বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর অনেক উপায় আছে আছে। প্রতিনিয়ত বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অর্থ প্রেরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এটা প্রচলন আছে যে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে অর্থ প্রেরণ করেন।
তবে, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট আইন ও বিধি-নিষেধ রয়েছে, যা সবাইকে মেনে চলতে হয়। এছাড়াও বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিরাপত্তার বিষয়ও আছে। এই পোস্টে আমরা বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়মাবলি, পদ্ধতি, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
Table of Contents
- বৈধ উপায়ে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি
- বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম ব্যাংক এবং ট্রান্সফার সার্ভিসেস
- বিকাশ (bKash)
- ওয়াইজ (Wise)
- ট্যাপট্যাপ সেন্ড (Taptap Send)
- স্ক্রিল (Skrill)
- মানিগ্রাম (MoneyGram)
- রেমিটলি (Remitly)
- বিদেশী মুদ্রা লেনদেনের আইন
- টাকা পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- লিমিট এবং সার্ভিস চার্জ
- নিরাপত্তা এবং সতর্কতা
- সাধারণ ভুল এবং সেগুলি এড়ানো
- শেষ কথা
বৈধ উপায়ে টাকা পাঠানোর পদ্ধতি
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট বৈধ উপায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদেশি মুদ্রার লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই, বৈধ উপায়ে টাকা পাঠানোর জন্য অবশ্যই বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল বা অনুমোদিত মুদ্রা ট্রান্সফার সার্ভিস ব্যবহার করতে হবে। এখানে কয়েকটি বৈধ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলোঃ
- ব্যাংক ট্রান্সফার
- মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (যেমনঃ Western Union, MoneyGram)
- অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম (যেমন, বিকাশ, পেওনিয়ার, TransferWise)
- ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা পাঠানো
এই সমস্ত পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফি প্রযোজ্য হতে পারে, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে। নিচে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর আরো কিছু উপায় বর্ণণা করা হল।
বিকাশ (bKash)
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রবাসীদের জন্যও অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি করেছে।
প্রবাসে অবস্থানকারী ব্যক্তিকে বিকাশের অনুমোদিত ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জ বা এমটিও এজেন্টের নিকট যেতে হয়। সেখান থেকে টাকা পাঠানো হয় প্রাপকের মোবাইলে।
প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১,২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পাঠানো যায়। মাসে সর্বমোট ৪,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত। টাকা পাঠাতে কোনো চার্জ নেই, তবে
ক্যাশ আউট করতে হলে অ্যাপের মাধ্যমে প্রতি হাজারে ১৭.৫০ টাকা, অ্যাপ ছাড়া ১৮.৫০ টাকা দিতে হয়।
ওয়াইজ (Wise)
নতুন হলেও ওয়াইজ একটি নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত মানি ট্রান্সফার প্ল্যাটফর্ম। এটি বিশ্বের ২০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীর পছন্দ। এটি অ্যাপ ভিত্তিক এবং ব্যাংকের প্রয়োজন হয় না। কম চার্জ এবং ভালো এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে এটি জনপ্রিয়।
ওয়াইজের মাধ্যমে পাঠানো টাকার উপর ভিত্তি করে ২.৫% সরকারি রেমিট্যান্স ইনসেনটিভ পাওয়া যায়। রেজিস্ট্রেশনের সময় অবশ্যই সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে।
ট্যাপট্যাপ সেন্ড (Taptap Send)
FCA অনুমোদিত এই মোবাইল অ্যাপটি যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, ও নেদারল্যান্ডস থেকে সহজেই টাকা পাঠানোর সুযোগ দেয়। বিকাশ ও স্থানীয় ব্যাংকের সাথে এর শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে।
ট্যাপ করে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই টাকা প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায়। এছাড়াও প্রোমো কোড ব্যবহারে নতুন গ্রাহকদের জন্য বিশেষ বোনাসও পাওয়া যায়। সরকারের ২.৫% রেমিট্যান্স বোনাস তো রয়েছেই।
স্ক্রিল (Skrill)
ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে স্ক্রিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি পেপালের বিকল্প এবং বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশে যেহেতু পেপ্যাল নেই, তাই স্ক্রিল বড় সমাধান।
স্ক্রিল অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে প্রমাণযোগ্য তথ্য দিতে হয়। ফান্ড ট্রান্সফারে ফি তুলনামূলক কম এবং নিরাপত্তা উচ্চ। গ্লোবাল পেমেন্ট ব্যবহারে ১.২৫% পর্যন্ত ফি কাটতে পারে।
মানিগ্রাম (MoneyGram)
পুরনো ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান মানিগ্রাম বিশ্বের ৩ লক্ষাধিক এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর সুযোগ দেয়। ব্যাংক বা মোবাইল ওয়ালেটে টাকা পাঠানো সম্ভব।
প্রেরকের পরিচয়পত্র ও কাগজপত্র সহ মানিগ্রাম এজেন্টের কাছে যেতে হয়। ডেবিট কার্ডে $১.৯৯ এবং ক্রেডিট কার্ডে প্রতি $১০০০-এ $৩২.৯৯ ফি লাগে।
রেমিটলি (Remitly)
রেমিটলি বাংলাদেশে কম খরচে অর্থ পাঠানোর একটি দুর্দান্ত মাধ্যম। এটি এখন অনেক ব্যাংকের অনুমোদিত পার্টনার, যেমন: ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক।
ফান্ড পাঠাতে চার্জ মাত্র $২.৯৯। Express এবং Economy – এই দুই মোডে টাকা পাঠানো যায়। এক্সপ্রেসে দ্রুত টাকা যায়, ইকোনমিতে খরচ কম হয়।
প্রেরকের মোবাইল ও ইমেইলে সব আপডেট পাঠানো হয়।
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম ব্যাংক এবং ট্রান্সফার সার্ভিসেস
বিশ্বব্যাপী ব্যাংক এবং ট্রান্সফার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- ব্যাংক ট্রান্সফারঃ এটি সবচেয়ে নিরাপদ এবং জনপ্রিয় উপায়। প্রাপককে সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যায়। তবে, এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের নির্দিষ্ট ফি এবং সময়সীমা থাকতে পারে।
- মানি ট্রান্সফার সার্ভিসঃ Western Union, MoneyGram, Xoom ইত্যাদি মাধ্যমে দ্রুত টাকা পাঠানো সম্ভব। এদের মাধ্যমে কিছুক্ষণের মধ্যে প্রাপক টাকা তুলে নিতে পারেন। তবে, এই সার্ভিসে ফি তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে।
বিদেশী মুদ্রা লেনদেনের আইন
বাংলাদেশে বিদেশী মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দিষ্ট কিছু আইন ও বিধি নির্ধারণ করেছে। এই নিয়মগুলো নিশ্চিত করে যে, শুধুমাত্র বৈধ পথেই বিদেশী মুদ্রা দেশের ভেতর প্রবাহিত হবে। এই নিয়মগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল:
- বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে হলে প্রাপককে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা অনুমোদিত লেনদেন সিস্টেমের মাধ্যমে টাকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
- টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বিদেশী মুদ্রার বৈধতা এবং শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।
- টাকা পাঠানোর পরিমাণ এবং টার্গেট দেশ অনুযায়ী কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে।
টাকা পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস প্রদান করতে হয়। এই ডকুমেন্টসের মাধ্যমে প্রেরক এবং প্রাপক উভয়ের পরিচয় যাচাই করা হয়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র
- প্রাপকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস (যদি ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে পাঠানো হয়)
- এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে প্রেরকের আয়ের উৎস সম্পর্কিত তথ্য
লিমিট এবং সার্ভিস চার্জ
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট লিমিট এবং সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য। সাধারণত, প্রতি ট্রান্সফারের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি এবং সময়সীমা নির্ধারিত থাকে। এখানে কিছু সাধারণ বিষয় উল্লেখ করা হলো:
- ফিঃ বিভিন্ন ব্যাংক এবং ট্রান্সফার সার্ভিসে ভিন্ন ভিন্ন ফি প্রযোজ্য থাকে। সাধারণত, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য ফি নির্ভর করে লেনদেনের পরিমাণ এবং গন্তব্য দেশ অনুযায়ী।
- লিমিটঃ কিছু সার্ভিসের মাধ্যমে সীমিত পরিমাণ টাকা পাঠানো যায়। উদাহরণস্বরূপ, Western Union এর মাধ্যমে প্রতি ট্রান্সফারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাঠানো যায়।
নিরাপত্তা এবং সতর্কতা
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্রতারণা এবং জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। তাই, টাকা পাঠানোর সময় কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুলি হলো:
- যেকোনো ট্রান্সফার সার্ভিস বা ব্যাংককে অবশ্যই সঠিকভাবে যাচাই করুন।
- পাসওয়ার্ড এবং অন্যান্য গোপনীয় তথ্য কখনও কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
- আপনার প্রাপকের পরিচয় নিশ্চিত করুন।
সাধারণ ভুল এবং সেগুলি এড়ানো
অনেক সময় মানুষ অজান্তেই টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কিছু ভুল করে। এই ভুলগুলি এড়ানোর জন্য কিছু সাধারণ টিপস নিম্নরূপঃ
- প্রাপকের নাম এবং অ্যাকাউন্ট তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করুন।
- সঠিক ট্রান্সফার মেথড নির্বাচন করুন।
- কোনো ধরনের প্রোফাইল বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টাকা পাঠানোর চেষ্টা করবেন না।
শেষ কথা
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো একটি সহজ এবং নিরাপদ প্রক্রিয়া হতে পারে যদি এটি সঠিকভাবে করা হয়। বিভিন্ন ব্যাঙ্কিং চ্যানেল এবং মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রেরকরা তাদের প্রাপকদের কাছে অর্থ পাঠাতে পারেন। তবে, নিরাপত্তা এবং আইনি বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত। সতর্কতা অবলম্বন করলে এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।