বাংলাদেশীদের জাপান ভিসার খরচ কত

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে জাপানে যেতে আনুমানিক ৬ ঘণ্টা সময় লাগে।

বাংলাদেশীদের জাপান ভিসা পাওয়া খুব বেশি কঠিন না। তাছাড়া, বাংলাদেশীদের জন্য জাপান একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। এই দেশের আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জীবনযাত্রা এবং অত্যন্ত উন্নত কর্মসংস্থান সুযোগ অনেক বাংলাদেশী নাগরিককে আকর্ষণ করে।

তবে, জাপানে ভ্রমণ বা বসবাসের জন্য ভিসা প্রয়োজন, এবং এটি পাওয়ার জন্য কি কি পাওয়ার জন্য কি কি পথ অবলম্বন করতে হবে আজকের পোস্টে সেটা আলোচনা করা হবে। বিশেষত, বাংলাদেশীদের জাপান ভিসার খরচ সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক জানতে আগ্রহী। এই পোস্টে, আমরা বাংলাদেশীদের জাপান ভিসার খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করব।

জাপান ভিসার বিভিন্ন প্রকার

বাংলাদেশীদের জাপান ভিসা পাওয়া বা জাপানে ভ্রমণ ও বসবাসের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রয়োজন। বাংলাদেশীদের জন্য তিনটি প্রধান ভিসা ক্যাটাগরি হলোঃ

  • টুরিস্ট ভিসা
  • স্টুডেন্ট ভিসা
  • ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

প্রতিটি ভিসা ক্যাটাগরি আলাদা আলাদা শর্ত এবং খরচ নির্ধারণ করে তৈরি করা হয়েছে। আসুন, আমরা এই ভিসাগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করি।

টুরিস্ট ভিসাঃ খরচ ও প্রয়োজনীয়তা

টুরিস্ট ভিসা একটি অল্প সময়ের জন্য জাপানে ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত ১৫ দিন থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত বৈধ থাকে।

জাপানের টুরিস্ট ভিসার খরচ বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৭ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে পারে। এর মধ্যে বিমান টিকিট, থাকার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য ভ্রমণ সংক্রান্ত খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। কখনও কখনও, এটি ৮ লক্ষ টাকারও উপরে চলে যেতে পারে, যদি অতিরিক্ত কোনো এজেন্সি সেবা বা আনুষঙ্গিক খরচ থাকে।

স্টুডেন্ট ভিসা খরচ ও প্রয়োজনীয়তা

জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা প্রয়োজন। এই ভিসা তাদের জন্য যাদের জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য খরচ ১০ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা হতে পারে। এই খরচে বিমান টিকিট, থাকার ব্যবস্থা, এবং শিক্ষাগত সনদপত্র সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে, সরকারি স্কলারশিপ বা শিক্ষার্থী ভিসার জন্য কিছু বিশেষ সুবিধাও রয়েছে যা খরচ কমাতে সাহায্য করে।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসাঃ খরচ ও প্রয়োজনীয়তা

ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে বাংলাদেশীরা জাপানে কাজ করার সুযোগ পান। এই ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত এবং খরচ বিভিন্ন হতে পারে।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খরচ ৮ লক্ষ টাকা থেকে ১২ লক্ষ টাকা (সরকারিভাবে) হতে পারে। তবে, বেসরকারিভাবে এই খরচ ১০ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে এজেন্সি ফি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

বিজনেস ভিসাঃ খরচ ও প্রয়োজনীয়তা

বিজনেস ভিসা দিয়ে জাপানে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যাওয়া সম্ভব। এই ভিসা পেতে হলে আপনাকে জাপানের কোন একটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষ থেকে ইনভাইটেশন লেটার বা আমন্ত্রণপত্র প্রয়োজন হবে।

বিজনেস ভিসার খরচ ৯ লক্ষ টাকা থেকে ১৩ লক্ষ টাকা হতে পারে, যা বিমান টিকিট, থাকার ব্যবস্থা, এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

সরকারি ভাবে জাপান যাওয়ার উপায়

বাংলাদেশে বাংলাদেশীদের জাপান ভিসা পাওয়া ও কিছু সরকারি কার্যক্রমের মাধ্যমে জাপানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত, সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ নিয়োগের জন্য প্রতিবছর কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করে থাকে।

সরকারিভাবে জাপানে যাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূর্ণ করতে হবে, যেমনঃ

  • অন্তত এসএসসি পাস হতে হবে
  • ১৮ বছর বয়স হতে হবে
  • নির্দিষ্ট শারীরিক উচ্চতা (৫ ফুট ২ ইঞ্চি)

Applicant-age-বাংলাদেশীদের জাপান ভিসার খরচ কত-cybersheba.com

জাপান ভিসার খরচের বিশদ বিশ্লেষণ

বাংলাদেশীদের জাপান ভিসা পাওয়া ও জাপানে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভিসার খরচ আলাদা আলাদা। এই খরচের মধ্যে বিমান টিকিট, থাকার ব্যবস্থা, এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

এখানে আমরা বিভিন্ন ভিসার খরচের বিশদ বিশ্লেষণ দিচ্ছিঃ

ভিসার ধরনখরচ
টুরিস্ট ভিসা৩ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা
স্টুডেন্ট ভিসা১০ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা (সরকারিভাবে)
বিজনেস ভিসা৯ লক্ষ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা

জাপান ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

জাপান ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া বেশ কিছু ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমত, আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করতে হবে। তারপর, আপনাকে ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে এবং আপনার সর্বশেষ ছবি সহ আবেদন জমা দিতে হবে।

বিভিন্ন ভিসার জন্য আলাদা আলাদা নথির প্রয়োজন হতে পারে, যেমনঃ

  • পাসপোর্ট
  • আবেদন ফর্ম
  • আবেদনকারী ছবি
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • শিক্ষাগত সনদ

বাংলাদেশীদের জাপান ভিসা ও জাপান যেতে কত বছর বয়স লাগে?

জাপানে যাওয়ার জন্য বয়সের সীমা আবেদন করা ভিসার ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়। কাজের ভিসা নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের বয়স সীমা ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে।

বিজনেস ভিসা আবেদনকারীদের জন্য ন্যূনতম বয়স ২১ বছর। তবে টুরিস্ট ভিসা আবেদনকারীদের জন্য বয়সের কোন সীমা নেই। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে জাপানে যেতে আগ্রহীদের স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি হতে ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ভর্তি হতে ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে জাপানে যেতে কত সময় লাগে?

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে জাপানে যেতে আনুমানিক ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। তবে অন্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সময় ১২ ঘণ্টা থেকে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে জাপানে যাওয়ার টিকিটের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম।

তবে, জাপান থেকে বাংলাদেশে ফেরার টিকিটের মূল্য বেশি। ঢাকা থেকে নারিতা রুটের একমুখী সর্বনিম্ন বিমান ভাড়া জনপ্রতি ৭০ হাজার ৮২৮ টাকা এবং ফিরতি টিকিটের মূল্য ১ লাখ ১১ হাজার ৬৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শেষ কথা

বাংলাদেশীদের জাপান ভিসার খরচের পরিমাণ ভিসার ধরন, আবেদন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য শর্তের উপর নির্ভর করে। যেকোনো ধরনের ভিসা আবেদন করার আগে আপনাকে অবশ্যই পুরো খরচের বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। জাপান একটি উন্নত দেশ, যেখানে কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই সুযোগ রয়েছে।

তাই, যদি আপনি জাপান যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন, তবে খরচের সাথে সাথে আবেদন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য শর্তাবলী ভালোভাবে যাচাই করে, প্রস্তুতি নিন। বাংলাদেশীদের জাপান ভিসার খরচ এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জানার মাধ্যমে আপনি সহজে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। আশা করি বাংলাদেশীদের জাপান ভিসার খরচ সম্পর্কিত পোষ্টটি আপনাকে জাপান ভিসার খরচ এবং আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দিয়েছে।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/