দুবাই গোল্ডেন ভিসা কাদের জন্য জেনে নিন

দুবাই গোল্ডেন ভিসা কাদের জন্য জেনে নিন-cybersheba.com
দুবাই গোল্ডেন ভিসা মূলত এমন ব্যক্তিদের জন্য পরিকল্পিত যারা দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে অবদান রাখতে চান বা ইতিমধ্যেই তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

দুবাই গোল্ডেন ভিসা একটি দীর্ঘমেয়াদী ভিসা ব্যবস্থা যা উচ্চ দক্ষতার পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের জন্য দেওয়া হয়। এই ভিসার মাধ্যমে আপনি আমিরাতে দীর্ঘস্থায়ীভাবে বসবাস, কাজ ও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন, একই সাথে আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য আরও সুবিধা থাকবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত বা দুবাই তার অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্যিক সুযোগ এবং বসবাসের সুবিধার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এ দেশের সরকারের তরফ থেকে দেওয়া গোল্ডেন ভিসা আন্তর্জাতিক পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং বিশেষ ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যক্তিদের জন্য একটি স্বর্ণমুকুট। এই ভিসার মাধ্যমে আপনি দীর্ঘমেয়াদীভাবে দুবাইতে বসবাস ও কাজ করতে পারবেন।

দুবাই গোল্ডেন ভিসা কাদের জন্য?

দুবাই গোল্ডেন ভিসা মূলত এমন ব্যক্তিদের জন্য যারা দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে অবদান রাখতে চান বা ইতিমধ্যেই তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। দুবাই সরকার বিভিন্ন ক্যাটাগরি চালু করেছে, যা কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে প্রদান করা হচ্ছেঃ

  • উচ্চমানের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞঃ যারা বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং উন্নত প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ, তাদের জন্য গোল্ডেন ভিসা সুবিধা রয়েছে।
  • উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীঃ যারা দুবাইতে ব্যবসা শুরু করেছেন বা যারা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, তাদের জন্য গোল্ডেন ভিসা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
  • শিক্ষক ও শিক্ষাবিদঃ যারা শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষাখাতে, তাদের জন্য গোল্ডেন ভিসা ব্যবস্থা রয়েছে।
  • গেমিং ও ই-স্পোর্টস পেশাজীবীঃ দুবাইয়ের গেমিং ও ই-স্পোর্টস শিল্পের উন্নতির জন্য বিশেষ গোল্ডেন ভিসা রয়েছে।
  • বিলাসবহুল ইয়ট মালিকরাঃ ৪০ মিটার বা তার চেয়ে বড় ইয়টের মালিকরা, বিশেষ করে যারা ইয়ট নির্মাণ ব্যবসায় যুক্ত, তাদের জন্য এই ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে।

দুবাই গোল্ডেন ভিসার জন্য যোগ্যতা ক্রাইটেরিয়া

দুবাই গোল্ডেন ভিসা একটি বিশেষ সুবিধা যা নির্বাচিত পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, বিজ্ঞানী, গবেষক, এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রদান করা হয়। এই ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং শর্ত পূরণ করতে হয়। নিচে দুবাই গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য সাধারণ যোগ্যতা ও শর্তাবলী বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ

  • মাসিক আয়ঃ দুবাই গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে একটি নির্দিষ্ট মাসিক আয় থাকতে হবে। ২০২৫ সালে গোল্ডেন ভিসার জন্য ন্যূনতম মাসিক আয় ৩০,০০০ দিরহাম করা হয়েছে। আগের সময় এটি ৫০,০০০ দিরহাম ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক পরিবর্তন অনুযায়ী আয় কমানো হয়েছে, ফলে আরও বেশি সংখ্যক দক্ষ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতাঃ গোল্ডেন ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশাগত দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা, প্রকৌশল এবং অন্যান্য উন্নত ক্ষেত্রের পেশাজীবী যারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তাদের জন্য গোল্ডেন ভিসা সুবিধা রয়েছে। এছাড়া, যারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং তাদের কাজের ক্ষেত্রটি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তারা প্রাধান্য পাবেন।
  • বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবীঃ বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবী যারা কিছু নির্দিষ্ট সেক্টরে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন, তারা গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছেঃ
    • বিজ্ঞানী- যারা গবেষণা এবং উন্নত প্রযুক্তি উন্নয়নে নিয়োজিত, তাদের জন্য গোল্ডেন ভিসা প্রদান করা হয়।
    • বিশেষজ্ঞ- যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত, তাদের জন্যও এই ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে।
    • উদ্যোক্তা- যারা নতুন ব্যবসা বা স্টার্টআপ শুরু করেছেন এবং যারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে, তারা গোল্ডেন ভিসা পেতে পারেন।
  • বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তাঃ দুবাইয়ের অর্থনৈতিক খাতে অবদান রাখার জন্য ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের জন্য গোল্ডেন ভিসা প্রদান করা হয়। বিশেষ করে যারা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবসা শুরু করেছেন এবং যারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতিতে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছেন, তারা এই ভিসা লাভের জন্য যোগ্য।এছাড়া, যারা দুবাইতে অন্তত ২০ লাখ দিরহাম মূল্যের জমি বা সম্পত্তি কিনেছেন, তাদের জন্য গোল্ডেন ভিসা সুবিধা রয়েছে।
  • বয়স এবং পরিবারঃ গোল্ডেন ভিসার জন্য বয়সের নির্দিষ্ট কোনো সীমা নেই, তবে আবেদনকারীকে বাচ্চাদের সহ পরিবারের সদস্যদেরও সঙ্গ নিয়ে আসার সুযোগ পাবেন। এটি একটি পারিবারিক ভিসা প্রোগ্রাম, যার মাধ্যমে আবেদনকারী তাদের পরিবারের সদস্যদের, যেমন স্ত্রী, সন্তান, অভিভাবক বা অন্যান্য সদস্যদের আমিরাতে নিয়ে আসতে পারেন।
  • উচ্চ চাহিদার সেক্টরের পেশাজীবীঃ গোল্ডেন ভিসা এমন পেশাজীবীদের জন্য দেয়া হয় যারা উচ্চ চাহিদার সেক্টরে কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছেঃ
    • চিকিৎসা সেবা- ডাক্তার, নার্স, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীরা এই ভিসার জন্য যোগ্য।
    • আইটি পেশাজীবী- যারা তথ্য প্রযুক্তি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্রে কাজ করছেন, তাদের জন্যও গোল্ডেন ভিসা পাওয়া সহজ।
    • শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদ- যারা শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাদের জন্যও এই ভিসার সুবিধা প্রদান করা হয়।
  • বিশেষ ভিসা ক্যাটাগরিঃ দুবাই গোল্ডেন ভিসার জন্য কয়েকটি বিশেষ ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে। এই ক্যাটাগরিগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
    • গেমিং পেশাজীবী- যারা গেমিং এবং ই-স্পোর্টস খাতে কাজ করছেন, তাদের জন্য গোল্ডেন ভিসা সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
    • বিলাসবহুল ইয়ট মালিকরা- যারা ৪০ মিটার বা তার চেয়ে বড় ইয়টের মালিক, তাদের জন্য বিশেষ গোল্ডেন ভিসা প্রবর্তন করা হয়েছে।

দুবাই গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন কীভাবে করবেন?

Dubai-Golden-Visa-দুবাই গোল্ডেন ভিসা কাদের জন্য জেনে নিন-cybersheba.com

দুবাই গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং সুগম, তবে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং শর্ত রয়েছে যা অনুসরণ করতে হবে। গোল্ডেন ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আপনাকে প্রথমে কিছু প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করতে হবে। নীচে বিস্তারিতভাবে বলা হলো কীভাবে আপনি এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

  • ১. প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করুনঃ গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে কিছু মৌলিক নথি জমা দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
    • পাসপোর্টের কপি- আবেদনকারীর পাসপোর্টের সঠিক কপি যা কমপক্ষে ছয় মাস বৈধ থাকতে হবে।
    • রঙিন ছবি- আবেদনকারীর সাম্প্রতিক রঙিন ছবি যা পাসপোর্ট সাইজ হতে হবে।
    • শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ- সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ পত্র।
    • কর্মসংস্থানের প্রমাণ- আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তার সনদপত্র বা কর্মসংস্থানের প্রমাণ।
    • বিনিয়োগের প্রমাণ- যদি আপনি কোনো ব্যবসা বা সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে থাকেন, তবে তার প্রমাণপত্রও জমা দিতে হবে।
  • ২. ICP ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করুনঃ গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করার জন্য আপনাকে প্রথমে ICP ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এখানে আপনি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও নথি আপলোড করতে পারবেন। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আপনি আবেদন ফর্ম পূরণ করতে পারবেন।
  • ৩. আবেদন ফর্ম পূরণ করুনঃ ICP ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করার পর, গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হবে।
  • ৪. আবেদন জমা দিনঃ আবেদন ফর্ম পূরণ করার পর, আপনাকে সকল প্রমাণপত্র সহ আবেদন জমা দিতে হবে। এটি অনলাইনে করা যাবে। আপনি যদি অনলাইনে আবেদন জমা না দিতে পারেন, তবে আপনি স্থানীয় অফিসেও জমা দিতে পারবেন। আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি আবেদন রেফারেন্স নম্বর দেওয়া হবে যা আপনাকে পরবর্তী ধাপগুলো ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে।
  • ৫. ফি পরিশোধ করুনঃ গোল্ডেন ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কিছু ফি পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছেঃ
    • ভিসা ইস্যু ফি- ১ হাজার দিরহাম।
    • আবেদন ফি- ১০০ দিরহাম।
    • স্মার্ট পরিষেবা ফি- ১০০ দিরহাম।
    • ইলেকট্রনিক পরিষেবা ফি- ২৮ দিরহাম।
    • ফেডারেল কর্তৃপক্ষের ফি- ২২ দিরহাম।

    ফি পরিশোধ করার পর, আপনার আবেদন প্রক্রিয়া পরবর্তী ধাপের জন্য প্রেরণ করা হবে।

  • ৬. অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করুনঃ আপনার আবেদন জমা দেওয়ার পর, আপনার আবেদন মূল্যায়ন করা হবে এবং অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সাধারণত এটি কিছু সপ্তাহ বা মাস সময় নিতে পারে। যদি আপনার আবেদন সম্পূর্ণ এবং সঠিকভাবে জমা থাকে, তবে অনুমোদন দ্রুত হবে। অনুমোদন পাওয়ার পর, আপনাকে গোল্ডেন ভিসা ইস্যু করা হবে।
  • ৭. গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কঃ আপনার গোল্ডেন ভিসার আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য জানার জন্য নীচের লিঙ্কগুলি ব্যবহার করতে পারেনঃ
  • ৮. অতিরিক্ত নির্দেশনাঃ গোল্ডেন ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে কিছু অতিরিক্ত নির্দেশনা রয়েছে যা আপনাকে অনুসরণ করতে হবেঃ
    • অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করুন- আবেদন ফর্মে কোনো ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।
    • নথির সঠিকতা- যে কোনো ধরনের মিথ্যা বা অস্বচ্ছ তথ্য দেওয়ার কারণে আপনার আবেদন বাতিল করা হতে পারে।
    • আবেদন ফি ফেরত নীতি- যদি কোনো কারণে আবেদন বাতিল হয় বা প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে আবেদন ফি ফেরত প্রদান করা হবে না।

দুবাই গোল্ডেন ভিসার সুবিধাসমূহ

দুবাই গোল্ডেন ভিসা, বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ভিসা প্রোগ্রাম, বিশেষ করে পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা প্রদান করে। এই ভিসার আওতায় এসে, যে কোনো প্রফেশনাল দুবাইয়ে বসবাস, কাজ এবং বিনিয়োগ করতে পারেন। নিচে গোল্ডেন ভিসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ

  • দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের সুযোগঃ গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা দুবাইয়ে দীর্ঘমেয়াদী বসবাস করতে পারেন। এই ভিসাটি সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য ইস্যু করা হয়, যার ফলে প্রাপকরা সহজেই দীর্ঘকালীন সময়ে আমিরাতে বসবাস করতে পারবেন। গোল্ডেন ভিসার মেয়াদ শেষে পুনঃনবীকরণ করা যায়, যার ফলে এটি একটি স্থায়ী বসবাসের সুযোগ প্রদান করে।
  • পরিবারের সদস্যদের স্পনসর করার সুযোগঃ গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্ত ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদেরও আমিরাতে নিয়ে আসতে পারেন। এর মধ্যে সন্তান, সঙ্গী, এবং প্রাপ্তবয়স্ক পরিবারের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত থাকেন। ফলে, গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবার একসাথে দুবাইয়ে বসবাস করতে পারবেন।
  • স্বাধীনভাবে কর্মসংস্থানঃ গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তরা দুবাইয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। তাদের চাকরি পরিবর্তন, নতুন ব্যবসা শুরু, অথবা যেকোনো ক্ষেত্রে কর্মরত থাকা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীনতা প্রদান করে। গোল্ডেন ভিসার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তা বা স্পনসরশিপ প্রয়োজন হয় না।
  • ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগঃ গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তরা আমিরাতে ব্যবসা শুরু করতে বা বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিশেষত, যারা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন: প্রযুক্তি, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ই-কমার্স, ইত্যাদিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা লাভবান হতে পারেন।
  • স্পনসরশিপ ছাড়াই আবেদনঃ গোল্ডেন ভিসার একটি বিশেষ সুবিধা হল, আবেদনকারীর জন্য কোন ধরনের স্পনসরশিপ প্রয়োজন হয় না। যারা স্পনসরশিপের মাধ্যমে ভিসা পান না, তারা সরাসরি নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এটি দেশের পেশাজীবী এবং উদ্যোক্তাদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
  • উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাঃ গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তরা দুবাইয়ের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। দুবাইয়ে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা এবং হাসপাতালগুলো রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তরা উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা পাবেন।
  • শিক্ষা সুবিধাঃ গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তরা তাদের সন্তানদের জন্য দুবাইয়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারবেন। আমিরাতে অনেক আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তদের সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারেন।
  • বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সুযোগঃ দুবাই বিশ্বের অন্যতম ব্যবসায়ী ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এখানে বিশ্বমানের ব্যবসায়ী এবং পেশাজীবীদের একটি বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তরা এই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন।

সংক্ষেপে, দুবাই গোল্ডেন ভিসা প্রাপ্তরা দীর্ঘমেয়াদী বসবাস, কাজ, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ, পরিবারের সদস্যদের আমিরাতে নিয়ে আসা, উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা সুবিধা, এবং অন্যান্য অনেক সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। এটি তাদেরকে দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে আরও বড় সুযোগ এবং স্বীকৃতি প্রদান করে।

দুবাই গোল্ডেন ভিসার অধীনে পরিবার স্পন্সরশিপ

দুবাই গোল্ডেন ভিসার অন্যতম আকর্ষণীয় সুবিধা হলো, ভিসাধারীরা তাদের পরিবারের সদস্যদের দুবাইয়ে নিয়ে আসতে এবং দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের জন্য স্পনসর করতে পারেন। এটি প্রবাসী পেশাজীবী, বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, এবং উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি বড় সুযোগ, যা তাদের পরিবারকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দেয়।

১. কোন কোন পরিবারের সদস্যদের স্পনসর করা যায়?

  • জীবিত সঙ্গী (স্বামী/স্ত্রী)- গোল্ডেন ভিসাধারী তার স্বামী বা স্ত্রীকে স্পনসর করতে পারবেন।
  • সন্তান- ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত ছেলে এবং অবিবাহিত কন্যাসন্তানদের স্পনসর করা যাবে।
  • পিতামাতা- গোল্ডেন ভিসাধারীরা তাদের বাবা-মাকেও স্পনসর করতে পারবেন, তবে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে।
  • গৃহকর্মী- যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে গৃহকর্মী বা গৃহ সহায়ককে স্পনসর করা যেতে পারে।

২. পরিবারের সদস্যদের স্পনসর করার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত

  • গোল্ডেন ভিসাধারীর নির্দিষ্ট আয়ের ন্যূনতম সীমা থাকতে হবে, যা সাধারণত মাসিক ৩০,০০০ দিরহাম নির্ধারিত।
  • পরিবারের সদস্যদের জন্য বৈধ স্বাস্থ্যবিমা থাকতে হবে।
  • দুবাইতে পরিবারের সদস্যদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান থাকা আবশ্যক।
  • নির্দিষ্ট সরকারি ফি প্রদান করতে হবে, যা স্পনসরকৃত সদস্যের সংখ্যা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

গোল্ডেন ভিসার মাধ্যমে পরিবার স্পনসরশিপ পদ্ধতি সহজ ও সুবিধাজনক। এটি শুধুমাত্র পেশাজীবীদের জন্যই নয়, বরং তাদের পরিবারকেও নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল জীবনযাপনের সুযোগ প্রদান করে।

শেষ কথা

দুবাই গোল্ডেন ভিসা এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের সুযোগ, যা উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাজীবী, বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা এবং শিক্ষাবিদদের জন্য দুবাইয়ে স্থায়ীভাবে কাজ ও বসবাসের দারুণ সুযোগ তৈরি করে। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিদের জন্য নয়, বরং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও স্থিতিশীল জীবন নিশ্চিত করে।

যদি আপনি গোল্ডেন ভিসার জন্য যোগ্য হন, তাহলে নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদণ্ড অনুসারে আবেদন করুন এবং দুবাইতে আপনার ক্যারিয়ার ও জীবনযাত্রার নতুন দুয়ার খুলুন।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/