ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করবেন যেভাবে

ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করবেন যেভাবে

প্রাইমারী স্কুলের ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি নিয়ে আমরা অনেকেই সংশয়ের মধ্যে আছি। ইউনিক আইডিতে কিভাবে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করতে হবে সেই বিষয়ে আজ আমি আপনাদের বিস্তারিত জানাবো। আশা করি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকে আপনি খুব সহজে একজন নতুন শিক্ষার্থীর তথ্য এন্ট্রি করতে পারবেন। এন্ট্রি করার পুর্বে শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় সকল তথ্য একটি ফর্মে লিখে নেওয়া ভালো। এতে করে আপনার ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম হবে। তো তাহলে চলুন শুরু করি।

প্রাথমিক ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করার নিয়ম

ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করতে প্রথমে অফিসিয়াল এই ওয়েবসাইটটিতে একজন সহকারি শিক্ষকের ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করবো। সহকারি শিক্ষকের ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট থেকে নিতে হবে। লগইন করার পর বাম পাশের ড্যাশবোর্ডের নিচে শিক্ষার্থী ম্যানেজমেন্টে ক্লিক করে শিক্ষার্থী নিবন্ধন সিলেক্ট করবো। এখন আমরা নিচের পেজটি দেখতে পাবো।

ইউনিক-আইডিতে-নতুন-শিক্ষার্থী-এন্ট্রি-করার-সঠিক-নিয়ম

এখানে আমরা বেশ কয়েকটি লাল স্টার (*) চিহ্নিত ঘর দেখতে পাবো। যেগুলো পূরণ করা আবশ্যক অর্থাৎ এই ঘরগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। বাকি অনাবশ্যক বা অপশনাল ঘরগুলো আপনি চাইলে পরবর্তীতে পূরণ করতে পারবেন।

এই পেইজে ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করার পুর্বে প্রথমে দেখে নিতে হবে যে আমরা যে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর তথ্য পূরণ করতে চেয়েছি সেই বিদ্যালয়ের ইএমআইএস (EMIS) কোড এবং স্কুলের নাম-ঠিকানা ঠিক আছে কিনা। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে আমরা ঐ শিক্ষার্থীর তথ্য পূরণ করবো।

ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করার প্রক্রিয়া আমরা তিনটি ধাপে সম্পন্ন করবোঃ

  1. প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীর তথ্য প্রদান করতে হবে।
  2. দ্বিতীয় ধাপে শিক্ষার্থীর পিতা-মাতার তথ্য প্রদান করতে হবে এবং
  3. তৃতীয় ধাপে শিক্ষার্থীর অন্যান্য তথ্য প্রদান করতে হবে

১ম ধাপে শিক্ষার্থীর তথ্য প্রদান

প্রথম ধাপে আমরা শিক্ষার্থীর নিচের তথ্যগুলি প্রদান করে কাজটি সমাপ্ত করবোঃ

  • অধ্যায়নরত শ্রেণী
  • শাখা
  • রোল নম্বর
  •  ভার্সন
  •  জন্ম নিবন্ধন নাম্বার এবং
  •  জন্ম তারিখ

এ পর্যায়ে আমরা জন্ম নিবন্ধন নাম্বার এবং জন্ম তারিখ প্রদান করার পর পাশে থাকা সার্চ বাটনে ক্লিক করবো। জন্ম নিবন্ধন নাম্বার এবং জন্ম তারিখ যদি ঠিক থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধন সার্ভার থেকে শিক্ষার্থীর সকল তথ্য প্রদর্শিত হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা-মাতার নাম বাংলা এবং ইংরেজিতে চলে আসবে।

মনে রাখার বিষয় জন্ম নিবন্ধন সার্ভার থেকে প্রদর্শিত তথ্য যদি কোথাও ভুল থাকে তাহলে পাশে থাকা কলম আইকনের পরে ক্লিক করে তা সঠিক করা যাবে।

যে সকল তথ্যগুলো জন্ম নিবন্ধন সার্ভার থেকে আসবে না সেগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। যেমন, শিক্ষার্থী কাব স্কাউটের সদস্য কিনা? রক্তের গ্রুপ, জন্মস্থা্‌ন, জেন্ডার, জেলা, জাতীয়তা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিনা, ইত্যাদি।

Browse অপশনে ক্লিক করে ছবি আপলোড করবো অথবা ক্যামেরা ব্যবহার করে সরাসরি শিক্ষার্থীর ছবি তুলে আপলোড করা যাবে।

পেইজটির শেষের অংশে শিক্ষার্থীর বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা একই হলে বর্তমান ঠিকানা পূরণ করে স্থায়ী ঠিকানার নিচে স্থায়ী ঠিকানার অনুরূপ বক্সটিতে ক্লিক করলে অটোমেটিকভাবে বর্তমান ঠিকানার তথ্য স্থায়ী ঠিকানায় চলে যাবে।

প্রথম পেইজের সকল তথ্য পূরণ করার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করলে প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীর তথ্য দেওয়া শেষ হবে।

২য় ধাপে শিক্ষার্থীর পিতা-মাতার তথ্য দিতে হবে

প্রাথমিক ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করতে এবার দ্বিতীয় ধাপেআমাদের শিক্ষার্থীর পিতা-মাতার তথ্য প্রদান করতে হবে। প্রথম ধাপে শিক্ষার্থীর তথ্য পূরণ করার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর নিচের পেইজটি আমরা দেখতে পাবো।

 

ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করতে এই পেইজে প্রথমে আমরা শিক্ষার্থীর মাতার জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সিলেক্ট করে পাশে থাকা সার্চ বাটনে ক্লিক করবো।  মাতার জন্ম তারিখ এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার ঠিক থাকলে সার্ভার থেকে অটো তথ্য প্রদর্শিত হবে। মাতার পেশা এবং মোবাইল নাম্বার প্রদান করব। মাতা মৃত কিনা সেটাও নির্বাচন করবো।

অনুরূপভাবে পিতার জন্ম তারিখ, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নাম্বার প্রদান করে সার্চ বাটনে ক্লিক করুন। সব তথ্য ঠিকঠাক থাকলে সফটওয়্যারে পিতার সকল তথ্য প্রদর্শিত হবে।

এবার উপরে থাকা BRN বাটনে ক্লিক করলে পিতা-মাতার তথ্যের সাথে শিক্ষার্থীর পিতা-মাতার তথ্যের মিল আছে কিনা যাচাই করবো।

এছাড়া পিতা মাতার অবর্তমানে বৈধ অভিভাবকের তথ্য আমরা প্রদান করতে পারব।  পিতা-মাতার তথ্য যেভাবে দেয়া হয়েছে অনুরূপভাবে অভিভাবকের জন্ম তারিখ, NID কার্ডের নাম্বার পূরণ করে পাশে থাকা সার্চ বাটনে ক্লিক করবো।

প্রদত্ত তথ্য সঠিক থাকলে বৈধ অভিভাবকের তথ্য প্রদর্শিত হবে। বাকি তথ্যগুলো পূরণ করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করব। দ্বিতীয় ধাপে তথ্য প্রদান করা শেষ। এবার আমরা তৃতীয় ধাপে শিক্ষার্থীর অন্যান্য তথ্য প্রদান করবো।

৩য় ধাপে শিক্ষার্থীর অন্যান্য তথ্য প্রদান করুন

দ্বিতীয় ধাপ শেষে প্রাথমিক ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করতে তৃতীয় ধাপে শিক্ষার্থীর অন্যান্য তথ্য প্রদান করে কাজ সমাপ্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ধরণ নির্বাচন করবো। শিক্ষার্থী ধরণ অনিয়মিত হলে তার কারণ উল্লেখ করতে হবে। প্রয়োজনে Choose File এ  ক্লিক করে বিভিন্ন প্রকার ডকুমেন্টস আপলোড করা যাবে।

একাধিক তথ্য আপলোড করার জন্য যোগ করুন বাটনে ক্লিক করুন। আপলোডকৃত তথ্য মুছে ফেলতে মুছুন বাটনে ক্লিক করুন।

সকল ধাপের তথ্য পূরণ করার পর সর্বশেষে এই তথ্য ছকে প্রদত্ত তথ্য আমার জানামতে সঠিক ও নির্ভুল চেক বক্সটিতে টিক চিহ্ন দিন।

এবার নিচে থাকা সেভ বাটনে ক্লিক করলে শিক্ষার্থীর তথ্য সঠিকভাবে হালনাগাদ করা হয়েছে এমন একটি পপ আপ মেসেজ দেখতে পাবো। ওকে বাটনে ক্লিক করবো।

তারপর প্রেরণ বাটনে ক্লিক করলে শিক্ষার্থীর তথ্য সহকারী শিক্ষকের আইডি হতে প্রধান শিক্ষকের আইডিতে চলে যাবে। এভাবে প্রাথমিক ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি প্রদান করা যাবে।

ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করার গুরুত্ব

ইউনিক আইডি (Unique ID) প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা একটি পরিচয় যা তাকে সহজে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এটা বিদ্যালয়ের ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের একটি অপরিহার্য অংশ। এই নিবন্ধে আমরা ইউনিক আইডিতে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।

প্রথমত, ইউনিক আইডি একটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের সম্পূর্ণ ট্র্যাক রাখতে সহযোগিতা করে। এটি শিক্ষার্থীর সব তথ্য যেমন তার নাম, জন্মতারিখ, ভর্তির তারিখ, উপস্থিতি, প্রাপ্ত নম্বর, শিক্ষাগত অর্জন এবং অন্যান্য কার্যক্রম নির্ধারিত একটি নম্বরের মাধ্যমে রেকর্ড করা যায়।

দ্বিতীয়ত, ইউনিক আইডির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও তথ্য আপডেট করার প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও নিরাপদ হয়। সঠিক তথ্য প্রদান নিশ্চিত করা এবং ভুল তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।

তৃতীয়ত, ইউনিক আইডি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অনুসরণ করা, ছাত্রসংখ্যা গণনা করা, এবং শিক্ষার গুণমান পর্যালোচনা করা সহজ করে তোলে।

চতুর্থত, ইউনিক আইডি সরকার এবং বা বিভিন্ন শিক্ষামূলক সংস্থাগুলির জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষার প্রক্রিয়ার উপর সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি। ইউনিক আইডি এই তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মৌলিক ভূমিকা রাখতে পারে।

পঞ্চমত, ইউনিক আইডি ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীর প্রতিচ্ছবি ও শিক্ষাজীবনের প্রগতি নির্বাচনিক বিষয়ের অভিভাবকদের সাথে সহজে ভাগাভাগি করা সহজ হয়। এছাড়া, অভিভাবকরা অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে তাদের সন্তানের অগ্রগতি এবং উপলব্ধি সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।

ষষ্ঠত, আধুনিক যুগে তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে, শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল পরিচয় অত্যন্ত জরুরি। ইউনিক আইডি সিস্টেমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই ডিজিটাল যুগের সঙ্গে ধাপ মিলানো শিখতে পারে।

কোন কিছু বুঝতে না পারলে অথবা সমস্যার সম্মুখীন হলে, কমেন্ট বক্স বা মেসেজে আপনার সমস্যা জানাতে ভুলবেন না।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

2 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *