পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। পর্তুগাল বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রিয় গন্তব্যস্থল, এবং তার প্রধান কারণ হলো এখানে শিক্ষার খরচ কম। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা করা যায়, যা বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুবিধা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামগুলির খরচ বেশ কম
এছাড়াও, পর্তুগালে শিক্ষার্থীরা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় কম খরচে জীবন-যাপন করতে পারেন। তাই বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্তুগাল একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফি ছাড়াও স্কলারশিপ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সহায়তার সুযোগও রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আজকের পোষ্টে পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা ও সেখানে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
Table of Contents
পর্তুগালে সহজে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ
পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা ও সহজে স্থায়ী হওয়ার সুযোগও সহজ এবং এখানে অভিবাসীদের জন্য আরও বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। পর্তুগাল সরকারের অভিবাসী বান্ধব নীতির কারণে বিদেশীরা সহজেই স্থায়ী বাসস্থান পেতে পারেন।
পর্তুগালে স্থায়ী হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে, তবে এসব প্রক্রিয়া অনেক দেশের তুলনায় বেশ সহজ। পর্তুগালে স্থায়ী বসবাসের প্রক্রিয়া মূলত নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর নির্ভর করেঃ
- আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন অনুমতিঃ পর্তুগালে পড়াশোনা শেষ করার পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত এক বছরের জন্য বসবাসের অনুমতি পাবেন। এই অনুমতি তাদের পড়াশোনা শেষে কাজ শুরু করার সুযোগ প্রদান করে। পর্তুগালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের পূর্বে এই অনুমতির মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। সাধারণত, ৫ বছর পর অভিবাসীরা পর্তুগালে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
- গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রামঃ গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রাম পর্তুগালে বসবাসের একটি সহজ উপায়। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে, যারা পর্তুগালে নির্দিষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ করবেন, তারা পর্তুগালে বসবাসের অনুমতি পেতে পারেন। সাধারণত, গোল্ডেন ভিসার জন্য বিদেশি নাগরিকদের কমপক্ষে ৫ লাখ ইউরো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। এই প্রোগ্রামটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ এটি স্বল্প সময়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার একটি সহজ পথ।
- কাজের অনুমতি এবং বসবাসের অনুমতিঃ পর্তুগালে কাজ করার জন্য বিশেষ ধরনের কাজের অনুমতি প্রয়োজন। যদি আপনি পর্তুগালে কোনও কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য কাজের অনুমতি প্রাপ্তি সহজ। পর্তুগাল সরকার বিদেশী কর্মীদের জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজের অনুমতি প্রদান করে, এবং এর পর আপনার বসবাসের অনুমতি প্রাপ্তি সহজ হয়।
- পারিবারিক পুনর্মিলনঃ পর্তুগালে একবার স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়ার পর, আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য পারিবারিক পুনর্মিলনের আবেদন করতে পারেন। এটি খুবই সহজ প্রক্রিয়া, এবং এটি আপনাকে আপনার পরিবারের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ প্রদান করে। পর্তুগাল সরকারের এই নীতি অভিবাসীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করে, যাতে তারা সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে একত্রিত হতে পারেন।
- দীর্ঘমেয়াদী বসবাস এবং নাগরিকত্বঃ পর্তুগালের নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া খুবই সরল এবং কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে আপনি সহজেই নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন। সাধারণত, যদি আপনি পর্তুগালে পাঁচ বছর ধরে বসবাস করে থাকেন, এবং সেই সময়কালে আইনগতভাবে এখানে কাজ করেন, আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর আপনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক হতে পারেন, যার ফলে আপনি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে বসবাস এবং কাজ করতে পারবেন।
পর্তুগালে স্থায়ী বসবাসের সুবিধাসমূহ
- স্বাস্থ্যসেবাঃ পর্তুগালে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য একটি বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রয়েছে, যা বিনামূল্যে বা কম খরচে পাওয়া যায়।
- শিক্ষাঃ পর্তুগালের স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান উচ্চ, এবং এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
- আর্থিক সুযোগঃ পর্তুগাল অনেক ধরনের কর সুবিধা প্রদান করে, যা দীর্ঘমেয়াদী বসবাসকারীদের জন্য বেশ উপকারী।
- নিরাপত্তাঃ পর্তুগাল একটি নিরাপদ দেশ, যেখানে অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে কম।
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঃ পর্তুগাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত, এবং দেশটির বিচ, পাহাড় এবং শহরগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
পর্তুগাল একটি অভিবাসী বান্ধব দেশ, যেখানে সহজে স্থায়ী হওয়া সম্ভব। গোল্ডেন ভিসা, কাজের অনুমতি, এবং পারিবারিক পুনর্মিলন এর মাধ্যমে পর্তুগাল অভিবাসীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখানে বসবাসের জন্য কম খরচ এবং উন্নত জীবনমান রয়েছে, যা পর্তুগালকে একটি আদর্শ স্থায়ী বসবাসের স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার জন্য কেন বেছে নেবেন?
- শিক্ষার খরচ কমঃ পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি অনেক কম, বিশেষত পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায়। এখানে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বছরের টিউশন ফি সাধারণত ১,০০০ ইউরো থেকে ৫,০০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই খরচ এমন অনেক শিক্ষার্থীর জন্যও সহনীয়, যারা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা করতে চান।
- বৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তাঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং পর্তুগাল সরকারের বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রাম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপলব্ধ। এসব বৃত্তি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার খরচ কমাতে সহায়ক হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী স্তরের শিক্ষায় প্রবেশের জন্য সহায়তা পেয়ে থাকে।
- জীবনযাত্রার কম খরচঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা এবং জীবনযাত্রার খরচও বেশ কম, বিশেষত পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায়। খাবার, আবাসন, পরিবহন এবং অন্যান্য দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তার জন্য পর্তুগালে খরচ তুলনামূলকভাবে কম। শহরগুলোতে, বিশেষ করে লিসবন এবং পোর্টো, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে সহজেই সস্তা থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়। আরও ভালোভাবে বলতে গেলে, এখানে খরচের সাথে মানের একটি সুন্দর সামঞ্জস্য রয়েছে।
- পর্তুগালের শিক্ষার মানঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা প্রদান করে। এখানে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি এবং গবেষণার সুযোগ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করে। এছাড়া, পর্তুগালের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজিতে কোর্স প্রদান করে, যার ফলে ভাষার বাধা কমে যায়।
- আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সমৃদ্ধ সম্প্রদায়ঃ পর্তুগালে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সমৃদ্ধ এবং সহায়ক সম্প্রদায় রয়েছে। শিক্ষার্থীরা একে অপরকে সাহায্য করে, এবং এখানে একটি গ্লোবাল স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক রয়েছে। পর্তুগাল অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বাগতিক দেশ, যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সহজেই নিজেদের পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে।
- পড়াশোনা করার সময় কাজ করার সুযোগঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজও করতে পারেন। এটি তাদের খরচ কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আশপাশে বিভিন্ন কাজের সুযোগ রয়েছে, যেমন ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট বা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিভাগে। পর্তুগাল সরকার শিক্ষার্থীদের পার্ট-টাইম কাজের জন্য অনুমতি প্রদান করে, যাতে তারা পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু আয় করতে পারে।
- সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অভিজ্ঞতাঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাও লাভ করতে পারেন। দেশটির দীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পকলা, এবং উদ্ভাবনী সংস্কৃতি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অমূল্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। পর্তুগাল একটি মিশ্র সাংস্কৃতিক পরিবেশ, যেখানে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা একত্রে বাস করেন এবং একে অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিখতে পারেন।
- পড়াশোনা শেষে পর্তুগালে কর্মসংস্থানের সুযোগঃ পর্তুগাল একটি উন্নত অর্থনীতির দেশ, যেখানে বিভিন্ন শিল্পখাতে কর্মসংস্থান রয়েছে। পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা শেষ করার পর, শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পান। পর্তুগাল সরকার বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য পরবর্তী দুই বছর কাজের অনুমতি প্রদান করে, যাতে তারা দেশটির অভ্যন্তরে কাজ করতে পারেন। এই সুযোগ তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গড়তে সহায়ক হয়।
- শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ভিসা প্রক্রিয়াঃ পর্তুগাল শিক্ষা ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং দ্রুত। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সহজেই পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার জন্য ভিসা পেতে পারেন, এবং পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার সময় তাদের পরিবারের সদস্যদেরও এখানে আসার সুযোগ থাকে। ভিসা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পর্তুগালে এসে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করতে পারেন।
পর্তুগাল একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যারা কম খরচে, উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ চান। এখানে শিক্ষার খরচ কম, জীবনযাত্রার খরচ তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং শিক্ষার মান অত্যন্ত উচ্চ। পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। এসব কারণে পর্তুগাল বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
পর্তুগালের শিক্ষাব্যবস্থা
পর্তুগাল ইউরোপের অন্যতম উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা সম্পন্ন দেশ যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে দেশটি বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদান করে।
- পর্তুগালের শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোঃ পর্তুগালের শিক্ষাব্যবস্থা সাধারণত তিনটি প্রধান স্তরে বিভক্তঃ
- প্রাথমিক শিক্ষা (Ensino Básico)- ৬ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা।
- মাধ্যমিক শিক্ষা (Ensino Secundário)- ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সাধারণ ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা।
- উচ্চশিক্ষা (Ensino Superior)- বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রদান।
- প্রাথমিক শিক্ষাঃ প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে শিক্ষার্থীদের মৌলিক গণিত, বিজ্ঞান, ভাষা, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান শেখানো হয়। এটি তিনটি স্তরে বিভক্তঃ
- প্রথম স্তর- ১ম থেকে ৪র্থ গ্রেড
- দ্বিতীয় স্তর- ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেড
- তৃতীয় স্তর- ৭ম থেকে ৯ম গ্রেড
পর্তুগালে ১৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।
- মাধ্যমিক শিক্ষাঃ মাধ্যমিক শিক্ষা মূলত দুটি ধরণের হয়ঃ
- সাধারণ মাধ্যমিক শিক্ষা- যারা উচ্চশিক্ষায় যেতে চায় তাদের জন্য।
- পেশাদার ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা- যারা চাকরির বাজারের জন্য দক্ষতা অর্জন করতে চায় তাদের জন্য।
এখানে বিজ্ঞান, মানবিক, প্রযুক্তিগত এবং শিল্পকলা বিভাগে পাঠদান করা হয়।
- উচ্চশিক্ষাঃ উচ্চশিক্ষা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।
- বিশ্ববিদ্যালয় (Universities)- তাত্ত্বিক ও গবেষণামূলক শিক্ষা প্রদান করে।
- পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (Polytechnic Institutes)- বাস্তবভিত্তিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রদান করে।
এখানে উচ্চশিক্ষার তিনটি স্তর রয়েছেঃ
- স্নাতক (Licenciatura): ৩-৪ বছর
- মাস্টার্স (Mestrado): ১-২ বছর
- ডক্টরেট (Doutoramento): ৩-৫ বছর
- শিক্ষা ব্যয়ঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলকভাবে সহায়তা প্রদান করে। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক স্কলারশিপ ও বৃত্তির সুযোগও রয়েছে।
- স্নাতক পর্যায়ের বার্ষিক টিউশন ফি- ৫০০-২০০০ ইউরো
- মাস্টার্স পর্যায়ের বার্ষিক টিউশন ফি- ১০০০-৪০০০ ইউরো
- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে।
- স্কলারশিপ ও অর্থনৈতিক সহায়তাঃ পর্তুগালের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ প্রদান করে। যেমনঃ
- এরাসমাস মুনডুস স্কলারশিপ
- সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি স্কলারশিপ
- বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক স্কলারশিপ
এছাড়া, অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ প্রদান করে।
পর্তুগালের শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং তুলনামূলকভাবে পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সরকারী শিক্ষাব্যবস্থা, স্কলারশিপ, গবেষণার সুযোগ এবং পরবর্তী সময়ে কাজের সুযোগ থাকার কারণে এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
পর্তুগালে জীবনযাত্রার খরচ
পর্তুগাল ইউরোপের অন্যতম সাশ্রয়ী দেশ যেখানে জীবনযাত্রার খরচ অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক কম। খাবার, বাসস্থান, পরিবহন এবং অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যয়ের দিক থেকে পর্তুগাল একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, অভিবাসী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য। নিচে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খরচের বিবরণ দেওয়া হলো।
- শিক্ষার খরচঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা বা উচ্চশিক্ষা তুলনামূলকভাবে কম খরচে করা যায়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি অনেক সাশ্রয়ী।
- সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- ১,০০০-৩,৫০০ ইউরো (প্রতি বছর)
- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- ৩,০০০-৭,০০০ ইউরো (প্রতি বছর)
- প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা- বিনামূল্যে
- বাসস্থানের খরচঃ পর্তুগালে আবাসনের খরচ শহরভেদে ভিন্ন হতে পারে। লিসবন, পোর্তো এবং আলগারভের মতো শহরগুলোতে ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে ছোট শহরগুলোতে অনেক কম খরচে আবাসন পাওয়া যায়।
- লিসবনে এক কক্ষের ফ্ল্যাট ভাড়া- ৭০০-১২০০ ইউরো
- পোর্তোতে এক কক্ষের ফ্ল্যাট ভাড়া- ৫০০-৯৫০ ইউরো
- ছোট শহরগুলোর ভাড়া- ৩০০-৬০০ ইউরো
যদি কেউ শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, তাহলে ভাড়া আরও কম হতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী এবং একক কর্মজীবীরা এই বিকল্পটি বেছে নেন।
- খাবারের খরচঃ পর্তুগালে সুপারমার্কেট থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা বেশ সাশ্রয়ী। এখানকার খাদ্যদ্রব্যের গুণগত মান ভালো এবং স্থানীয় পণ্যগুলো তুলনামূলকভাবে কম দামে পাওয়া যায়।
- দুধ (১ লিটার)- ১.২০ ইউরো
- পাউরুটি (৫০০ গ্রাম)- ১.১০ ইউরো
- ডিম (১২টি)- ২.৫০ ইউরো
- মুরগির মাংস (১ কেজি)- ৬-৮ ইউরো
- স্থানীয় রেস্টুরেন্টে খাবার- ৮-১২ ইউরো
বাজার থেকে নিজে রান্না করলে মাসিক খাদ্য খরচ ১৫০-৩০০ ইউরোর মধ্যে রাখা সম্ভব।
- পরিবহনের খরচঃ পর্তুগালে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অনেক ভালো এবং সাশ্রয়ী। বাস, ট্রাম, মেট্রো এবং ট্রেনের মাধ্যমে সহজে যাতায়াত করা যায়।
- একটি বাস বা মেট্রো টিকিট- ১.৬০ ইউরো
- মাসিক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাস- ৩০-৫০ ইউরো
- ট্যাক্সি ভাড়া প্রতি কিলোমিটার- ০.৭০-১ ইউরো
শিক্ষার্থীরা এবং প্রবীণ নাগরিকরা বিশেষ ছাড় পেয়ে থাকেন।
- জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং ইন্টারনেট খরচঃ জল, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং ইন্টারনেট খরচ মাসিকভাবে নির্ভর করে আবহাওয়া এবং ব্যবহারকারীর অভ্যাসের ওপর।
- বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানি (একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টের জন্য)- ৮০-১৫০ ইউরো
- মোবাইল এবং ইন্টারনেট খরচ- ৩০-৫০ ইউরো
- স্বাস্থ্যসেবার খরচঃ পর্তুগালে সরকারি হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবা অনেক ভালো এবং নাগরিকদের জন্য অনেক কম খরচে বা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। ব্যক্তিগত চিকিৎসার খরচ তুলনামূলক বেশি।
- সরকারি হাসপাতালের সাধারণ পরামর্শ ফি- ১০-১৫ ইউরো
- ব্যক্তিগত ডাক্তার দেখানো- ৩০-৭০ ইউরো
- স্বাস্থ্যবীমার খরচ- ২০-১০০ ইউরো (প্যাকেজ অনুযায়ী)
- বিনোদন এবং অবসর ব্যয়ঃ পর্তুগালে বিভিন্ন বিনোদন ও অবসর কার্যক্রমের জন্য খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
- সিনেমা টিকিট- ৭-১০ ইউরো
- ফিটনেস ক্লাবের সদস্যপদ- ২৫-৫০ ইউরো
- সৈকত বা পার্ক ভ্রমণ- বিনামূল্যে
- মোট মাসিক খরচঃ পর্তুগালে একজন একক ব্যক্তির জন্য গড় মাসিক খরচঃ
- লিসবন বা পোর্তো- ৮০০-১২০০ ইউরো
- ছোট শহর- ৫০০-৮০০ ইউরো
পরিবারের ক্ষেত্রে এটি বাড়তে পারে, তবে জীবনযাত্রার খরচ অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কম।
পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা এবং উচ্চমানের জীবনযাত্রার সুযোগ প্রদান করে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, অভিবাসী এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত স্থান। পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা, আবাসন, খাদ্য, এবং বিনোদনের সুযোগ পর্তুগালকে বসবাসের জন্য একটি ভালো দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছে।
পর্তুগালে শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা
পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা বা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ধরণের ভিসা গ্রহণ করতে হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা আবশ্যক। পর্তুগালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি নিশ্চিত হলে শিক্ষার্থীকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়।
পর্তুগালে শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার ধরন
পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের মূলত দুটি ধরণের ভিসা রয়েছেঃ
- শর্ট-টার্ম স্টুডেন্ট ভিসা (Schengen Visa – Type C)- ৯০ দিনের কম সময়ের জন্য এটি প্রদান করা হয়, সাধারণত স্বল্পমেয়াদী কোর্স বা ভাষা শিক্ষার জন্য।
- লং-স্টে স্টুডেন্ট ভিসা (National Visa – Type D)- ৯০ দিনের বেশি সময়ের জন্য উচ্চশিক্ষা, মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে হলে এই ভিসা প্রয়োজন হয়।
শিক্ষার্থীদের ভিসার জন্য যোগ্যতা
পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার জন্য বা স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হয়ঃ
- পর্তুগালের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণ।
- প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য প্রদর্শন (তিন থেকে ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট)।
- আবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রদান (হোস্টেল বা রেন্টাল অ্যাগ্রিমেন্ট)।
- স্বাস্থ্য বীমা গ্রহণ।
- নির্দিষ্ট পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগ
পর্তুগালের শিক্ষার্থী ভিসাধারীরা পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। সাধারণতঃ
- শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন।
- ছুটির সময় ফুল-টাইম কাজ করার অনুমতি থাকে।
- কিছু ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ বা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
পর্তুগাল আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি দারুণ জায়গা। সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ এবং চাকরি ও স্থায়ী বসবাসের সুবিধার কারণে পর্তুগাল বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করছে। সঠিক তথ্য ও কাগজপত্রের মাধ্যমে সহজেই পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ বা স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সম্ভব।
পর্তুগালের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
পর্তুগাল উচ্চশিক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য, যেখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পর্তুগালে কম খরচে পড়াশজগ্র মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। নিচে পর্তুগালের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- ইউনিভার্সিটি অব পোর্তো (University of Porto): পর্তুগালের অন্যতম সেরা এবং বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হলো ( University of Porto )। এটি ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে এটি পর্তুগালের সবচেয়ে উচ্চমানের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়।
- অবস্থান- পোর্তো, পর্তুগাল
- বিশেষত্ব- ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা, মেডিসিন ও সামাজিক বিজ্ঞান
- বিশ্ব র্যাঙ্কিং- QS World University Rankings অনুযায়ী শীর্ষ ৩০০-৪০০ মধ্যে অবস্থান
- ইউনিভার্সিটি অব লিসবন (University of Lisbon): পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অবস্থিত (University of Lisbon) দেশটির বৃহত্তম ও অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ইউরোপের অন্যতম সম্মানজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও পরিচিত।
- অবস্থান- লিসবন, পর্তুগাল
- বিশেষত্ব- বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান
- বিশ্ব র্যাঙ্কিং- QS র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ২০০-৩০০ মধ্যে অবস্থান
- ইউনিভার্সিটি অব কোইম্ব্রা (University of Coimbra): পর্তুগালের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয় হলো ( University of Coimbra )। এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত।
- অবস্থান- কোইম্ব্রা, পর্তুগাল
- বিশেষত্ব- আইন, দর্শন, চিকিৎসা ও প্রকৌশল
- বিশ্ব র্যাঙ্কিং- QS র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ৪০০-৫০০ মধ্যে অবস্থান
- নোভা ইউনিভার্সিটি অব লিসবন (NOVA University Lisbon): ( NOVA University Lisbon ) একটি আধুনিক গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয় যা ব্যবসা প্রশাসন, অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক গবেষণার জন্য বিখ্যাত।
- অবস্থান- লিসবন, পর্তুগাল
- বিশেষত্ব- বিজনেস, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি
- বিশ্ব র্যাঙ্কিং- শীর্ষ ৩৫০-৪০০ মধ্যে অবস্থান
- ইউনিভার্সিটি অব মিনহো (University of Minho): উত্তর পর্তুগালের অন্যতম আধুনিক ও গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় হলো ( University of Minho )। এটি মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তিগত গবেষণার জন্য জনপ্রিয়।
- অবস্থান- ব্রাগা ও গিমারাইস, পর্তুগাল
- বিশেষত্ব- কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি
- বিশ্ব র্যাঙ্কিং- শীর্ষ ৫০০-৬০০ মধ্যে অবস্থান
- ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব পর্তুগাল (Catholic University of Portugal): এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা পরিচালিত এবং এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
- অবস্থান- লিসবন, পোর্তো ও ব্রাগা
- বিশেষত্ব- বিজনেস, আইন ও হিউম্যানিটিজ
- বিশ্ব র্যাঙ্কিং- শীর্ষ ৫০০-৬০০ মধ্যে অবস্থান
- ইউনিভার্সিটি অব এভোরা (University of Évora): এটি পর্তুগালের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
- অবস্থান- এভোরা, পর্তুগাল
- বিশেষত্ব- কৃষি, পরিবেশবিদ্যা, শিল্পকলা ও মানবিক বিজ্ঞান
- বিশ্ব র্যাঙ্কিং- শীর্ষ ৭০০-৮০০ মধ্যে অবস্থান
- ইউনিভার্সিটি অব মাদেইরা (University of Madeira): মাদেইরা দ্বীপে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
- অবস্থান- ফাঞ্চাল, মাদেইরা
- বিশেষত্ব- পর্যটন ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, সামুদ্রিক বিজ্ঞান
- বিশ্ব র্যাঙ্কিং- শীর্ষ ৮০০-১০০০ মধ্যে অবস্থান
পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা, তুলনামূলক কম খরচ, আধুনিক গবেষণা সুবিধা এবং স্কলারশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। যে শিক্ষার্থীরা ইউরোপে পড়াশোনা করতে চান, তাদের জন্য পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ হতে পারে একটি চমৎকার গন্তব্য।
পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার প্রক্রিয়া
পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা বা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হয়, যা নীচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
- ধাপ ১- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করাঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা বা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে পর্তুগালের স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে। এ জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবেঃ
- পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম নির্বাচন করা।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম পূরণ করা।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট, ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ ইত্যাদি) জমা দেওয়া।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ (যদি প্রয়োজন হয়)।
- ভর্তি নিশ্চিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে **Letter of Acceptance** সংগ্রহ করা।
- ধাপ ২- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করাঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা বা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবেঃ
- সম্পূর্ণ পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফরম।
- ন্যূনতম ৬ মাসের বৈধতা সম্পন্ন **পাসপোর্ট**।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নিশ্চয়তাপত্র (Letter of Acceptance)।
- সাম্প্রতিক রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ (মাসিক খরচ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ আছে তা নিশ্চিত করতে হবে)।
- পর্তুগালে থাকার আবাসনের প্রমাণ (হোস্টেল বুকিং বা বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্র)।
- সম্প্রতি নেওয়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- পর্তুগালে থাকাকালীন স্বাস্থ্য ব্যয় কভার করার জন্য স্বাস্থ্য বীমা (Health Insurance)।
- যদি স্পনসর থাকে তবে স্পনসরশিপ চিঠি এবং স্পনসরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- ধাপ ৩- ভিসার আবেদন জমা দেওয়াঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনার জন্য উপরের সকল কাগজপত্র প্রস্তুত হওয়ার পর, আপনাকে নিজ দেশের পর্তুগিজ দূতাবাস বা কনস্যুলেটে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার জন্য নিম্নলিখিত ধাপ অনুসরণ করতে হবেঃ
- পর্তুগিজ দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ( Portugal Embassy list in Bangladesh ) থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা।
- নির্ধারিত দিনে দূতাবাসে গিয়ে কাগজপত্র জমা দেওয়া।
- ভিসা ফি পরিশোধ করা।
- দূতাবাসে প্রয়োজনীয় বায়োমেট্রিক তথ্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি) প্রদান করা।
- ধাপ ৪- ভিসা ইন্টারভিউঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা করার জন্য কিছু ক্ষেত্রে দূতাবাস আবেদনকারীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকে থাকতে পারে। এই সাক্ষাৎকারে সাধারণত নিম্নলিখিত প্রশ্ন করা হয়ঃ
- কেন পর্তুগালে পড়তে চান?
- কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন এবং কেন?
- আপনার আর্থিক অবস্থা কেমন?
- পর্তুগালে অবস্থানকালে কোথায় থাকবেন?
- পড়াশোনা শেষে কি পরিকল্পনা রয়েছে?
- ধাপ ৫- ভিসার অনুমোদনের জন্য অপেক্ষাঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা করার জন্য ভিসা সাক্ষাৎকারের পর, আবেদন প্রক্রিয়াটি ৬০ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে। এই সময়ের মধ্যে দূতাবাস আপনার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়। অনুমোদন হলে আপনাকে ইমেইল বা ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
- ধাপ ৬- ভিসা সংগ্রহঃ পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা করতে যাওয়ার জন্য ভিসা অনুমোদন হলে, আপনাকে পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা স্ট্যাম্প করিয়ে নিতে হবে। ভিসা সংগ্রহ করার পর, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পর্তুগালে প্রবেশ করতে হবে।
- ধাপ ৭- পর্তুগালে পৌঁছে রেসিডেন্স পারমিট গ্রহণঃ পর্তুগালে প্রবেশের পর, SEF (Serviço de Estrangeiros e Fronteiras) অফিসে গিয়ে Residence Permit এর জন্য আবেদন করতে হবে। এটি শিক্ষার্থীদের লং-টার্ম লিগ্যাল স্ট্যাটাস নিশ্চিত করে।
পর্তুগালে শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা করা শুধু শিক্ষা গ্রহণের সুযোগই নয়, বরং ভবিষ্যতে ইউরোপীয় জীবন-যাপনের এক বিশাল সম্ভাবনাও তৈরি করে।
শেষ কথা
পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা বা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অসাধারণ সুযোগ। পর্তুগালে কম খরচে পড়াশোনা, সহজ ভিসা প্রক্রিয়া, ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ এটিকে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় শিক্ষার যায়গা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার আগে যথাযথ গবেষণা করা, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখা, এবং আবেদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
যারা ইউরোপে পড়াশোনা করতে চান এবং ভবিষ্যতে একটি স্থায়ী আবাস গড়ার পরিকল্পনা করছেন, পর্তুগাল হতে পারে তাদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। সঠিক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং সময়ানুযায়ী আবেদন করলেই আপনি সহজেই একটি উজ্জ্বল শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ারের পথে এগিয়ে যেতে পারবেন।