কম খরচে বিয়ের বাজার করবেন কোথা থেকে

কম খরচে বিয়ের বাজার করবেন কোথা থেকে- cybersheba.com
বিয়ের বাজার করবার আগে সময় নিন, বাজার খতিয়ে দেখুন এবং পরিবার-আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তিসঙ্গত বাজেটে অনুষ্ঠান পরিচালনা করুন।

কম খরচে বিয়ের বাজার করার জন্য আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে। বাংলাদেশে সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠান অন্যতম বড় ও গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। তবে বর্তমান সময়ের অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির কারণে বিয়ের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ধনী থেকে নিম্নবিত্ত, সবাইই এখন খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ীভাবে বিয়ের বাজার চালানোর উপায় খুঁজছেন।

বিশেষ করে শীত মৌসুমে বিয়ের সিজন হওয়ায় বাজার একটু চড়া হলেও সঠিক পরিকল্পনা ও কেনাকাটার মাধ্যমে কম খরচে সুন্দর একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব। আজকের পোস্টে কম খরচে বিয়ের বাজার করবেন কোথা থেকে সেই ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।

বিয়ের বাজেট নির্ধারণ

বিয়ের পরিকল্পনার শুরুতেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো একটি সঠিক এবং বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করা। বাজেট না থাকলে বিয়ের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত খরচের ফলে মানসিক চাপও বেড়ে যায়।

সাধারণত, বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিয়ের বাজেট ১ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে এটি পরিবারিক অবস্থান, অতিথি সংখ্যা ও অনুষ্ঠান আয়োজনের ধরণের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

বাজেট তৈরির সময় যা করণীয়ঃ 

  • প্রাথমিক মূল্যায়নঃ বিয়ের জন্য মোট কত টাকা খরচ করা যাবে তা প্রথমেই স্থির করুন। এই পরিমাণ আপনার সামর্থ্যের মধ্যে থাকা উচিত।
  • বিভাগভিত্তিক বরাদ্দঃ বিয়ের মূল খরচগুলি হলো গহনা, পোশাক, সাজসজ্জা, খাবার, ভেন্যু (হল বা অন্যান্য স্থান), ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি। প্রতিটি খাতের জন্য আলাদা আলাদা বাজেট বরাদ্দ করুন। যেমন, খাবারের জন্য মোট বাজেটের ৩০%, ভেন্যুর জন্য ২০%, গহনার জন্য ১৫% ইত্যাদি।
  • অগ্রাধিকার নির্ধারণঃ কোন খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে চান এবং কোন খাতে কিছুটা সাশ্রয় করতে পারেন তা স্পষ্ট করুন। যেমন, যদি ভেন্যু ভাড়া বেশি হয়, তবে সাজসজ্জা বা ফটোগ্রাফির জন্য কিছুটা কম বরাদ্দ দিতে পারেন।
  • খরচের খুঁটিনাটি হিসাবঃ প্রতিটি খাতের সম্ভাব্য খরচ বিস্তারিতভাবে লিখে নিন। এর মাধ্যমে বাজেট থেকে কোথায় কোথায় কত টাকা খরচ হবে তা পরিষ্কার হবে।

বাজেট ঠিক করার সময় বিশেষ সতর্কতাঃ 

  • যেখানে বেশি খরচ কমানো সম্ভব — যেমন ভেন্যুর ভাড়া, সাজসজ্জা ও খাওয়া-দাওয়ার খরচ — সেখানে যুক্তিসঙ্গত পরিকল্পনা করে সাশ্রয় করুন।
  • অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করা থেকে বিরত থাকুন।
  • পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের পরামর্শ নিন এবং তাদের সহযোগিতা গ্রহণ করুন।
  • অনেক জিনিস কেনার পরিবর্তে ভাড়া নিতে পারেন, যেমন শেরওয়ানি।

একটি সুসংগঠিত বাজেট তৈরি করলে আপনি আপনার বিয়ের অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে এবং চাপমুক্তভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। বাজেট পরিকল্পনা বিয়ের সফলতার জন্য প্রথম ও সবচেয়ে বড় ধাপ।

বাজেট ঠিক করার সময় মনে রাখতে হবে, যেখানে বেশি খরচ কমানো সম্ভব সেখানে সেটি করবেন, যেমন ভেন্যু, সাজসজ্জা ও খাওয়া-দাওয়ার খরচ।

স্বর্ণ ও গহনার কেনাকাটা

বিয়ের বাজারে স্বর্ণের দাম হলো সবচেয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার কাছাকাছি, যা সময়ের সঙ্গে ওঠানামা করতে থাকে। স্বর্ণের দাম ছাড়াও গহনার মজুরি এবং ডিজাইন অতিরিক্ত মূল্য বাড়ায়, যা অনেক সময় বাজেটের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু কীভাবে কম দামে ভালো মানের গহনা কিনবেন?

পুরান ঢাকা, বিশেষ করে তাঁতিবাজার স্বর্ণ ও গহনার কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত একটি স্থান। এখানে বিভিন্ন ক্যারেটের স্বর্ণ পাওয়া যায় এবং ডিজাইনের বিচিত্র অপশন পাওয়া যায় যা আপনার বাজেটের সঙ্গে মানানসই হতে পারে।

তাঁতিবাজারের বিশেষত্ব হলো এখানে আপনি সরাসরি দোকানিদের সঙ্গে দর কষাকষি করে মজুরি কমিয়ে নিতে পারেন। যদিও মজুরি কিছুটা বেশি হতে পারে, সঠিক কৌশল ও দরদাম করলে বাজেটমতো সুন্দর ডিজাইনের গহনা পাওয়া সম্ভব।

সাশ্রয় করার জন্য কিছু টিপসঃ

  • অতিরিক্ত গহনা বা খুব বেশি মূল্যবান গহনা কেনার থেকে বিরত থাকুন, যা বিয়ের বাজারে অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • গহনার ডিজাইনে বেশি ফাঁকা জায়গা বা কম মজুরির ডিজাইন বেছে নিন, এতে দাম কিছুটা কমে যায়।
  • কিছু ক্ষেত্রে সস্তা কপিরাইট বা নকল গহনা বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা দেখতে অনেকটা আসল গহনার মতোই এবং বাজেট কমাতে অনেক সাহায্য করে। তবে সতর্ক থাকুন, যেখানে প্রয়োজন সেখানে মূল গহনা নেওয়াই ভালো।

অতএব, যদি আপনি সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের গহনা কিনতে চান, তাহলে তাঁতিবাজারসহ পুরান ঢাকার অন্যান্য বাজারে যাবার পরিকল্পনা করুন এবং দরকষাকষির মাধ্যমে আপনার বাজেটের মধ্যে মানানসই গহনা সংগ্রহ করুন। এইভাবে আপনি বিয়ের বাজারে গহনার খরচ অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন।

কম খরচে বিয়ের বাজার পোশাক ও সাজসজ্জার খরচ

বিয়েতে কনের শাড়ি, লেহেঙ্গা এবং বর-কনের সাজসজ্জার খরচ সাধারণত অনেক বেশি হয়। বিশেষ করে বেনারসির শাড়ির দাম বর্তমানে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। এছাড়া কাতানের শাড়িও বেশ জনপ্রিয় হলেও, এর দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সব সময় সবার জন্য সাশ্রয়ী হয় না।

সাশ্রয়ী পোশাক কেনার জন্য ঢাকার মিরপুর, কলাবাগান, বিভিন্ন শপিং মল ও সস্তা বাজারগুলোতে খোঁজ নেওয়া যেতে পারে। এসব স্থানে নানা রকম ডিজাইনের শাড়ি ও লেহেঙ্গা ভালো দামে পাওয়া যায়। তাছাড়া, বর্তমানে অনলাইন শপিং সাইটগুলোতেও নিয়মিত ছাড় পাওয়া যায়, যা বাজেটমতো পোশাক কেনার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

সাজসজ্জার খরচ কমানোর জন্য ফ্লোরাল বা বুটিক ধরনের ব্যয়বহুল ডেকোরেশনের পরিবর্তে সহজ, সরল এবং নৈসর্গিক ডেকোরেশন বেছে নেওয়া যেতে পারে। যদি বিয়ের অনুষ্ঠান নিজ বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় করা হয়, তাহলে ভেন্যুর খরচ এবং ডেকোরেশনের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এই ধরনের পরিবেশে সামান্য কিন্তু প্রাঞ্জল সাজসজ্জার মাধ্যমে সুন্দর একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব।

বিয়ের ভেন্যু ও কনভেনশন হল

যৌতুক ছাড়া বিয়ে - কম খরচে বিয়ের বাজার করবেন কোথা থেকে- cybersheba.com

বিয়ের সবচেয়ে বড় খরচের মধ্যে একটি হলো ভেন্যু বা কনভেনশন হল ভাড়া। জনপ্রিয় ও বিলাসবহুল কনভেনশন হলে ভাড়া অনেক বেশি হতে পারে, যা অনেক সময় বাজেটের বাইরে চলে যায়। তাই কম খরচে মানসম্মত ভেন্যু নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যেমন মিরপুর, কালিন্দি, গুলশান, ও উত্তরা এলাকায় মাঝারি মানের কম খরচের কনভেনশন হল পাওয়া যায়, যা বাজেট অনুযায়ী ভাড়া করা যেতে পারে। এছাড়া, গ্রামে বা শহরতলীর এলাকায় স্থানীয় গৃহসজ্জা বা ক্লাবের হলও সাশ্রয়ী বিকল্প হতে পারে।

স্বল্প বাজেটে ভেন্যু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে: ভেন্যুর পরিসর, অতিথি ধারণ ক্ষমতা, পার্কিং সুবিধা এবং স্থানের পরিবেশ। নিজ বাড়ির ছাদ বা বারান্দা থাকলে সেখানে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করাও খরচ কমাতে সহায়ক। এতে ভেন্যুর ভাড়া, পরিবহন ও সাজসজ্জার খরচ অনেকাংশে বাঁচানো যায়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা স্থানীয় বিজ্ঞাপন থেকে কম খরচের ভাল মানের ভেন্যু খুঁজে বের করা সম্ভব। আগে থেকে বুকিং দিলে ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়, যা বাজেটের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা

বিয়ের খাবারের খরচ বর্তমানে অনেকটাই বেড়ে গেছে, বিশেষ করে মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণে। ব্রয়লার মুরগি, সোনালি মুরগি, খাসি ও গরুর মাংসের দাম বর্তমানে বেশ উচ্চমূলে রয়েছে। পাশাপাশি চাল, পেঁয়াজ, রসুন এবং আদার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট খাবারের বাজেটকে প্রভাবিত করছে।

তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং মেনু নির্বাচন করে কম খরচে খাওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব। অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত খাবার বর্জন করে শুধু প্রয়োজনীয় ও জনপ্রিয় আইটেমগুলো রাখা যেতে পারে। এতে খরচ কমানোর পাশাপাশি অতিথিদের সন্তুষ্টিও নিশ্চিত করা যায়।

কম খরচে খাবার পরিবেশনের জন্য স্থানীয় ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে কোয়ালিটি যাচাই করে সেবা নেওয়া উচিত। খাবারের স্বাদ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া নিজের বাড়িতে বা কম খরচের ভেন্যুতে রান্নার ব্যবস্থা করলে খরচ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

সবশেষে, খাবারের পরিমাণ ও পরিবেশনের পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব অনুষ্ঠানও করা সম্ভব।

ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি

বর্তমান প্রজন্মের বিয়ে মানেই ভালো ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি। তবে এই খরচ অনেক সময় বাড়িয়ে দেয় পুরো বাজেট। ভালো মানের ফটোগ্রাফির জন্য ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

কম বাজেটে ছবি তুলতে চাইলে স্থানীয় দক্ষ ফটোগ্রাফারদের সঙ্গে কথা বলে প্যাকেজ নেয়া যায়। এছাড়া বন্ধু-বান্ধবদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

সাশ্রয়ী দামে কেনাকাটার স্থান

বাজার ঘুরে দেখলে পাওয়া যায় অনেক সাশ্রয়ী দামে জিনিসপত্র। পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার গহনার জন্য পরিচিত। মিরপুর বেনারসি পল্লী বা কলাবাগানের মার্কেট থেকে পোশাক ও সাজসজ্জার সস্তা বিকল্প পাওয়া যায়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন দারাজ, বিক্রি, পেইডশপ থেকে ছাড় পাওয়া সম্ভব। সঠিক সময়ে কেনাকাটা করলে অনেক টাকা বাঁচানো যায়।

টাকা জোগানোর উপায় ও বাজেট ম্যানেজমেন্ট

বিয়ের খরচ জোগানোর জন্য অনেকেই আত্মীয়-স্বজন থেকে ঋণ নেন। এছাড়া সঞ্চয় পরিকল্পনা করে আগেভাগেই টাকা জমিয়ে রাখা জরুরি।

দিনমজুর বা নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য শহরে এসে হকারি কিংবা অস্থায়ী কাজ করে বিয়ের খরচ জোগানোর ঘটনা সাধারণ। ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে সঠিক বাজেট মেনে চলা উচিত।

বিয়ের বাজার বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক পরিকল্পনা ও সাশ্রয়ী কেনাকাটার মাধ্যমে কম খরচে সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব। বাজারের ওঠানামা বুঝে আগে থেকে বাজেট ঠিক করে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে হবে।

পরিকল্পিত ভাবে শপিং করলে, নিজ বাড়ি বা কম খরচের ভেন্যু বেছে নিলে, হাতের গহনা ও পোশাক সীমিত পরিমাণে নিলে এবং ফটোগ্রাফি-ভিডিওগ্রাফি সহ অন্যান্য খাতে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নিলে সহজেই কম বাজেটে বিয়ের বাজার চালানো সম্ভব।

সুতরাং, বিয়ের বাজার করবার আগে সময় নিন, বাজার খতিয়ে দেখুন এবং পরিবার-আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তিসঙ্গত বাজেটে অনুষ্ঠান পরিচালনা করুন।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/