প্রাথমিক উপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ হল ছাত্র-ছাত্রীর তথ্য ভুল দেওয়া। বর্তমানে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা প্রদান চলমান রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিক ক্লাসের ছেলেমেয়েদের প্রতি মাসে ৭৫ টাকা করে এবং প্রথম থেকে পঞ্চম ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক ১৫০ টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। এই অর্থ বাংলাদেশ সরকার আইবাসের (IBAS)-এর মাধ্যমে ছ’মাস অন্তর একবারে বিতরণ করে। প্রত্যেক অভিভাবক নিজের মোবাইলের নগদ একাউন্ট থেকে এই উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারেন। উপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ হল ভুল মোবাইল নাম্বার বা ছাত্র-ছাত্রী্দের ব্যাপারে ভুল ইনফরমেশন দেওয়া।
প্রতিবার উপবৃত্তির টাকা বিতরণের পরে দেখা যায় যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা কিছু সমস্যায় পড়েন। অনেক অভিভাবক স্কুলে এসে তাদের সন্তানের উপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ জানতে চান ও এ ব্যাপারে অভিযোগ জানান। প্রধান শিক্ষক তার স্মার্টফোন অথবা ল্যাপটপ ব্যবহার করে এই সমস্যার সমাধান সহজেই বের করতে পারেন। আজকের এই ব্লগপোস্টে আপনাদের দেখানো হবে কীভাবে দ্রুত প্রাথমিক উপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ আবিষ্কার করা যায়। আসুন জেনে নিই সেই পদ্ধতিটি।
প্রাথমিক উপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ
উপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ জানতে প্রথমে আপনার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করুন। তারপর মজিলা ফায়ারফক্স, গুগল ক্রোম, অথবা আপনার পছন্দনীয় যেকোন ব্রাউজার খুলুন এবং এড্রেস বারে pesp.finance.gov.bd ঠিকানাটি টাইপ করে এন্টার প্রেস করুন। আপনি চাইলে সরাসরি এই লিংক থেকেও সরকারি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন। লগইন করার জন্য আপনার ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড, এবং ক্যাপচা পূরণ করুন (এই ক্ষেত্রে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিজের আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন)। সাইটে আসলে এরকম একটি ইন্টারফেইস দেখতে পাবেন।
উপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ অনুসন্ধান করার জন্য এবার বাম পাশে ড্যাশবোর্ডের নিচে রিপোর্ট অপশনে ক্লিক করুন এবং ড্রপডাউন মেনু থেকে পে-রোল রিপোর্ট এ ক্লিক করুন। পেইজটি দেখতে এরকম হবে।
এবার রিপোর্টের নাম অপশনে ক্লিক করে ড্রপডাউন মেনু থেকে পেমেন্ট বিস্তারিত প্রতিবেদনটি সিলেক্ট করুন। এরপর অর্থবছরে ক্লিক করে ড্রপডাউন মেনু থেকে অর্থবছর সিলেক্ট করুন। পেমেন্ট চক্র এ ক্লিক করে নির্দিষ্ট সময় সিলেক্ট করুন অর্থাৎ কোন মাস থেকে কোন মাস পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে । এবার প্রতিবেদন তৈরি করুন অপশনটিতে ক্লিক করুন। আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনে একটি প্রতিবেদন আকারে আপনার স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির বিষয়ক বিস্তারিত ডাটা দেখানো হবে।
প্রতিবেদনটি মোবাইলে/কম্পিউটারে সেভ করতে চাইলে উপরের ডান পাশে সেভ অপশনে ক্লিক করুন। সরাসরি প্রিন্ট করতে চাইলে প্রিন্ট অপশনে ক্লিক করুন।
পে-রোল-এর বিস্তারিত প্রতিবেদনে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ডান পাশে পেমেন্ট স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন। গৃহীত লেখা থাকলে ঐ শিক্ষার্থীর অনুকূলে যে মোবাইল নাম্বারটি দেওয়া আছে সেই নাম্বারের নগদ একাউন্টে টাকা জমা হয়েছে অথবা উত্তোলন করা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। এভাবে আপনি উপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ অনুসন্ধান করতে পারবেন।
প্রথমিক উপবৃত্তি বিষয়ক কয়েকটি প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ নগদ একাউন্ট কী স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে?
উত্তরঃ না, অবশ্যই নগদ একাউন্ট খুলতে হবে।
প্রশ্নঃ যাদের নগদ একাউন্ট আছে এখন কী শুধু তাদের চাহিদা প্রেরণ করবো?
উত্তরঃ না, সকল শিক্ষার্থীর চাহিদা প্রেরণ করতে হবে। সকল অভিভাবকের নম্বরে নগদ একাউন্ট খুলতে হবে।
প্রশ্নঃ স্কুলে দেওয়া বিকাশ/রকেট/অন্য একাউন্ট। অভিভাবকের এনআইডি দিয়ে অন্য নম্বরে নগদ খুলেছে। এখন কী করবে?
উত্তরঃ অন্য নম্বরে খোলা নগদ একাউন্ট বন্ধ করে স্কুলে দেওয়া নম্বরে নগদ একাউন্ট খুলতে হবে।
প্রশ্নঃ চাহিদা প্রেরণ করে পরে একাউন্ট খোলা যাবে কী?
উত্তরঃ যাবে, তবে এক্ষেত্রে নগদ ছাড়া অন্য একাউন্টগুলোতে টাকা ঢুকবে না। বাউন্স ব্যাক হবে। তাই দ্রুত অভিভাবকদের দেয়া মোবাইল একাউন্টগুলো নগদ করতে হবে।
প্রশ্নঃ মোবাইল নম্বর সংশোধন বা পরিবর্তন করা যাবে কী?
উত্তরঃ সকল সমস্যার সমাধান হবে। তবে আগে যেভাবে নির্দেশনা আসে সেভাবে কাজ করতে হবে। তারপর পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
প্রশ্নঃ শিক্ষার্থীর যে শ্রেণিতে থাকার কথা তা না দেখিয়ে পোর্টালে অন্য শ্রেণি দেখাচ্ছে। করণীয় কী?
উত্তরঃ যখন এডিট অপশন যুক্ত করবে তখন হালনাগাদ করতে হবে।
প্রশ্নঃ কোন কোন শিক্ষার্থীর টাকা বাউন্স ব্যাক বা ফেরত গেছে তা কিভাবে দেখবো?
উত্তরঃ পোর্টালে ডিসবার্সমেন্ট সিট/পেমেন্ট হিস্টোরি/পে-রোল রিপোর্ট যুক্ত হলে সব দেখতে পাবেন।
প্রশ্নঃ আইডি পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করণীয় কী?
উত্তরঃ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের হোয়াটসআপ গ্রুপের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিভাগে যোগাযোগ করে সমাধান করতে হবে।
প্রশ্নঃ অনেক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। আবার অনেকে অবসরে গেছেন। তাহলে কী নতুন করে আইডি পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে?
উত্তরঃ আগামী অর্থবছর আইডি পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হবে। তাই এবছর পুরাতন আইডি পাসওয়ার্ড দিয়েই কাজ করতে হবে।
প্রশ্নঃ পেমেন্ট হিস্টোরি কী ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করা যাবে?
উত্তরঃ পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা যাবে।
প্রশ্নঃ নগদ একাউন্টের ক্ষেত্রে কোন ম্যাসেজ আসে না কেনো?
উত্তরঃ এবার ডিপিও, ইউইইও, এইউইইও স্যারদের মোবাইলে ম্যাসেজ যাবে। উনারা প্রতিটি স্কুলে জানিয়ে দেবেন।
প্রশ্নঃ সকল শিক্ষার্থীর টাকা একসাথে আসে না কেনো?
উত্তরঃ এবার জেলা/উপজেলা ভিত্তিক সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলার সকল শিক্ষার্থীদের টাকা একসাথে প্রেরণ করা হবে।
প্রশ্নঃ নগদের হেল্প লাইন থেকে একাউন্টের পিন রিসেটসহ যেকোনো সেবা পেতে বেগ পেতে হয় কেন?
উত্তরঃ নগদের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সেবা সহজীকরণ করার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক ক্যাম্পেইন করবে নগদ কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্নঃ ট্রান্সফার গ্রহণ হয় না কেন?
উত্তরঃ আপাতত ট্রান্সফার অপশন বন্ধ আছে। প্রয়োজনে এ অপশন আবার চালু হবে।
পরিশেষ বলা যায় যে, সঠিক তথ্য প্রদানকৃত কোনো শিক্ষার্থী উপবৃত্তির থেকে বঞ্চিত হবে না। সকল সমস্যার সমাধান করেই তবে অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে।
সতর্কতাঃ সাধারণত মোবাইল নাম্বার ভুলের কারণে উপবৃত্তির টাকা অভিভাবকের নিকট পৌঁছায় না, ভুল মোবাইল নাম্বারউপবৃত্তির টাকা না আসার কারণ। এছাড়া কিছু কিছু অভিভাবক অহেতুক কারণে মোবাইলের সিম পরিবর্তন করেন। যার কারনে তাদের স্মরণ থাকেনা কোন সিমে নগদ একাউন্ট খোলা আছে। প্রাথমিক উপবৃত্তির টাকা সঠিকভাবে পেতে হলে ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবককে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং যৌথ কার্ডের ক্ষেত্রে একই মোবাইল নং ব্যবহার করতে হবে।