কিভাবে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দিতে হয়

কিভাবে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দিতে হয়-cybersheba.com
স্বামী এবং স্ত্রীর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিৎ যাতে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ না হয়।

কোর্টের মাধ্যমে তালাক হল এমন একতি আইনি প্রক্রিয়া যেটার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে আইনগত ভাবে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। তালাক হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের একটি আইনী পদ্ধতি যা স্বামী অথবা স্ত্রী যে কোনো পক্ষ থেকেই কার্যকর করা যেতে পারে।

কোর্টের মাধ্যমে তালাক হল একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয় যা আইনগতভাবে সঠিকভাবে পরিচালনা করা জরুরি। তালাকের প্রক্রিয়া সাধারণত আইনী দিক এবং সামাজিক দিক উভয়ই গুরুত্বপূর্ন। এই পোষ্টে আমরা বিস্তারিতভাবে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করব।

তালাকের প্রকারভেদ

তালাকের প্রধান তিনটি প্রকারভেদ রয়েছে যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রযোজ্যঃ

  1. স্বামী কর্তৃক তালাকঃ স্বামী তার স্ত্রীকে যুক্তিসঙ্গত কারণে তালাক দিতে পারেন। এটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে তালাকের ঘোষণা ও আইনী প্রক্রিয়া অবশ্যই অনুসরণ করতে হয়।
  2. স্ত্রী কর্তৃক তালাকঃ স্ত্রী যদি কাবিন নামায় স্বামী কর্তৃক তালাকের ক্ষমতা (তালাক-ই-তৌফিজ) না দেওয়া থাকে, তবে তাকে আদালতে তালাকের জন্য আবেদন করতে হবে।
  3. পারস্পারিক সম্মতিতে তালাকঃ এটি দুই পক্ষের সম্মতিতে, যেমন খুলা বা মুবারত, তালাকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এটা ছাড়াও তালাকের প্রকারভেদ আরো অনেক ভাবে করা যায়, যেমনঃ

পদ্ধতিগত দিক দিয়ে তালাক তিন প্রকারঃ (ক) আহসান বা সর্বোত্তম তালাক ; (খ) হাসান বা উত্তম তালাক এবং (গ) বিদ’ই বা শরিয়া বিরূদ্ধ তালাক।

ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ (১)তালাকে সুন্না (২) তালাকে বাদী (৩)তালাকে তাফবীজ (৪)তালাকে মোবারত ও (৫)খোলা তালাক।

কার্যকর হওয়ার দিক দিয়ে তালাক প্রধানত দুই প্রকারঃ (১) তালাকে রেজী ও (২)তালাকে বাইন

তালাকে বাইন আবার দুই প্রকারঃ– (১)বাইনে সগির ও (২) বাইনে কবির।

মর্যাদা ও অবস্থানের দিক থেকে তালাক চার প্রকারঃ (১)হারাম (২)মাকরুহ (৩)মুস্তাহাব ও (৪)ওয়াজিব

Talak Through Court - কিভাবে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দিতে হয়-cybersheba.com

কোর্টের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার জন্য নিচের ধাপগুলো সম্পন্ন করতে হবেঃ

  • তালাকের নোটিশ প্রদানঃ তালাক ঘোষণার পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে নোটিশ পাঠাতে হবে এবং স্ত্রীরও কপি প্রদান করতে হবে।
  • সালিশী কার্যক্রমঃ চেয়ারম্যান একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন যা দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করার চেষ্টা করবে।
  • ৯০ দিনের অপেক্ষার সময়কালঃ তালাক কার্যকর হতে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হয়, তবে গর্ভবতী স্ত্রীর ক্ষেত্রে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৯০ দিন পর তা কার্যকর হবে।

তালাকের নোটিশ

তালাক নোটিশের মাধ্যমে স্বামী তার সিদ্ধান্তের কথা জানান দেন এবং আইনী প্রক্রিয়া শুরু করেন। নোটিশ প্রদান না করলে স্বামীকে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। নোটিশের মধ্যে তালাকের কারণ, তারিখ, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করতে হবে। নোটিশটি দুই কপি হতে হবে – একটি আদালতে জমা দিতে হবে এবং একটি স্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

সালিশী কার্যক্রম

নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সালিশী পরিষদ গঠন করবেন। এই পরিষদ চেষ্টা করবে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করতে। সালিশী কার্যক্রমে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার চেষ্টা করা হয়। যদি সমঝোতা সম্ভব না হয়, তবে তালাক কার্যকর হতে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। সালিশী কার্যক্রমের সময়, পক্ষদ্বয়কে একত্রিত করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।

অপেক্ষার সময়কাল

তালাকের ঘোষণা করার পর, ৯০ দিন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়, এবং স্ত্রীকে এই সময়কালীন ভরণপোষণ প্রদান করতে হবে। গর্ভবতী স্ত্রী থাকলে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। এই সময়কাল নিয়ে আইন অনুযায়ী কোনো আপত্তি থাকলে তা আদালতে উত্থাপন করা যেতে পারে।

কোর্টের কার্যক্রম

আদালতে তালাকের আবেদন করার পর, কোর্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে শুনানি করে এবং প্রমাণাদি পরীক্ষা করে। আদালত যদি প্রমাণিত হয় যে তালাকের জন্য সব শর্ত পূর্ণ হয়েছে, তবে তালাকের ডিক্রি প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমে প্রমাণাদি উপস্থাপন এবং পক্ষদ্বয়ের বক্তব্য শোনা হয়। আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তালাকের ডিক্রি প্রদান করা হয়।

আর্থিক দায়িত্ব

তালাকের সময়ে দেনমোহর এবং ভরণপোষণ প্রদান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তালাকের নোটিশ দেওয়ার পর, পুরো দেনমোহর পরিশোধ করা এবং স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ভরণপোষণ প্রদান করা অপরিহার্য। আর্থিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনরূপ ত্রুটি হলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।

কোর্টের মাধ্যমে তালাকের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য একজন আইনজীবী বা কাজির সাহায্য নেওয়া উচিত। আইনজীবী আপনাকে প্রয়োজনীয় আইনী পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন এবং প্রক্রিয়াটি দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করবেন। একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বা কাজি তালাকের প্রক্রিয়া দ্রুত এবং দক্ষভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারেন।

পরিবারের ওপর প্রভাব

তালাকের প্রক্রিয়া পরিবারের সদস্যদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এটি শুধুমাত্র স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ককেই প্রভাবিত করে না, বরং সন্তানদের ওপরও প্রভাব ফেলে। তালাকের ফলে পরিবারের আর্থিক, সামাজিক, এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

তালাকের পর অধিকার

কোর্টের মাধ্যমে তালাকের পর স্ত্রী ও সন্তানদের কিছু অধিকার থাকে যা নিশ্চিত করতে হবে। স্ত্রীকে দেনমোহর, ভরণপোষণ এবং সন্তানদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া তালাকের পরবর্তী অধিকার এবং দায়িত্বের বিষয়গুলো নিয়মিতভাবে দেখা উচিত যাতে কোনো আইনগত সমস্যার সৃষ্টি না হয়।

তালাকের প্রক্রিয়া ভুলভাবে পরিচালনা করলে আইনী প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থদণ্ড, কারাদণ্ড অথবা অন্যান্য আইনী পদক্ষেপ। আইনী প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন।

শেষ কথা

কোর্টের মাধ্যমে তালাকের প্রক্রিয়া একটি জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয় যা আইনীভাবে সঠিকভাবে পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী ও স্ত্রীর উভয় পক্ষের উচিত আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা এবং আইনী সহায়তা গ্রহণ করা। তবে তালাক যে কারণেই হোক না কেন, কোন ভাবেই তালাক কাম্য নয়। তাই স্বামী এবং স্ত্রীর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিৎ যাতে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ না হয়।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *