প্রবাস থেকে ফিরে যে ব্যবসায়ই করেন না কেন আপনার পুরো টাকা সেখানে বিনিয়োগ করবেন না। আপনার যে ব্যবসায় অভিজ্ঞতা আছে বাজার যাচাই করে সেই ব্যবসা শুরু করবেন। আপনার প্রবাসে থাকাকালীন কষ্টে অর্জিত টাকা যেন নষ্ট না হয় সেজন্য পুরো পোস্টটি পড়ুন।
প্রবাস থেকে ফিরে আসার পর অনেক প্রবাসীই চিন্তিত হন কোন ধরণের ব্যবসা শুরু করবেন। প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জিত টাকা বিনিয়োগ করার আগে সঠিক পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে ফিরে আসার পর সাধারণত একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস গড়ে তুলতে সবাই চান। এজন্য সঠিক ব্যবসায়িক ধারণা এবং বাজারের চাহিদা বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিছু সম্ভাবনাময় ব্যবসার ধারণা এখানে তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।
Table of Contents
অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা
অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা সবসময়ই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে, একটি সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবিক বাজার বিশ্লেষণ করতে পারলে অল্প পুঁজিতেও সফল ব্যবসা করা সম্ভব। এমন কিছু ব্যবসা আছে যা অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এবং যা লোকাল গ্রাহকদের সহজেই আকর্ষণ করতে সক্ষম।
উদাহরণস্বরূপ, একটি মুদি দোকান খোলা যেতে পারে যেখানে স্থানীয় জনগণ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারে। এছাড়া প্রবাস থেকে ফিরে ছোটখাট রেস্তোরাঁ, কফি শপ, বা স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য সরবরাহের ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। প্রবাসে আপনার যে সেবা মনোভাব এবং অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে, তা ব্যবহার করে আপনি এই ধরনের ব্যবসায় সফল হতে পারেন।
একটি ছোট ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই এলাকার বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে। জানতে হবে এলাকায় কোন ধরনের পণ্যের চাহিদা বেশি, কোন ধরনের সেবা মানুষ প্রয়োজন বোধ করে ইত্যাদি। যেমন, একটি এলাকা যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে হয় তবে সেখানে একটি স্টেশনারি দোকান খোলা লাভজনক হতে পারে। অন্যদিকে, যদি কোনো শিল্প এলাকা হয়, তবে সেখানে কর্মীদের জন্য একটি খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁ খোলা যেতে পারে।
প্রবাস থেকে ফিরে ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসা
প্রবাস থেকে ফিরে ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসা একটি সুরক্ষিত এবং লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। এই ধরনের ব্যবসায় আপনি একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের অধীনে কাজ করবেন, যা নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য ঝুঁকি কমায়। একটি ভালো ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচন করতে পারলে এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে এটি অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসার প্রধান সুবিধা হলো আপনি একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা মডেলের অংশ হতে যাচ্ছেন, যেখানে ব্র্যান্ডের প্রচারনা এবং গ্রাহকদের আস্থা আগে থেকেই অর্জিত। তবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি, রিয়ালিটি ফি এবং অন্যান্য খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড চেইন, ফার্মেসি, বা রিটেইল দোকানের ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারেন। তবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবসা পরিচালনার জন্য আপনাকে ব্র্যান্ডের গাইডলাইন মেনে চলতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা
অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান একটি ক্ষেত্র। প্রবাসে আপনার ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটের সাথে পরিচিতি থাকায় আপনি সহজেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ই-কমার্স ব্যবসা, ড্রপশিপিং, ফ্রিল্যান্সিং, বা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করা যেতে পারে।
ই-কমার্স ব্যবসার জন্য আপনাকে একটি ভালো প্রোডাক্ট নির্বাচন করতে হবে এবং সেটি অনলাইনে বিক্রি করতে হবে। আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে আপনার পণ্য প্রচার করতে পারেন। এছাড়া, ড্রপশিপিং একটি চমৎকার অনলাইন ব্যবসা হতে পারে, যেখানে আপনি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি আপনার দক্ষতা বিক্রি করতে পারেন, যেমন- ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং ইত্যাদি।
কৃষি ও কৃষিভিত্তিক ব্যবসা
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। প্রবাস থেকে ফিরে এসে আপনি কৃষি খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চমানের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তাই প্রবাস থেকে ফিরে আপনি সবজি, ফল, মাছ চাষ, অথবা পোল্ট্রি ফার্মিং শুরু করতে পারেন।
কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও একটি সম্ভাবনাময় খাত, যেখানে উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে স্থানীয় বাজারে এবং রপ্তানির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। এছাড়া, খাদ্য সংরক্ষণ এবং প্যাকেজিংয়ের ব্যবসাও লাভজনক হতে পারে। এই খাতে বিনিয়োগ করলে আপনি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন।
সেবা খাতের ব্যবসা
সেবা খাতের ব্যবসা একটি দ্রুত বর্ধনশীল খাত। প্রবাস থেকে ফিরে এসে আপনি সেবা খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। আপনার প্রবাস জীবনে অর্জিত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে সেবা খাতে সফল হওয়া সম্ভব। আপনি আইটি সেবা, ট্রেনিং সেন্টার, স্বাস্থ্যসেবা, বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান শুরু করতে পারেন।
আইটি সেবার ক্ষেত্রে আপনি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সেবা প্রদান করতে পারেন। এছাড়া, ট্রেনিং সেন্টার বা কোচিং সেন্টার শুরু করে প্রবাসে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা স্থানীয় জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি ছোট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে স্থানীয় জনগণের সেবা প্রদান করা যেতে পারে।
সঠিক বিনিয়োগের টিপস
প্রবাস থেকে ফিরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস মাথায় রাখা উচিত। প্রথমত, আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক বাজার এবং টার্গেট গ্রাহক চিহ্নিত করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনা করতে হবে। তৃতীয়ত, কখনও এক জায়গায় পুরো বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। এছাড়া, ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব এবং আইনি বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।