ফ্রি ভিসা কার্ড পাওয়ার জন্য কোন একটা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিতে হবে যেমন- ব্যাংক, পেওনিয়ার ইত্যাদি। প্রথমে, আপনি যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খুলতে চান, সেখানে গিয়ে তাদের শর্তাবলী জানুন।
অনেক ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য ফ্রি ভিসা কার্ড অফার করে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ বা মিনিমাম ব্যালেন্স রাখার শর্ত থাকতে পারে। আপনি অনলাইনে (পেওনিয়ারে) আবেদন করতে পারেন, এখানে প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজ হয়ে থাকে। আবেদন করার পর, আপনার পছন্দ অনুযায়ী কার্ডটি পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হবে।
এ ধরনের কার্ডের সুবিধা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক লেনদেন, অনলাইন শপিং এবং ক্যাশ উইথড্র করার সুবিধা পাওয়া যায়, তবে কখনো কখনো অতিরিক্ত ফি বা চার্জের বিষয়টি যাচাই করে নেওয়া উচিত। আজকের পোষ্টে ফ্রি ভিসা কার্ড কিভাবে নিবেন এটার উপর আলোচনা করা হবে/
Table of Contents
- ভিসা কার্ড কী?
- কেন ভিসা কার্ড প্রয়োজন?
- ফ্রি ভিসা কার্ডের সুবিধা
- বিভিন্ন ধরনের ফ্রি ভিসা কার্ড
- কারা ফ্রি ভিসা কার্ড পেতে পারেন?
- ফ্রি ভিসা কার্ড পাওয়ার উপায়
- স্টুডেন্টদের জন্য বিশেষ সুবিধা
- যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি
- ফ্রি ভিসা কার্ড ব্যবহার করার নিয়ম
- ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ডেবিট কার্ড
- ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড
- ভিসা কার্ডের নিরাপত্তা ও ব্যবহার বিধি
- শেষ কথা
ভিসা কার্ড কী?
ভিসা কার্ড একটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট কার্ড যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা ইস্যু করা হয়। এটি একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক অর্থ লেনদেনের মাধ্যম, যা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক উভয় ধরনের লেনদেনে ব্যবহৃত হয়।
ভিসা কার্ডের সাহায্যে আপনি অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারেন, যেকোনো এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারেন এবং দোকান কিংবা রেস্তোরাঁর মতো স্থানে POS (Point of Sale) টার্মিনালের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারেন। এটি ক্রেডিট, ডেবিট এবং প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া যায়, যা ব্যবহারকারীর প্রয়োজন ও আর্থিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে।
ভিসা কার্ডের অন্যতম সুবিধা হলো এটি বিশ্বব্যাপী লাখো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য এটি অন্যতম জনপ্রিয় পেমেন্ট কার্ড। অধিকাংশ ভিসা কার্ড নিরাপত্তার জন্য EMV চিপ ও পিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা লেনদেনকে আরও নিরাপদ করে তোলে।
এছাড়া, ভিসা কার্ডের মাধ্যমে সহজেই সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা, অনলাইন স্ট্রিমিং, হোটেল বুকিং, বিমান টিকিট কেনা এবং বিদেশে ভ্রমণের সময় কারেন্সি কনভার্শনের সুবিধাও পাওয়া যায়। অনেক ব্যাংক তাদের ভিসা কার্ডের সাথে ক্যাশব্যাক, রিওয়ার্ড পয়েন্ট এবং ডিসকাউন্ট সুবিধা প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও লাভজনক হয়।
সংক্ষেপে, ভিসা কার্ড একটি আধুনিক ও নিরাপদ ডিজিটাল পেমেন্ট সল্যুশন, যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন লেনদেনকে সহজ ও দ্রুততর করে তুলেছে।
কেন ভিসা কার্ড প্রয়োজন?
বর্তমানে ক্যাশলেস লেনদেন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেখানে নগদের পরিবর্তে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে ভিসা কার্ড হয়ে উঠেছে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আর্থিক মাধ্যম। এটি কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং বিভিন্ন ডিজিটাল পরিষেবা ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিসা কার্ডের প্রয়োজনীয়তাঃ
অনলাইন কেনাকাটা ও সাবস্ক্রিপশনঃ
- ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে পণ্য বা সেবা কেনার জন্য ভিসা কার্ড অপরিহার্য।
- Netflix, Amazon Prime, Spotify, Coursera-এর মতো প্ল্যাটফর্মে সাবস্ক্রিপশন নিতে ভিসা কার্ড প্রয়োজন।
বিল পরিশোধ ও ইউটিলিটি পেমেন্টঃ
- মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট বিলসহ বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা যায়।
- ক্রেডিট কার্ড বা লোনের মাসিক কিস্তি পরিশোধের সুবিধা।
আন্তর্জাতিক লেনদেন ও ফ্রিল্যান্সিংঃ
- ফ্রিল্যান্সারদের জন্য Upwork, Fiverr, Freelancer-এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে আয়ের টাকা উত্তোলন বা ট্রান্সফার করার জন্য ভিসা কার্ড ব্যবহার করা হয়।
- বিদেশ থেকে অনলাইনে পেমেন্ট গ্রহণ বা পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয়।
বিদেশ ভ্রমণ ও কারেন্সি কনভার্শনঃ
- বিদেশে ভ্রমণের সময় হোটেল বুকিং, ফ্লাইট টিকিট কেনা, শপিং ও খাবারের বিল পরিশোধে ভিসা কার্ড খুবই কার্যকর।
- বিভিন্ন দেশে কারেন্সি কনভার্শনের সুবিধাও পাওয়া যায়।
নিরাপদ ও সুবিধাজনক লেনদেনঃ
- নগদ টাকার ঝামেলা এড়াতে এবং দ্রুত ও নিরাপদ পেমেন্ট নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
- অনেক ব্যাংক ভিসা কার্ডের জন্য EMV চিপ ও টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা প্রতারণা ও জালিয়াতি থেকে রক্ষা করে।
ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল উভয় ধরনের সুবিধাঃ
- ফিজিক্যাল ভিসা কার্ড: এটিএম থেকে টাকা তোলা ও POS টার্মিনালে ব্যবহার করা যায়।
- ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড: শুধুমাত্র অনলাইন লেনদেনের জন্য, যা অনেক ব্যাংক ও ফিনটেক প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে।
অতিরিক্ত সুবিধা ও পুরস্কারঃ
- ক্যাশব্যাক, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ডিসকাউন্ট, EMI সুবিধা পাওয়া যায়।
- কিছু ভিসা কার্ডে ট্র্যাভেল ইন্স্যুরেন্স, বিমান লাউঞ্জ অ্যাক্সেস ও অন্যান্য বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।
ফ্রি ভিসা কার্ডের সুবিধা
ফ্রি ভিসা কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়, যেমনঃ
- এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন
- অনলাইন কেনাকাটা
- POS পেমেন্ট সুবিধা
- আন্তর্জাতিক লেনদেন
- ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সহজ অর্থ উত্তোলন
বিভিন্ন ধরনের ফ্রি ভিসা কার্ড
ফ্রি ভিসা কার্ড সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ
ফিজিক্যাল (প্লাস্টিক) ভিসা কার্ড
- এটি একটি বাস্তব (প্লাস্টিক) কার্ড, যা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে।
- এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার জন্য প্রয়োজনীয়।
- POS টার্মিনালে ব্যবহার করা যায় এবং বিভিন্ন দোকানে কার্ড সুইপ বা ইনসার্ট করে পেমেন্ট করা যায়।
- অনলাইন ও অফলাইন উভয় ধরনের লেনদেনে ব্যবহার করা সম্ভব।
ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড
- এটি একটি ডিজিটাল কার্ড, যা শুধুমাত্র অনলাইন লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- কোনো ফিজিক্যাল কার্ড না থাকলেও কার্ড নম্বর, এক্সপায়ারি ডেট, ও CVV কোড দেওয়া হয়, যা অনলাইন পেমেন্টের জন্য যথেষ্ট।
- সাবস্ক্রিপশন, অনলাইন কেনাকাটা, ফ্রিল্যান্সিং পেমেন্ট, গেমিং বা অ্যাপ পারচেসের জন্য আদর্শ।
- কিছু ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড একবার ব্যবহারের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যা নিরাপত্তার জন্য উপকারী।
ফ্রি ভিসা কার্ড পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সাধারণত ব্যাংক বা ফিনটেক কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির গ্রাহকদের জন্য ফ্রি কার্ড অফার করে।
যারা ফ্রি ভিসা কার্ড পেতে পারেন
স্টুডেন্টঃ
- অনেক ব্যাংক ও ফিনটেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা কার্ড প্রদান করে।
- স্টুডেন্ট আইডি বা ভর্তি প্রমাণপত্র দেখিয়ে সহজেই কার্ডের আবেদন করা যায়।
- বিশেষত, অনলাইন কোর্স বা সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধের জন্য শিক্ষার্থীরা এই কার্ড ব্যবহার করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সারঃ
- ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন Upwork, Fiverr, Freelancer-এ কাজ করা ফ্রিল্যান্সাররা ব্যাংক বা ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে ফ্রি ভিসা কার্ড পেতে পারেন।
- আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য এই কার্ড বিশেষভাবে সহায়ক।
নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীঃ
- অনেক ব্যাংক নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় গ্রাহকদের ফ্রি ভিসা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে।
- কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট লেনদেনের শর্তসাপেক্ষে প্রথম বছর বিনামূল্যে কার্ড প্রদান করে।
ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকঃ
- Payoneer, Wise, Revolut, PayPal, Skrill-এর মতো ডিজিটাল পেমেন্ট সল্যুশন প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে বিনামূল্যে ভার্চুয়াল বা ফিজিক্যাল ভিসা কার্ড পাওয়া যায়।
- অনেক ডিজিটাল ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (যেমন Nagad, bKash, Rocket) তাদের নির্দিষ্ট গ্রাহকদের ফ্রি ভার্চুয়াল কার্ড অফার করে।
ফ্রি ভিসা কার্ড পাওয়ার উপায়
ফ্রি ভিসা কার্ড পেতে হলে নিম্নলিখিত উপায় অনুসরণ করতে পারেন:
- Payoneer: ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় অপশন।
- Wise: আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য উপযোগী।
- Revolut: ইউরোপ ও আমেরিকার ব্যবহারকারীদের জন্য ভালো।
- স্থানীয় ব্যাংক: কিছু ব্যাংক নতুন অ্যাকাউন্টধারীদের ফ্রি ভিসা কার্ড প্রদান করে।
ফ্রি ভিসা কার্ড পাওয়ার জন্য Payoneer বা উল্লেখিত যেকোন ওয়েবসাইটে সাইন-আপ করুন। তারপর কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।
আপনি মোবাইল বা কম্পিউটার, যেকোন মাধ্যমেই Visa কার্ডের আবেদন করতে পারেন।
স্টুডেন্টদের জন্য বিশেষ সুবিধা
বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক স্টুডেন্টদের জন্য ফ্রি ভিসা কার্ড সরবরাহ করে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড স্টুডেন্টদের জন্য SMSA একাউন্টের মাধ্যমে ফ্রি ভিসা কার্ড প্রদান করে।
যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন
ফ্রি ভিসা কার্ড পেতে হলে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবেঃ
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা জন্ম সনদ
- নমিনির (পিতা/মাতা) এনআইডি
- বাসার বিদ্যুৎ বিল বা ঠিকানার প্রমাণ
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি
ফ্রি ভিসা কার্ড পেতে হলে প্রথমে ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংক স্টুডেন্ট, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা সুবিধাযুক্ত অ্যাকাউন্ট অফার করে। ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করে।
যেকোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ
ব্যক্তিগত তথ্য ও কাগজপত্রঃ
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ন্যাশনাল আইডি (NID) কার্ডের ফটোকপি (যদি এনআইডি না থাকে, তাহলে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড প্রয়োজন হতে পারে)
- একটি বৈধ মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডি
নমিনির তথ্যঃ
- ১ কপি ছবি
- ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি
ঠিকানার প্রমাণপত্র (যদি প্রয়োজন হয়):
- বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি/টেলিফোন বিলের কপি (সর্বশেষ ৩ মাসের)
- কাজের পরিচয়পত্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড
অ্যাকাউন্ট খোলার ধাপঃ
ব্যাংক নির্বাচন করুন
- সুবিধাজনক ব্যাংক ও শাখা নির্বাচন করুন।
- স্টুডেন্টদের জন্য ডাচ-বাংলা, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইউসিবিএল বিশেষ সুবিধা দেয়।
আবেদন ফর্ম পূরণ করুন
- ব্যাংকের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম পূরণ করুন।
- সব তথ্য সঠিকভাবে দিন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিন
- ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় গিয়ে ফর্ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন।
অ্যাকাউন্ট চালু হওয়ার অপেক্ষা করুন
- সাধারণত ১-৩ কার্যদিবসের মধ্যে অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে যায়।
- চালু হওয়ার পর আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং চেকবুক বা এটিএম কার্ড দেওয়া হবে।
প্রাথমিক ডিপোজিট জমা দিন (যদি প্রয়োজন হয়)
- কিছু ব্যাংকে প্রাথমিক ডিপোজিট জমা দিতে হতে পারে, যা ন্যূনতম ৫০০-১০০০ টাকা হতে পারে।
এরপর আপনি ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করে সহজেই ফ্রি ভিসা কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ফ্রি ভিসা কার্ড ব্যবহার করার নিয়ম
আপনার কার্ড পাওয়ার পর নিম্নলিখিত নিয়ম অনুসরণ করে এটি ব্যবহার করতে পারেনঃ
- পিন সেট করুন
- এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করুন
- অনলাইনে পেমেন্ট করুন
- POS মেশিনে কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করুন
ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ডেবিট কার্ড
যদি ভিসা ডেবিট কার্ড আন্তর্জাতিক বা ইন্টারন্যাশনাল লেনদেনে ব্যবহার করা যায়, তবে তাকে ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ডেবিট কার্ড বলা হয়। এটি সাধারণত বিদেশে কেনাকাটা, অনলাইন পেমেন্ট এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ডেবিট কার্ডঃ
- বাংলাদেশের অধিকাংশ ইন্টারন্যাশনাল ভিসা কার্ডই ডেবিট কার্ড হয়ে থাকে।
- এটি ব্যবহার করে অনলাইন শপিং, ফ্রিল্যান্সিং পেমেন্ট, স্ট্রিমিং সার্ভিস সাবস্ক্রিপশন (যেমন Netflix, Spotify, Amazon Prime), হোটেল বুকিং ও ফ্লাইট টিকিট কেনা সম্ভব।
- কিছু ব্যাংক এই কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেনের অনুমতি দেয়, তবে এক্ষেত্রে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ডেবিট কার্ডের বৈশিষ্ট্যঃ
- স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় লেনদেনের সুবিধা
- মাল্টি-কারেন্সি সমর্থন (ডলার, ইউরো, পাউন্ড ইত্যাদি)
- ATM থেকে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ উত্তোলন করা যায়
- EMV চিপ ও ৩D সিকিওর অথেনটিকেশন সুবিধা
কোন ব্যাংকগুলো ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ডেবিট কার্ড প্রদান করে?
বাংলাদেশের বেশ কিছু ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ডেবিট কার্ড ইস্যু করে, যেমনঃ
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক
- ব্র্যাক ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
- প্রাইম ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
- এশিয়া ব্যাংক
কীভাবে ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ডেবিট কার্ড পাওয়া যায়?
- সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
- পাসপোর্টের অনুলিপি ও টিআইএন (প্রয়োজনে) জমা দিতে হতে পারে।
- অনলাইনে বা ব্যাংকের শাখায় সরাসরি আবেদন করা যায়।
- ডলার এন্ডোর্সমেন্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন সক্রিয় করতে হয়।
ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড
ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড হলো একটি ডিজিটাল পেমেন্ট কার্ড, যা মূলত অনলাইন লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কোনো ফিজিক্যাল (প্লাস্টিক) কার্ড নয়, বরং কার্ড নম্বর, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ (Expiry Date), ও CVV কোড ভার্চুয়ালভাবে পাওয়া যায় এবং এসব তথ্য ব্যবহার করেই লেনদেন করা যায়।
ভার্চুয়াল ভিসা কার্ডের বৈশিষ্ট্যঃ
- শুধুমাত্র অনলাইন পেমেন্টের জন্য ব্যবহার করা যায়।
- কোনো ফিজিক্যাল কার্ড নেই, শুধুমাত্র ডিজিটাল ফরম্যাটে থাকে।
- Netflix, Amazon, Google Play, Facebook Ads, Fiverr, Upwork, PayPal, Skrill-এর মতো প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করা যায়।
- কিছু ভার্চুয়াল কার্ড একবার ব্যবহারের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় (Single-Use Virtual Card)।
- কিছু কার্ড নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য (৩-১২ মাস) সক্রিয় থাকে।
- উচ্চ নিরাপত্তা ও ফ্রড প্রতিরোধের জন্য ৩D সিকিওর অথেনটিকেশন সাপোর্ট করে।
বাংলাদেশে ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড কোথায় পাওয়া যায়?
বাংলাদেশের কিছু ব্যাংক এবং ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড প্রদান করে, যেমনঃ
- ব্র্যাক ব্যাংক (E-commerce Virtual Card)
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক (NexusPay Virtual Card)
- City Bank (AMEX & Visa Virtual Card)
- EBL (Virtual Prepaid Card)
- bKash, Nagad, Rocket (অন্যান্য ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে)
- Payoneer, Wise, Skrill, Neteller, PayPal-এর মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম
কীভাবে ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড পাওয়া যায়?
- ব্যাংকের অনলাইন পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপে আবেদন করে পাওয়া যায়।
- ফ্রিল্যান্সিং ও আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য Payoneer, Wise বা Skrill-এর মাধ্যমে পাওয়া যায়।
- কিছু ফিনটেক কোম্পানি নির্দিষ্ট চার্জের বিনিময়ে ভার্চুয়াল কার্ড ইস্যু করে।
ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড কারা ব্যবহার করতে পারেন?
- ফ্রিল্যান্সার ও রিমোট ওয়ার্কার (আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্ট থেকে পেমেন্ট গ্রহণ ও খরচের জন্য)।
- অনলাইন শপিং ও সাবস্ক্রিপশন ব্যবহারকারী (Netflix, Amazon, Spotify)।
- ডিজিটাল মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন প্রদানকারী (Facebook, Google Ads)।
- গেমার ও অ্যাপ ডেভেলপার (PlayStation, Steam, Google Play, Apple Store)।
ভিসা কার্ডের নিরাপত্তা ও ব্যবহার বিধি
ভিসা কার্ড ব্যবহার করার সময় কিছু নিরাপত্তা বিষয় মেনে চলা জরুরি, যাতে আপনার তথ্য সুরক্ষিত থাকে এবং প্রতারণার শিকার না হন।
নিরাপত্তা বজায় রাখার উপায়ঃ
- কাউকে আপনার কার্ডের নম্বর, CVV কোড বা OTP শেয়ার করবেন না।
- কেবলমাত্র বিশ্বস্ত ও নিরাপদ ওয়েবসাইটে কার্ড ব্যবহার করুন।
- কার্ডের লিমিট নির্ধারণ করে রাখুন, যাতে অপ্রত্যাশিত লেনদেন বন্ধ করা যায়।
- কোনো সন্দেহজনক লেনদেন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন।
- অনলাইন পেমেন্টের জন্য ৩D সিকিওর অথেনটিকেশন বা দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা (2FA) চালু করুন।
আপনার ভিসা কার্ড নিরাপদ থাকলে আপনি নির্ভয়ে অনলাইন শপিং, ফ্রিল্যান্স পেমেন্ট, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং দৈনন্দিন কেনাকাটা করতে পারবেন।
শেষ কথা
ফ্রি ভিসা কার্ড পেতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। বিশেষ করে স্টুডেন্ট, ফ্রিল্যান্সার এবং নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য এটি বেশ সুবিধাজনক, কারণ এটি চার্জবিহীন বা খুবই কম খরচে পাওয়া যায়।
যদি আপনি অনলাইন লেনদেন বা আন্তর্জাতিক পেমেন্ট করতে চান, তাহলে ভার্চুয়াল ভিসা কার্ড হতে পারে একটি ভালো বিকল্প। অন্যদিকে, ফিজিক্যাল ভিসা কার্ড ব্যবহার করে এটিএম থেকে টাকা তোলা ও সরাসরি POS পেমেন্ট করা সম্ভব।
ব্যাংকে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে সহজেই একটি ফ্রি ভিসা কার্ড সংগ্রহ করতে পারেন এবং এটি ব্যবহার করে আপনার দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনকে আরও সহজ করে তুলতে পারেন।