ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বিভিন্ন দেশে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ দিন দিন সহজ হয়ে উঠছে, এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা-ছাড়াই ভ্রমণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এই সুবিধার মধ্যে ২২টি দেশ রয়েছে যেগুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকরা কোনো ধরনের অনুমতিপত্র ছাড়া প্রবেশ করতে পারবেন।
বিশ্বায়নের এই যুগে পর্যটন, ব্যবসা এবং উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণের আগে ভিসা পেতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হতে পারে। সেই তুলনায় যেসব দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়, সেসব দেশে বাংলাদেশিদের জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি দুর্দান্ত সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এই পোষ্টে আমরা ২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা, এবং ই-ভিসা সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলোর বিস্তারিত তালিকা উপস্থাপন করবো। পাশাপাশি, এ ধরনের সুবিধার আর্থ-সামাজিক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের দিকগুলোও আলোচনা করা হবে।
Table of Contents
ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রাপ্ত দেশসমূহ
অন-এরাইভাল ভিসা একটি বিশেষ ধরনের ভিসা সুবিধা, যা গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পরেই প্রক্রিয়াকরণ এবং অনুমোদন করা হয়। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে বিদেশ ভ্রমণকারী ব্যক্তি বিমানবন্দর, স্থলবন্দর বা সমুদ্রবন্দরে পৌঁছানোর পর সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকরা ১৬টি দেশে এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। এসব দেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে ভিসা পেতে আপনি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর এটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
অন-অ্যারাইভাল ভিসার মূল বৈশিষ্ট্য
- প্রক্রিয়াকরণ সময়ঃ অন-অ্যারাইভাল ভিসা সাধারণত আগাম অনুমোদনের প্রয়োজন ছাড়াই সরাসরি বন্দরেই প্রদান করা হয়।
- স্বল্প মেয়াদিঃ এই ভিসার মাধ্যমে দেশটিতে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হয়।
- ট্রাভেল ডকুমেন্টঃ পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় নথি ইমিগ্রেশন অফিসে প্রদর্শনের পরই ভিসা প্রদান করা হয়।
- খরচঃ অনেক দেশ বিনামূল্যে এই সুবিধা প্রদান করে, তবে কিছু ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হয়।
- শর্তাবলীঃ গন্তব্যস্থলে অবস্থানের সময় নির্দিষ্ট শর্ত এবং আইন মানতে হয়।
যেসব দেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা পাওয়া যায়
অনেক দেশ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা প্রদান করে। ২০২৫ সালে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
দেশের নাম | সর্বোচ্চ থাকার সময় | ভিসা ফি | বিশেষ শর্তাবলী |
---|---|---|---|
বলিভিয়া | ৩০ দিন | $৬০ | পর্যটকদের জন্য প্রযোজ্য |
বুরুন্ডি | ৩০ দিন | $৪০ | ফেরার টিকিট ও পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে |
কম্বোডিয়া | ৩০ দিন | $৩০ | বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর থেকে সংগ্রহযোগ্য |
কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ | ৩০ দিন | $২৫ | অন-অ্যারাইভাল ফরম পূরণ করতে হবে |
কমোরো দ্বীপপুঞ্জ | ৪৫ দিন | $৫০ | পর্যটকদের জন্য অনুমোদিত |
জিবুতি | ৩০ দিন | $৪০ | ইমিগ্রেশনে নথিপত্র প্রদর্শন আবশ্যক |
গিনি-বিসাউ | ৯০ দিন | $৮৫ | ফেরার টিকিট থাকতে হবে |
মালদ্বীপ | ৩০ দিন | ফ্রি | হোটেল বুকিং ও পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে |
মৌরিতানিয়া | ৩০ দিন | $৫৫ | নৌবন্দর ও বিমানবন্দর থেকে সংগ্রহযোগ্য |
মোজাম্বিক | ৩০ দিন | $৫০ | পর্যটকদের জন্য অনুমোদিত |
নেপাল | ১৫-৯০ দিন | $২৫-$১০০ | বিমানবন্দরে সংগ্রহযোগ্য |
সামোয়া | ৬০ দিন | ফ্রি | হোটেল বুকিং ও পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে |
সিয়েরা লিওন | ৩০ দিন | $৮০ | পর্যটকদের জন্য প্রযোজ্য |
সোমালিয়া | ৩০ দিন | $৫০ | মোগাদিশু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সংগ্রহযোগ্য |
তিমুর-লেস্তে | ৩০ দিন | $৩০ | ফেরার টিকিট ও যথাযথ ডকুমেন্ট থাকতে হবে |
টুভালু | ৩০ দিন | $৫০ | পর্যটকদের জন্য অনুমোদিত |
অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা
এই ভিসার মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণ আরও সহজ এবং সময়সাশ্রয়ী হয়। অন-অ্যারাইভাল ভিসার কিছু প্রধান সুবিধাঃ
- আগাম ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই।
- শর্ট নোটিসে ভ্রমণের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
- ভ্রমণকারীরা ইমিগ্রেশনে সরাসরি ভিসা গ্রহণ করতে পারেন।
অন-অ্যারাইভাল ভিসা পদ্ধতি আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে। বিশেষ করে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য এই পদ্ধতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াত সহজ করেছে। তবে, এই ভিসার শর্তাবলী এবং সীমাবদ্ধতাগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশ ভ্রমণের আগে সর্বশেষ তথ্য যাচাই করে সঠিক পরিকল্পনা করা উচিত।
ইটিএ প্রয়োজন এমন দেশসমূহ
ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ETA) হল একটি ডিজিটাল অনুমতি যা ভ্রমণের পূর্বে অনলাইনে সংগ্রহ করতে হয়। এটি পাসপোর্টের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ২০২৫ সালে কিছু দেশ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ইটিএ পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
২০২৫ সালে যেসব দেশে ইটিএ লাগবে
২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য তিনটি দেশে ইটিএ প্রয়োজন হবেঃ
দেশের নাম | ইটিএ সংগ্রহের লিংক | প্রক্রিয়ার সময় |
---|---|---|
শ্রীলঙ্কা | ETA আবেদন | ২৪-৪৮ ঘণ্টা |
কেনিয়া | ETA আবেদন | ১-৩ দিন |
সেশেলস | ETA আবেদন | ২৪ ঘণ্টা |
ইটিএ ব্যবস্থার সুবিধা
- দূতাবাসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যায়।
- প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং সহজ।
- অনেক ক্ষেত্রে এটি ভিসার তুলনায় সাশ্রয়ী।
ইটিএ প্রক্রিয়াটি সহজ এবং ভ্রমণের জন্য সময় বাঁচায়। এটি সাধারণত পর্যটকদের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং সীমান্তে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার ঝামেলা এড়াতে সাহায্য করে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইটিএ-নির্ভর দেশগুলোর সংখ্যা বাড়তে পারে, তাই সর্বদা সর্বশেষ আপডেট সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
ই-ভিসা প্রাপ্ত দেশসমূহ
ইলেক্ট্রনিক ভিসা (ই-ভিসা) হল একটি ডিজিটাল ভিসা যা অনলাইনে আবেদন এবং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এটি সাধারণত পর্যটন, ব্যবসা, বা সংক্ষিপ্ত মেয়াদী কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। ই-ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াটি সরাসরি সংশ্লিষ্ট দেশের অভিবাসন ওয়েবসাইট থেকে করা যায়। এটি সময় সাশ্রয়ী এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ করে তোলে।
২০২৫ সালে যেসব দেশে ই-ভিসা প্রয়োজন
ই-ভিসা হল একটি অনলাইন ভিত্তিক ভিসা আবেদন ব্যবস্থা, যা দূতাবাসে না গিয়ে সরাসরি অনলাইনে আবেদন করা যায়। এটি সাধারণত পর্যটন, ব্যবসা বা সংক্ষিপ্ত মেয়াদী ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
দেশের নাম | ই-ভিসা আবেদন লিংক | প্রক্রিয়ার সময় | নির্ধারিত ফি |
---|---|---|---|
আলবেনিয়া | ই-ভিসা আবেদন | ৩-৫ দিন | $৫০ |
আজারবাইজান | ই-ভিসা আবেদন | ২-৪ দিন | $২০ |
বাহরাইন | ই-ভিসা আবেদন | ৩-৭ দিন | $৭০ |
বেনিন | ই-ভিসা আবেদন | ৫-৭ দিন | $৩০ |
বতসোয়ানা | ই-ভিসা আবেদন | ৪-৬ দিন | $৫০ |
ক্যামেরুন | ই-ভিসা আবেদন | ৩-৫ দিন | $৪০ |
কলম্বিয়া | ই-ভিসা আবেদন | ৫-১০ দিন | $৩৫ |
গিনি | ই-ভিসা আবেদন | ৩-৭ দিন | $৪৫ |
ইথিওপিয়া | ই-ভিসা আবেদন | ৩-৫ দিন | $৩০ |
গ্যাবন | ই-ভিসা আবেদন | ৩-৬ দিন | $৬০ |
জর্জিয়া | ই-ভিসা আবেদন | ২-৫ দিন | $২৫ |
কাজাখস্তান | ই-ভিসা আবেদন | ৪-৭ দিন | $৩০ |
কিরগিজস্তান | ই-ভিসা আবেদন | ৫-১০ দিন | $৪০ |
মালয়েশিয়া | ই-ভিসা আবেদন | ৫-৭ দিন | $৪০ |
মায়ানমার | ই-ভিসা আবেদন | ৩-৫ দিন | $৫০ |
ই-ভিসার সুবিধাসমূহ
- অনলাইনে আবেদন করা যায়, দূতাবাসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
- পাসপোর্টের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে।
- ভ্রমণের পূর্বে অনুমতি পাওয়া নিশ্চিত হয়।
- ভ্রমণ পরিকল্পনা দ্রুত এবং সহজ হয়।
ই-ভিসা একটি আধুনিক এবং সহজ সমাধান যা ভ্রমণকারীদের জন্য সময় এবং ঝামেলা কমায়। এটি বিশেষত দীর্ঘ মেয়াদী ভ্রমণ বা ব্যবসার জন্য কার্যকর। ২০২৫ সালে আরও বেশি বাংলাদেশি ভ্রমণকারী ই-ভিসার সুবিধা গ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার পূর্বে ই-ভিসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানা জরুরি।
ভিসা অব্যাহতি পেয়েছে এমন দেশ
ভিসা অব্যাহতি (Visa-Free) এর অর্থ হলো, নির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকরা এই দেশগুলোতে কোনো পূর্বানুমোদিত ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন। সাধারণত পর্যটন বা সংক্ষিপ্ত মেয়াদী ভ্রমণের জন্য এটি প্রযোজ্য।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীরা যেসব দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারবেন, তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো:
দেশের নাম | সর্বোচ্চ থাকার সময় | বিশেষ শর্তাবলী |
---|---|---|
বাহামাস | ৩০ দিন | পর্যটকদের জন্য, ফেরার টিকিট থাকতে হবে |
বার্বাডোস | ৯০ দিন | অস্থায়ী বসবাস বা কর্মসংস্থানের অনুমতি নেই |
ভুটান | ১৪ দিন | শুধুমাত্র পর্যটন ও পারিবারিক ভ্রমণের জন্য |
ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ | ৩০ দিন | পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশ |
কুক দ্বীপপুঞ্জ | ৩১ দিন | পর্যটন উদ্দেশ্যে প্রবেশযোগ্য |
ডমিনিকা | ২১ দিন | ফেরার বিমান টিকিট থাকতে হবে |
ফিজি | ৪ মাস | পর্যটকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী থাকার অনুমতি |
গ্রেনাডা | ৩ মাস | পর্যটকদের জন্য প্রযোজ্য |
হাইতি | ৯০ দিন | বাংলাদেশিদের জন্য সম্পূর্ণ ভিসা মুক্ত |
জ্যামাইকা | ৩০ দিন | পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশ |
কিরিবাতি | ৩০ দিন | পর্যটন ও সংক্ষিপ্ত ব্যবসায়িক সফরের জন্য |
মাদাগাস্কার | ৯০ দিন | শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্য |
মাইক্রোনেশিয়া | ৩০ দিন | পর্যটকদের জন্য প্রযোজ্য |
মন্টসেরাট | ৬ মাস | পর্যটন উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে প্রবেশযোগ্য |
নিউ | ৩০ দিন | পর্যটকদের জন্য অনুমোদিত |
রুয়ান্ডা | ৩০ দিন | পর্যটকদের জন্য ভিসা ছাড়া প্রবেশ |
সেন্ট কিট্স এবং নেভিস | ৩০ দিন | ফেরার টিকিট থাকা আবশ্যক |
সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইন্স | ৩০ দিন | পর্যটকদের জন্য প্রযোজ্য |
দ্যা গাম্বিয়া | ৯০ দিন | পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশ |
ত্রিনিদাদ ও টোবাগো | ৯০ দিন | পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশ |
ভানুয়াতু | ৩০ দিন | পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশ |
হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান
হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স একটি বৈশ্বিক র্যাংকিং ব্যবস্থা যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের শক্তিমত্তা নির্ধারণ করে। এই ইনডেক্স দেখায় কোন দেশের নাগরিকরা কতগুলো দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন।
ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স ২০২৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাসপোর্ট বর্তমানে ১০০তম স্থানে রয়েছে। এর ফলে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ৪০টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা পেতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশি নাগরিকরা শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল এবং অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সহজেই প্রবেশ করতে পারেন, যদিও অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দিষ্ট শর্তাবলী অনুসরণ করতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনামূলক অবস্থান
দেশ | অবস্থান | ভিসা-মুক্ত/অন-অ্যারাইভাল দেশ সংখ্যা |
---|---|---|
মালদ্বীপ | ৫৩তম | ৯৪টি |
ভারত | ৮৫তম | ৫৭টি |
ভুটান | ৯০তম | ৫৩টি |
শ্রীলঙ্কা | ৯৬তম | ৪২টি |
বাংলাদেশ | ১০০তম | ৪০টি |
পাকিস্তান | ১০৩তম | ৩২টি |
আফগানিস্তান | ১০৬তম | ২৬টি |
বিশ্বের শীর্ষ পাসপোর্ট তালিকা
র্যাংক | দেশ | ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন/অন-অ্যারাইভাল দেশ সংখ্যা |
---|---|---|
১ | সিঙ্গাপুর | ১৯৫টি |
২ | জাপান | ১৯৩টি |
৩ | ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন | ১৯২টি |
হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স প্রতি তিন মাস অন্তর বিশ্বব্যাপী পাসপোর্টের শক্তিমত্তা মূল্যায়ন করে একটি সূচক প্রকাশ করে। এই সূচকটি পাসপোর্টধারীদের ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা অন-অ্যারাইভাল ভিসার মাধ্যমে কতটি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন, তার উপর ভিত্তি করে র্যাংকিং নির্ধারণ করে।
ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন এমন দেশের আর্থিক প্রভাব
ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা ভ্রমণের সুবিধা একটি দেশের অর্থনীতির উপর সরাসরি ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এটি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিভিন্নভাবে লাভজনক হতে পারে।
- পর্যটন ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার প্রসারঃ ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশি ব্যবসা ও পর্যটন খাত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ফলেঃ
- বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, এবং স্থানীয় বাজারের আয় বাড়ায়।
- বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সহজেই বিদেশে গিয়ে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারেন।
- রেমিট্যান্স প্রবাহের উপর প্রভাবঃ ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা সহজ ভিসা প্রক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতেঃ
- বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
- বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) বৃদ্ধিঃ যেসব দেশে বাংলাদেশিরা ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা সহজে ভ্রমণ করতে পারেন, সেখানে নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়, যার ফলেঃ
- বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশি বাজার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত হয় এবং বাংলাদেশি পণ্য ও পরিষেবার জন্য নতুন বাজার খোলা সম্ভব হয়।
- এয়ারলাইন ও পর্যটন শিল্পের প্রসারঃ ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা ভ্রমণের সুবিধা থাকলে এয়ারলাইন, ট্যুরিজম এজেন্সি এবং হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক উন্নতি ঘটে। এর ফলেঃ
- দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
- বাংলাদেশি পর্যটকরা আরও বেশি দেশে ভ্রমণ করার সুযোগ পান, যা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের একটি বড় উৎস হয়ে ওঠে।
- আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও স্কলারশিপঃ অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চান, কিন্তু জটিল ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে তারা বাধাগ্রস্ত হন। সহজ ভিসা সুবিধা থাকলেঃ
- বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা উন্নত দেশগুলোতে পড়াশোনার সুযোগ বেশি পায়।
- বিদেশে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসা দক্ষ কর্মশক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হয়।
ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা অন-অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সুযোগ হতে পারে। এটি পর্যটন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
২০২৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন গন্তব্যের সংখ্যা বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক যাতায়াতকে আরও সহজ করবে। তবে, ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন বা ভ্রমণ করার সুযোগগুলি সীমিত এবং প্রতিটি দেশের মধ্যে শর্তাবলী ভিন্ন হতে পারে। এর ফলে, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য তাদের ভ্রমণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত জরুরি।
যেহেতু বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতির প্রভাবের কারণে এসব নিয়ম এবং শর্তাবলীর পরিবর্তন হতে পারে, সেহেতু সবসময় আপডেটেড তথ্য চেক করা প্রয়োজন। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ভ্রমণ একটি ভবিষ্যত সম্ভাবনা তৈরি করছে, যা উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।