বায়না দলিল কিভাবে করা হয়

বায়না দলিল কিভাবে করা হয়-cybersheba.com
বায়না দলিল আইনি স্বীকৃতি পেতে হলে স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধন করতে হয়।

বায়না দলিল কিভাবে করা হয় জানার পূর্বে বায়না দলিল কি সেটা জানা প্রয়োজন। বায়না দলিল হলো জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনো সম্পত্তি কেনা-বেচার পূর্বপর্যায়ে করা একটি চুক্তিপত্র। এই দলিলের মাধ্যমে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই সম্পত্তি সংক্রান্ত সব শর্তাবলী এবং দায়িত্বগুলো নির্ধারণ করে নেন।

সাধারণত সম্পত্তির দাম পরিশোধের পূর্বে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বায়না দলিল সম্পন্ন হয়। এটি একটি আইনি ভিত্তি তৈরি করে এবং দুই পক্ষের মধ্যকার চুক্তি পূরণের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে।

বায়না দলিলের গুরুত্ব

বায়না দলিল কেনাবেচার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বায়না দলিল কিভাবে করা হয় জানা দরকার। এটি শুধুমাত্র ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য নয়, বরং আইনি সুরক্ষা এবং স্বচ্ছতার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কার্যকরী।

বায়না দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তির মালিকানা এবং দামের বিষয়ে স্পষ্টতা আনা হয়। যদি ভবিষ্যতে কোনো আইনি সমস্যা হয়, বায়না দলিল তা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ কারণে জমি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে বায়না দলিল তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।

বায়না দলিলের প্রকারভেদ

বায়না দলিল প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে। এক ধরনের বায়না দলিল হলো ‘মৌখিক বায়না‘, যা শুধু কথোপকথনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, তবে এটি আইনি ভাবে অনেক সময় টেকসই হয় না। অন্যদিকে, ‘লিখিত বায়না‘ দলিলটি আইনি বৈধতা পায় এবং ভবিষ্যতে এটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় উপস্থাপনযোগ্য।

বায়না দলিল কিভাবে করা হয়

Right owner-বায়না দলিল কিভাবে করা হয়-cybersheba.com

২০২৪ সালে বায়না দলিল করার নিয়মগুলো অনেকটাই আইনি সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। দলিল তৈরির ক্ষেত্রে সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানার তথ্য যাচাই করে নেওয়া অত্যাবশ্যক।

দলিলের প্রথমে উভয় পক্ষের চুক্তি, সম্পত্তির বিবরণ, এবং বায়না টাকার অগ্রিম পরিশোধের শর্তাবলী উল্লেখ করতে হয়। এর সাথে সাথে, জমির বৈধতা, দামের সঠিকতা এবং মালিকানার বিবরণ সঠিকভাবে যাচাই করা উচিত।

বায়না দলিল নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৪ দ্বারা পরিচালিত হয়। এছাড়া নিবন্ধন আইন ১৯০৮ ও এই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

বায়নাকৃত সম্পত্তির তফসিল ও বিবরণ

বায়না দলিল কিভাবে করা হয় জানার পাশাপাশি তফসিল সম্পর্কে জানা জরুরী। বায়না দলিলে সম্পত্তির তফসিল বা বিবরণ অতি গুরুত্বপূর্ণ। জমি বা ফ্ল্যাটের অবস্থান, পরিমাণ, আয়তন, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য এই তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এছাড়াও, সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানার তথ্য, দখল, এবং যেকোনো প্রকার জটিলতা থাকলে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। বায়না দলিলে তফসিলের সঠিকতা নিশ্চিত করা ভবিষ্যতে সমস্যা এড়াতে সহায়ক।

বায়না দলিলে বেশ কিছু আইনি শর্তাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা উভয় পক্ষের মধ্যে আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে। যেমন, চুক্তির মেয়াদ, সম্পত্তি হস্তান্তরের সময়সীমা, মূল্য পরিশোধের সময় এবং পরিমাণ ইত্যাদি। এই শর্তগুলো উভয় পক্ষের সম্মতিতে সংযোজন করা হয় এবং দলিলে স্বাক্ষরের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। দলিলে উল্লিখিত শর্তাবলী অনুসরণ না করলে তা আইনি জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

মূল্য পরিশোধের শর্তাবলী

বায়না দলিলে মূল্য পরিশোধের শর্তাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হয়। মূল সম্পত্তি কেনার আগের যে অগ্রিম পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়, তা বায়না টাকা হিসেবে পরিচিত। এই টাকা সাধারণত চুক্তি চূড়ান্ত করার সময় প্রদান করা হয় এবং সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধের সময় এবং পদ্ধতি দলিলে নির্ধারণ করা থাকে। ক্রেতা যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাকি অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে বিক্রেতা সম্পত্তির বিক্রয় বাতিল করতে পারেন।

বায়না দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফিঃ

বায়না কৃত জমির মূল্যবায়না দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি
অনধিক ৫ লক্ষ টাকা৫০০ টাকা
অনধিক ৫০ লক্ষ টাকা১০০০ টাকা
৫০ লক্ষ টাকা থেকে আনলিমিটেড২০০০ টাকা

সাক্ষী ও স্বাক্ষরের গুরুত্ব

বায়না দলিলে সাক্ষী এবং তাদের স্বাক্ষর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত দুই পক্ষের অন্তত দুই জন করে সাক্ষী থাকে। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে দলিল স্বাক্ষর করা হয় এবং তাদের স্বাক্ষর দলিলে যুক্ত করা হয়। যদি ভবিষ্যতে দলিল সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হয়, তবে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়।

বায়না দলিল নিবন্ধন প্রক্রিয়া

বায়না দলিল আইনি স্বীকৃতি পেতে হলে স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধন করতে হয়। দলিল নিবন্ধনের মাধ্যমে সম্পত্তির মালিকানা আইনিভাবে বৈধ হয় এবং ভবিষ্যতে আইনি সমস্যা এড়ানো যায়। দলিল নিবন্ধনের সময় জমির কাগজপত্র, উভয় পক্ষের জাতীয় পরিচয়পত্র, এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জমা দিতে হয়। নিবন্ধনের মাধ্যমে দলিলটি সম্পূর্ণভাবে আইনি বৈধতা পায়।

বায়না দলিল নিয়ে বিরোধের সমাধান

বায়না দলিলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে। যেমন, চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলা না হলে, সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে সমস্যা থাকলে, বা অর্থ পরিশোধ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে। এই ধরনের বিরোধ সমাধানের জন্য প্রথমে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।

যদি তা সম্ভব না হয়, তবে আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আদালতে দলিলটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী সমস্যা সমাধান করা হয়।

বায়না দলিল বাতিলের প্রক্রিয়া ও সমাপ্তি

বায়না দলিল কিভাবে করা হয় জানার পরে এটাও জানতে হবে বায়না দলিল কিভাবে বাতিল করা হয়। সাধারণত ক্রেতা বা বিক্রেতার মধ্যে কেউ যদি চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলতে ব্যর্থ হয়, তবে দলিল বাতিল করা যেতে পারে। তবে দলিল বাতিলের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। দলিল বাতিলের পর সম্পত্তি পুনরায় বিক্রি বা কেনার প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।

বায়না দলিলের নমুনা

এতক্ষণ জানলেন বায়না দলিল কিভাবে করা হয়। এখন নিচে বায়না দলিলের নমুনা ডাউনলোড লিংক দেওয়া হল। একটা পূরণ করা, আরেকটা শুধু নমুনা। আশাকরি এগুলা সম্পাদনা/এডিট করে আপনারা আপনাদের কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।

বায়নানামা (পূরণকৃত নমুনা)বায়নানামা দলিলের নমুনা
ডাউনলোড লিংকডাউনলোড লিংক

ভূমি সেবা সংক্রান্ত আরো পোষ্ট পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোষ্টগুলাও দেখতে পারেন।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *