ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসা হল একটি ডিজিটাল ভিসা সিস্টেম যা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ইস্যু করা হয়। আপনি অনলাইনে আবেদন করে মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বা তারও কম সময়ে ইন্ডিয়ান ই-ভিসা পেতে পারেন।
ভারতের ই-মেডিকেল ভিসা বাংলাদেশের রোগীদের জন্য একটি সহজ, দ্রুত এবং ঝামেলা মুক্ত চিকিৎসা ভিসার ব্যবস্থা। এই ভিসার মাধ্যমে রোগীরা অনলাইনে আবেদন করে খুব কম সময়ের মধ্যে ভারত গমণের অনুমতি পেতে পারেন।
ই-মেডিকেল ভিসা হলো একটি ইলেকট্রনিক ভিসা, যা অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে ৭২ ঘণ্টারও কম সময়ে ইস্যু করা হয়। এর মাধ্যমে রোগীদের জন্য অপেক্ষার কষ্ট ও প্রক্রিয়ার জটিলতা অনেকটাই কমে এসেছে।
Table of Contents
ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসা কি
ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসা হলো একটি ইলেকট্রনিক ভিসা যা বিদেশিদের চিকিৎসার জন্য ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এটি একটি সহজলভ্য ও দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া, যা প্রচলিত ভিসা প্রক্রিয়ার তুলনায় অনেক সহজ ও সুবিধাজনক।
সঠিক কাগজপত্র থাকলে, ই-মেডিকেল ভিসার আবেদন করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবেদনকারীর ইমেইলে ই-ভিসা পাঠানো হয়। বর্তমানে ভারত ১৭৫ টিরও বেশি দেশের নাগরিকদের জন্য এই ই-ভিসা সেবা প্রদান করছে।
এই ই-মেডিকেল ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬০ দিন, তবে প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমে এটি আরও ৬ মাস বাড়ানো যেতে পারে।
ইন্ডিয়ান ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া পূর্বে অনলাইনে চালু থাকলেও, ই-ভিসার মাধ্যমে এখন এটি আরও সহজ এবং ঝামেলাবিহীন হয়েছে। ফলে কম সময়ের মধ্যেই ভিসা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে, যা চিকিৎসার জন্য ভারতে আসা রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।]
ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসার সুবিধা
ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসার অন্যতম বড় সুবিধা হলো এটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যায়, যা রোগীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। আরও কিছু সুবিধা নিচে দেওয়া হলঃ
সময় সাশ্রয়ঃ অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে, লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না। এতে করে আমাদের আর সময় সাশ্রয় হয়।
দ্রুত অনুমোদনঃ ই-ভিসা প্রক্রিয়ায় সাধারণত ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই ভিসা অনুমোদন করা হয়, যেখানে প্রচলিত ভিসা পেতে ৪৫ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
অর্থ সাশ্রয়ীঃ ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসার আবেদন ফি সাধারণত কম হয়। যেটা তুলনামূলক গরিব রোগীদের জন্য খুবই সহায়ক।
দীর্ঘমেয়াদীঃ এই ভিসার মেয়াদ ৬০ দিন পর্যন্ত থাকে, যা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সময় প্রদান করে। প্রয়োজনে এটি আরও ৬ মাস বাড়ানো যেতে পারে।
সহজ আবেদন প্রক্রিয়াঃ অনলাইন ব্যবহারকারীরা সহজেই ই-মেডিকেল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এটার জন্য কোন সাইবার ক্যাফে যেতে হয় না বা বা কোন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।
রোগী পরিচর্যাকারীর ভিসাঃ এই ভিসা প্রক্রিয়ায় রোগীর সঙ্গী বা পরিচর্যাকারীরাও ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ভিসা পেতে পারেন। যাতে করেতারা দ্রুত রোগীর কাছে পৌঁছে সেবা-যত্ন শুরু করে দিতে পারেন।
উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ এই ভিসা নিয়ে ভারতে আসা রোগীরা স্বনামধন্য ডাক্তারদের থেকে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন। ই-মেডিকেল ভিসা রোগীদের জন্য দ্রুত এবং সহজ উপায়ে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করে, যা অনেকের জীবনে স্বস্তি এনে দেয়।
ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসা পেতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ঃ
- পাসপোর্টঃ
- বৈধ পাসপোর্ট যা ভারতে প্রবেশের তারিখ থেকে অন্তত ছয় মাস মেয়াদ থাকবে।
- পাসপোর্ট বইতে অন্তত দুটি খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
- ছবিঃ
- সাম্প্রতিক সময়ে তোলা দুটি পাসপোর্ট আকারের ছবি।
- ছবিতে অবশ্যই সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে।
- আমন্ত্রণ পত্রঃ
- ভারতের যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন, সেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে পাঠানো আমন্ত্রণ পত্র।
- প্রেসক্রিপশন ও রিপোর্টঃ
- বাংলাদেশে যে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করেছেন তাদের সব প্রেসক্রিপশন এবং টেস্ট রিপোর্ট।
- এই কাগজগুলো নতুন থেকে পুরনো ক্রমানুসারে সাজিয়ে জমা দিতে হবে।
- আর্থিক প্রমাণঃ
- চিকিৎসার খরচ এবং ভারতে থাকার জন্য পর্যাপ্ত তহবিলের প্রমাণ।
- গত এক মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হতে পারে।
- ভারতীয় ভিসার জন্য সর্বনিম্ন ১৫০ ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করতে হবে। এই এন্ডোর্সমেন্ট অবশ্যই কোনো ব্যাংক থেকে করতে হবে; মানি এক্সচেঞ্জারের এন্ডোর্সমেন্ট গ্রহণযোগ্য নয়।
ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া
আপনি চাইলে আপনি নিজেই ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন, এজন্য নিজের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
ধাপ ১ঃ আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে প্রথমে ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসা অ্যাপ্লিকেশন পোর্টালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যাওয়ার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি এরকম একটি লুক দেখতে পাবেন। এখান থেকে Apply here for e-visa বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ২ঃ প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার পর নিচে দেখানো ইমেজের মত করে eMEDICAL VISA সিলেক্ট করুন, তারপর SHORT TERM MEDICAL TREATMENT OF SELF সিলেক্ট করুন, এরপর ক্যাপচা পূরণ করুন এবং ইন্সট্রাকশন চেক বক্সে টিক (☑️) দিয়ে Continue বাটনে ক্লিক করুন।
Continue বাটনে ক্লিক করার পর একটা পপ-আপে এরকম কিছু তথ্য দেখাবে, জাস্ট Ok বাটনে ক্লিক করে দিন।
Note: The following documents are required to be submitted
1) Applicant’s recent colored photograph (dimentions 2in X 2in) size less than 1MB [ আবেদনকারীর এক কপি কালার ছবি লাগবে, যেটার সাইজ হবে ২ ইঞ্চি x ২ ইঞ্চি এবং ১ এমবির কম]
2) A copy of Passport page containing personal particulars [ পাসপোর্ট পেইজের একটি কপি লাগবে যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য থাকবে]
3) Copy of the Letter from the Hospital concerned in India on its letterhead [ ইন্ডিয়ার যে হসপিটালে রোগীকে দেখানো হবে সেই হাসপাতালে একটি আমন্ত্রণ পত্রের কপি]
ধাপ ৩ঃ আপনার পাসপোর্টের বায়ো-পৃষ্ঠার একটি ডিজিটাল কপি আপলোড করুন। সাম্প্রতিক পাসপোর্ট আকারের ছবি আপলোড করুন। ভারতের একটি স্বীকৃত হাসপাতাল থেকে পাঠানো আমন্ত্রণ পত্রের কপি আপলোড করুন। সব কাগজপত্র স্ক্যান করা এবং সঠিকভাবে আপলোড করা নিশ্চিত করুন।
ধাপ ৪ঃ আপনার ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ই-ভিসা ফি পরিশোধ করুন। ভিসা ফি সফলভাবে পরিশোধ হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে Indian e-Visa Payment Verification লিংকটি ব্যবহার করুন। এখানে আপনার ভিসা আবেদন আইডি এবং জন্ম তারিখ দিয়ে ভিসা ফি পেমেন্ট চেক করতে পারবেন এবং পেমেন্ট রিসিট ডাউনলোড করতে পারবেন।
ধাপ ৫ঃ আবেদন জমা দেওয়ার পর, আপনি একটি রেফারেন্স নম্বর সহ একটি ভেরিফিকেশন ইমেইল পাবেন। ভবিষ্যতের রেফারেন্সের জন্য ভিসা আবেদন ফর্ম এবং আবেদন আইডি নম্বরটি নিরাপদে রাখুন।
ধাপ ৬ঃ ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসার জন্য সাধারণত ২ থেকে ৩ দিন অপেক্ষা করতে হয়, এরপর আপনি ই-ভিসাটি ইমেইলের মাধ্যমে পাবেন। আপনার ই-মেডিকেল ভিসা আবেদনের অবস্থা জানতে Check Indian E Visa Status লিংকটি ব্যবহার করতে পারেন।
ধাপ ৭ঃ ইমেইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত ই-ভিসাটি প্রিন্ট আউট করে নিন। এখন এটি ব্যবহার করে ভারতে যেতে পারবেন।
কিভাবে ইন্ডিয়ান হসপিটাল থেকে আমন্ত্রণপত্র পাবেন
ভারতের যে হাসপাতালে আপনি চিকিৎসা নিতে চান, সেই হাসপাতালের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে একটি ইমেইল পাঠানঃ
ধাপ ১ঃ ইমেইল পাঠানোঃ আপনি যে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে চান তার এপয়েন্টমেন্ট চেয়ে একটি ইমেইল পাঠান। ইমেইলে আপনার রোগের বর্ণনা দিন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করুন। সংযুক্তিতে বাংলাদেশের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন, মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট, রোগী ও অ্যাটেনডেন্টের পাসপোর্টের বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করুন।
ধাপ ২ঃ হাসপাতালের ওয়েবসাইটের ফর্ম পূরণঃ সাধারণত ভারতের স্বনামধন্য হাসপাতালগুলোর ওয়েবসাইটে একটি বিশেষ ফর্ম থাকে। সেখানে রোগীর তথ্য পূরণ করে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে সহজেই এই ইমেইলটি পাঠানো যায়।
ধাপ ৩ঃ আমন্ত্রণ পত্র প্রাপ্তিঃ আপনার পাঠানো ইমেইলটি যদি হাসপাতালের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়, তারা আপনাকে ভারতে আসার জন্য ইনভিটেশন লেটার অর্থাৎ আমন্ত্রণ পত্র পাঠাবে।
ধাপ ৪ঃ প্রেসক্রিপশন উল্লেখঃ তবে, যদি আপনার প্রেসক্রিপশনে “Advised to go abroad for better treatment” বা “ভালো চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে” লেখা না থাকে, তাহলে আপনি ভারতের সেই হাসপাতালে যাওয়ার আমন্ত্রণ পত্র পেতে সমস্যায় পড়তে পারেন। এজন্য বাংলাদেশের যে ডাক্তার আপনাকে চিকিৎসা করছেন, তাকে প্রেসক্রিপশনে লিখতে বলুন যে ‘ভালো চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে’ বা “Advised to go abroad for better treatment”।
মেডিকেল অ্যাটেন্ডেন্ট ই-ভিসা
রোগীর সহযোগী ও পরিচর্যাকারীরা মেডিকেল অ্যাটেন্ডেন্ট ই-ভিসার মাধ্যমে ভারত যেতে পারবেন। রোগীর সাথে সর্বোচ্চ ৩ জন সহযোগী যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে কিছু লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যেমন-
সম্পর্কের প্রমাণঃ মেডিকেল অ্যাটেন্ডেন্ট ই-ভিসা পেতে হলে রোগীর সাথে সম্পর্কের প্রমাণের কাগজপত্র দেখাতে হবে। যেমন, জন্ম নিবন্ধন, আইডি কার্ড ইত্যাদি।
নিকট আত্মীয়রাঃ সাধারণত নিকট আত্মীয়দের ক্ষেত্রে আত্মীয়তার প্রমাণ করা সহজ হয়। তাই রোগীর সাথে নিকট আত্মীয়দের নিয়ে যাওয়া উচিত।
ইন্ডিয়ান ই-মেডিকেল ভিসার খরচ
ভারতের ই-মেডিকেল ভিসার খরচ ৮ ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১০০০ টাকা।