ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করা খুবই প্রয়োজনীয়। আমাদের বিভিন্ন কারণে ই-পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়। যেমন – অনলাইন নিজের আইডেন্টিটি, বিদেশে যাওয়া, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং অনলাইন পেমেন্ট ইত্যাদি করার ক্ষেত্রে। কিন্ত মাঝে মাঝে আমাদের অজান্তেই কিছু ভুল হয়ে যায় যেমন – নিজের নাম, বয়স, ঠিকানা বা পিতামাতার নামে বানানের মত ভুল। এতে পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হয়। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা জানবো কিভাবে দালাল ছাড়া এই সব ভুল ঠিক করা যায়।
কিভাবে ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করা যায়
ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করতে প্রথমে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট সহয়তা সার্ভিসের নিজেস্ব ওয়েব সাইটে চলে আসুন। এরপর উপরে English ও বাংলা ভাষার অপশন থেকে English সিলেক্ট করে নিন। অথবা চাইলে ভাষা বাংলাও রাখতে পারেন। তারপর নিচের দিকের প্রথম অপশন Apply Online for e‑Passport / Re‑Issue অপশনে ক্লিক করুন।
১ম ধাপেঃ আপনার জাতীয়তা অর্থাৎ কোন দেশ থেকে আপনি আবেদন করছেন, তারপর বিভাগ ও থানা নির্বাচন করুন এবং Continue বাটনে ক্লিক করুন।
২য় ধাপেঃ আপনার একটি একটিভ ইমেইল বা জিমেইল/ইমেইল এড্রেস দিয়ে I’m human ক্যাপচা ফিলআপ করে আবার Continue বাটনে ক্লিক করুন।
৩য় ধাপেঃ আপনার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য দিতে হবে যেমনঃ একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, Given name, surname ও একটি সচল মোবাইল নাম্বার। সব গুলো তথ্য দেওয়ার পর I am human ক্যাপচা সিলেক্ট করে Create account বাটনে ক্লিক করুন।
উল্লেখ্য যে ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করার জন্য আপনার NID তথ্যানুযায়ী উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলি অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এবং যদি কারো পাসপোর্টে নামের বানানে কোন ভুল থাকে, তবে Given Name এবং Surname অংশে সেই ভুল ঠিক করে সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। এর ফলে, সংশোধিত তথ্যগুলো সময় মতো সংশোধন হয়ে আপডেট হবে।
৪র্থ ধাপঃ এ পর্যায়ে আপনি যে ইমেইল বা জিমেইল প্রদান করেছেন, তা অ্যাক্টিভ করতে হবে। আপনার জিমেইল অ্যাক্টিভেশনের জন্য, জিমেইল অ্যাপের ইনবক্স বা স্প্যাম মেনু পরীক্ষা করুন। সেখানে ইমেইল ভ্যারিফিকেশনের জন্য একটি লিংক বা কোড পাঠানো হবে। লিংক পেলে, লিংকের উপর ক্লিক করে ইমেইল ভেরিফাই করতে পারবেন। এবং যদি কোড পাঠানো হয়, তবে সেই কোডটি কপি করে উক্ত ওয়েবসাইটে পেস্ট করুন, যা মোবাইলে আসা OTP কোডের অনুরূপ।
যাহোক, ই-মেইলটি একটিভ হওয়ার পর Sign In অপশনে ক্লিক করে আপনার জিমেইল ও পাসওয়ার্ডটি দিয়ে Sign In করে নিন। সবগুলো পদক্ষেপ সঠিকভাবে করা হলে ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করতে আপনার একাউন্টটি সফলভাবে তৈরি হয়ে যাবে। এখন আপনি Apply for a new passport অপশন দেখতে পাবেন। এখন অনেকে মনে করবেন এ আপনার তো ইতোমধ্যে একটি পাসপোর্ট রয়েছে, তাহলে নতুন করে আবার পাসপোর্ট তৈরি করার কি দরকার?
তাদের জেনে রাখা উচিত যে, আপনি যদি কোন তথ্য সংশোধন করেন তখন আপনাকে নতুন একটি সংশোধনীয় পাসপোর্ট দেওয়া হবে। তাই Apply for a new passport অপশনে ক্লিক করে আপনার কার্যক্রম চালিয়ে যান।
৫ম ধাপঃ ই-পাসপোর্ট ভুল সংশোধনের এই ধাপে আপনার সামনে পাসপোর্টের ধরণ নির্বাচণ করতে হবে যেমনঃ
- Ordinary passport
- Official passport
জেনে রাখুন, আপনি যদি সরকারি একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পাসপোর্টের ধরণ হবে অফিসিয়াল। আর আপনি যদি একজন সাধারণ নাগরিক বা কর্মচারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পাসপোর্টের ধরণ হবে অর্ডিনারি পাসপোর্ট। তারপর Save and continue বাটনে ক্লিক করুন।
৬ষ্ঠ ধাপঃ এ পর্যায়ে আপনাকে আরোও কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে যেমন ধরুনঃ
- লিঙ্গ
- পেশা
- ধর্ম
- কান্ট্রি কোড
- মোবাইল নাম্বার
- বিভাগ
- জন্ম সাল (NID অনুযায়ী) ও
- নাগরিকত্বের ধরণ
কারো যদি বয়সে সমস্যা থাকে এবং সেটি সংশোধন করতে চান তাহলে এখানে সঠিক তথ্যটি বসিয়ে নিন। সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে বসানো হলে Save and continue বাটনে ক্লিক করুন।
৭ম ধাপেঃ আপনার স্থানীয় ও বর্তমান ঠিকানা নির্বাচন করুন। যে সকল তথ্য দিতে হবে তা হলঃ
- বিভাগ
- জেলা
- থানা
- রাস্তা বা সড়ক নাম্বার (Optional)
- গ্রাম
- পোস্ট অফিস ও
- পোস্টাল কোড ইত্যাদি
সব গুলো তথ্য দিয়ে আবারও Save and continue বাটনে ক্লিক করুন।
৮ম ধাপঃ ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধনের এই ধাপে আপনাকে ঠিক করতে হবে যে আপনি নতুন পাসপোর্টধারী নাকি পুরাতন। যেহেতু আমাদের কাছে পাসপোর্ট ইতিমধ্যে আছে এবং আমরা তথ্য সংশোধন করতে আগ্রহী, সে কারণে আমাদেরকে পাসপোর্টের ধরণ নির্বাচন করতে হবে। নতুন করে আবেদনের প্রয়োজন নেই। এখন তিন প্রকার Passport type আপনি দেখতে পাবেন।
- MRP passport
- ePP passport
- Don’t have any passport
এখন আপনার কাছে যে ধরণের পাসপোর্ট রয়েছে সেটি সিলেক্ট করুন। তারপর একটু নিচে থেকে আপনি কেন পাসপোর্ট রিকোয়েস্ট করবেন সেটি সিলেক্ট করুন। আপনি যেহেতু পাসপোর্ট সংশোধন করতে চাচ্ছেন সেই ক্ষেত্রে DATA CHANGE অপশনটি সিলেক্ট করুন। এরপর পাসপোর্ট নাম্বার, ইস্যু ডেট ও জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার দিয়ে Save and continue বাটনে ক্লিক করুন।
৯ম ধাপেঃ ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধনের এই ধাপে আপনার পিতা-মাতার নাম, পেশা ও ন্যাশনালিটি তথ্য দিন। যারা পাসপোর্টে পিতা-মাতার নাম সংশোধন করতে চাচ্ছেন তারা এই ধাপে NID অনুসারে সংশোধিত তথ্য দিয়ে Save and continue বাটনে ক্লিক করুন।
১০ম ধাপ: এই ধাপে আপনার বৈবাহিক স্ট্যাটাস দিতে হবে। অর্থাৎ আপনি অবিবাহিত হলে অবিবাহিত এবং বিবাহিত হলে আপনার স্ত্রীর তথ্য দিয়ে Save and continue বাটনে ক্লিক করুন।
১১ তম ধাপঃ জরুরি কান্টাক্ট ইনফরমেশন তথ্য। অর্থাৎ যেকোন প্রয়োজনে আপনি ছাড়াও অন্য কোন ব্যক্তির সাথে পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ করা যাবে। তার নাম, ঠিকানা ও নাম্বার দিন এবং তারপর Save and continue তে ক্লিক করুন।
১২ তম ধাপঃ ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন-এর এই ধাপে পাসপোর্ট অপশন সিলেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ আপনি কত বছরের জন্য কত পাতার পাসপোর্ট নিতে চাচ্ছেন সেটি বেছে নিন। তারপর পুনরায় Save and continue ক্লিক করুন।
১৩ তম ধাপঃ ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করার এই ধাপে আপনার পাসপোর্টের ডেলিভারি টাইম সিলেক্ট করুন। অর্থাৎ আপনি রেগুলার ডেলিভারি চাচ্ছেন নাকি ইর্মাজেন্সি ডেলিভারি সেটি বেছে নিন এবং নিচে থেকে সিডিউল টাইম অর্থাৎ আপনি কত তারিখে গিয়ে আপনার কাগজপত্র জমা দিবেন সেটি সিলেক্ট করুন এবং তারপর Save and continue বাটনে ক্লিক করুন।
১৪ তম ধাপঃ এই ধাপে আপনার দেওয়া সকল তথ্য আপনার সম্মুখে ওভারভিউ আকারে আরো একবার প্রদর্শিত হবে। সবগুলো তথ্য ভালো করে চেক করে নিন। যদি কোন তথ্য ভুল দেখেন তাহলে Edit অপশনে ক্লিক করে সেটি সংশোধন/পরিবর্তন করে নিন। আর সবগুলো তথ্য ঠিক থাকলে Confirm বাটনে ক্লিক করুন।
১৫ তম ধাপঃ ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করতে এই এখন আপনার পেমেন্ট হিস্টোরি ও গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন শো করবে। একটু নিচে গেলে আপনি দেখতে পারবেন কোন কোন ব্যাংক থেকে ই-পাসপোর্টের ফি পেমেন্ট করা যাবে। সবগুলো তথ্য রিভিউ করার পর Continue তে ক্লিক করুন।
Continue তে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার অ্যাপ্লিকেশনটি সঠিকভাবে সাবমিট হয়ে যাবে। এখন একটু নিচে থেকে আপনার print summary ও application from গুলো সেভ ও ডাউনলোড করে নিন। তারপর নিকটস্থ কম্পিউটার দোকান থেকে তথ্য দুটি প্রিন্ট করে নিন এবং যেই দিন আপনার শিডিউল টাইম নির্ধারণ করেছেন ঐ দিন এ দুটি ডকুমেন্ট সহ সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে নির্ধারিত সময়ে আপনার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে উপস্থিত হবেন।
পাসপোর্ট কার্যালয়ে যে যে ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবেঃ
- বর্তমান পাসপোর্ট
- NID Card
- ব্যাংক পেমেন্ট রশিদ
- Print summary
- application form
- অঙ্গীকারনামা
কিভাবে অঙ্গীকারনামা পাবেন?
মোবাইলের যেকোন ব্রাউজারে এসে সার্চ অপশনে লিখুন “পাসপোর্ট আবেদনের অঙ্গীকারনামা “এবং সার্চ করুন। অথবা এই ওয়েবসাইটে ঢুকে পাসপোর্টের আবেদনের অঙ্গীকারনামা অপশনে ক্লিক করে পিডিএফ কপিটি ডাউনলোড করে নিন। তারপর ফর্মটি প্রিন্ট করে সব তথ্য পূরণ করে। উপরিউক্ত বর্ণিত সকল কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জমা করুন। আপনার কাজ শেষ। কিছুদিনের মধ্যে নতুন পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।
ই-পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করার ব্যাপারে আর কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে অথবা সমস্যায় পড়লে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।
2 Responses
আমি ই-পাসপোর্ট করতে চাই।
অনুগ্রহ পূর্বক পোষ্টে বর্ণিত উপায়ে আবেদন করুন।