আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি উপায় নিয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে। আজকের দুনিয়ায় মানসিক সুস্থতা এবং ব্যক্তিত্ব গঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আত্মসম্মান।
এই আত্মসম্মান (Self-respect) একজন মানুষকে নিজের মূল্য বোঝাতে সাহায্য করে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে শেখায়। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি উপায়সহ আরও কিছু কার্যকরী কৌশল যা আপনার আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
Table of Contents
নিজেকে জানার মাধ্যমে আত্মসম্মান গঠন
নিজেকে জানার প্রক্রিয়া কখনো থেমে থাকে না। এটি একটি চলমান যাত্রা, যা আপনার আত্মসম্মান গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে জানার মাধ্যমে আপনি আপনার শক্তি, দুর্বলতা, পছন্দ-অপছন্দ, আবেগ, এবং আচরণ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা লাভ করেন। যখন আপনি জানেন আপনি কী চান এবং কেন চান, তখন আপনি আর বাইরের দুনিয়ার পরিসরে বিচলিত হবেন না।
এটি আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি উপায়ের মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী ধাপ। নিজেকে জানার মাধ্যমে, আপনি বুঝতে পারবেন আপনার অভ্যন্তরীণ শক্তি কোথায়, এবং এটি কিভাবে আপনার আত্মবিশ্বাসকে প্রভাবিত করে। প্রতিদিন নিজের প্রতি কিছু প্রশ্ন করুন: “আমি আসলে কি চাই?”, “আমি কোন ক্ষেত্রে ভালো?”, “আমার দুর্বলতাগুলি কী?” এই প্রক্রিয়া আপনাকে সাহায্য করবে নিজের অগ্রগতির প্রতি আরও সচেতন হতে।
এছাড়া, আপনি যখন নিজের সীমাবদ্ধতা জানবেন, তখন সেই সীমাবদ্ধতাগুলোর সঙ্গেই কাজ করতে পারবেন, এবং এগুলি অতিক্রম করার জন্য আপনি নতুন উপায় খুঁজে পাবেন। এটি নিজের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধির একটি শক্তিশালী মাধ্যম। নিজের প্রতি গঠনমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা, নিজেকে ভালোভাবে বোঝা, এবং তারপর সেই অনুযায়ী কাজ করা—এটি আপনার আত্মবিশ্বাসের স্তরকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
প্রতিদিন পাঁচ মিনিট সময় দিন নিজেকে, এবং দেখুন, আপনি আপনার শক্তি ও দুর্বলতার মধ্য থেকে কিভাবে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। নিয়মিত এই প্রক্রিয়াটি আপনার জীবনে কার্যকরীভাবে আত্মসম্মান বাড়ানোর উপায় হিসাবে কাজ করবে।
নিজস্ব সীমারেখা নির্ধারণ করুন
নিজের সময়, অনুভূতি এবং সম্মান রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত সীমারেখা স্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা আপনার জীবনকে আরও সুশৃঙ্খল এবং শান্তিপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করবে। সীমারেখা স্থাপন মানে হলো আপনি আপনার প্রয়োজন ও অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাচ্ছেন এবং অন্যদের দ্বারা অপব্যবহার হতে রক্ষা পাচ্ছেন।
অনেক সময়, আমরা সবার জন্যই কিছু না কিছু করতে চাই, কিন্তু মাঝে মাঝে “না” বলার শক্তি আমাদের থাকে না। এটি আমাদের আত্মসম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অনেক সময় মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সীমারেখা স্থাপন একটি শক্তিশালী অস্ত্র, যা আপনাকে বাইরের চাপ এবং নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখবে।
সীমারেখা স্থাপন মানে আত্মকেন্দ্রিক হওয়া নয়, বরং এটি নিজের মর্যাদা ও মানসিক সুস্থতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। যখন আপনি নিজের সীমা জানবেন এবং সেগুলোর প্রতি দাঁড়িয়ে থাকবেন, তখন আপনি নিজেকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করতে পারবেন এবং আপনার আত্মসম্মানও বৃদ্ধি পাবে।
এটি আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি কৌশলের মধ্যে অন্যতম একটি শক্তিশালী ধাপ। “না” বলার অভ্যাস গড়ে তোলা, নিজের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং অন্যদের দ্বারা আপনার সম্মানহানি না হতে দেওয়া—এই অভ্যাসটি আপনার আত্মসম্মানকে দৃঢ় করবে। নিজের জন্য সময় বরাদ্দ করা এবং নিজের মূল্য বোঝা, এই সব কিছুই আত্মসম্মান বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
নিজের সঙ্গে ইতিবাচক কথোপকথন
আপনি প্রতিদিন নিজের সঙ্গে কীভাবে কথা বলেন, সেটি আপনার আত্মসম্মান ও মানসিক অবস্থাকে অনেকটা প্রভাবিত করে। নিজের সঙ্গে ইতিবাচক কথোপকথন না থাকার কারণে, আমরা অনেক সময় নিজেকে নেগেটিভভাবে মূল্যায়ন করি, যেমন “আমি পারব না” বা “আমি যথেষ্ট ভালো নই”। এই ধরনের নেতিবাচক ভাবনা আপনার আত্মবিশ্বাসের উপর চাপ ফেলে এবং মনোবল দুর্বল করে।
যখন আপনি নিজের প্রতি নেতিবাচক ভাবনা পোষণ করেন, তখন আপনার মস্তিষ্ক সেটিকে বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা করে, এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে আপনার আত্মসম্মান কমিয়ে দেয়। তাই, নিজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। নিজের সঙ্গে কথা বলার সময়, সঠিকভাবে এবং গঠনমূলকভাবে কথা বলুন। পরিবর্তে বলুন, “আমি চেষ্টা করছি”, “আমি প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখছি”, “আমি উন্নতি করছি”। এই ধরনের ইতিবাচক চিন্তা আপনার আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক সুস্থতাকে দ্রুত উন্নত করতে সাহায্য করবে।
এটি আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি কৌশলের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। আপনার চিন্তা এবং কথাবার্তা যদি ইতিবাচক হয়, তবে আপনার মন এবং শারীরিক স্বাস্থ্যও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে।
একজন মানুষ যখন নিজের সঙ্গে ইতিবাচক কথোপকথন করে, তখন সে তার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সুস্থ এবং দৃঢ় থাকতে পারে। এর ফলে আত্মসম্মানও বৃদ্ধি পায় এবং আপনার নিজের প্রতি শ্রদ্ধা আরও শক্তিশালী হয়।
দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মসম্মান বাড়ানো
নতুন কিছু শেখা বা দক্ষতা অর্জন করা আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা নতুন কিছু শিখি, যেমন কোডিং, একটি নতুন ভাষা, লেখালেখি, বা সংগীত, তখন এটি আমাদের মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করে এবং আমরা অনুভব করি যে আমরা আরও সক্ষম হচ্ছি। এই ধরণের দক্ষতা অর্জন আমাদের মনে এক শক্তিশালী বার্তা পৌঁছায়—“আমি পারি!” এবং এ থেকেই আমাদের আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।
দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনি নিজের সীমাবদ্ধতাগুলি অতিক্রম করতে পারছেন এবং নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছেন। আপনি যখন কোনো বিষয় শিখে তাতে দক্ষ হন, তখন আপনি আপনার আত্মসম্মানে গভীরভাবে অনুভব করেন যে আপনি মূল্যবান এবং আপনার শখ ও আগ্রহের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এটি আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি কৌশলের অন্যতম শক্তিশালী উপায়। প্রতি দিন ৩০ মিনিট সময় দিন আপনার পছন্দের কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য—এটি হতে পারে নতুন একটি ভাষা শেখা, একটি নতুন স্কিল শিখা, বা এমন কিছু যা আপনার জন্য নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং। এই নিয়মিত চর্চা আপনাকে একদিকে যেমন দক্ষ করে তুলবে, অন্যদিকে এটি আপনার আত্মসম্মানও বাড়াবে।
এটি আপনাকে দেখাবে যে আপনি কখনও থেমে থাকেন না এবং সবসময় নিজেকে উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে আপনি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ও শ্রদ্ধা অর্জন করবেন, যা আপনার আত্মসম্মানকে আরও দৃঢ় করবে।
ব্যর্থতাকে গ্রহণ করার মানসিকতা
ব্যর্থতা জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ এবং এটি অনেক সময় আমাদের উদ্দেশ্য অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে, ব্যর্থতা কখনোই আমাদের আত্মসম্মান নষ্ট করার কারণ হওয়া উচিত নয়। আসলে, ব্যর্থতা আমাদের শেখার এবং উন্নতি করার সুযোগ প্রদান করে। এটি আমাদের আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি উপায়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী উপায়।
মনে রাখবেন, পৃথিবী বিখ্যাত উদ্ভাবক থমাস এডিসন ১০০০ বার ব্যর্থ হওয়ার পরই বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছিলেন। যদি তিনি ব্যর্থতার পর নিরাশ হয়ে যেতেন, তবে আমাদের আজকের বিদ্যুৎচালিত পৃথিবী কল্পনাও করা সম্ভব হতো না। এটি প্রমাণ করে যে ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে, আমরা শিখতে এবং সামনে এগিয়ে যেতে পারি।
ব্যর্থতা মানে শেষ নয়, বরং এটি আমাদের আরও দৃঢ় হওয়ার এবং নতুন কিছু শেখার সুযোগ দেয়। যখন আপনি ব্যর্থ হন, তখন এটি আপনার চরিত্র গঠনের অংশ হয়ে দাঁড়ায় এবং আপনাকে আরও পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল করে তোলে। আত্মসম্মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার মনোভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যর্থতার ভয়ে পিছিয়ে না গিয়ে, আপনার মনোবলকে শক্তিশালী করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো পরিকল্পনা করতে সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিন। ব্যর্থতার মাধ্যমে আপনি শিখতে পারবেন কোথায় ভুল হয়েছিল এবং পরবর্তীতে কীভাবে সেগুলি এড়িয়ে চলবেন। এটি আত্মসম্মান বাড়ানোর একটি শক্তিশালী পথ, কারণ যখন আপনি ব্যর্থতাকে স্বীকার করে তার থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, তখন আপনার আত্মবিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পায়।
অন্যের সঙ্গে তুলনা বন্ধ করুন
আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই আমরা দেখি, সবাই যেন কত সফল, সুখী, স্মার্ট বা আদর্শ জীবনযাপন করছে। কিন্তু এই ধরনের তুলনা আমাদের আত্মসম্মান ধ্বংস করে দিতে পারে। যখন আমরা অন্যদের জীবনের সাফল্য এবং সুখের সাথে নিজের জীবনকে তুলনা করি, তখন আমাদের নিজের জীবনকে তুচ্ছ মনে হতে শুরু করে। এটি আমাদের মনোবল কমিয়ে দেয় এবং আত্মবিশ্বাস ভেঙে ফেলতে পারে।
মনে রাখুন, প্রতিটি মানুষ আলাদা, এবং তার জীবনযাত্রা বা পথ আলাদা। একজনের সাফল্য বা সুখের মানে আপনার সাফল্য বা সুখ হতে হবে না। আপনার জীবনের গল্প আপনার মতো করেই গঠিত হবে। এই সত্ত্বেও, তুলনা করা আমাদের প্রাকৃতিক প্রবণতা হতে পারে, তবে এর ফলে আমরা নিজেদের আসল সম্ভাবনা ও অগ্রগতিকে ভুলে যাই। আমরা যদি অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে শুরু করি, তবে কখনই আমাদের নিজস্ব আত্মসম্মান বজায় রাখতে পারব না।
আপনার গল্পটি আপনার নিজের এবং অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করে, নিজেই গর্বিত থাকতে শিখুন। প্রতিদিন, আপনি যদি নিজের অগ্রগতি ও অর্জন নিয়ে গর্বিত থাকেন এবং সেগুলিকে মূল্যায়ন করেন, তবে আপনি আসল আত্মসম্মান অর্জন করতে পারবেন। আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি কৌশলের মধ্যে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক, কারণ তুলনা না করে নিজের সাফল্য ও অগ্রগতি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা একজন ব্যক্তির আত্মসম্মানকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
এটি মনে রাখবেন—আপনার সাফল্য, আপনার সংগ্রাম এবং আপনার সময়সূচি একেবারেই আলাদা। অন্যদের সফলতার সাথে আপনার জীবনের তুলনা না করে, আপনি আপনার নিজের পথে এগিয়ে যান এবং আপনার অগ্রগতি নিয়ে গর্বিত থাকুন।
নিজের যত্ন নেওয়াকে গুরুত্ব দিন
শরীর ও মনের যত্ন না নিলে আত্মসম্মান টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা, দায়িত্ব, এবং চাপের মধ্যে অনেক সময় আমরা নিজেদের প্রাধান্য দিতে ভুলে যাই। কিন্তু, যতই কাজের চাপ থাকুক না কেন, নিজের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি—এই সব কিছু মিলিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর ও আত্মসম্মানপূর্ণ জীবন গড়ে ওঠে।
অন্যদের জন্য হয়তো আমরা নিজেদের সময় দিতে পারি, কিন্তু যখন নিজের জন্য সময় বরাদ্দ করি না, তখন এটি আমাদের আত্মসম্মান কমিয়ে দেয়। আমরা যেন নিজেকে তুচ্ছ বা অবহেলিত মনে করতে শুরু করি, যা ধীরে ধীরে আমাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই, নিজের যত্ন নেওয়া এবং নিজের জন্য সময় বের করা হলো আসল ভালোবাসা। “নিজেকে ভালোবাসা” বললেই যে আত্মসম্মান বেড়ে যাবে, এমন নয়; বরং নিজের জন্য সময় বরাদ্দ করাই আসল ভালোবাসা এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধির পথ।
এটি আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি কৌশলের মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। আপনি যদি নিজের শরীর এবং মনের প্রতি যত্নশীল হন, তবে আপনি নিজেকে মূল্য দিতে শিখবেন, এবং এই মূল্যবোধ আত্মসম্মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। যত্নশীলতা এবং নিজের প্রতি শ্রদ্ধা আপনার আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করবে এবং আত্মসম্মান বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া, যখন আপনি নিজে সুস্থ ও সুখী থাকবেন, তখন আপনি অন্যদেরও ভালোভাবে সহায়তা করতে পারবেন এবং সেই ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা আপনার চারপাশের মানুষদের কাছ থেকেও ফিরে আসবে।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধে দৃঢ় থাকা
আপনার নীতি ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা আপনার আত্মসম্মান বজায় রাখার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়গুলোর একটি। যখন আপনি আপনার নীতিমালা এবং মূল্যবোধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠা দেখান, তখন সমাজের চাপ কিংবা বাহ্যিক পরিস্থিতি আপনাকে সহজে প্রভাবিত করতে পারে না। নৈতিকতা ও মূল্যবোধে দৃঢ় থাকা মানে হলো, আপনি নিজেকে কখনো আপোস না করে, আপনার বিশ্বাসে অবিচল থাকবেন।
এটা শুধুমাত্র অন্যদের সামনে আপনার মর্যাদা এবং শ্রদ্ধা বজায় রাখার জন্য নয়, বরং এটি আপনাকে নিজের প্রতি আত্মসম্মান রক্ষায়ও সহায়তা করে। যখন আপনি আপনার নীতি ও মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করেন, তখন আপনি আপনার আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী অনুভব করবেন। আপনার আচরণ এবং সিদ্ধান্তগুলির প্রতি আপনি যে শ্রদ্ধাশীল হন, তা আপনার ভিতর থেকেই আত্মসম্মান তৈরি করে।
এটি আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি কৌশলের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। নিজেকে বলুন: “আমি যা বিশ্বাস করি, তাতেই থাকব”। এই মনোভাব আপনাকে জীবনযাত্রায় আরো দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী এবং পরিপূর্ণ করে তুলবে। আপনার মূল্যবোধের প্রতি সততার সাথে থাকতে পারলে, আপনি সহজেই আত্মসম্মান বজায় রাখতে পারবেন এবং কোনও বাহ্যিক চাপ বা পরিস্থিতি আপনাকে হালকা না করে, বরং আপনার মূল্যবোধের প্রতি আরো বেশি দৃঢ় করবে।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রতি সঙ্গতিপূর্ণ থাকলে, আপনি নিজের সাথে সৎ থাকবেন, অন্যদের সম্মান করবেন, এবং নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস অর্জন করবেন, যা দীর্ঘমেয়াদে আত্মসম্মান ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
ইতিবাচক মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো
আপনি যাদের সঙ্গে সময় কাটান, তারা আপনার মানসিকতা এবং আত্মসম্মান উপর গভীর প্রভাব ফেলে। নেতিবাচক, সমালোচনাপ্রবণ এবং আত্মবিশ্বাসহীন মানুষদের সঙ্গে সময় কাটালে আপনি তাদের মনোভাব এবং আচরণকে subconsciously গ্রহণ করে ফেলতে পারেন, যা আপনার আত্মসম্মান ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই, নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে, নেতিবাচক মানুষদের এড়িয়ে চলা উচিত।
এমন মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান যারা আপনাকে সম্মান করে, উৎসাহ দেয়, এবং যারা ইতিবাচক শক্তি ছড়ায়। তাদের উপস্থিতি আপনার মানসিকতার উন্নতি ঘটায় এবং আপনার আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। ইতিবাচক মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা শুধু আপনার আত্মসম্মান বৃদ্ধি করে না, বরং এটি আপনার পুরো জীবনের মান এবং গুণগত মানকে আরও উন্নত করে তোলে।
এটি আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি কৌশলের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ইতিবাচক মানুষের কাছ থেকে পাওয়া শক্তি আপনাকে নিজের জীবন আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আপনি যখন ইতিবাচক মানুষের সাথে সময় কাটান, তখন আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়, আপনি নতুন সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেন, এবং আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যান।
ইতিবাচক মানুষের সাহচর্য আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে, এবং এই পরিবর্তন আপনার আত্মসম্মান এবং জীবনধারাকে উন্নত করবে।
শেষ কথা
আত্মসম্মান বাড়ানো কোনো একদিনের কাজ নয়। এটি ধাপে ধাপে গঠিত হয় – সচেতন সিদ্ধান্ত, প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাস এবং নিজের প্রতি যত্ন ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে। উপরে বর্ণিত আত্মসম্মান বাড়ানোর ৭টি কৌশল নিয়মিত অনুশীলন করলে আপনি ধীরে ধীরে নিজের মূল্য বুঝতে শিখবেন, অন্যের কাছেও আপনার অবস্থান দৃঢ় হবে।
মনে রাখুন, আত্মসম্মান মানে অহংকার নয়, এটি নিজেকে সম্মান করা, নিজের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেওয়া, এবং নিজের অস্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।
2 Responses
Impressive post, really amazing.
Thank you. Keep in touch, please.