কোন দেশে টাকার মান বেশি – প্রবাসী ভাইদের কাছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বর্তমান বিশ্বে জাতিসংঘ দ্বারা স্বীকৃত প্রায় ১৮০টি মুদ্রা চলমান আছে। একটি দেশের মুদ্রার মান কেমন হবে তা মূলত ঐ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে মুদ্রার মান নির্ধারণ করা হয়। এই মুদ্রার মান নির্ধারণের পদ্ধতিকে একচেঞ্জ রেট বলা হয়। কিছু দেশের মুদ্রার মান স্থিতিশীল থাকলেও, অধিকাংশ দেশের মুদ্রার মান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়ে থাকে। আজকের পোষ্ট পুরো পড়ে জেনে নিন কোন দেশে টাকার মান বেশি এবং কোন দেশ গুলো পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ।
Table of Contents
কোন দেশে টাকার মান বেশি
কোন একটি দেশের মুদ্রার মান নির্ধারণ করা হয় ঐ দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি, চাহিদা ও সরবরাহ, এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাদি দেখে। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের কোন কোন দেশের টাকার মান বেশি।
বিশ্বের শীর্ষ মুদ্রার তালিকা
বর্তমানে কুয়েতি দিনার বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। কুয়েতি দিনারের মান বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৬০ টাকা। অন্যান্য দেশের মুদ্রার মানও কম নয়। বাহরাইনি দিনার, ওমানি রিয়াল, এবং জর্ডানীয় দিনারের মান যথাক্রমে ২৯৪ টাকা, ২৮৭ টাকা, এবং ১৫৬ টাকা।
কুয়েতি দিনার (KWD)
কুয়েতের মুদ্রা বা কুয়েতি দিনার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা। কুয়েতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে দিনারের মূল্য খুবই উচ্চ। বর্তমানে, ১ কুয়েতি দিনার বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৬০ টাকা।
বাহরাইনি দিনার (BHD)
বাহরাইনের মুদ্রা বা বাহরাইনি দিনার বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা। বাহরাইনে অপরিশোধিত তেল এবং শক্তিশালী ব্যাংকিং সেক্টরের কারণে দিনারের মান স্থিতিশীল রয়েছে। ১ বাহরাইনি দিনার বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৯৪ টাকা।
ওমানি রিয়াল (OMR)
কোন দেশে টাকার মান বেশি জানার জন্য জানতে হবে ওমানের মুদ্রা যা ওমানি রিয়াল নামে খ্যাত তা একটি শক্তিশালী মুদ্রা। এটি ওমানের শক্তিশালী অর্থনীতি এবং তেল রপ্তানি থেকে লাভবান হওয়ার কারণে উচ্চ মূল্য ধারণ করেছে। ১ ওমানি রিয়াল বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৮৭ টাকা।
জর্ডানীয় দিনার (JOD)
জর্ডানীয় দিনারও একটি শক্তিশালী মুদ্রা। জর্ডানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সীমিত আর্থিক চাহিদার কারণে দিনারের মূল্য উচ্চ। ১ জর্ডানীয় দিনার বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৫৬ টাকা। বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য প্রবাসী জর্ডানে কর্মরত রয়েছে।
ব্রিটিশ পাউন্ড (GBP)
যুক্তরাজ্যের মুদ্রা বা ব্রিটিশ পাউন্ড বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা। এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং রিজার্ভ মুদ্রার কারণে মূল্যবান হয়েছে। ১ ব্রিটিশ পাউন্ড বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪৭ টাকা।
জিব্রাল্টার পাউন্ড (GIP)
জিব্রাল্টারের মুদ্রা বা জিব্রাল্টার পাউন্ড ব্রিটিশ পাউন্ডের সাথে সংযুক্ত। এটি জিব্রাল্টারের স্থিতিশীল অর্থনীতি এবং উচ্চ লাইফস্টাইলের কারণে শক্তিশালী। ১ জিব্রাল্টার পাউন্ড বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৩৯ টাকা।
কেমম্যান দ্বীপপুঞ্জ ডলার (KYD)
এই দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে যদিও বিশেষ কোন আলোচনা হয়না তবুও কোন দেশে টাকার মান বেশি জানতে হলে জানতে হবে কেমম্যান দ্বীপপুঞ্জের মুদ্রা বা কেমম্যান দ্বীপপুঞ্জ ডলার একটি শক্তিশালী মুদ্রা। এটি প্রধানত আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়। ১ কেমম্যান দ্বীপপুঞ্জ ডলার বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৩৪ টাকা।
লিবিয়ান দিনার (LYD)
লিবিয়ার মুদ্রা লিবিয়ান দিনার মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী মুদ্রার মধ্যে একটি। দেশের তেলের রপ্তানি ও অর্থনৈতিক নীতি এর মূল্য নির্ধারণে সহায়তা করে। ১ লিবিয়ান দিনার বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২২.৭৩ টাকা।
ব্রুনাই ডলার (BND)
ব্রুনাইয়ের মুদ্রা ব্রুনাই ডলার শক্তিশালী মুদ্রার মধ্যে একটি। দেশের তেলের রপ্তানি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির কারণে এর মূল্য উচ্চ। ১ ব্রুনাই ডলার বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮১.৫৫ টাকা।
ইউরো (EUR)
কোন দেশে টাকার মান বেশি আলোচনায় এখন জানব ইউরোর মূল্য সম্পর্কে। ইউরোপীয় মুদ্রা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইউরো একটি বৈশ্বিক শক্তিশালী মুদ্রা। ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসার কারণে এর মূল্য উচ্চ। ১ ইউরো বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১১৯ টাকা।
বিশ্বের সব থেকে ধনী দেশের তালিকা
একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার মূল্যায়ন শুধুমাত্র মুদ্রার মানের ভিত্তিতে করা হয় না। একটি দেশের উন্নতিসাধন তার টাকার মানের পাশাপাশি মাথাপিছু আয়, অর্থাৎ জিডিপি (Gross Domestic Product), দ্বারা নির্ধারিত হয়। কোন দেশে টাকার মান বেশি- আলোচনায় এখন জানব বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলির তালিকা ও তাদের মাথাপিছু জিডিপি সম্পর্কে।
- মোনাকোঃ মাথাপিছু জিডিপি: প্রায় ২,৩৪,৩১৭.১ ডলার
- লিচেনস্টাইনঃ মাথাপিছু জিডিপি: প্রায় ১,৮৪,০৮৩.৩ ডলার
- লুক্সেমবার্গঃ মাথাপিছু জিডিপি: প্রায় ১,২৬,৪২৬.১ ডলার
- বারমুডাঃ মাথাপিছু জিডিপি: প্রায় ১,১৮,৮৪৫.৬ ডলার
- নরওয়েঃ মাথাপিছু জিডিপি: প্রায় ১,০৬,১৪৮.৮ ডলার
- আয়ারল্যান্ডঃ মাথাপিছু জিডিপি: প্রায় ১,০৪,০৩৮.৯ ডলার
শেষ কথা
একটি দেশের মুদ্রা শক্তিশালী হয় বিভিন্ন কারণে। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পণ্যের চাহিদা আর্থিক স্থিতিশীলতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। আমাদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুদ্রাগুলোর মধ্যে কুয়েতি দিনার শীর্ষে রয়েছে।
আপনি যদি প্রবাসে যেতে বা কোন কারণে কোন দেশে টাকার মান বেশি এটা জানতে চান তাহলে আশা করি এই তথ্য আপনার উপকারে আসবে।