এখন খুব সহজে মোবাইল এপের মাধ্যমে অনলাইনে জিডি করা যায়। আমাদের বিভিন্ন সমস্যা যেমন লেনদেন, চুরি, ছিনতাই, মারামারি, হুমকি-ধামকি, প্রতারণার শিকার, হামলা-মামলা, মালামাল চুরি, মোবাইল হারানো ইত্যাদি বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনাকে নিকটবর্তী থানায় গিয়ে জিডি করতে হতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনলাইনে জিডি করা যায় বিধায় আপনাকে আর থানায় গিয়ে জিডি করতে হবে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ইউনিট দেশের জনগণের সুবিধার্থে অনলাইনে জিডি করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন থেকে যেকোন প্রয়োজনে থানায় না গিয়ে ঘরে বসে যেকেউ উপযুক্ত তথ্যাদি প্রদান করে অনলাইনে জিডি করতে পারবেন এবং পুলিশের সেবা নিতে পারবেন।
মোবাইল এপ দিয়ে অনলাইনে জিডি করার নিয়ম
অনলাইনে জিডি করতে প্রথমে যেকোন ব্রাইউজার থেকে এই https://gd.police.gov.bd/ ঠিকানায় প্রবেশ করুন অথবা এখানে ক্লিক করুন। তারপর উপরের ডান পাশে রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করলে দেখতে পাবেন আপনাকে Online GD নামে একটা এপ ইন্সটল করার জন্য বলা হচ্ছে। আগে ওয়েবের মাধ্যমেও জিডি করা যেত, কিন্ত এখন শুধু এপের মাধ্যমে জিডি করা যায়। কারণ এটা অধিক নিরাপদ ও সুবিধাজনক। তাই কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে Online GD এপটি ইন্সটল করে নিন।
এপটি ইন্সটল করার পর নিন্মোক্ত ধাপে ধাপে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করুন।
১ম ধাপঃ ইন্সটল করার পর এপটি ওপেন করলে এরকম একটা ইন্টারফেইস দেখতে পারবেন। নিচে বামকোনার নিবন্ধন বাটনে ক্লিক করুন।
২য় ধাপঃ আপনার কাছে থাকা মোবাইল নাম্বারটি দিয়ে মোবাইল ভেরিফিকেশন করে নিন।
৩য় ধাপঃ জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রও ভেরিফাই করে নিন।
৪র্থ ধাপঃ তথ্য সঠিক হলে পরবর্তী স্ক্রিনে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, জন্ম তারিখ, নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম দেখতে পাবেন। তারপর তথ্য সঠিক হলে এখানে ক্লিক করুন বাটনে চাপ দিন।
৫ম ধাপঃ ফেইস বা চেহারা ভেরিফিকেশনের জন্য নির্দেশনামত ছবি তুলে দিন।
৬ষ্ঠ ধাপঃ একাউন্ট তৈরী করার জন্য পাসওয়ার্ড সেট করে নিন।
সব কিছু সঠিক হলে একটা সাকসেস মেসেজ দেখতে পাবেন।
৭ম ধাপঃ এবার মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করুন।
লগিন সঠিক ভাবে হলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা জেলা, থানা, গ্রাম, পোষ্টকোড ইত্যাদি তথ্য দেখতে পাবেন। এখন পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আপনি এরকম একটা ড্যাশবোর্ডে চলে আসবেন।
এখানে আপনি দেখতে পাচ্ছেন অপেক্ষামান আবেদন, গৃহীত আবেদন, অগৃহীত আবেদন, তদন্তাধীন জিডি এবং নিষ্পত্তিকৃত জিডি। আর নতুন তথ্য এন্ট্রির জন্য দেখতে পাচ্ছেন হারানো এবং পাওয়া নামে দুইটি অপশন।
মনে রাখার বিষয়ঃ অনলাইন জিডি রেজিস্টেশনটি একজন ব্যক্তির জীবনে শুধুমাত্র একবারেই করতে পারবেন। তাই আপনার একাউন্ট সম্পর্কিত সকল Information যেমনঃ NID জন্ম সাল, NID নাম্বার, ফোন নাম্বার, Password অব্যশই আপনার ডাইরিতে অথবা গুগল ড্রাইভে আপলোড করে রাখবেন।
এই পর্যায়ে দেখে নেয়া যাক কিভাবে সঠিকভাবে একটি জিডি আবেদন সম্পন্ন করবেন। তো চলুন শুরু করি।
অনলাইন জিডি আবেদন কার্যক্রম
নতুন জিডি এন্ট্রি করতে হলে হারানো অপশনে ক্লিক করতে হবে। তখন এরকম একটি ইন্টারফেইস আসবে। ধরা যাক, আমরা পাসপোর্ট হারানোর জন্য জিডি করব। তাহলে ডকুমেন্ট অপশনে ক্লিক করতে হবে।
২য় ধাপঃ এরপর পাসপোর্ট অপশনে ক্লিক করব।
৩য় ধাপঃ এখন আমাদের ডকুমেন্ট সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। ঠিকমত খেয়াল করে সবগুলা সঠিক তথ্য দিয়ে ফিল্ডগুলা পূরণ করতে হবে। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
৪র্থ ধাপঃ তারপর ডকুমেন্ট শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। যদি ডকুমেন্টের (পাসপোর্ট) ছবি থাকে তাহলে সেটা আপ্লোড করুন।
৫ম ধাপঃ এরপর কোথা থেকে এবং কখন হারিয়েছে, সেই ব্যাপারে তথ্য দিন।
৬ষ্ঠ ধাপঃ হারানোর স্থান সম্পর্কিত আরো তথ্য দিন। এবং ইতোমধ্যে আপনি পাসপোর্ট বা ডকুমেন্টটি খোঁজাখুঁজি করছেন কিনা সেটা হ্যা বা না তে ক্লিক করে নিশ্চিত করুন।
৭ম ধাপঃ এই ধাপে এসে আপনি এই এন্ট্রিটা নিজের জন্য না অন্যের জন্য করছেন সেটা নিশ্চিত করুন। এবং বর্তমান ঠিকানা যদি স্টহিক নাও হয় তাহলে এখান থেকে সেটা ঠিক করে নিতে পারবেন।
৮ম ধাপঃ এখন আপনার ইনপুট করা তথ্যগুলা সবকিছু পুনরায় দেখে-শুনে চেক করে নিচের চিত্রে দেখানো বক্সে টিক দিয়ে সাবমিট করুন বাটনে ক্লিক করুন।
এই পর্যন্ত করতে পারলে কংগ্রাচুলেশন্স। আপনার জিডিটা অনলাইনে এন্ট্রি হয়ে গেছে। এরপর আপনি একটি জিডি কোড পাবেন, সেটা সংরক্ষণ করে রাখুন।
মোবাইল চুরি হয়ে হলে অনলাইনে জিডি করবেন যেভাবে
মোবাইল হারিয়ে গেলে একইভাবে লগিন করে ড্যাশবোর্ডে যাবেন তাপর হারানো অপশনে ক্লিক করবেন। তারপর মোবাইল অপশনে ক্লিক করলে এরকম একটা ইন্টারফেইস দেখতে পাবেন।
এই ধাপে আপনাকে মোবাইল ফোন সম্পর্কিত নিন্মের তথ্য দিতে হবে। যেমন ধরুণঃ
- মোবাইল ফোনের brand এর নাম
- মডেল নং
- আপারেটিং সিস্টেম
- আইএম ই আই নাম্বার (IMEI)
- ব্যাটারি
- Ram
- পরিমাণ
- ব্যান্ড
- মেড ঠিকানা
- ক্রমিক নং
- রম
- মূল্য ইত্যাদি।
এরপরের ধাপে মোবাইল ফোন সনাক্তকরণের তথ্য যেমনঃ রং, ছবি, চিহ্ন ইত্যাদি। আরেকটু নিচে আপনার মোবাইলটি চুরি হওয়ার ঘটনা, বিবরণ, স্থান, জেলা, বিভাগ, গ্রাম, ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে। সম্পূর্ণ তথ্য গুলো সঠিকভাবে বসানোর পর পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
এই পর্যায়ে আপনি এই পর্যন্ত আপনার পণ্যের বিষয়ে যেসকল তথ্য দিয়েছেন সবগুলো আরোও একবার আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে। অনলাইনে আপনার দেয়া সবগুলো তথ্য খুব ভালোমতো যাচাই-বাছাই করে দেখুন যদি কোন গরমিল দেখেন তাহলে Edit অপশনে ক্লিক করে তথ্য পুনরায় সংশোধন করে নিন। আর যদি সব সঠিক থাকে তাহলে সাবমিট করুন বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার জিডি আবেদনটি সম্পন্ন হয়ে যাবে। এখন আপনি চাইলে আপনার জিডি ফর্মটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন। তবে অব্যশই আপনার জিডি কোডটি নোট করতে ভুলবেন না।
এরপর আপনি Home বাটনে ক্লিক করুন। আপনার জিডি আবেদনের সকল আপডেট তথ্য দেখতে পাবেন। অর্থাৎ অপেক্ষমান জিডি, গৃহীত জিডি, অগৃহীত জিডি, তদন্তাধীন জিডি, নিষ্পত্তি জিডি ইত্যাদি।
অনলাইনে জিডি করার সুবিধা
অনলাইনে জিডি করার প্রচলনের ফলে নাগরিকরা ক্রমেই আরও সুবিধাজনক এবং কার্যকর জনসেবা পাচ্ছেন। জিডি অর্থাৎ জেনারেল ডায়েরি, একটি পুলিশ স্টেশনে নথিভুক্ত করা অভিযোগ বা অনুসন্ধানের লিখিত প্রতিবেদন। এর মাধ্যমে চুরি, হারানো জিনিস, দুর্ঘটনা, বা অন্য কোনো অপরাধের তথ্য প্রদান করা হয়। অনলাইনে জিডি করার মাধ্যমে নাগরিকরা এখন ঘরে বসেই তাদের অভিযোগ জানাতে পারছেন, যা আমাদের সমাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা নিয়ে আসছে।
এই সুবিধা নিম্নরূপঃ
১. সময় সাশ্রয়ঃ থানায় গিয়ে জিডি করার জন্য অনেক সময় লেগে যেতে পারে। অনলাইনে, অভিযোগ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে জমা দেওয়া যায়।
২. সুবিধাঃ যেকোনো স্থান থেকে এবং যেকোনো সময়ে অনলাইনে জিডি করার সুবিধা নাগরিকদের জীবন আরও সহজ করে তুলেছে।
৩. সুরক্ষাঃ জিডি করার জন্য থানায় যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ থাকতে পারে। অনলাইনে জিডি করা সেই ঝুঁকি দূর করে।
৪. নথিভুক্তিকরণঃ অনলাইন প্রক্রিয়াটি অন্তর্ভুক্তির জন্য এক ধরনের আস্তরিক ব্যবস্থা যা অভিযোগ ও তার প্রক্রিয়াজাতকরণের সঠিক দলিল সংরক্ষণ নিশ্চিত করে। এতে ধরনা করা হয় যে কোনো রকমের জটিলতা বা বিলম্ব ছাড়া দক্ষতার সাথে নথিগুলির অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়।
৫. স্বচ্ছতাঃ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নথিবদ্ধ করণের প্রক্রিয়াকে অধিক স্বচ্ছ এবং অনুসরণীয় করে। ফলে নাগরিকরা নিশ্চিত হতে পারেন যে তাদের অভিযোগ যথাযথভাবে নিবন্ধিত হয়েছে এবং তারা সেই অবস্থার সম্পর্কে আপ-টু-ডেট থাকতে পারবেন।
৬. তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াঃ জিডি করার পর, অনলাইনে তাৎক্ষণিক পাঠানো যায়, যা প্রশাসনের দক্ষ প্রতিক্রিয়া এবং দ্রুত তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করে।
৭. নাগরিক সংযুক্তিঃ এই প্রক্রিয়া নাগরিকদের তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ও সুখ সুবিধার জন্য পুলিশের সাথে সংযুক্ত করে, আবার এতে সমাজের প্রতি পুলিশের দায়বদ্ধতা বাড়ে।