কিভাবে দোয়া বা মোনাজাত করতে হয়

কিভাবে দোয়া বা মোনাজাত করতে হয়-cybersheba.com
আমরা যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই, তখন আমরা জানি যে তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের চাওয়া পূরণের ব্যবস্থা করেন।

দোয়া বা মোনাজাত হল আল্লাহ তাআলার কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করা বা তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া। ইসলাম ধর্মে দোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা একজন মুসলিমের জীবনকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কিত করে এবং তার মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করতে সাহায্য করে।

দোয়া শব্দটি আরবি “দাআ” (دَعَاء) থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘ডাকা’ বা ‘বাহির করা’। আল্লাহ তাআলাকে ডাকা, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং নিজের প্রয়োজনের কথা জানানোই হল দোয়া বা মোনাজাত। মুসলিমরা দোয়া করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশীর্বাদ, সহায়তা, ক্ষমা এবং হেদায়াত প্রার্থনা করে থাকে।

মোনাজাত মূলত একটি ইবাদত (বিশেষ উপাসনা) যা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। এটি একান্তভাবে আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রকাশ করে। আজকের পোষ্টে কিভাবে দোয়া বা মোনাজাত করতে হয় সেই ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।

দোয়া বা মোনাজাতের গুরুত্ব

ইসলামে দোয়া বা মোনাজাতের গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক। কুরআন ও হাদীসে দোয়া বা মোনাজাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা একজন মুসলিমের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সহায়তা প্রদান করে।

আসুন প্রথমে জেনে নিই কাদের দোয়া বেশি কবুল হয়

  • সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া
  • মজলুম (যিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন)
  • মুসাফির (যিনি দেশ-বিদেশ সফর করে বেড়ান)

 

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত (আরাধনা) হলো দোয়া বা মোনাজাত। এটি আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই দোয়া বা মোনাজাতের গুরুত্ব অনেক। নিচে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হলোঃ

  • আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করাঃ দোয়া বা মোনাজাতের একটি বিশেষ মাধ্যম যা মুসলিমদের আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করতে সহায়তা করে। কুরআনে বলা হয়েছেঃ

    “তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উত্তর দেব।” (সুরা গাফির, ৪০:৬০)

    এই আয়াতটি নির্দেশ করে যে আল্লাহ তাআলা আমাদের দোয়া শুনেন এবং আমাদের চাহিদা অনুযায়ী উত্তর দেন।

  • দোয়া বা মোনাজাতের ইবাদতের একটি অংশঃ দোয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হাদীসে বলা হয়েছে, “দোয়া ইবাদতের মশাল” (তিরমিজি) – এর মানে হল যে, দোয়া একজন মুসলিমের সবচেয়ে বড় উপাসনা এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
  • ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি ও সান্ত্বনা লাভঃ দোয়া বা মোনাজাত শুধু পার্থিব বিষয়ক চাওয়া-পাওয়া নয়, বরং এটি আধ্যাত্মিক শান্তি, আত্মবিশ্বাস এবং সান্ত্বনা লাভের একটি মাধ্যম। যখন একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে তার সমস্যাগুলি তুলে ধরেন, তখন তার হৃদয়ে শান্তি ও প্রশান্তি অনুভূত হয়।
  • আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রাপ্তিঃ দোয়ার মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা চেয়ে থাকে। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

    “তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল।” (সুরা নূর, ২৪:৩১)

    এখানে দেখা যায়, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের ক্ষমা করতে প্রস্তুত, এবং দোয়া এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারে।

  • দোয়া আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি করেঃ দোয়া বা মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার প্রতি আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। আমরা যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাই, তখন আমরা জানি যে তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের চাওয়া পূরণের ব্যবস্থা করেন।
  • দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনাঃ দোয়া বা মোনাজাতের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহ তাআলার সাহায্য চায়। জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন। দোয়া করে আমরা আমাদের কঠিন সময়গুলিতে আল্লাহর সাহায্য লাভ করতে সক্ষম হই।
  • দোয়া এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিঃ দোয়া বা মোনাজাত মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সহায়ক। এটি একদিকে যেমন ব্যক্তির বিশ্বাস ও সম্পর্ককে শক্তিশালী করে, অন্যদিকে তার মন ও হৃদয়কে পবিত্র করে।
  • দোয়া এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যঃ দোয়া আমাদেরকে একে অপরের জন্য প্রার্থনা করতে অনুপ্রাণিত করে। এর মাধ্যমে মুসলিমরা একে অপরের জন্য ভালোবাসা ও সহানুভূতি পোষণ করে।

সর্বশেষ, দোয়া বা মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিকট সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব হয়, এবং এটি একজন মুসলিমের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামে দোয়া করা কেবল একটি ধর্মীয় কর্ম নয়, বরং এটি একজন মুসলিমের বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার একটি অন্যতম উপায়।

দোয়া বা মোনাজাতের সঠিক সময়

dua ba monazat - কিভাবে দোয়া বা মোনাজাত করতে হয়-cybersheba.com

দোয়া করার সঠিক সময় নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সময় রয়েছে যখন দোয়া বা মোনাজাত অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে থাকে, এবং আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন। এসব সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

  • গভীর রাতঃ গভীর রাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে এসে বান্দাদের প্রার্থনা করতে ডাকেন। এই সময় দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি গভীর রাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না।” (আবু দাউদ, হাদীস: ১৪৮৮)
  • শুক্রবারের দিনঃ শুক্রবারের দিন বিশেষভাবে দোয়া করার গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষত, জুমার দিনের এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যখন আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন। সেই সময়ের সন্ধান পাওয়া দোয়ার কবুল হওয়ার অন্যতম সুযোগ।
  • আজান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ঃ আজান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। এটি এমন একটি মুহূর্ত, যখন আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রার্থনায় করুণার দৃষ্টি প্রদান করেন।
  • প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরঃ প্রতি ফরজ নামাজের পর দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নামাজের পর দোয়া করা আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয়।”
  • বৃষ্টির সময়ঃ বৃষ্টি হওয়া একটি বিশেষ করুণার মুহূর্ত, যখন দোয়া বা মোনাজাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই সময় দোয়া করা খুবই ফজিলতপূর্ণ।
  • তওবা বা অনুতাপের সময়ঃ যখন আমরা গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হই, তখন দোয়া করা উচিত। আল্লাহ তাআলা সেই মুহূর্তে বান্দার তওবা কবুল করেন এবং ক্ষমা করেন।

উপরোক্ত সময়গুলোতে দোয়া করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রার্থনা করলে, তা গ্রহণ হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। মুসলিমরা তাদের ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন।

দোয়া বা মোনাজাত শুরু করার সঠিক পদ্ধতি

দোয়া বা মোনাজাত আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্যের প্রকাশ এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। দোয়া শুরু করার কিছু আদব বা সঠিক পদ্ধতি রয়েছে, যা মেনে চলা উত্তমঃ

  1. পবিত্রতা বজায় রাখাঃ দোয়া করার আগে নিজেকে পবিত্র করা গুরুত্বপূর্ণ। অজু করে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়া সুন্নত।
  2. আল্লাহর প্রশংসা করাঃ দোয়া শুরু করার আগে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, “আলহামদু লিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বলা এবং তাঁর মহানত্বের কথা স্মরণ করা।
  3. দরূদ পাঠ করাঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ পাঠ করা দোয়া বা মোনাজাত কবুলের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। যেমনঃ “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ”।
  4. হৃদয়ের একাগ্রতা ও বিনয়ঃ দোয়া বা মোনাজাত করতে হবে একাগ্র হৃদয়ে ও বিনয় সহকারে। অহংকার বা গাফিলতি মনোভাব দোয়া কবুলের অন্তরায়।
  5. নিজ ভাষায় দোয়াঃ আল্লাহ তাআলা সব ভাষা বোঝেন। তাই নিজের ভাষায় সহজ ও স্বাভাবিকভাবে প্রার্থনা করা যায়। তবে আরবি দোয়াগুলো শিখে নেওয়া উত্তম।
  6. আত্মসমর্পণ ও অনুতাপ প্রকাশঃ দোয়ার শুরুতেই নিজের দুর্বলতা ও গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলার কাছে আত্মসমর্পণ করা ও অনুতপ্ত হওয়া প্রয়োজন।
  7. দোয়া সম্পন্ন করার পরঃ দোয়া বা মোনাজাত শেষ হলে আবার দরূদ পাঠ করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আবশ্যক।

এই পদ্ধতি মেনে চললে দোয়া আরও আন্তরিক ও গ্রহণযোগ্য হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল দোয়া বা মোনাজাত কবুল করুন। আমিন।

দোয়া বা মোনাজাত করার জন্য প্রস্ততি

রাসুল (সাঃ) বলেন – উদাসীন হৃদয়ের দোয়া কবুল হয়না। এটা কিন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উক্তি। তাই দোয়া বা মোনাজাত করতে হবে একাগ্রচিত্তে, ধ্যান-মন এক সাথে করে। আল্লাহর কাছে নতজানু হতে হবে। নিজেকে আল্লাহর কাছে পূর্ণাংগ ভাবে সমর্পণ করতে হবে।

দোয়া শুরুর আগে কয়েক বার দুরুদ শরীফ পরতে হবে। তারপর পশ্চিম দিকে ফিরে নামাজের সুরতে বসতে হবে। এরপর আল্লাহ যে আসমান-জমীন, পাহাড়-পর্বত, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক, কিয়ামত, হাশর-নসর, মিজান-পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নামের মালিক, আমাদের সৃষ্টিকর্তা-পালনকর্তা-রিজিকদাতা ও শেষ দিবসে আমাদের যে আবার জীবিত করে বিচার করবেন – আল্লাহর শানে এসব কিছুর স্বীকারোক্তি দিয়ে দোয়া শুরু করতে হবে। দোয়া শেষ হবার পর আরো কয়েকবার দুরুদ শরীফ পড়ে নবী (সাঃ) এর দরবারে বকশিশ দিতে হবে।

একদিন দোয়া বা মোনাজাত করলেই আল্লাহ সব দিয়ে দিবেনা। বার বার চাইতে হবে। কান্না করতে হবে। মনে করেন- আপনার কাছে দুইটা ভিখারী এসে কিছু চাইলো। কিন্ত আপনার কাছে দেওয়ার মত সামান্য কিছুই আছে। তাদের মধ্যে একজন কান্না করতেছে আর চাচ্ছে, আর একজন শুধু দাঁড়িয়ে আছে। আপনি তখন কাকে দিবেন? নিশ্চয় যে কান্না করছে তাকে দিবেন। তেমনি ভাবে আল্লাহর কাছে না কাদলে আপনি কিছুই পাবেনা। আল্লাহর কাছে অনেকে অনেক কিছুই চায়, কিন্ত আল্লাহ সবাইকে দেয়না, যে কাদে তাকেই দেয়।

শেষ রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ সময় আল্লাহ সপ্তম আসমান থেকে নেমে এসে চতুর্থ আসমানে আসেন। দুনিয়ার লোকদের কাছে উদ্দেশ্য করে বলেন – তোমাদের কার কি দরকার আমাকে বল। আমি এখন দেব। আমি যদি দুনিয়ার প্রত্যেকে এইর রকম সাতটা দুনিয়ার সমান সম্পদ দান করি, তবুও আমার রহমতের দরিয়া থেকে দানা পরিমাণ কম পড়বে না। এরপর ফজর শুরুর আগে আবার সপ্তম আসমানে চলে যান।

তাই দোয়া হোক অন্তর থেকে, আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।

রাতের দোয়া বা মোনাজাত গুরুত্ব

রাতের দোয়া বা মোনাজাত আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী হিসেবে বিবেচিত। গভীর রাতে যখন চারপাশ নীরব হয়ে যায় এবং মানুষ বিশ্রামে থাকে, তখন আল্লাহর কাছে মনের গভীর প্রার্থনা করার জন্য এ সময়টি বিশেষভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। নিম্নে রাতের দোয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলোঃ

  • আল্লাহর বিশেষ রহমতঃ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং তাঁর বান্দাদের ডাকেন। তিনি বলেন, ‘কোনো বান্দা কি আছে যে আমাকে ডাকবে, আমি তার দোয়া কবুল করব? কোনো বান্দা কি আছে যে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?’ (বুখারি, মুসলিম)
  • তাহাজ্জুদের নামাজঃ রাতের দোয়ার বিশেষত্ব হলো তাহাজ্জুদের নামাজ। এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত ইবাদত। গভীর রাতে উঠে আল্লাহর সামনে বিনীত চিত্তে দোয়া করা বান্দার প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও করুণা বর্ষণ করে।
  • দোয়ার কবুলের বিশেষ সময়ঃ গভীর রাত হলো দোয়া কবুলের সময়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এ সময় বান্দার দোয়া আল্লাহর দরবারে দ্রুত পৌঁছায় এবং তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মুমিনদের জন্য এই সুযোগ হলো আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য ও মাফ পাওয়ার বিশেষ মুহূর্ত।
  • শান্ত পরিবেশঃ গভীর রাতে চারপাশ নীরব থাকে। এ সময় মন স্থির থাকে এবং ইবাদতে মনোযোগ দেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা রেখে দোয়া করা সহজ হয় এবং আত্মার সাথে এক বিশেষ সংযোগ স্থাপন করা যায়।
  • আত্মার পরিশুদ্ধিঃ গভীর রাতে দোয়া করলে আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং আল্লাহর প্রতি আরও গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সৃষ্টি হয়। এই দোয়া মুমিনদের আত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করে।

রাতের দোয়া আল্লাহর সঙ্গে মনের একান্ত সম্পর্ক স্থাপন করার একটি উত্তম সুযোগ। আল্লাহ তাআলা গভীর রাতে বান্দার প্রার্থনা শুনেন এবং তার কষ্ট লাঘব করেন। তাই, আমাদের উচিত গভীর রাতে আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করা এবং তাঁর থেকে কল্যাণ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। আমিন।

প্রয়োজনীয়তার জন্য দোয়া

দ্বীন-দুনিয়ার এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে আল্লাহর কাছে চাইতে পারবেনা। যা মনে চায় আল্লাহর কাছে দোয়া বা মোনাজাতের চাইবেন। এমনকি, বলা হয়েছে- যদি আপনার জুতার ফিতা ছিড়ে যায়, সেটা নিয়েও আল্লাহর কাছে বলতে পারেন। মনে করুন, আপনার টাকা ধার করা দরকার। আপনি কোন এক বন্ধুর কাছে যাচ্ছেন টাকা ধার চাইতে।

বলা হয়েছে- দুনিয়ার কারো কাছে হাত পাতার আগে অবশ্যই আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। বন্ধুর কাছে যাওয়ার আগে দু’রাকাত নামাজ পড়ে নিয়ে আল্লাহকে বলতে পারেন যে – আপনার অমুক প্রয়োজনে টাকা দরকার। তারপর বন্ধুর কাছে যান।

হাদীসে উল্লেখিত দোয়া

ইসলামে অনেক দোয়া রয়েছে যা রাসুল (সা.) থেকে হাদীসে পাওয়া গেছে। এসব দোয়া আমাদের জীবনে শান্তি ও রহমত আনে। রাসুল (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন কিছু বিশেষ দোয়া যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে পারি। কিছু উল্লেখযোগ্য দোয়া হলোঃ

  • আল্লাহর প্রশংসাঃ “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” – এটি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং আমাদের পাপসমূহের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করার দোয়া।
  • সুস্থতার দোয়াঃ “আল্লাহুম্মা আশফি।” – এটি অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া।
  • জীবনযুদ্ধে শক্তি অর্জনঃ “হে আল্লাহ! আমার শক্তি বাড়াও, যাতে আমি ত্রুটি ছাড়া জীবন যাপন করতে পারি।”

দোয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ

কিছু পাপ আছে যা বান্দার মাঝে উপস্থিত থাকলে তার দোয়া কবুল হওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে যায়। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাই এগুলার প্রতি খেয়াল রাখতে হব। এই পাপগুলো তাকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে- যদি কেউ চায় তার দোয়া কবুল করা হোক।
যেমনঃ পাপগুলো হল-

১. হারাম খাদ্য, হারাম পানীয় ও হারাম বস্ত্র

কেউ হারাম কোনো খাবার খেলে বা কারো খাবার হারাম টাকায় কেনা হলে, পোশাক হারাম বা হারাম টাকায় কেনা হলে আল্লাহ ঐ অবস্থায় তার দোয়া কবুল করেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না।”

তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসুলদেরকে। তিনি বলেছেনঃ

“হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর, তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত”।

এবং আল্লাহ (মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য) করে বলেছেনঃ
“হে মুমিনগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর।”
এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধুসরিত করেছে অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দোয়া করে, হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কিভাবে তার দোয়া কবুল করা হবে?” [সহীহ মুসলিম]

২. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা

মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহবান না করলে বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে না বললে অর্থাৎ দাওয়াত ও তাবলীগে অবহেলা করলে তার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন অতঃপর তোমরা দোয়া করবে কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না।” [তিরমিজী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

৩. দো’আ কবুলে তাড়াহুড়ো করা

অনেকে কিছুদিন দোয়া করার পরে আল্লাহর বিশেষ কোনো হেকমত অনুযায়ী দোয়া কবুল হতে দেরী হলে তাড়াহুড়া করে বা হতাশ হয়ে পড়ে। অভিযোগ করা শুরু করে দেয়। কই এতো দোয়া করলাম, আল্লাহ দোয়া কবুল করেন না…আল্লাহ মনে হয় আমাদের কথা শুনেন না (নাউযুবিল্লাহ, এগুলা নাফরমানী ও কুফুরী কথা!)

এইসব কথা বলার শাস্তিস্বরূপ সত্যিই আল্লাহ তার দোয়া আর কবুল করেন না। এইজন্য ধৈর্য ধরে দোয়া করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে হযরত জাকারিয়া (আঃ) অনেক অনেক বছর দোয়া করার পরে তাঁর দোয়া কবুল হয়েছিলো, তিনি পুত্র সন্তান পেয়েছিলেন একেবারে বৃদ্ধ বয়সে। তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী, আর আমরা নিশ্চয়ই তাঁর থেকে উত্তম না। এইজন্য অবস্থা যাইহোক, ধৈর্য ধরতে হবে ও আল্লাহ কাছে আশা রেখে দোয়া করে যেতে হবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বান্দার দোয়া সর্বদা কবুল করা হয় যদি সে দোয়া’তে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, দোয়া’তে তাড়াহুড়া হল, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দোয়া করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়। [সহীহ মুসলিম।]

দোয়ায় এ ধরনের তাড়াহুড়া করা আল্লাহ অপছন্দ করেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ “আর মানুষ অকল্যাণের দোয়া করে, যেভাবে সে কল্যাণের দোয়া করে, তবে মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়। (আল ইসরাঃ ১১)
তবে দোয়া’র ভিতরে এ কথা বলা নিষেধ নয় যে, হে আল্লাহ এটা আমাকে খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও। দোয়া’তে তাড়াহুড়া করার অর্থ হল দোয়া করে কেন এখনো দোয়া কবুল হলো না এমন ভাবনা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়া।

শেষ কথা

দোয়া বা মোনাজাত হল আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আল্লাহ তাআলার সাথে আমাদের সম্পর্ক গভীর করার একটি শক্তিশালী উপায়। সঠিক সময়ে, সঠিক মনোভাব নিয়ে এবং সঠিক নিয়মে দোয়া করা আমাদের জীবনে শান্তি, সুখ, এবং সফলতা নিয়ে আসে। আমরা যখন আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তখন আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ আমাদের দোয়া শুনছেন এবং আমাদের উপকারের জন্য কিছু না কিছু করবেন।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *