এই পোস্টে আপনি জানতে পারবেন খাস জমি কী, কাকে বলে বা সংজ্ঞা কি এবং এই জমি চেনার উপায়। এছাড়াও আজকে আলোচনা করা হবে কোন জমিটি খাস এবং কোনটি মালিকানাভুক্ত জমি, কীভাবে দেখে বুঝতে পারবেন যে জমিটি খাস কিনা ইত্যাদি। খাস জমি কাকে বলে অনেকেই জানেন না। তাছাড়া, এই জমি চেনার উপায় সম্পর্কেও অধিকাংশ মানুষ অবগত নয়। অনেকে এই ধরণের জমি কিনেও প্রতারিত হন। তো চলুন, খাস জমি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনে নিই এবং ভবিষ্যৎ সমস্ত প্রকার প্রতারণা থেকে নিজেদের রক্ষা করি।
Table of Contents
খাস জমি কাকে বলে
কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নয়, বরং সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ও মালিকানাধীন যেকোন ভূমিকেই খাস জমি বলে। এই সমস্ত জমি সাধারণত ডিসিআর, সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধিমালা অথবা অন্য কোনভাবে ব্যবহার হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলর থেকে অনুমতি নিয়ে অনেক দরিদ্র ও দুঃস্থ মানুষজন এসব জমি ব্যবহার করে থাকে। এই জমি দুই প্রকারের হয়ে থাকে, যথাক্রমে- ১. কৃষি খাস এবং ২. অকৃষি খাস। এই দুই ধরনের জমি দুই রকম উপায়ে বন্দোবস্ত হয়ে থাকে।
কৃষি খাস জমি কাকে বলে
যেসব খাস জমি কৃষি কাজের জন্য বন্দোবস্ত হয়ে থাকে তাকে কৃষি খাস জমি বলে। অর্থাৎ ধান, পাট, মাছ ইত্যাদি চাষ করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে যে সকল খাস জমির বন্দোবস্ত হয় তাকে কৃষি খাস জমি বলে। সাধারণত হাওড়, বিল এবং নদীর আশ-পাশ এলাকা কৃষি খাসের জন্য বন্দোবস্ত হয়ে থাকে।
অকৃষি খাস জমি কাকে বলে
যে সমস্ত জমি কৃষি কাজ ছাড়া অন্য সব কাজের জন্য বন্দোবস্ত হয়ে থাকে তাকে অকৃষি খাস জমি বলে। অর্থাৎ রাস্তা-ঘাট, খাল-বিল, আবাসিক এলাকা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক এলাকা ইত্যাদি হল অকৃষি খাস জমির উদাহরণ। জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে যে কেউ চাইলেই এসব খাস জমির বন্দোবস্ত করে নিতে পারে।
কিভাবে খাস জমি চিনবেন
যদি কেউ খাস জমি নিজের নামে বন্দোবস্ত করতে চায়, তাহলে তাকে আগে খাস জমি চিনতে হবে। খাস জমি চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হল যেই এলাকার খাস জমি নিজের নামে বন্দোবস্ত করতে চান ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে ৮ নম্বর রেজিস্টার তল্লাশি করা। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অনেক রকমের রেজিস্টার বই থাকে, কিন্তু ৮ নম্বর রেজিস্টার বই শুধুমাত্র সরকারের মালিকানাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন খাস জমির রেকর্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও যেসব জমির খতিয়ান নাম্বার ১ এবং দাগ নাম্বারের পাশে খাস উল্লেখ থাকলে সেটি খাস জমি বলে বিবেচিত হবে। এভাবে জমির মালিকানা যাচাইয়ের মাধ্যমে উক্ত জমিটি খাস কিনা তা বোঝা যায়।
খাস জমি চেনার আরো একটা উপায় হল, এই জমিগুলো সাধারণত একটু বড় আকারের হয়ে থাকে। যদি কেউ পূর্বে সেটা ব্যবহারের জন্য আবেদন না করে থাকে এবং কারো নামে বন্দোবস্ত না হয়ে থাকে – তাহলে জমিটি অনাবাদি অবস্থায় পতিত রুপে পড়ে থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায় খাস জমিতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকে। পাশাপাশি এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছ থেকে উক্ত এলাকায় খাস জমির অবস্থান এবং পরিমাণ জানতে পারেন।
সরকারি খাস জমির বৈশিষ্ট্যসমূহ
খাস জমির কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যার ভিত্তিতে সরকারি খাস জমি চেনা যায়। উপরের সেকশনে উল্লেখিত উপায় গুলো ছাড়াও খাস জমির বৈশিষ্ট্য গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ৮ নম্বর রেজিস্টার বইয়ে জমির রেকর্ড থাকে।
- খাস জমি হচ্ছে সরকারের নিজস্ব মালিকানাধীন ভূমি।
- এই জমি কোনো ব্যক্তিগত বা কর্পোরেট সম্পত্তি হিসেবে থাকে না।
- এই জমি সাধারণত জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রানাধীনে থাকে।
- খাস জমির জন্য কোনো ধরণের খাজনা (কর/ট্যাক্স) দিতে হয় না।
- সাধারণত খাস জমি ফাঁকা থাকে কিংবা সেখানে সরকারি ভবন নির্মিত হয়।
এইসব চিহ্ন দেখে আপনি সহজেই যেকোনো খাস জমি কিনতে পারবেন। প্রতিটি খাস জমির বৈশিষ্ট্য একই রকম।
খাস জমি কি বিক্রি করা যায়
যেহেতু খাস জমির মালিকানা সরকারের, সেহেতু এই জমি বিক্রি করা যায় না। এই জাতীয় জমিসমূহ জনকল্যাণে ব্যাবহৃত হয়। যদি কেউ খাস জমি বিক্রির চেষ্টা করে তবে তার বিরুদ্ধে সরকারি আইন মোতাবেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অনেক সময় ধূর্ত ও প্রতারক চক্র সরকারি খাস জমি নিজেদের বলে বিক্রি করার চেষ্টা করে। এজন্য জমি ক্রয়ের আগে খাস জমি চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া জানা জরুরি, যেটা উপরের সেকশনে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে জমি কেনার সময় এরকম অনিচ্ছাকৃত ভুল এড়ানো যাবে।। খাস জমির মালিকানা ও এটার উপর অধিকার পুরোপুরি বাংলাদেশ সরকারের। সুতরাং, এই জাতীয় জমি অবৈধভাবে দখল করা অথবা কেনাবেচা করা আইনের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কিভাবে খাস জমি দলিল করবেন
নির্দিষ্ট পন্থা অনুসরণ করে খাস জমির দলিল করা যায়। এজন্য প্রথমে ডিসি অফিসে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হয়। আবেদন অনুমোদিত হলে ভূমি অফিসের ওয়েবসাইট https://mutation.land.gov.bd/ অথবা এসিল্যান্ড অফিস থেকে নামজারির (মিউটেশন) জন্য আবেদন করতে হয়। এই কাজের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, প্রক্রিয়াকরণ ফি ৫০ টাকা এবং ডিসিআর কাটানোর জন্য ১১০০ টাকা করে মোট ১১৭০ টাকা ব্যয় হবে। এই নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে খাস জমি আপনার নামে রেকর্ড করতে পারেন।
কারা খাস জমি লিজ নিতে পারবে
বাংলাদেশের নাগরিক যে কেউ সর্বোচ্চ ১০০ শতক খাস জমি ৯৯ বছর পর্যন্ত লিজে নিতে পারেন। খাস জমি মূলত দুই প্রকারের হয়— কৃষি এবং অকৃষি। উভয় প্রকারের জমি লিজের মাধ্যমে কৃষি ও অকৃষি উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য নেওয়া যেতে পারে। এর জন্য যে কোনো ব্যক্তিকে তার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমি লিজের জন্য আবেদন করতে হবে।
খাস জমি নিজের নামে বন্দোবস্ত করার শর্ত সমূহ
চাইলেই যে কেউ খাস জমি নিজের নামে বন্দোবস্ত বা দলিল করতে পারবে না। এজন্য কিছু শর্ত মেনে করতে হবে। সরকারি মালিকানাধীন বা খাস জমি নিজের নামে বন্দোবস্ত করার শর্তসমূহ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- আবেদনকারীকে ভূমিহীন হতে হবে অথবা ১০ শতকের কম জমির মালিক হতে হবে।
- ১০ শতকের বেশি জমি যাদের অধিকারে আছে, তারা বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
- কৃষি ও অকৃষি— দুই ধরনের খাস জমিই রেকর্ডের জন্য আবেদন যোগ্য।
- শর্তভূক্ত জমি যা কোনো ব্যক্তিবিশেষ অথবা সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ড করা নেই, সেসব ০১ নং খতিয়ানে উল্লেখিত হতে হবে।
- এই জমি সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্তের আবেদন করা যাবে, তার বেশি নয়।
- আবেদন অনুমোদন হলে, নামজারি খতিয়ানের জন্য আবেদন করতে হবে।
- নামজারি আবেদন অনলাইনে অথবা সরাসরি এসি ল্যান্ড অফিসে গিয়ে করতে হবে।
- নির্ধারিত পরিমাণ নামজারি ফি জমা দিতে হবে।
- নামজারি সম্পন্ন হলে, নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান করে নিজের নামে রেকর্ড হয়েছে কিনা যাচাই করতে হবে।
খাস জমির লিজ পেতে হলে খাস জমির লিস্ট পেতে হলে একটি আবেদন ফরম পূরণ করে সেটা জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠাতে হবে। লিজের জন্যে আবেদন ফরমটি এই লিংকে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন, তারপর প্রিন্ট করার পর সঠিকভাবে সব তথ্য দিয়ে পূরণ করুন। জেলা প্রশাসকের কাছে যদি আপনার আবেদন গৃহীত হয়, তবে জমির নামজারি সম্পন্ন করার জন্য পরবর্তী ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
আশাকরি পুরো পোষ্ট পড়ার পর খাস জমি সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।