বিদেশে যাওয়ার মেডিকেল টেস্ট অনেক দেশেই বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে কাজের ভিসা বা অন্যান্য যেসব ভিসা প্রক্রিয়ায় শারীরিক সুস্থতার প্রমাণ প্রয়োজন, সেখানে এই টেস্টের গুরুত্ব অপরিসীম।
মেডিকেল টেস্টে সাধারাণত শরীরের নানা পরীক্ষা করা হয় যেমন, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, যক্ষা পরীক্ষাসহ বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা। আজকের পোস্টে বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্ট কোথা থেকে করাবেন সেই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
Table of Contents
- বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্ট কি?
- বিদেশে যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্টের প্রয়োজনীয়তা
- বিদেশে যাওয়ার জন্য সাধারণ মেডিকেল টেস্ট
- বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্ট কোথা থেকে করাবেন?
- পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট চেক
- যেসব কারণে মেডিকেল রিপোর্ট UNFIT হয়
- বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি: মেডিকেল টেস্টের পরবর্তী পদক্ষেপ
- বিদেশ যাওয়ার পূর্বের প্রস্তুতি ও করণীয়
- ভিসা প্রক্রিয়া: মেডিকেল টেস্টের সাথে সম্পর্কিত
- মেডিকেল টেস্টের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া
- ফাইনাল স্টেপস: মেডিকেল টেস্টের পর
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্টের প্রয়োজনীয়তা
বিদেশে যাওয়ার বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রাপ্তির জন্য মেডিকেল টেস্ট প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব দেশে কাজে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রয়োজন, সেসব দেশে বাধ্যতামূলক মেডিকেল টেস্ট করা হয়ে থাকে। এই টেস্টে শরীরের অবস্থা, নানা রোগের উপস্থিতি এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, ব্যক্তি বিদেশে কাজের জন্য উপযুক্ত।
বিদেশে যাওয়ার জন্য সাধারণ মেডিকেল টেস্ট
বিদেশ যাওয়ার জন্য সাধারণত যেসব মেডিকেল টেস্ট করা হয়, সেগুলি হলোঃ
- রক্ত পরীক্ষা
- এক্স-রে
- যক্ষা পরীক্ষা
- হেপাটাইটিস পরীক্ষা
- ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য ইনফেকশন পরীক্ষা
- শরীরের শারীরিক পরীক্ষা
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্টগুলো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে করা হয়, যেগুলি সাধারণত সরকারের অনুমোদিত এবং বিশ্বস্ত।
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্ট কোথা থেকে করাবেন?
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে এই টেস্টগুলি করাতে হবে। বাংলাদেশে কয়েকটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্টের জন্য অনুমোদিত। এই প্রতিষ্ঠানগুলি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশগুলোর কনস্যুলেটের মাধ্যমে মেডিকেল রিপোর্ট জমা নেয়।
আপনি যদি বাংলাদেশে থাকেন, তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এরকম কেন্দ্র পাওয়া যায়। কিছু জনপ্রিয় হাসপাতাল এবং মেডিকেল সেন্টার যেমনঃ
- শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- বিএমইটি অনুমোদিত হাসপাতালগুলো
- প্রাইভেট ক্লিনিক এবং টেস্ট সেন্টার
- রাজধানী ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিস
- সিলমুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার
- নোভা মেডিকেল
- ক্যাথার্সিস মেডিকেল
- মীম মেডিকেল সেন্টার
- মেডিসন মেডিকেল
- আল হামাদ মেডিকেল
- আল হুমায়রা মেডিকেল
- পারফেক্ট মেডিকেয়ার লিমিটেড
এ সকল হসপিটাল ও মেডিকেল গুলোর লোকেশন জানার জন্য এখান থেকে নাম কপি করে গুগলে সার্চ করুন, তাহলে সার্চ রেজাল্টে হসপিটাল গুলোর নাম, লোকেশন, ফোন নাম্বার, ম্যাপ লোকেশন, রিভিউ, কখন খোলা থাকে এবং কখন বন্ধ থাকে – ইত্যাদি জানতে পারবেন।
এছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় প্রতিবছর সরকার অনুমোদিত হসপিটাল এবং ক্লিনিকের তালিকা প্রকাশ করে থাকেন, যেখান থেকে বিদেশে যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্ট করানো যায়।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট চেক
বর্তমানে, অনলাইনে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করা সম্ভব। এই সুবিধার মাধ্যমে আপনি আপনার মেডিকেল টেস্টের ফলাফল সহজেই জানতে পারেন। কিছু প্রতিষ্ঠানে এই সুবিধা রয়েছে যা বিশেষভাবে বিদেশী ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য মেডিকেল রিপোর্ট সংগ্রহ এবং যাচাই করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
যেসব কারণে মেডিকেল রিপোর্ট UNFIT হয়
১. হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি একটি গুরুতর ভাইরাল সংক্রমণ যা যকৃতকে প্রভাবিত করে। এই রোগে আক্রান্ত হলে, বিশেষত বিদেশে যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট UNFIT হতে পারে। কারণ এটি ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে এবং অনেক দেশে এটি ভ্রমণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
২. এইচআইভি
এইচআইভি (HIV) ভাইরাসের উপস্থিতি, যা অজ্ঞানভাবে এসএডস (AIDS) হতে পারে, বিদেশে যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্ট রিপোর্টে UNFIT হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। অধিকাংশ দেশেই এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে কড়া নিয়ম রয়েছে।
৩. চর্মরোগ
চর্মরোগের কোনো মারাত্মক উপসর্গ থাকলে, যেমন ত্বকে প্রদাহ বা মাকড়, এটি মেডিকেল রিপোর্টে UNFIT হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। বিশেষত যেসব দেশে স্বাস্থ্যগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেখানে এই সমস্যা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
৪. জন্ডিস
জন্ডিস একটি রোগ যা সাধারণত লিভার (যকৃত) সমস্যার কারণে ঘটে। এটি যদি শরীরে থাকে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট UNFIT হতে পারে। বিশেষত যেসব দেশ লিভারের রোগের বিরুদ্ধে কঠোর পরিস্কারতা নিশ্চিত করে, সেগুলোতে এই রোগের উপস্থিতি বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
৫. হূদরোগ
হূদরোগ বা হার্টের কোনো গুরুতর সমস্যা থাকলে, যেমন হৃদরোগ বা হার্টের কোনও ব্লকেজ, এটি মেডিকেল টেস্ট রিপোর্টে UNFIT হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। বেশিরভাগ দেশেই স্বাস্থ্যসম্পর্কিত পরিস্কারের জন্য সুস্থ শরীরকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, এবং হৃদরোগ এই শর্তে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৬. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি একটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, যা বিদেশে ভ্রমণের জন্য মেডিকেল টেস্ট রিপোর্টে UNFIT হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। কিছু দেশে এই ধরনের শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকা বিদেশে যাওয়ার জন্য অযোগ্য হতে পারে, কারণ শ্বাসকষ্ট এমন একটি রোগ যা বিমান বা দীর্ঘ ভ্রমণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৭. গর্ভবতী মহিলা হলে (দেশের উপর নির্ভর করে)
গর্ভাবস্থা নিয়ে বিভিন্ন দেশের নিয়ম-নীতি ভিন্ন হতে পারে। কিছু দেশে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভিসা দেয়া হয় না, কারণ এই অবস্থায় ভ্রমণ বা কাজ করা কঠিন হতে পারে। তাই, কিছু দেশের নিয়ম অনুযায়ী গর্ভবতী অবস্থায় মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট UNFIT হতে পারে।
৮. কাঙ্খিত দেশের নিয়মের ক্ষেত্রে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ত্রুটি দেখা দাওয়া
বিশেষ কিছু দেশে, যদি শরীরের কোনো অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গের ত্রুটি বা বিকৃতি থাকে, তবে তা মেডিকেল রিপোর্টে UNFIT হতে পারে। যদিও এটি সব দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়, তবে কিছু দেশের স্বাস্থ্য পরিসেবার গড় মান অনুযায়ী এই নিয়মের প্রয়োগ হয়ে থাকে।
বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতিঃ মেডিকেল টেস্টের পরবর্তী পদক্ষেপ
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্টের পর, আপনার পাসপোর্ট এবং অন্যান্য ডকুমেন্টের সাথে রিপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করুন। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে আপনার স্বাস্থ্য রিপোর্ট যথাযথভাবে যাচাই করা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের কনস্যুলেট বা এজেন্সির কাছে জমা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত।
বিদেশ যাওয়ার পূর্বের প্রস্তুতি ও করণীয়
বিদেশে যাওয়ার আগে আপনার শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন কিছু প্রস্তুতি হতে পারেঃ
- ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা
- ভ্রমণ স্বাস্থ্য বীমা নেওয়া
- বিদেশী ভাষার প্রস্তুতি নেয়া
- বিদেশী সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন
ভিসা প্রক্রিয়াঃ মেডিকেল টেস্টের সাথে সম্পর্কিত
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি দেশ তাদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরিসংখ্যানের প্রমাণ চায়, এবং এই প্রমাণ বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
কাজের জন্য বিদেশ যাওয়ার পূর্বে প্রস্তুতি ও করণীয়
১। বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করার আগে, বৈধভাবে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হন এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
২। বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে, লাভ ও ক্ষতির বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই করুন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিন।
৩। পাসপোর্ট পাওয়ার পর, আপনার নিজ জেলার নির্দিষ্ট জোন অফিসে গিয়ে নিবন্ধন করুন।
৪। গন্তব্য দেশের ভাষা শেখার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন। সারাদেশে ৪০টি টিটিসি (Training and Integration Centers) রয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
৫। বিদেশে যাওয়ার আগে, ওই দেশের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন, যেন আপনাকে সেখানে গিয়ে কোনো সমস্যা না হয়।
৬। আপনার প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখুন, যেমন কর্মী ভিসা, মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট, পাসপোর্ট ফটো কপি, ইত্যাদি।
৭। বিদেশে যাওয়ার আগে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে বা সঞ্চয় করে কিছু অর্থ সংগ্রহ করুন, যা সেখানে আপনার প্রথম কিছু দিনের জন্য সাহায্য করবে।
৮। বিদেশে যাওয়ার সময়, স্বাস্থ্যবীমা এবং অন্যান্য জরুরি সেবা পলিসি গ্রহণ করুন যাতে unforeseen পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারেন।
৯। বিদেশে যাওয়ার আগে, বিশেষ করে ভিসা এবং ট্রাভেল সংক্রান্ত সব নিয়মাবলী ও আইন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিন।
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্টের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্টের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া সাধারাণত অনলাইন বা সরাসরি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে সম্পন্ন করা হয়। আপনার পাসপোর্ট নম্বর এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।
আরো জানতে প্রবাসবন্ধু কল সেন্টার-এ যোগাযোগ করতে পারেনঃ
- 16135 (টোল ফ্রি )
- +88 09610 102 030 (বিদেশ থেকে)
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
প্রবাসী কল্যাণ ভবন
৭১-৭২ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১০০০।
ফোনঃ +৮৮-০২-৪১০৩০৪৪৪
ফ্যাক্সঃ +৮৮-০২-৪১০৩০৭৬৬
ই-মেইলঃ secretary@probashi.gov.bd
ফাইনাল স্টেপসঃ মেডিকেল টেস্টের পর
বিদেশ যাওয়ার মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার পর, রিপোর্ট সংগ্রহ করে বিদেশ যাওয়ার অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর আপনি আপনার ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। ভিসা পাওয়ার পরই আপনার বিদেশ যাওয়ার পরবর্তী ধাপ শুরু হবে।