বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম সরকার নির্ধারিত অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। বয়স্ক ভাতা সরকারের এমন একটি আর্থিক কর্মসূচি যেটার মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্ক, দুস্থ, কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের লোকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়। তবে এজন্য বিশেষ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।
বয়স্ক ভাতার আবেদন কিভাবে করতে হয়, কোন কোন ডকুমেন্টস লাগবে, কোন অফিসে জমা দিতে হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আজকের পোষ্টে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। তাই বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম ও আবেদনের বিস্তারিত নিয়ম জানতে পুরো পোষ্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
Table of Contents
বয়স্ক ভাতা কি?
বয়স্ক ভাতা হলো একটি আর্থিক নিরাপত্তা ভাতা, যা সরকারের পক্ষ থেকে বয়স্ক নাগরিকদের (নারী ও পুরুষ) আর্থিক সহায়তা করার জন্য প্রদান করা হয়। এটি মূলত ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৬২ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের জন্য। এই ভাতার উদ্দেশ্য হলো বৃদ্ধ বয়সে মানসম্মত জীবন-যাপন নিশ্চিত করা এবং তাদের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণে সহায়তা করা।
বয়স্ক ভাতার প্রয়োজনীয়তা
বয়স্ক ভাতা সামাজিক আর্থিক একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা বয়স্ক মানুষদের জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা করে। এটি বৃদ্ধদের চিকিৎসা, খাদ্য, এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এছাড়াও, এটি সমাজে বয়স্ক মানুষদের মানসিক স্বস্তি দেয় এবং তাদের জন্য স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করে।
বয়স্ক ভাতা আবেদনকারী কারা?
বয়স্ক ভাতা আবেদনকারী হতে হলে অবশ্যই আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং নির্ধারিত বয়সের উপর থাকতে হবে। এছাড়াও, আবেদনকারীকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যা তাদের ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা
বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতা এবং শর্তাবলী মানতে হবেঃ
- আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- পুরুষের জন্য বয়স ৬৫ বছর এবং নারীদের জন্য ৬২ বছর হতে হবে।
- কোনো সরকারি বা বেসরকারি পেনশন প্রাপ্ত হলে আবেদনকারী অযোগ্য হবে।
- মাসিক গড় আয় ১০ হাজার টাকার নিচে থাকতে হবে।
- দুঃস্থ মহিলাদের VGD কার্ড থাকলে আবেদন করতে পারবেন না।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বয়স্ক ভাতা আবেদন করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র লাগবে, সেগুলো হলঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- আয়ের প্রমাণপত্র (যদি প্রয়োজন হয়)
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট / বিকাশ / নগদ নম্বর
বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম কিভাবে পাওয়া যাবে
বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম পাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবেঃ
- প্রথমে সরকারি ওয়েবসাইট [http://mis.bhata.gov.bd] এ প্রবেশ করুন।
- ড্যাশবোর্ড থেকে “Online Application” অপশনটি নির্বাচন করুন।
- NID কার্ডের নম্বর ও জন্ম তারিখ লিখে “যাচাই” অপশনে ক্লিক করুন।
- NID কার্ডের তথ্য অনুযায়ী অন্যান্য তথ্য ফিল-আপ বা পূর্ণ হয়ে যাবে। যদি কোনো তথ্য ভুল হয়, তা সংশোধন করুন।
- অতিরিক্ত তথ্য প্রদান করুন, যেমন বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ইত্যাদি।
- যোগাযোগের মাধ্যম, বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার এবং ব্যাংকের নাম দিন।
- সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর আবেদনপত্রের প্রিন্ট নিন এবং স্থানীয় চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছ থেকে সত্যায়িত করে নিয়ে যান।
- সব কাগজপত্র সহ সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিন।
আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, উক্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সব সময় আবেদন করা যায় না। কর্তৃপক্ষ একটি নির্দিষ্ট সময়ে খুলে দেয় আবার নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ করে দেয়। তাই অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে কখন কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করছে।
অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলঃ
- সরকারি ওয়েবসাইটে http://mis.bhata.gov.bd প্রবেশ করুন।
- NID এবং জন্ম তারিখ দিয়ে যাচাই করুন।
- আপনার তথ্য পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য এবং যোগাযোগের মাধ্যম দিন।
- আবেদনপত্রের প্রিন্ট নিয়ে স্বাক্ষর করান এবং জমা দিন।
বয়স্ক ভাতা আবেদন যাচাই
বয়স্ক ভাতা আবেদন জমা দেওয়ার পর আবেদনটি যাচাই করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন জমা দেওয়ার পর আবেদনকারীর তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়। যদি আবেদনটি সঠিক হয় তবে ভাতা প্রাপ্তির জন্য আবেদনটি গ্রহণ করা হয়। আর যদি কোনো তথ্য ভুল হয়, তবে আবেদনকারীকে পুনরায় সংশোধন করতে বলা হয়।
বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম সম্পর্কে সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
বয়স্ক ভাতা আবেদন ফরম সম্পর্কে এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও তাদের উত্তর দেওয়া হলঃ
প্রশ্নঃ বয়স্ক ভাতা আবেদন করার সময় কি কি তথ্য দিতে হবে?
উত্তরঃ বয়স্ক ভাতা আবেদন করতে হলে আপনার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বার্ষিক আয় এবং যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে হবে।
প্রশ্নঃ বয়স্ক ভাতা মাসে কত টাকা?
উত্তরঃ বর্তমানে (২০২৪) বয়স্ক ভাতা মাসে ৬০০ টাকা প্রদান করা হয়।
প্রশ্নঃ মৃত ভাতাভোগীর টাকা কি নমিনি তুলতে পারবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ভাতাভোগী মারা গেলে ৭ দিনের মধ্যে মৃত্যুসনদ তৈরি করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিকট জানান দিতে হবে। নমিনি পূর্বের বকেয়া ভাতা + মৃত্যু মাসসহ আগামী দুই মাসের ভাতা একত্রে পাবে।