কিভাবে জমি বন্ধক রাখতে হয়

কিভাবে জমি বন্ধক রাখতে হয়-cybersheba.com
চুক্তি স্বাক্ষরের পর, জমির প্রকৃত মালিকানা এবং জমির মূল্য বিষয়ক সমস্ত তথ্য নথিবদ্ধ করতে হয়।

জমি বন্ধক বলতে বোঝায় ঋণের বিনিময়ে জামানত স্বরুপ এক খন্ড জমি ঋণদাতার নিকট যে পদ্ধতিতে দেওয়া সেটাই। জমি বন্ধক রাখার জন্য কিছু আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এছাড়া অনেক ধর্ম প্রাণ ও প্রাক্টিসিং মুসলিম জমি বন্ধক রাখার ব্যাপারে শরয়ী হুকুম জানতে চান। আজকের পোষ্টে এই সব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

জমি বন্ধক রাখার নিয়ম

জমি বন্ধক রাখা একটি প্রাচীন আর্থিক প্রক্রিয়া যা বেশ কিছু নিয়ম ও শর্ত অনুসরণ করে সম্পাদিত হয়। এটি মূলত একটি নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করে যা ঋণগ্রহীতার পক্ষ থেকে ঋণদাতার কাছে জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে, জমির মালিক তার জমি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বন্ধক রাখেন, এবং ঋণ পরিশোধের সময় জমি ফেরত নেওয়া হয়।

জমি বন্ধক রাখার আইন

বাংলাদেশে জমি বন্ধক রাখার আইনটি মূলত জমি আইন ১৯৫০ এবং সিভিল প্রোসিডিউর কোড ১৯০৮ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই আইন অনুযায়ী, জমি বন্ধক রাখতে হলে, একটি লিখিত চুক্তি করতে হবে যা জমির মালিক এবং ঋণদাতার মধ্যে সই করা হয়।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর, জমির প্রকৃত মালিকানা এবং জমির মূল্য বিষয়ক সমস্ত তথ্য নথিবদ্ধ করতে হয়। এই আইনটি জমি বন্ধক রাখা, বন্ধক মূল্য নির্ধারণ এবং ঋণ পরিশোধের শর্তাবলী নির্ধারণ করে।

জমি বন্ধক রাখা কি জায়েজ

Land-Bond-কিভাবে জমি বন্ধক রাখতে হয়-cybersheba.com

ইসলামী শরিয়তে জমি বন্ধক রাখা বৈধ। তবে, এটি কিছু বিশেষ শর্ত পূরণ করতে হবে। কোরআন এবং হাদিসের ভিত্তিতে, জমি বন্ধক রাখা বৈধ, যদি এটি সুদ মুক্ত থাকে এবং সম্পূর্ণ সুস্পষ্ট চুক্তির আওতায় আসে। নবী করিম (সা.) নিজেও বন্ধক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। বন্ধক রাখার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে, মুসলমানদের উচিত শরিয়তের নিয়মাবলী অনুসরণ করা, যাতে সুদের কোনও সম্ভাবনা না থাকে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “আর যদি তোমরা সফরে থাকো এবং কোনো লেখক না পাও, তাহলে হস্তান্তরিত বন্ধক রাখবে। আর যদি তোমরা একে অপরকে বিশ্বস্ত মনে করো, তবে যাকে বিশ্বস্ত মনে করা হয়, সে যেন স্বীয় আমানত আদায় করে এবং নিজ রব আল্লাহকে ভয় করে।” (সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮৩)

তবে ঋণ দিয়ে জমি বন্ধক রাখার প্রচলিত এসব পদ্ধতি জায়েজ নয়। কেননা ঋণ দিয়ে বিনিময়ে বন্ধকি বস্তু থেকে উপকৃত হওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েজ। সুরা বাকারার উল্লিখিত আয়াত থেকে বোঝা যায়, বন্ধককৃত বস্তু-সামগ্রী অথবা জমি বন্ধকগ্রহীতার কাছে আমানতস্বরূপ। সুতরাং, বন্ধক নেওয়া জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতার কোনো ফায়দা হাসিল করা যেমন ফসল উৎপাদন করা ইত্যাদি নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি বন্ধকদাতা অনুমতি দিলেও এমনটি করা যাবে না। কারণ, বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা কোনো ধরনের ফায়দা হাসিল করা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা সুস্পষ্ট হারাম।

ইবনে সিরিন (রহ.) বলেন, জনৈক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, ‘এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, আমি তা আরোহণের কাজে ব্যবহার করেছি।’ ইবনে মাসউদ (রা.) এ কথা শুনে বললেন, ‘তুমি আরোহণের মাধ্যমে এর থেকে যে উপকার লাভ করেছ তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে।’

তাহলে কিভাবে বন্ধক রাখলে জায়েজ হবে?

বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা উপকৃত বা লাভবান হতে চাইলে এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে যে, বন্ধকি চুক্তি বাতিল করে দীর্ঘমেয়াদি ইজারা তথা ভাড়া নেওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করবে। অর্থাৎ যত দিন পর্যন্ত ঋণের টাকা পরিশোধ না হয় ঋণদাতা জমিটি ইজারা পদ্ধতিতে ভোগ করবে এবং তার ন্যায্য ভাড়াও জমির মালিককে দিয়ে দেবে। তবে এ ক্ষেত্রে ঋণ ও ইজারা চুক্তি দুটি ভিন্ন ভিন্ন হতে হবে। দুটি চুক্তিকে মিলিয়ে একটিকে অপরটির সঙ্গে শর্তযুক্ত করা যাবে না।

জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম / জমি বন্ধকি চুক্তিপত্র

জমি বন্ধক রাখার জন্য একটি চুক্তিপত্র তৈরি করতে হয়। এই চুক্তিপত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি উল্লেখ করতে হবেঃ

  • জমির সঠিক বিবরণ এবং মালিকানা
  • বন্ধকী অর্থের পরিমাণ এবং ঋণের শর্তাবলী
  • বন্ধকী অর্থের পরিশোধের সময়কাল এবং শর্তাবলী
  • যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় তবে জমির কি হবে
  • চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষদের নাম এবং স্বাক্ষর

চুক্তিপত্রটি সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে নিবন্ধিত হতে হবে এবং এটি স্বাক্ষরিত ও সীলযুক্ত হতে হবে যাতে এটি আইনি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়। জমি বন্ধক নামার নমুনা ডাউনলোড করার জন্য এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

জমি বন্ধক রেখে লোন দেয় কোন ব্যাংক

বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংক জমি বন্ধক রেখে ঋণ প্রদান করে। এই ব্যাংকগুলি সাধারণত নিম্নলিখিত শর্তাবলী পালন করেঃ

  • বন্ধকী জমির মূল্য নির্ধারণ এবং পরিশোধের শর্তাবলী
  • ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন
  • জমির বৈধতা এবং মালিকানা যাচাই

যেমনঃ সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এবং অন্যান্য বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি জমি বন্ধক রেখে ঋণ প্রদান করে। ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদনকারীদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় গিয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হয় এবং নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করতে হয়।

এই নিবন্ধে উল্লিখিত তথ্যগুলি জমি বন্ধক রাখার জন্য আপনার বোঝার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সহায়ক হতে পারে। সর্বদা নিশ্চিত করুন যে আপনার বন্ধক চুক্তি সম্পূর্ণ এবং আইনগতভাবে সঠিক।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *