কিভাবে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন – GPF Balanace Check

GPF-Balance-Check
হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে সহজেই এখন GPF ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন।

জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা মানে হল, সরকারি কর্মচারীরা প্রতি বছর জুলাই মাসের পরে, তাদের ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) এর মোট জমা ব্যালেন্স কত হয়েছে সেটা দেখার জন্য চেক করে থাকেন। এই ফান্ড হলো তাদের অবসরের জন্য জমা হওয়া টাকার একটি অংশ, যা প্রতি মাসে তাদের বেতন থেকে নির্দিষ্ট হারে কেটে রাখা হয়।

অনেকেই আমাদের মধ্যে আছেন যারা জানেন না কীভাবে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করতে হয়। জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার জন্য তারা অন্যের ওপর নির্ভর করে। আজকে আমি আপনার জন্যে নিয়ে এলাম একটি সহজ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে নিজের স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে সহজেই জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা যাবে। আসুন জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার সেই পদ্ধতিটি জেনে নিই।

জিপিএফ ব্যালেন্স আসলে কি

GPF এর ফুল ফর্ম হল General Provident Fund. সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বাধ্যতামূলক তাদের মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ GPF অর্থাৎ প্রভিডেন্ট ফান্ডে প্রতি মাসে জমা করতে হয়। এর হার সর্বনিম্ন পাঁচ শতাংশ (৫%) থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পঁচিশ শতাংশ (২৫%) পর্যন্ত নির্ধারিত হয়। সরকারি কর্মচারীরা চাইলে নির্ধারিত এই সীমার মধ্যে তাদের বেতন থেকে GPF এর জন্য যেকোন পরিমান ঠিক করতে পারেন। অর্থাৎ কেউ তার বেতনের ১০%, ১৫% বা ২০% ও জমা করতে পারে।

সরকার জমাকৃত জিপিএফ ফান্ডের লাভের হার সর্বোচ্চ ১৩% দিয়ে থাকে। GPF এর হিসাব দেখার বা জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার জন্য পূর্বে আমাদের প্রতি বছর জুলাই মাসে স্ব-শরীরে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে যেতে হতো। বর্তমানে আপনার হাতে থাকা স্মার্ট মোবাইল দিয়ে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে অনায়াসে/অল্প সময়ে আপনি আপনার জিপিএফ ব্যালেন্স স্টেটমেন্ট দেখতে পারেন।

সরকারি কর্মচারীদের প্রদত্ত জিপিএফ তহবিলের উপর যে লাভের পরিমাণ সরকার প্রদান করে থাকে তা সর্বোচ্চ ১৩% পর্যন্ত হয়। আগে আমাদেরকে স্বশরীরে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গিয়ে জিপিএফ এর হিসেব দেখার বা ব্যালেন্স জানতে হত। কিন্তু এখন আপনি আপনার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যে কোনো স্থান থেকে সহজেই এবং দ্রুত আপনার জিপিএফ ব্যালেন্সের স্টেটমেন্ট দেখতে পারেন।

কিভাবে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন

আপনার মোবাইল অথবা ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ করুন। এরপর যেকোনো পছন্দনীয় ব্রাউজার ওপেন করে সার্চবার বা এড্রেসবারে  www.cafopfm.gov.bd এই ঠিকানাটা লিখে ইন্টার বাটনে প্রেস করুন। সরাসরি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকতে এখানে ক্লিক করুন। ওয়েব সাইটে ঢোকার পর GPF Information এর নিচে Click Here এ ক্লিক করুন।

GPF-Information

তাহলে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার জন্য এরকম একটা পপ-আপ ওপেন হবে।

GPF-Information-pop-up

এখানে প্রথম ঘরে আপনার ১৭ ডিজিটের NID কার্ডের নাম্বার অথবা ১০ ডিজিটের SMART Card এর নাম্বার লিখুন। তারপর নিচের ঘরে আপনার মোবাইল নাম্বার লিখুন। (Pay Fixation এ প্রদত্ত মোবাইল নং দিতে হবে)। অতঃপর Submit বাটনে ক্লিক করুন।

স্ক্রিনে Employee Verification নামে একটি বক্স আসবে। এই বক্সে আপনার মোবাইলে যাওয়া মেসেজ থেকে OTP কোড লিখে Submit বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে নিচের মত একটি পেইজ দেখতে পাবেন।

জিপিএফ ব্যালেন্স চেক

এই পেইজে GPF ACCOUNTS SLIP অপশন থেকে আপনি যে বছরের হিসাব দেখতে চান সেই বছরটি সিলেক্ট করুন। এবার GO বাটনে ক্লিক করুন। পরের পেইজেই আপনি আপনার জিপিএফ ব্যালেন্স চেক সহ GPF এর সকল তথ্য দেখতে পাবেন।

এখন আপনি চাইলে উপরের ডান পাশে থাকা সেভ বাটনে ক্লিক করে পেইজটি সেভ করতে পারেন। অথবা সরাসরি প্রিন্ট করতে চাইলে প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করুন।

জিপিএফ ব্যালেন্স হিসাব করার ক্যালকুলেটর

জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার পর যদি আপনি চান জিপিএফ ব্যালেন্স ক্যালকুলেট করতে, তাহলে জিপিএফ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে করতে পারেন। এর জন্য প্রথমাত আপনাকে ভিজিট করতে হবে https://www.cafopfm.gov.bd/bn/calculator.php এই লিংকে। এরপর, আপনার পূর্বের স্থিতি, মাসিক কর্তন এবং যদি কোনো অগ্রিম ঋণ গ্রহণ করা হয়ে থাকে তাহলে অগ্রিম উত্তোলন বক্সে সেটা লিখুন। তারপর ফলাফল দেখার জন্য ফলাফল বাটনে ক্লিক করুন। এভাবে জিপিএফ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আপনি আপনার জিপিএফ হিসাব দেখতে পারবেন।

GPF-calculator-জিপিএফ ব্যালেন্স চেক-cybersheba.com

জিপিএফ ব্যালেন্স চেক নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন

প্রশ্নঃ ভবিষ্য তহবিলে যোগদানের যোগ্যতা কি?
উত্তরঃ একজন সরকারি কর্মচারী চাকুরীর মেয়াদ ২ বৎসর পূর্ণ হওয়ার পর এই তহবিলে যোগদান করা বাধ্যতামূলক। তবে একজন সরকারী কর্মচারী ইচ্ছা করলে ২ বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেও তহবিলে যোগদান করতে পারবেন।

প্রশ্নঃ ভবিষ্য তহবিলের নমিনি/মনোনয়ন কে হবে?
উত্তরঃ চাঁদাদাতা তার পরিবারের সদস্য নয়, এমন কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে মনোনয়ন করতে পারবনে না। চাঁদাদাতা যদি অবিবাহিত হন, তবে পিতা/মাতা/ভাই/বোনকে মনোনয়ন করতে পারবেন। তবে উক্ত কর্মচারীর পরিবার হওয়ার সংগে সংগে পরিবার বহির্ভূত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দান সংক্রান্ত মনোনয়ন পত্র আপনা হইতে বাতিল হয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ চাঁদার হার কত?
উত্তরঃ মূল বেতনের সর্বোচ্চ ২৫% সর্বনিম্ন ৫%।

প্রশ্নঃ নমিনি পরিবর্তন করা যায় কিনা?
উত্তরঃ নমিনি পরিবর্তন করা যায় তবে পরিবারের সদস্যের নামে নমিনি থাকলে, বিবাহ করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ত্রীর নামে নমিনি হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ GPF ব্যালেন্সে সুদের হার কত?
উত্তরঃ বর্তমানে জিপিএফ এর সুদের হার ১৩%।

প্রশ্নঃ অগ্রিম কতবার নেয়া যায়?
উত্তরঃ ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ ৪টি অগ্রিম নেয়ার সুযোগ আছে। তবে ৫২ বৎসর পূর্ণ হলে অফেরতযোগ্য অগ্রিম এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নেই।

প্রশ্নঃঅগ্রিম কিভাবে মঞ্জুর করা হয়?
উত্তরঃআবেদনকারী জিপিএফ অগ্রিম এর আবেদন করলে ডেলিগেশন ফিন্যান্সিয়াল পাওয়ার অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ অগ্রিম মঞ্জুর করেন।

প্রশ্নঃ অগ্রিম উত্তোলনের নিয়মাবলী কি রকম?
উত্তরঃ প্রথমে অগ্রিম উত্তোলনের জন্য স্ব-অফিসে আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষ আবেদনের প্রেক্ষিতে মঞ্জুরী ইস্যু করে জিপিএফ অগ্রিমের বিল হিসাবরক্ষণ অফিসে প্রেরণ করলে, হিসাবরক্ষণ অফিস ব্যক্তির নির্দ্দিষ্ট জিপিএফ একাউন্টস এর পৃষ্টায় নোট উল্লেখ পূর্বক পরিশোধ করেন।

প্রশ্নঃ অগ্রিম বাবদ গৃহিত অর্থ চালানে জমা দেয়া যায় কিনা?
উত্তরঃ অগ্রিম বাবদ গৃহিত অর্থ চালানে জমা দেয়া যায় না। বেতন হতে কিস্তির মাধ্যমে আদায় করা হয়।

প্রশ্নঃ অগ্রিম উত্তোলন করলে সুদ পাবে কিনা?
উত্তরঃ অগ্রিম উত্তোলন করলে অগ্রিম উত্তোলিত টাকা জিপিএফ স্থিতি হতে সমন্বয় হবে। যে মাসে অগ্রিম উত্তোলন করেন তার পরবর্তী মাসের বেতন বিল হতে উত্তোলিত টাকায় কোন সুদ প্রাপ্য হবেন না।

প্রশ্নঃ অগ্রিম উত্তোলিত টাকা কর্তন করলে বিনিয়োগ হিসাব গণ্য হবে কিনা?
উত্তরঃ অগ্রিম উত্তোলিত টাকা কর্তন করলে বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য হবে।

প্রশ্নঃ একই সঙ্গে একই হারে চাঁদা কর্তন করলেও যিনি অগ্রিম গ্রহণ করেছেন তার স্থিতি কমে যায় কেন?
উত্তরঃ উত্তোলিত অগ্রিম জিপিএফ স্থিতি হতে বিয়োগ হয় বিধায় স্থিতি কমে যায়।

প্রশ্নঃ বৎসরের মাঝখানে জিপিএফ এর টাকা কমানো বাড়ানো যায় কি না?
উত্তরঃ বৎসরের মাঝখানে জিপিএফ এর টাকা কমানো বাড়ানো যায় না। তবে বিশেষ প্রেক্ষিতে বৎসরের মাঝখানে টাকা কমানো বাড়ানো যায়।

প্রশ্নঃ জিপিএফ চূড়ান্ত উত্তোলনের প্রক্রিয়া কি?
উত্তরঃ জিপিএফ চূড়ান্ত উত্তোলনের জন্য ৬৬৩ নং ফরম পূরণপূর্বক আবেদনকারী চূড়ান্ত উত্তোলনের জন্য আবেদন করবেন। স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষ আবেদনের ভিত্তিতে হিসাবরক্ষণ অফিস কর্তৃক চূড়ান্ত উত্তোলনের অথরিটি ইস্যু করার জন্য পত্র জারী করবেন। হিসাবরক্ষণ অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর সমুদয় জিপিএফ হিসাবের সুদ ও আসল নির্ণয়পূর্বক অথরিটি ইস্যু করেন। উক্ত অথরিটির ভিত্তিতে স্ব স্ব সরকারি কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত পরিশোধের নিমিত্তে মঞ্জুরীসহ বিল হিসাবরক্ষণ অফিসে দাখিল করেন। অতপরঃ হিসাবরক্ষণ অফিস জিপিএফ চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করেন।

এরকম আরো তথ্যমূলক পোষ্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের হোমপেইজ ভিজিট করুন।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *