পুরুষেরা সাহায্য করতে পারেনঃ

  • সচেতনতা ও সম্মান প্রদর্শনঃ পুরুষেরা নারীদের ব্যক্তিগত পরিসরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে যেন নিজেদের অঙ্গভঙ্গি বা আচরণে কেউ অস্বস্তি অনুভব না করেন।
  • অপরাধ লক্ষ্য করলে হস্তক্ষেপ করাঃ যদি কোনো পুরুষ লক্ষ্য করেন যে কোনো নারী অযাচিত স্পর্শের শিকার হচ্ছেন, তাহলে সাহসী হয়ে পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। তবে অবশ্যই ভদ্রভাবে ও সচেতনতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • সুরক্ষার জন্য পরিবেশ তৈরি করাঃ ভীড়ের মধ্যে নারীরা যাতে নিরাপদ বোধ করেন, সেজন্য পুরুষেরা পাশে দাঁড়িয়ে একটি সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করতে পারেন। তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার এই ছোট প্রচেষ্টাও অনেক বড় পার্থক্য আনতে পারে।
  • সমর্থন প্রদানঃ নারীরা যদি কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হন এবং সাহায্য চান, তখন পুরুষেরা সহানুভূতির সঙ্গে তাদের সাহায্য করতে পারেন এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করতে পারেন।
  • ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কথা বলাঃ সমাজে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং এ বিষয়ে অন্যদের সচেতন করে পুরুষেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। অন্য পুরুষদের মধ্যে ইভটিজিংয়ের বিপদ এবং অপমানের বিষয়টি তুলে ধরা দরকার।
  • সহজলভ্যতা প্রদান করাঃ ভিড়ের মধ্যে নারীদের স্বস্তি দেওয়ার জন্য নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করা বা জায়গা ছেড়ে দেওয়া একটি সহায়ক পদক্ষেপ হতে পারে।

পুরুষেরা এভাবে সচেতনতা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারেন। ভীড়ের মধ্যে পুরুষের অযাচিত স্পর্শ ঠেকানো একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যেখানে সবার অবদানই গুরুত্বপূর্ণ।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *