জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি পরিবর্তন করার ইচ্ছা আমাদের অনেকের। জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) আজকের দিনে শুধু ভোটার হওয়ার মাধ্যম নয় বরং নাগরিকের ডিজিটাল পরিচয়। কিন্তু অনেকেই আছেন যাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি পরিচয়ের ক্ষেত্রে বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়।
এই অস্পষ্ট বা পুরাতন ছবি আপডেট করা এখন সহজ এবং তা আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন। আজকের পোস্টে জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি বদলে ফেলার ব্যাপারে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা দেওয়া হবে।
Table of Contents
- জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি কেন পরিবর্তন করবেন?
- ছবি পরিবর্তনের অনলাইন সুবিধা
- NID ওয়েবসাইটে প্রবেশ ও নিরাপত্তা
- রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে
- ছবি ও তথ্য পরিবর্তনের প্রক্রিয়া
- যে সকল ডকুমেন্টস লাগবে
- সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
- অফলাইনে ছবি পরিবর্তনের পদ্ধতি
- সতর্কতা ও পরামর্শ
- এনআইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা
- শেষ কথা
জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি কেন পরিবর্তন করবেন?
এনআইডি তৈরি হওয়ার সময় অনেকেই ছিলেন তরুণ। সেই সময় তোলা ছবিগুলোর মান যেমন খারাপ ছিল, তেমনই আজকের চেহারার সঙ্গে অনেকটাই অমিল। ব্যাংক, পাসপোর্ট, বিমা কিংবা বিদেশযাত্রার সময় অনেক ক্ষেত্রেই জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই এই ছবি পরিবর্তন প্রয়োজনীয়।
আবার যখন ছবিটা তোলা হয়েছিল ক্যামেরাম্যান ছবি তোলার ক্ষেত্রে অতটা যত্নবান ছিলেন না বা ক্যামেরার কোয়ালিটি ততটা ভাল ছিলনা। যদ্দরুণ, জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি আমাদের বয়ে নিয়েই চলতে হয়। অনেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবির সাথে মানিয়ে নিয়েছেন, আবার অনেকে ইচ্ছে পোষণ করেন জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি পরিবর্তন করার– তাদের জন্যই আজকের এই পোস্টের অবতারণা।
ছবি পরিবর্তনের অনলাইন সুবিধা
নির্বাচন কমিশনের এনআইডি বিভাগের ওয়েবসাইট https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/claim-account ব্যবহার করে ঘরে বসেই আপনি তথ্য ও ছবি আপডেট করতে পারবেন। এটি একটি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত প্রক্রিয়া যেখানে আপনি নিজেই নিজের তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
NID ওয়েবসাইটে প্রবেশ ও নিরাপত্তা
অনেক সময় Firefox ব্রাউজারে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে “This Connection is Untrusted” বার্তা আসে। সে ক্ষেত্রে “I Understand the Risks” > “Add Exception” > “Confirm Security Exception” ক্লিক করে সাইটে প্রবেশ করুন।
একই ব্যাপার ঘটতে পারে গুগল ক্রম ব্রাউজার দিয়ে ঢুকতে গেলে। যাইহোক না কেন, Proceed with unsafe-এ ক্লিক করে সামনে এগিয়ে যান।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে
- ওয়েবসাইটে গিয়ে এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইল, ঠিকানা ও পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
- মোবাইলে প্রাপ্ত এক্টিভেশন কোড দিয়ে লগইন করুন।
- “রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে চাই” অপশনে ক্লিক করুন।
ছবি ও তথ্য পরিবর্তনের প্রক্রিয়া
সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে লগইন করতে হবে। লগইনের জন্য প্রয়োজন হবে আপনার এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, নির্ধারিত পাসওয়ার্ড এবং মোবাইল নম্বর বা ইমেইলে পাঠানো ভেরিফিকেশন কোড।
তথ্য হালনাগাদের সুবিধা হিসেবে, লগইন করার পর আপনি নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজে সংরক্ষিত আপনার সকল তথ্য দেখতে পারবেন। সেখানে থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো তথ্য হালনাগাদ করতে পারবেন এবং চাইলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি পরিবর্তনও করতে পারবেন। খেয়াল করুন, লগন-ইন করার আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবিটি পরিবর্তন করার অপশন দেখতে পাবেন।
তারপর স্ক্রিনের দেখানো নির্দেশনা মত কাজ করুন, জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবিটি এভাবেই পরিবর্তন হয়ে যাবে।
সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
কোড না আসাঃ “পুনরায় কোড পাঠান” অপশনে ক্লিক করুন।
ছবি আপলোড না হওয়াঃ ফাইল সাইজ কমিয়ে JPEG ফরম্যাটে আপলোড করুন।
লগইন সমস্যাঃ পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে “Forget Password” ব্যবহার করুন।
অফলাইনে ছবি পরিবর্তনের পদ্ধতি
যদি কেউ অনলাইনে না পারে তাহলে সে চাইলে সরাসরি উপজেলা বা জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি পরিবর্তনের আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নিজের উপস্থিতি এবং সঠিক কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক।
সতর্কতা ও পরামর্শ
- একবারেই ছবি এবং তথ্য যথাসম্ভব সঠিক দিন।
- মিথ্যা তথ্য দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
- ছবি হতে হবে সাম্প্রতিক, পরিষ্কার ও পাসপোর্ট ফরম্যাটে।
- প্রতিবার পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হতে পারে।
এনআইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা
নাম সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে এসএসসি বা সমমানের সনদ, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ, নিকাহনামা এবং পিতা বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। যদি কেউ ডাক নাম বা ভিন্ন কোনো নামে এনআইডিতে নিবন্ধিত হয়ে থাকেন, তবে সংশোধনের জন্য এফিডেভিট, জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি, ওয়ারিশ সনদ এবং প্রাসঙ্গিক সনদপত্র জমা দিতে হবে।
পিতা বা মাতাকে মৃত হিসেবে উল্লেখ করতে হলে অবশ্যই তাদের মৃত্যুসনদ দাখিল করতে হবে। ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য নির্ধারিত ফরম-১৩ পূরণ করতে হয়। তবে একই ভোটার এলাকার মধ্যে শুধুমাত্র বানান সংশোধনের জন্য সাধারণ সংশোধনের ফর্ম ব্যবহৃত হয়।
বয়স বা জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমানের সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যদি উপযুক্ত প্রমাণপত্র না থাকে, তবে প্রয়োজনে তদন্ত এবং চিকিৎসা পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করা হয়।
একই পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্রে পিতা বা মাতার নাম ভিন্নভাবে উল্লেখ থাকলে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যের এনআইডি কপি এবং প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। বয়স বাড়ানোর জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংশোধনের আবেদন করা যাবে না।
যদি অন্য কোনো ব্যক্তির তথ্য ভুলবশত আপনার কার্ডে চলে আসে, তবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে বায়োমেট্রিক যাচাইসহ আবেদন করতে হবে। রক্তের গ্রুপ সংশোধনের জন্য নির্ভরযোগ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট দাখিল করতে হয়।
স্বাক্ষর পরিবর্তনের জন্য নতুন স্বাক্ষরের নমুনা এবং বৈধ প্রমাণপত্র সংযুক্ত করতে হবে। তবে একবারই স্বাক্ষর পরিবর্তনের সুযোগ পাওয়া যায়।
যুক্তিযুক্ত ও যথাযথ কারণ ছাড়া কোনো সংশোধনের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।
শেষ কথা
জাতীয় পরিচয় পত্রের অসুন্দর ছবি যদি আপনার পরিচয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে, তাহলে এখনই সময় সেই ছবি পরিবর্তনের। ডিজিটাল বাংলাদেশে ঘরে বসেই এনআইডির তথ্য ও ছবি আপডেট করার এই সুযোগ যেন কেউ হাতছাড়া না করেন। এটি আপনার নাগরিক অধিকার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার অংশ।