ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয়

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয়-cybersheba.com
ট্রেড লাইসেন্স হল একটি আইনি অনুমোদন পত্র যা আপনাকে আপনার ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন।

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় জানার আগে আমাদের জানতে হবে ট্রেড লাইসেন্স কি। ট্রেড লাইসেন্স হল একটি আইনি অনুমোদন পত্র যা আপনাকে আপনার ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন। এটি স্থানীয় সরকার, যেমন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে ইস্যু করা হয়।

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় জানা থাকলে আপনি আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন। তাই আপনার ব্যবসা যাতে নির্বিঘ্নে পরিচালনা করতে পারেন সেজন্য আজকের পোষ্টে ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় সেটার উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা

ট্রেড লাইসেন্স শুধু আইনি বাধ্যবাধকতাই নয়, বরং এটি ব্যবসার সার্বিক সফলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তাগুলো নিম্নরূপঃ

  • ব্যবসার বৈধতাঃ ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসার আইনি বৈধতা নিশ্চিত হয়। এটি স্থানীয় সরকার এবং দেশের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
  • কর প্রদানঃ ট্রেড লাইসেন্স থাকলে ব্যবসার উপর কর আরোপ করা হয় এবং সরকার তা নিয়মিত সংগ্রহ করে।
  • বিশ্বাসযোগ্যতাঃ গ্রাহক এবং সরবরাহকারীরা সেই ব্যবসার উপর বেশি আস্থা রাখে যাদের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে, কারণ এটি আইনি সুরক্ষা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।

ট্রেড লাইসেন্সের ধরন

ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্সের ভিন্নতা দেখা যায়। সাধারণত ট্রেড লাইসেন্সকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়ঃ

  1. একক মালিকানার ট্রেড লাইসেন্সঃ এটি একক মালিকের অধীনে পরিচালিত ব্যবসার জন্য ইস্যু করা হয়। যেমন, ছোট দোকান, কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার ইত্যাদি।
  2. যৌথ মালিকানার ট্রেড লাইসেন্সঃ যে সমস্ত ব্যবসা যৌথ মালিকানার অধীনে পরিচালিত হয়, তাদের জন্য যৌথ মালিকানার ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়।
  3. কোম্পানি ট্রেড লাইসেন্সঃ নিবন্ধিত কোম্পানিগুলির জন্য এটি ইস্যু করা হয়, যেমন প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ইত্যাদি।

ট্রেড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় জানার জন্য ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া জানা দরকার। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী কাগজপত্রের কিছুটা ভিন্নতা দেখা যেতে পারে। তবে সাধারণভাবে যা যা লাগে তা হলোঃ

  • ব্যবসার ঠিকানার প্রমাণপত্র, যেমন ভাড়ার চুক্তিপত্র বা নিজের দোকান হলে ইউটিলিটি বিল।
  • আবেদনকারীর তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
  • কর পরিশোধের রশিদ।
  • কোম্পানির ক্ষেত্রে মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন জমা দিতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা

ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় জানার জন্য জানতে হবে যে এটা পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা থগাকা বাধ্যতামূলক। সাধারণত স্থানীয় সরকার কিছু শর্ত পূরণ হলেই লাইসেন্স ইস্যু করে থাকে। যোগ্যতার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলোঃ

  • ব্যবসার আইনি পরিচয় থাকতে হবে।
  • ব্যবসার জন্য নির্ধারিত এলাকা বা ঠিকানা থাকতে হবে।
  • ব্যবসার কর পরিশোধ করতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স করার ধাপসমূহ

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় জানার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করার ধাপগুলো দেখুনঃ

  1. সঠিক অঞ্চল নির্বাচনঃ প্রথমে আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক অঞ্চল নির্বাচন করুন
  2. আবেদন ফরম সংগ্রহঃ আপনার ব্যবসার অঞ্চলের সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা অফিস থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন।
  3. কাগজপত্র প্রস্তুতঃ উল্লিখিত কাগজপত্রের ফটোকপি এবং মূল কপি সহ আবেদন ফরমটি পূরণ করুন।
  4. ফি জমাঃ আবেদন ফরম জমা দেয়ার সাথে সাথে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। এই ফি আপনার ব্যবসার আকার এবং ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
  5. আবেদন ফরম জমাঃ ব্যাংকে ফি জমা দেয়ার রশিদসহ আবেদন ফরম জমা দিন।
  6. পরিদর্শনঃ আপনার ব্যবসার ঠিকানা ও কাগজপত্র সঠিক কিনা তা যাচাই করার জন্য লাইসেন্স সুপারভাইজার সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন।
  7. লাইসেন্স সংগ্রহঃ সব প্রক্রিয়া শেষে, ৫-৭ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।

ট্রেড লাইসেন্স করার খরচ

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় জানতে ট্রেড লাইসেন্স করার খরচাদি সম্পর্কে জানা দরকার। এটার খরচ নির্ধারিত হয় সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদের আদর্শ কর তফসিল অনুযায়ী। খরচের মধ্যে রয়েছেঃ

  • লাইসেন্স ফিঃ ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ফি নির্ধারণ করা হয়। এটি স্থানীয় সরকারের সিটিতে নির্ধারিত হয়।
  • সাইনবোর্ড ফিঃ ব্যবসার সাইনবোর্ডের আকৃতি অনুযায়ী আলাদা ফি রয়েছে। সাধারণত এটি ব্যবসার সাইজ এবং অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
  • অন্য সাধারণ খরচঃ কিছু অন্যান্য ছোটখাটো খরচ যেমন, কপির খরচ, পোস্টেজ ইত্যাদিও থাকতে পারে।

ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে জরিমানা

যদি আপনি ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করেন, তবে আপনাকে বিভিন্ন প্রকার জরিমানা এবং শাস্তির মুখোমুখি হতে হতে পারে।

  • জরিমানাঃ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করলে সাধারণত নগদ জরিমানা আরোপ করা হয়। এটি আপনার ব্যবসার আকার এবং মেয়াদ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
  • ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়াঃ অনেক সময়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আপনার ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে যতক্ষণ না আপনি ট্রেড লাইসেন্স অর্জন করেন।
  • আইনি ব্যবস্থাঃ কিছু ক্ষেত্রে, গুরুতর অপরাধের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে, যার মধ্যে জেল জরিমানা বা মামলা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় জানার এই পর্যায়ে জানব ট্রেড লাইসেন্সের রিনিউ বা নবায়ন সম্পর্কে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স বৈধ থাকে এবং তারপরে নবায়ন করতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া কিছুটা সহজ হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল করতে হয়ঃ

  1. নবায়ন আবেদনঃ লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আপনার স্থানীয় সরকারী অফিসে নবায়ন আবেদন করুন।
  2. পূর্ববর্তী লাইসেন্স জমাঃ পুরনো লাইসেন্সের একটি কপি জমা দিতে হতে পারে।
  3. ফি পরিশোধঃ নবায়ন ফি পরিশোধ করতে হবে যা সাধারণত পূর্ববর্তী লাইসেন্স ফির মতোই হয়।
  4. নতুন লাইসেন্স সংগ্রহঃ নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, একটি নতুন লাইসেন্স ইস্যু করা হবে যা পূর্বের লাইসেন্সের স্থলাভিষিক্ত হবে।

অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয়

Online Application - ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয়-cybersheba.com

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় এই প্রশ্নের উত্তরে শুধু আমরা সরাসরি অফলাইনে অফিসে গিয়ে করানোকে বুঝি। কিন্ত অনলাইনেো ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করা যায়। যেটা আরো বেশি দ্রুত এবং সুবিধাজনক। নিচে বর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করতে পারেনঃ

  1. সরকারী ওয়েবসাইটে লগইনঃ আপনি সরকারী অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে লগইন করুন এবং ট্রেড লাইসেন্স বিভাগে যান।
  2. অনলাইন আবেদন ফরম পূরণঃ অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করুন।
  3. ফি পরিশোধঃ অনলাইনে ফি পরিশোধ করুন এবং রশিদ সংগ্রহ করুন।
  4. বিষয়বস্তু পর্যালোচনাঃ আবেদন জমা দেওয়ার পরে আপনার তথ্য যাচাই করা হবে।
  5. লাইসেন্স সংগ্রহঃ লাইসেন্স ইস্যু হলে ইমেইলে নোটিফিকেশন পাওয়া যাবে।

ট্রেড লাইসেন্স করার সময় সাধারণ ভুল

ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার সময় কিছু সাধারণ ভুলের কারণে লাইসেন্স পেতে দেরী হতে পারে। এরকম কিছু সাধারণ ভুল হলোঃ

  • ভুল তথ্য প্রদানঃ আবেদন ফরমে ভুল তথ্য প্রদান করা। সব তথ্য সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ হওয়া উচিত।
  • কাগজপত্রের অভাবঃ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা না দেওয়া। সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করুন।
  • অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া অমিতঃ অনলাইনে আবেদন করার সময় সঠিকভাবে ফরম পূরণ না করা বা কাগজপত্র আপলোড না করা।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় এই সম্পর্কিত এখানে কিছু প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছেঃ
প্রশ্নঃ ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সময় কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
উত্তরঃ পূর্ববর্তী লাইসেন্স, নবায়ন ফি রশিদ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করতে হবে।

প্রশ্নঃ ট্রেড লাইসেন্স পেতে কত সময় লাগতে পারে?
উত্তরঃ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সাধারণত ৫-৭ কর্মদিবস সময় লাগে।

প্রশ্নঃ অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করলে কি কি সুবিধা?
উত্তরঃ দ্রুত এবং সহজ, ফি পরিশোধের সুবিধা, এবং লাইসেন্স দ্রুত পাওয়ার সুযোগ।

এই পোষ্ট পড়ার পর আশাকরি ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় সে ব্যাপারে আপনার ভাল একটা ধারণা তৈরী হয়েছে। যদি আপনার পরিচিত কেউ ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করা হয় জানতে চায় তাহলে তার সাথে পোষ্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *