এই গরমে স্বাস্থ্যের যত্নের ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরী। বাংলাদেশে উষ্ণতম মাসগুলোর মধ্যে এপ্রিল-মে-জুন অন্যতম। এ সময়ে দেশের কোন কোন স্থানে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। এরকম প্রচন্ড তাপমাত্রায় আমাদের শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ইমব্যালান্স ঘটে যায়। বাইরের তাপের সাথে শরীর থেকে বের হওয়া তাপের মধ্যে গরমিল হওয়ার ফলে হিটস্ট্রোক সহ নানা রকম শারিরীক সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই গরমে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে
গরমে স্বাস্থ্যের যত্নে হালকা খাবার
ভারী খাবার আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই গরমের স্বাস্থ্যের যত্নের জন্য খাদ্য তালিকায় যোগ করুন হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার। একবারে অনেক বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে একাধিকবার খান। বেশি মসলা দিয়ে পাকানো খাবার বা ভারির খাবারের কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট বেশি থাকে যা আমাদের দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এসবের পরিবর্তে সতেজ ফল-মূল ও সবজি খেতে পারেন। গ্রীষ্মকালীন যে কোন ফল এক্ষেত্রে বেশ উপকারী, যেমন- কমলা, তরমুজ, শসা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। হাই প্রোটিন, অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন।
যেকোনো রকম পানীয় ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন
ঠান্ডা পানীয়, মদ, চাও কফি আমাদের শরীরকে দ্রুত পানি শূন্য বা ডিহাইড্রেট করে দেয়। তাই এই গরমে স্বাস্থ্যের যত্নে যতটা সম্ভব কফি বা ঠান্ডা পানীয় থেকে দূরে থাকুন। এগুলোর পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণে সাধারণ পানি পান করুন। গরমের স্বাস্থ্যের যত্নে দেহের আর্দ্রতা বজায় রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করুন। সম্ভব হলে ডাবের পানি, স্যালাইন, লেবুর শরবত, অল্প লবণ ও চিনি দিয়ে শরবেত খেতে পারেন। পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে, তেষ্টা না পেলেও বার-বার স্বাভাবিক পানি পান করতেই হবে।
শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে ও রোগ ব্যাধি থেকে দূরে থাকতে নিয়মিত গোসল করুন। গোসল অবশ্যই ঠান্ডা বা গরম পানি দিয়ে করবেন না, স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করবেন। যদি সম্ভব হয় দিনে দুইবার গোসল করুন।
আরামদায়ক সুতির পোশাক পরুন
সুতির নরম পোশাক যেকোন ঋতুতে বিশেষ করে গরমের সময় একটি আদর্শ পোশাক। তাই গরমে স্বাস্থ্যের যত্ন ঠিকঠাক রাখতে চাইলে আটোসাটো পোশাক ও সমস্ত প্রকার রঙিন জামা কাপড় এড়িয়ে চলুন। রোদে বের হওয়ার আগে সাথে করে হাতা নিন। দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত রোদের তাপ বেশি থাকে, তাই এই সময় বাইরে যাওয়া ভালো নয়।
জেনে নিন প্রচন্ড গরমে কাদের হিট স্ট্রোক হতে পারে
যাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এছাড়াও যারা দীর্ঘ সময় রোদে থাকেন, শ্রমজীবী মানু্ষ, বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশু – এদের হিটস্ট্রোক হতে পারে। যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে পানির প্রচন্ড তৃষ্ণা, স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত গতিতে হৃৎস্পন্দন হওয়া, বমি বমি ভাব সাথে মাথাব্যথা, কথা জড়িয়ে যাওয়া – এসব লক্ষণ দেখেন তাহলে বুঝবেন ব্যক্তিটির হিটস্ট্রোক হতে যাচ্ছে। আপনাদের বলে রাখি, হিট স্ট্রোকের কারণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। তাই গরমে স্বাস্থ্যের যত্নে কারো মধ্যে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন।
যদি কারো মধ্যে হিটস্ট্রোক হয়েছে বুঝা যায়, তাহলে তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। আর যতক্ষণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে না পারছেন ততক্ষণ অসুস্থ ব্যক্তিকে খাইয়াই শুইয়ে রেখে ভেজা গামছা, রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে চোখ মুখ মুছে দিন। তার শরীরের তাপমাত্রা কমাতে শরীরে ও মাথায় পানি ঢালতে পারেন।
গরমে স্বাস্থ্যের যত্নে শিশুর প্রতি কর্তব্য
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. শাহেদুর রহমান জানালেন শিশুর যত্নের নানান দিক। শিশুদেরও পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে। আরামদায়ক পোশাক পরিয়ে রাখুন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিধি মেনে চলতে সাহায্য করুন। কেবল হাত ধোয়ার অভ্যাসেই পেটের পীড়া, সর্দি-কাশি এমনকি কনজাংটিভাইটিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। হাত পরিষ্কার রাখার নিয়ম শিখিয়ে দিন।তাজা মৌসুমি ফলমূল খেতে দিন। শিশুদের ছায়ায় রাখুন। বাইরে নেবেন নরম রোদের বেলায়। রোজ একবার গোসল করিয়ে দিন, শিশুর উপযোগী সাবান ব্যবহার করুন। গোসলের আগে তেল আর পরে পাউডার লাগিয়ে দিতে পারেন। শিশুর চুল রাখুন আরামদায়ক মাপে। ঘামাচি হলে নরম সুতি কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে ত্বক মুছে দিন। ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম খেতে বাধা নেই, যদি কোল্ড অ্যালার্জি না থাকে। তবে একেবারে তীব্র গরমের মধ্যে খুব ঠান্ডা কিছু খাওয়া ঠিক নয়।
তথ্যসূত্রঃঅধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা
মহারিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা।