বাচ্চা সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখা বা বাচ্চাদের সাথে মিশে থাকা একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। প্যারেন্টিং জানা না থাকলে বাচ্চাদের সাথে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটা আরো কঠিন হয় যখন আপনি প্রবাসে থাকেন অথচ আপনার বাচ্চারা দেশে থাকে।
তাই প্রবাসীরা কিভাবে আপনার বাচ্চা সন্তানের সাথে যোগাযোগ ঠিকঠাক রাখবেন সেই ব্যাপারে আজকের পোস্টের অবতারণা।
Table of Contents
বাচ্চা সন্তানের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা
প্রবাসে থাকার সময় আপ্নার বাচ্চা সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যেন অনুভব করে যে, আপনি তাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ। ফোন কল, মেসেজ বা ভিডিও কলের মাধ্যমে নিয়মিত কথা বলা শিশুরা আপনাকে কাছাকাছি অনুভব করবে। এভাবে, আপনার সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার
প্রবাসীরা প্রযুক্তির সহায়তায় সন্তানের সাথে সহজে যোগাযোগ রাখতে পারেন। বিভিন্ন ভিডিও কলিং অ্যাপ যেমন, জুম, গুগল মিট, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে আপনি আপনার সন্তানের সাথে দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা শেয়ার করতে পারেন।
আমাদের দেশের প্রবাসীরা সাধারণতঃ imo App বেশি ব্যবহার করেন। এটা লো-ব্যান্ড নেটওয়ার্ক অর্থাৎ কম শক্তিশালী নেটোয়ার্কেও ভাল কাজ করে। চাইলে আপনি এটাও ব্যবহার করতে পারেন।
দৈনন্দিন রুটিন ভাগাভাগি করা
আপনার ও সন্তানের দৈনন্দিন রুটিন নিয়ে আলোচনা করুন। প্রতিদিনের সময়সূচি ভাগাভাগি করলে আপনি এবং আপনার সন্তান পরস্পরের জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোতে সংযুক্ত থাকতে পারবেন। এটি সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়।
ভিডিও কলের মাধ্যমে আবেগপূর্ণ সংযোগ স্থাপন
শুধুমাত্র ফোন কলে সন্তানের মুখ না দেখে কথা বলার চেয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে আবেগপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করা আরও বেশি কার্যকর। ভিডিও কল শিশুদের মধ্যে একান্তে থাকা এবং তাদের বাবা-মাকে দেখতে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে, যা দূরত্বের অনুভূতি কমিয়ে দেয়।
ভিডিও কলে সন্তানের সাথে আপনার ছোটবেলার গল্প করুন, আপনার জীবনের মজার-মজার ঘটনা শেয়ার করুন। বাচ্চারা তাদের পিতা-মাতার জীবনের ঘটনা শুনতে ভালবাসে।
বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করা
সন্তানের জন্মদিন, স্কুলে সাফল্য অর্জন বা অন্যান্য বিশেষ দিনগুলোতে আপনি যদি প্রবাসে থাকেন, তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে বা ছোট উপহার পাঠিয়ে এই দিনগুলো উদযাপন করতে পারেন। এটি সন্তানকে আপনি বিশেষ কেউ অনুভব করাবে এবং আপনাকে তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলবে।
প্রবাসীরা এভাবে আপনার বাচ্চা সন্তানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।
উপহার ও চিঠি পাঠানো
অনেক সময় প্রবাসে থাকার কারণে সন্তানদের সাথে সরাসরি দেখা করা সম্ভব হয় না। সেই সময়ে উপহার বা চিঠি পাঠানো একটি বিশেষ উপায় হতে পারে। এতে আপনার সন্তানের কাছে আপনার ভালোবাসা এবং যত্ন পৌঁছাবে।
ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা
সন্তানদের সঙ্গে আপনার দিনটি কেমন কাটছে তার ছবি বা ভিডিও শেয়ার করুন। একইভাবে, তাদের জীবন থেকেও ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করতে বলুন। এটি আপনাদের মধ্যে যোগাযোগকে আরও প্রাণবন্ত এবং আনন্দময় করে তুলবে।
অনলাইনে পড়া ও খেলা
প্রবাসে থাকা অবস্থায় সন্তানদের সাথে অনলাইনে পড়া এবং খেলার ব্যবস্থা করতে পারেন। অনলাইন গল্পের বই পড়া, ধাঁধা খেলা বা গেম খেললে শিশুদের সাথে আপনার বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে।
ভিডিও কলের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন মজাদার গল্প, ছোট গল্প যেমন গোপাল ভাড়, নাসিরুদ্দীন হোজ্জা ইত্যাদি পড়ে শোনাতে পারেন। এতে তারা আনন্দ পাবে।
ব্যক্তিগতভাবে পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ
যখনই সম্ভব, সন্তানদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করুন। পরিবারের সাথে সরাসরি সময় কাটানো এবং তাদের সাথে মজার মুহূর্তগুলি শেয়ার করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের কাছে আপনাকে আরও কাছের করে তোলে।
সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ শেখানো
প্রবাসে থেকেও আপনার সন্তানদের বাংলার সংস্কৃতি এবং পারিবারিক মূল্যবোধ শেখাতে পারেন। সন্তানদের শিকড়ের সাথে যুক্ত রাখার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি তাদেরকে ঐতিহ্য, ভাষা এবং দেশের ইতিহাস সম্পর্কে শিখাতে পারেন।
সরাসরি সন্তানের পাশে থেকে তাকে লালন-পালন করলে তার সাথে যে আত্নিক ও হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তার কোন বিকল্প নাই। কিন্ত জীবিকার প্রয়োজনে যখন বিদেশে যেতেই হয়, প্রবাস যাপন করতে হয় তখন অনলাইনে তাকে টেক-কেয়ার করা, খোজ-খবর নেওয়া ছাড়া তো কোন বিকল্প নাই।
তাই আপনি যদি প্রবাসী হন তাহলে এবং একজন দায়িত্ববান ও সচেতন পিতা হিসেবে সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখতে চান তাহলে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী আপনার বাচ্চা সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন। সাইবার সেবা সর্বদা সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রদান করে। তাই সাইবার সেবা’র পোষ্ট নিজে পড়ুন ও প্রিয়জনদের পড়তে দিন।