এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার লাইসেন্স করার জন্য যথাক্রমে আইআরসি এবং ইআরসি’তে আবেদন করতে হয়। আবেদন করার পর সাধারণতঃ ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে লাইসেন্স পাওয়া যায়। লাইসেন্সের ফি, আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে আজকের পোষ্ট আলোচনা।
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা বা আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স হল একটি ব্যবসায়িক অনুমোদন পত্র যা সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়। এই লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বৈধভাবে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে এবং দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হন।
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা আইআরসি (ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) এবং ইআরসি (এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) এই দুইটি লাইসেন্স এর আওতায় আসে, যা আমদানি ও রপ্তানি উভয়ের জন্য প্রয়োজনীয়।
Table of Contents
- এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স কি?
- এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্সের গুরুত্ব
- লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- আইআরসি (ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) নিবন্ধন প্রক্রিয়া
- ইআরসি (এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) নিবন্ধন প্রক্রিয়া
- লাইসেন্সের ফি এবং সময়সীমা
- ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি
- সাধারণ ভুল এবং এড়ানোর উপায়
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসায় লাইসেন্সের গুরুত্ব
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা চালাতে গেলে লাইসেন্স অপরিহার্য। এটির মাধ্যমে সরকার ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং শুল্ক নিয়ম নিয়ন্ত্রণ করে। লাইসেন্স ছাড়া আমদানি বা রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ, যা ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি আইনি জটিলতায় পড়তে পারে।
লাইসেন্সের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার জন্য লাইসেন্সেরআবেদন করতে হলে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীকে তার নাম, ঠিকানা, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হবে। আইআরসি এবং ইআরসি উভয়ের জন্য আলাদা আলাদা ফরম রয়েছে, যেগুলো পূরণ করে অনলাইনে জমা দিতে হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে বেশ কয়েকটি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাগজপত্র হলঃ
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- পাসপোর্ট এবং ওয়ার্ক পারমিট (যদি প্রযোজ্য হয়)
- ট্রেড লাইসেন্স
- টিআইএন সার্টিফিকেট
- ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট
- সংশ্লিষ্ট চেম্বারের সদস্যপদ সনদপত্র
আইআরসি (ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) নিবন্ধন প্রক্রিয়া
আইআরসি বা ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে হলে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীর ট্রেড লাইসেন্স এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অনুলিপি আপলোড করতে হয়। এছাড়া, প্রয়োজনীয় ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হয়। আবেদন সম্পন্ন করার পর, প্রায় ৩ দিনের মধ্যে আইআরসি প্রদান করা হয়।
ইআরসি (এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) নিবন্ধন প্রক্রিয়া
ইআরসি বা এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট পেতে হলে, প্রয়োজনীয় ফরম পূরণ করতে হয়। এই ফরমে আপনার ব্যবসায়িক তথ্য, কোম্পানির বিবরণ এবং ব্যাংক সলভেন্সি তথ্য প্রদান করতে হবে। সবকিছু সঠিকভাবে পূরণ ও জমা দিলে, প্রায় ৩ দিনের মধ্যে ইআরসি প্রদান করা হয়।
লাইসেন্সের ফি এবং সময়সীমা
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্সের জন্য নির্দিষ্ট ফি নির্ধারিত আছে। সাধারণত, আইআরসি ও ইআরসি উভয়ের জন্য আলাদা ফি নির্ধারিত থাকে, যা আবেদনকারীর ব্যবসার ধরন ও আকারের উপর নির্ভর করে। ফি জমা দেওয়ার পর সাধারণত ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
আমদানির নিবন্ধন ফি
ক্রমিক | আমদানি সীমা | নিবন্ধন ফি |
---|---|---|
১ | ৫,০০,০০০/- পর্যন্ত | ৫,০০০/- |
২ | ৫,০০,০০১/- থেকে ২৫,০০,০০০/- পর্যন্ত | ১০,০০০/- |
৩ | ২৫,০০,০০১/- থেকে ৫০,০০,০০০/- পর্যন্ত | ২৪,০০০/- |
৪ | ৫০,০০,০০১/- থেকে ১,০০,০০,০০০/- পর্যন্ত | ৪০,০০০/- |
৫ | ১,০০,০০,০০১/- থেকে ৫,০০,০০,০০০/- পর্যন্ত | ৫০,০০০/- |
৬ | ৫,০০,০০,০০১/- থেকে ২০,০০,০০,০০০/- পর্যন্ত | ৬০,০০০/- |
৭ | ২০,০০,০০,০০১/- থেকে ৫০,০০,০০,০০০/- পর্যন্ত | ৭০,০০০/- |
৮ | ৫০,০০,০০,০০১/- থেকে ১০০,০০,০০,০০০/- পর্যন্ত | ৮০,০০০/- |
রপ্তানির নিবন্ধন ফি
ক্রমিক | বিভিন্ন ধরনের রপ্তানি সনদ | নিবন্ধন ফি |
---|---|---|
১ | রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ই আর সি) | ১০,০০০/- |
২ | রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইনভেন্টিং সার্ভিস) | ৫০,০০০/- |
৩ | বহুজাতিক রপ্তানি নিবন্ধন | ১০,০০০/- |
ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি
বর্তমানে আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্সের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদন করা সম্ভব। আবেদনকারীকে প্রথমে একটি অনলাইন একাউন্ট খুলতে হবে। এরপর, নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হয়। অনলাইনে ফি জমা দেওয়ার সুবিধাও রয়েছে, যা প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করে তুলেছে।
আমদানি ও রপ্তানি নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত সরকারী একটা গাইড লাইন আছে, এই লিংকের মাধ্যমে সেটা দেখা যাবে।
সাধারণ ভুল এবং এড়ানোর উপায়
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়ায় সাধারণ কিছু ভুল প্রায়ই দেখা যায়। যেমন, ভুল তথ্য প্রদান, অপর্যাপ্ত ডকুমেন্ট জমা, এবং ফি জমা না দেওয়া। এসব ভুল থেকে এড়াতে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা এবং ফি সঠিকভাবে জমা দেওয়া জরুরি।
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার লাইসেন্স সম্পর্কিত সচরাচর জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার লাইসেন্স করতে সময় কতদিন লাগে?
উত্তরঃ সকল কাগজ-পত্র ঠিক থাকলে ৭ কার্যদিবস।
প্রশ্নঃ Membership Certificate কি?
উত্তরঃ চেম্বার অফ কমার্স, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত এসোসিয়েশন এর মেম্বারশীপের সনদ। এক্ষেত্রে যে কোন এসোসিয়েশনের মেম্বার হলে আপনি যেকোনো পণ্য আমদানী বা রপ্তানি করতে পারবেন। যেমনঃ আপনি প্লাস্টিক এসোসিয়েশনের মেম্বারশীপ নিয়েছেন এবং এটা দিয়ে আমদানী বা রপ্তানি লাইসেন্স করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে চাইলে আপনি প্লাস্টিক পণ্যের পাশাপাশি ইলেকট্রিক পণ্যও বা অনুমোদিত যে কোন পণ্য আনতে পারবেন।
প্রশ্নঃ Membership Certificate নিতে খরচ কত?
উত্তরঃ Membership Certificate নিতে খরচ নির্দিষ্ট নেই। চেম্বার অফ কমার্স বা এসোসিয়েশন সমূহের নিবন্ধন খরচ তাদের নিজস্বভাবে নির্ধারিত, যেমনঃ ইলেকট্রিক এসোসিয়েশনের মেম্বারশীপ ১০০০০/- টাকা, সময় লাগে প্রায় ১ মাস। আবার SME এর মেম্বারশীপ নিতে ৫০০০/- টাকা খরচ হয়, সময় লাগে একদিন মাত্র।
প্রশ্নঃ ইমপোর্ট লাইসেন্স কত প্রকার?
উত্তরঃ সাধারণভাবে ইমপোর্ট লাইসেন্স ৩ প্রকার (১) বাণিজ্যিক (২) শিল্প এবং (৩) বহুজাতিক
- (১) বাণিজ্যিক IRC: আমরা সাধারণত যে লাইসেন্সে পণ্য আমদানি করি তা বাণিজ্যিক IRC।
- (২) শিল্প IRC: শিল্প IRC হচ্ছে তাদের জন্য যাদের ফ্যাক্টরি সেটআপ আছে এবং ক্যাপিটাল মেশিনারি আনতে হয়। এক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কম হয়। তবে শিল্প IRC বিনিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ প্রয়োজন হয় এবং এটা একটি জটিল প্রক্রিয়া।
- (৩) বহুজাতিক IRC: যদি কোন কোম্পানিতে কোন শেয়ার হোল্ডার বিদেশী থাকে তাহলে বহুজাতিক IRC এর জন্য আবেদন করতে হয়।
প্রশ্নঃ লাইসেন্স নবায়ন করতে না পারলে কি হবে?
উত্তরঃ জরিমানা দিয়ে লাইসেন্স যে কোন সময় নবায়ন করা যাবে। জরিমানার হারঃ ১ম বছর ৫০০/-, ২য় বছর ১০০০/- তিন বছরের ঊর্ধ্বে ২০০০/- (এক্সপোর্ট তিন বছরের ঊর্ধ্বে ১৫০০/-)। এই জরিমানার উপর আবার ১৫% ভ্যাট জমা দিতে হবে।
প্রশ্নঃ ইমপোর্ট লাইসেন্স দিয়ে কি পন্য রপ্তানি করা যাবে?
উত্তরঃ না। ইমপোর্ট লাইসেন্স দিয়ে শুধু পন্য আমদানি করা যাবে। ঠিক একইভাবে এক্সপোর্ট লাইসেন্স দিয়ে শুধু পন্য রপ্তানি করা যাবে। তাই পন্য আমদানি বা রপ্তানি করার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে Export-Import License নিতে হবে।
পুরো পোষ্ট পড়ার পর আশাকরি এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার লাইসেন্স কিভাবে করবেন সে ব্যাপারে আপনাদের একটা ভাল ধারণা এসেছে। এরকম আরো তথ্য বহুল পোষ্ট পড়ার জন্য আমাদের সাইটের অন্যান্য পোষ্টগুলাও পড়ে দেখতে পারেন।
জেনে রাখুন, সাইবার সেবা সর্বদা সঠিক, নির্ভুল ও ভেরিফাইড তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই সাইবার সেবা’র পোষ্ট নিজে পড়ুন ও প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন।
2 Responses
আসসালামু আলাইকুম।
আলী হায়দার ভাই,
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর লাইসেন্স কি প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়?
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
হ্যাঁ, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট (রপ্তানি-আমদানি) লাইসেন্স বা ট্রেড লাইসেন্স সাধারণত প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। বাংলাদেশে, এই লাইসেন্সের নবায়ন বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন না করলে অতিরিক্ত ফি বা জরিমানা দিতে হতে পারে।