পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকছে না

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকছে না -cybersheba.com
পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক সময় প্রার্থী বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি যাচাই করা হত, যা একটি অযৌক্তিক কাজ ছিল।

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন বা নবায়ন প্রক্রিয়ায় যে একটি বাধ্যতামূলক ধাপ ছিল, এটি বহু বছর ধরে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে আসছিল। তবে, সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার ফলে পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া আর বাধ্যতামূলক থাকবে না।

এই সিদ্ধান্তটি নাগরিকদের জন্য বিশেষভাবে সুবিধাজনক হবে, কারণ এটি পাসপোর্ট ইস্যুর প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং সহজ করে তুলবে। এর ফলে নাগরিকরা আরও কম সময়ে পাসপোর্ট পেতে সক্ষম হবে এবং যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন তারা এখন তা থেকে মুক্তি পাবেন।

এছাড়াও, পুলিশের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া কিছু সময় হয়রানি এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রেও পরিণত হয়েছিল, যার ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এই প্রক্রিয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সরকারের একটি সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এতে করে পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার এবং তা দ্রুত পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বাড়বে। এই লেখায় আমরা পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে নেওয়ার পেছনে মূল কারণগুলো এবং এর ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার পটভূমি

পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়ার মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা পাসপোর্ট আবেদনকারীর পরিচিতি যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে বাধ্যতামূলক ছিল। বাংলাদেশে পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীদের তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে পাসপোর্ট দেওয়া হতো। তবে, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশকে একটি বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে রাখা হয়েছিল, যা একাধিক কারণে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

যদিও পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশনন পাসপোর্ট ইস্যুর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ছিল, তবুও এটি অনেক সময় নাগরিকদের জন্য হয়রানি ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। অনেক আবেদনকারী অভিযোগ করেছিলেন যে, পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনো নিয়মকানুনের আওতায় না গিয়ে ঘুষ চাওয়া হতো অথবা রাজনৈতিক পরিচিতির কারণে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের পাসপোর্ট ইস্যু হতে দেরি হতো।

এছাড়াও, অনেক সময় পাসপোর্ট ইস্যু হতে কয়েক মাস বা বছরও লেগে যেত, যার ফলে চিকিৎসা বা জরুরি সফরের জন্য বিদেশে যেতে চাওয়া নাগরিকরা সমস্যায় পড়তেন। এই দীর্ঘ অপেক্ষা এবং দুর্ভোগের কারণে পাসপোর্ট সেবা গ্রহণকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভও সৃষ্টি হয়েছিল।

এ কারণে সরকারি বিভিন্ন স্তরের পক্ষ থেকে এই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই নতুন সিদ্ধান্তটি নাগরিকদের জন্য সুবিধাজনক হবে, কারণ এর ফলে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে এবং নাগরিকদের জন্য পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার সুস্পষ্ট হবে।

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন উঠানো হয়েছে

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু কারণে নিয়েছে, যা মূলত নাগরিকদের সুবিধার্থে এবং সেবার মান উন্নত করার জন্য। এর আগে পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া ছিল একটি বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ, যা অনেক সময় নাগরিকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছিল। এখন তা উঠানোর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছেঃ

  • দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করাঃ পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া অনেক সময় দুর্নীতি এবং হয়রানির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া যেত যে, পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য ঘুষ চাওয়া হতো অথবা রাজনৈতিক পরিচিতি বা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হতো। পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থার কারণে অনেক নাগরিক তাদের পাসপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এটি তুলে দেওয়া হয়েছে।
  • সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করাঃ পাসপোর্ট প্রাপ্তি একটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এর জন্য পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক রাখার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। বিশ্বের অনেক দেশে, যেমন যুক্তরাজ্যে, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে সরাসরি পোস্ট অফিসে পাসপোর্ট চলে আসে, এবং সেখানে কোনো পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া নেই। বাংলাদেশেও এটি সহজতর করা প্রয়োজন ছিল, যাতে নাগরিকরা দ্রুত তাদের পাসপোর্ট পেতে পারেন।
  • জরুরি পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে সহায়তাঃ অনেক সময় নাগরিকদের জরুরি কারণে বিদেশে যেতে হতো, যেমন চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা বা ব্যবসায়িক কাজে। পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় তারা সমস্যায় পড়তেন। এখন পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে এবং নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়া সম্ভব হবে।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনকে মূল ভিত্তি হিসেবে রাখাঃ এখন থেকে পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধনকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। যদি এই দুটি সঠিকভাবে পাওয়া যায়, তবে পাসপোর্ট ইস্যুতে কোনো বাধা থাকবে না। এর ফলে, পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আসবে এবং কোনোরকম হয়রানি বা দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা থাকবে না।
  • পাসপোর্টের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করাঃ পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক সময় প্রার্থী বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি যাচাই করা হত, যা একটি অযৌক্তিক কাজ ছিল। এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য এবং নাগরিকদের মধ্যে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া হয়েছে।

অবশেষে, পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ, যা নাগরিকদের পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ, দ্রুত এবং অধিক স্বচ্ছ করে তুলবে। এটি জনগণের সেবায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

পাসপোর্ট পাওয়ার নাগরিকের অধিকার

Passport-Police-Verification-পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকছে না -cybersheba.com

পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকদের রাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্ট সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যার মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়াও অন্তর্ভুক্ত। পাসপোর্ট একটি সরকারি দলিল, যা একজন নাগরিককে বৈদেশিক ভ্রমণ, কাজ, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য কারণে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে।

  • আইনিক ভিত্তিঃ পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশে আইনি ভিত্তি রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো নাগরিকের রাষ্ট্রের কাছে নির্দিষ্ট সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, এবং পাসপোর্ট ইস্যু করা সেই অধিকারগুলোর মধ্যে একটি। এটি একজন নাগরিকের বৈদেশিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে এবং তার জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সুযোগ প্রদান করে।
  • সকল নাগরিকের জন্য প্রবেশাধিকারঃ পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার সকল নাগরিকের জন্য সমান, অর্থাৎ সমাজের সব স্তরের মানুষ এটি পেতে পারে, যদি তারা সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করে। এখানে বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম বা রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। এটি প্রত্যেক নাগরিকের একটি মৌলিক অধিকার, যা তাদের বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয়।
  • ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ বিশ্বের অনেক দেশেই পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন দেশের আইনে পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট করা রয়েছে, তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আগে পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক ছিল, যা অনেক সময় নাগরিকদের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করত। তবে এখন তা তুলে নেওয়ার পর, পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হবে।
  • জাতীয় পরিচয়ের জন্য অপরিহার্যঃ পাসপোর্ট কেবল বৈদেশিক ভ্রমণের জন্য নয়, বরং এটি একটি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়ও নির্ধারণ করে। এটি একটি সরকারি স্বীকৃত দলিল, যা নাগরিকের পরিচয় নিশ্চিত করে এবং তাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করে বিদেশে। একে জাতীয় পরিচয়ের একটি অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা নাগরিকের পরিচিতি ও অধিকারকে সংরক্ষণ করে।
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূমিকাঃ পাসপোর্ট একজন নাগরিককে আন্তর্জাতিক স্তরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে। এটি একটি বৈধ দলিল, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং অন্য দেশের আইনি ব্যবস্থার অধীনে কাজ করার অনুমতি দেয়। এর মাধ্যমে একটি দেশ তার নাগরিকদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সমঝোতার অংশ হিসেবে দেশগুলোকে একে অপরের নাগরিকদের অধিকার দিতে বাধ্য করে।
  • কর্মজীবন ও শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাঃ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসা সহ, পাসপোর্ট একজন নাগরিকের পেশাগত ও শিক্ষাগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজকের বিশ্বে অনেক কাজ এবং শিক্ষা সুযোগ সীমিত থাকে যদি একজন নাগরিকের পাসপোর্ট না থাকে।

এইভাবে, পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং এটি রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রদত্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবা। এখন থেকে পাসপোর্ট পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হওয়ার ফলে নাগরিকরা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য আরও বেশি সুযোগ পাবেন।

হয়রানি ও দুর্নীতিঃ একটি বিশ্লেষণ

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত হয়রানি ও দুর্নীতি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াটি অনেক ক্ষেত্রেই অযথা জটিলতা সৃষ্টি করত এবং সাধারণ নাগরিকদের জন্য হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়াত। এই বিশ্লেষণে আমরা পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, হয়রানি এবং এর ফলে নাগরিকদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

  • পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার সমস্যাগুলোঃ পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছিল একটি বাধ্যতামূলক ধাপ, যা সাধারণত নিম্নলিখিত সমস্যাগুলোর সৃষ্টি করতঃ
    • অযথা দীর্ঘ সময় লাগত, যা পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়াকে ধীরগতির করত।
    • ভেরিফিকেশনের নামে ঘুষ আদায়ের প্রবণতা ছিল ব্যাপক।
    • অনেক ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় পাসপোর্ট ইস্যু আটকে যেত।
    • রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয়ের ভিত্তিতে অনেকে হয়রানির শিকার হতেন।
  • ঘুষ ও দুর্নীতিঃ পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ঘুষ এবং দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করার জন্য আবেদনকারীদের ঘুষ দিতে বাধ্য করা হতো। পুলিশ সদস্যদের একটি অংশ সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলত।নিম্নলিখিত দুর্নীতির ধরনগুলো বিশেষভাবে লক্ষণীয়:
    • ঘুষ ছাড়া ফাইল এগোতো না, ফলে সাধারণ নাগরিকদের বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হতো।
    • ভুল তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হতো, যা পরবর্তীতে সংশোধন করতে সময় লাগত।
    • কিছু ক্ষেত্রে আবেদনকারী রাজনৈতিক বিরোধী হলে তার পাসপোর্ট জটিলতায় পড়ত।
  • নাগরিকদের দুর্ভোগঃ পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত হয়রানির কারণে বহু নাগরিক পাসপোর্ট সময়মতো হাতে পাননি। বিশেষ করে যারা জরুরি প্রয়োজনে বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।নাগরিকদের দুর্ভোগের কিছু সাধারণ দিকঃ
    • বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তির সুযোগ পেলেও সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়ায় অনেকে সুযোগ হারিয়েছেন।
    • চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাইলেও ভেরিফিকেশন জটিলতায় দেরি হয়েছে।
    • কর্মসংস্থানের জন্য ভিসার আবেদন করতে দেরি হওয়ায় চাকরির সুযোগ হারানোর ঘটনা ঘটেছে।
  • এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাবঃ পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল হওয়ায় নাগরিকদের হয়রানি কমবে এবং দুর্নীতি বন্ধ হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলেঃ
    • পাসপোর্ট পাওয়ার সময় কমে যাবে।
    • ঘুষ ও অনিয়মের সুযোগ কমবে।
    • নাগরিকরা দ্রুত বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
    • বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আরও আধুনিক হবে।

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করার সিদ্ধান্ত জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এটি শুধু হয়রানি কমাবে না, বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবেও কাজ করবে। এখন থেকে নাগরিকরা সহজেই এবং দ্রুত পাসপোর্ট পাবেন, যা তাদের বৈদেশিক যাত্রা ও জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শেষ কথা

পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে সহজ করবে না, বরং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও দুর্নীতি বন্ধ হলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা আরও সহজ হবে এবং তারা আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সেবা পেতে সক্ষম হবে।

এছাড়া, এই উদ্যোগ সরকারের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্যকেও সমর্থন করবে, যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক, দ্রুত এবং কার্যকর করা হচ্ছে। এখন সময় এসেছে, নাগরিকরা পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য সহজ এবং সুষ্ঠু একটি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন, যা তাদের বৈদেশিক যাত্রার পথ আরও মসৃণ করবে।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/