জিপিএফ ব্যালেন্স থেকে অগ্রিম উত্তোলন করার জন্য আইবাস++ ওয়েবসাইটে লগিন করে জিপিএফ ব্যালেন্স উত্তোলনের জন্য ফর্ম ডাউনলোড করতে হয়। সেই ফর্ম পূরণ করে অফিস প্রধানের নিকট জমা দিতে হয়। আপনার আবেদন মঞ্জুর হলে আপনি টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
আজকের পোষ্টে আলোচনা করা হবে কিভাবে জিপিএফ ব্যালেন্স থেকে অগ্রিম উত্তোলন করা যায় – সেটা নিয়ে। জিপিএফ বা সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (General Provident Fund) হল একটি সরকারি সঞ্চয় কর্মসূচি, যেখানে সরকারি কর্মচারীদের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে নিয়ে তাদের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা হয়। এই তহবিল থেকে কর্মচারীরা প্রয়োজনে অগ্রিম টাকা উত্তোলন করতে পারেন।
সূচীপত্র
জিপিএফ ব্যালেন্স থেকে অগ্রিম উত্তোলনের নিয়ম
জিপিএফ ব্যালেন্স থেকে অগ্রিম উত্তোলন করতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। সাধারণত কর্মচারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থের ৭৫% পর্যন্ত অগ্রিম হিসেবে উত্তোলন করতে পারেন। অগ্রিম উত্তোলন করার জন্য নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে তা অফিসের প্রধানের কাছে জমা দিতে হয়।
জিপিএফ ব্যালেন্সের অর্থ উত্তোলনের ধাপসমূহ
জিপিএফ থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়ঃ-
- জিপিএফ স্লিপ সংগ্রহঃ প্রথমে হিসাবরক্ষণ অফিস বা আইবাস++ ওয়েবসাইটে লগিন করে আপনার জিপিএফ স্লিপ সংগ্রহ করতে হবে।
- লোন ফরম পূরণঃ জিপিএফ লোন ফরমটি পূরণ করতে হবে, যেখানে অগ্রিমের পরিমাণ, উদ্দেশ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
- আবেদন জমাঃ ফরমটি পূরণ করে অফিসের প্রধানের কাছে আবেদন জমা দিতে হবে।
- মঞ্জুরি আদেশঃ অনুমোদন পাওয়ার পর, অফিসের মাধ্যমে বিল তৈরি করে হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠাতে হবে।
- টাকা উত্তোলনঃ পাশ হওয়ার পর, আপনি টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
জিপিএফ লোন ফরম পূরণ
জিপিএফ ব্যালেন্স থেকে অগ্রিম উত্তোলনের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হয়। এই ফরমে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, অগ্রিমের পরিমাণ, এবং ফেরত দেওয়ার সময়কাল উল্লেখ করতে হবে। ফরম পূরণ করার পর, তা অফিস প্রধানের কাছে জমা দিতে হবে।
ফেরতযোগ্য অগ্রিম
ফেরতযোগ্য অগ্রিম হল এমন এক ধরনের লোন, যা কর্মচারীদের ফেরত দিতে হয়। সাধারণত, কর্মচারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থের ৭৫% পর্যন্ত অগ্রিম হিসেবে উত্তোলন করতে পারেন। এই অর্থ ১২ থেকে ৪৮ কিস্তির মধ্যে ফেরত দিতে হয়।
অফেরতযোগ্য অগ্রিম
কর্মচারীর বয়স ৫২ বছর বা তার বেশি হলে, তিনি তার জিপিএফ থেকে অফেরতযোগ্য অগ্রিম উত্তোলন করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে, সঞ্চিত অর্থের ৮০% পর্যন্ত উত্তোলন করা যায়, যা তাকে ফেরত দিতে হয় না।
জিপিএফ লোন পরিশোধের নিয়ম
জিপিএফ লোন পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট কিস্তি নির্ধারিত থাকে। আপনি যদি ৪৮ কিস্তিতে লোন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন, তবে আপনাকে একটি অতিরিক্ত কিস্তি সুদ হিসেবে দিতে হবে, অর্থাৎ মোট ৪৯ কিস্তি দিতে হবে।
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার পদ্ধতি
আপনার জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করতে চাইলে, আপনি আইবাস++ ওয়েবসাইটে লগইন করে বা হিসাবরক্ষণ অফিসে গিয়ে তা জানতে পারেন। অনলাইনে ব্যালেন্স চেক করার জন্য, আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- IBAS++ এ লগইন করুন।
- Accounting or Budget Execution ক্লিক করুন।
- GPF Management এ ক্লিক করুন।
- GPF Reports এ ক্লিক করুন।
- List থেকে GPF Accounts Slip নির্বাচন করুন।
- আর্থিক বছর নির্বাচন করুন।
- স্টাফ বা অফিসারের NID ইনপুট করুন।
- Run Report এ ক্লিক করুন।
- জিপিএফ স্লিপ pdf এ প্রদর্শিত হলে ডাউনলোড করুন।
জিপিএফ ব্যালেন্স থেকে অগ্রিম উত্তোলন সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১ঃ ভবিষ্য তহবিলে যোগদানের যোগ্যতা কি?
উত্তরঃ একজন সরকারি কর্মচারী চাকুরীর মেয়াদ ২ বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর এই তহবিলে যোগদান করা বাধ্যতামূলক। তবে একজন সরকারী কর্মচারী ইচ্ছা করলে ২ বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেও তহবিলে যোগদান করতে পারবেন।
প্রশ্ন ২ঃ ভবিষ্য তহবিলের নমিনি/মনোনয়ন কিভাবে হয়?
উত্তরঃ চাঁদাদাতা তার পরিবারের সদস্য নয়, এমন কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে মনোনয়ন করতে পারবনে না। চাঁদাদাতা যদি অবিবাহিত হন, তবে পিতা/মাতা/ভাই/বোনকে মনোনয়ন করতে পারবেন। তবে উক্ত কর্মচারীর পরিবার হওয়ার সংগে সংগে পরিবার বহির্ভূত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দান সংক্রান্ত মনোনয়ন পত্র আপনা হইতে বাতিল হয়ে যাবে।
প্রশ্ন ৩ঃ জিপিএফ ফান্ডে চাঁদার হার কত?
উত্তরঃ মূল বেতনের সর্বোচ্চ ২৫% সর্বনিম্ন ৫%।
প্রশ্ন ৪ঃ জিপিএফ ফান্ডের নমিনি পরিবর্তন করা যায়?
উত্তরঃ নমিনি পরিবর্তন করা যায় তবে পরিবারের সদস্যের নামে নমিনি থাকলে, বিবাহ করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ত্রীর নামে নমিনি হয়ে যায়।
প্রশ্ন ৫ঃ সুদের হার কত?
উত্তরঃ বর্তমানে জিপিএফ এর সুদের হার ১৩%।
প্রশ্ন ৬ঃ জিপিএফ ব্যালেন্স থেকে অগ্রিম উত্তোলন কতবার করা যায়?
উত্তরঃ ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ ৪টি অগ্রিম নেয়ার সুযোগ আছে। তবে ৫২ বৎসর পূর্ণ হলে অফেরতযোগ্য অগ্রিম এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নেই।
প্রশ্ন ৭ঃ জিপিএফ ব্যালেন্স থেকে অগ্রিম উত্তোলনের নিয়মাবলী কি?
উত্তরঃ প্রথমে অগ্রিম উত্তোলনের জন্য স্ব-অফিসে আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষ আবেদনের প্রেক্ষিতে মঞ্জুরী ইস্যু করে জিপিএফ অগ্রিমের বিল হিসাবরক্ষণ অফিসে প্রেরণ করলে, হিসাবরক্ষণ অফিস ব্যক্তির নির্দ্দিষ্ট জিপিএফ একাউন্টস এর পৃষ্টায় নোট উল্লেখ পূর্বক পরিশোধ করেন।
প্রশ্ন ৮ঃ জিপিএফ চূড়ান্ত উত্তোলনের প্রক্রিয়া কি?
উত্তরঃ জিপিএফ চূড়ান্ত উত্তোলনের জন্য ৬৬৩ নং ফরম পূরণপূর্বক আবেদনকারী চূড়ান্ত উত্তোলনের জন্য আবেদন করবেন। স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষ আবেদনের ভিত্তিতে হিসাবরক্ষণ অফিস কর্তৃক চূড়ান্ত উত্তোলনের অথরিটি ইস্যু করার জন্য পত্র জারী করবেন। হিসাবরক্ষণ অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর সমুদয় জিপিএফ হিসাবের সুদ ও আসল নির্ণয়পূর্বক অথরিটি ইস্যু করেন। উক্ত অথরিটির ভিত্তিতে স্ব স্ব সরকারি কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত পরিশোধের নিমিত্তে মঞ্জুরীসহ বিল হিসাবরক্ষণ অফিসে দাখিল করেন। অতপরঃ হিসাবরক্ষণ অফিস জিপিএফ চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করেন।
2 Responses
আমি জিপিএফ হতে পর পর ২বার ঋণ গ্রহণ করেছি । বর্তমানে তৃতীয় কিস্তি গ্রহণ করতে চাচ্ছি । এতে কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে কিস্তির পরিমাণ মূল বেতনের অধিক হয়ে যায় । কিস্তির পরিমাণ মূল বেতনের অধিক হলেও কী অগ্রিম উত্তোলন করা সম্ভব ??
আপনার ক্ষেত্রে, যদি পূর্ববর্তী দুটি জিপিএফ (GPF) ঋণ গ্রহণের পর তৃতীয়বার ঋণ গ্রহণ করতে চান এবং এতে কিস্তির পরিমাণ আপনার মূল বেতনের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তবে সাধারণত এটি নির্ভর করে সরকারি বিধি-বিধান ও আপনার প্রতিষ্ঠানের জিপিএফ ঋণ নীতিমালা এর উপর।
সাধারণ নীতিমালা অনুযায়ী:
– কিস্তির পরিমাণ সাধারণত মূল বেতনের নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
– যদি নতুন কিস্তির কারণে মাসিক কিস্তি মূল বেতনের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ঋণ মঞ্জুর না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
– কিছু ক্ষেত্রে, বর্ধিত সময়সীমার (Tenure Extension) মাধ্যমে কিস্তির পরিমাণ কমিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।
– নির্দিষ্ট পরিমাণ অগ্রিম উত্তোলনের নিয়মাবলী থাকতে পারে, যা আপনার প্রতিষ্ঠান বা সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল।
আপনার করণীয়:
✅ অর্থ বিভাগ / হিসাব শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করুন—আপনার ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি বা বিকল্প ব্যবস্থা আছে কি না তা জানার জন্য।