কিভাবে অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ ও রসিদ সংগ্রহ করবেন

অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ ও রসিদ সংগ্রহ
এখন অনলাইনে মাধ্যমে জমির খাজনা পরিশোধের পাশাপাশি রশিদও সংগ্রহ করতে পারেন

আগেকার দিনে লাইনে দাঁড়িয়ে জমির খাজনা দিতে হত। কিন্ত এখন অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়া যায় খুব সহজে। যাদের নামে বাড়ি, জমি বা ফ্ল্যাট রয়েছে তাদের সবাইকে প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে ভূমিকর বা খাজনা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। তবে এখন থেকে জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ করার জন্য আপনাকে আর দিনের পর দিন কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না।

ড. মোঃ জাহিদ, বাংলাদেশ ভূমিকর মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের উপ-সচিব উল্লেখ করেছেন যে, আপনি এখন আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঘরে বসেই সহজে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনার জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন। অনলাইনে খাজনা পরিশোধের পাশাপাশি আপনি একটি ডিজিটাল রসিদও পেয়ে যাবেন।

অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করার নিয়ম

অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম জেনে তা পরিশোধ করতে হলে আপনাকে প্রথমে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের সরকারি ওয়েবসাইটে চলে আসতে হবে। সাইটে আসার ঠিকানা https://ldtax.gov.bd/ আপনি চাইলে মোবাইল বা কম্পিউটার উভয়ই ডিভাইস দিয়ে সাইটে আসতে পারবেন।

ওয়েবসাইটে আসার পর আপনি প্রথম নাম্বারে নাগরিক কর্নার অপশনে ক্লিক করুন। অফিস লগিন হল খাজনা অফিসে কর্মকর্তাদের জন্য। উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর হল উত্তরাধিকারের হিসাব করার জন্য আর ১৬২২২ হল ভূমি বিষয়ক যেকোন তথ্য জেনে নেওয়ার জন্য। যাহোক, আমাদের আলোচনার বিষয় হল নাগরিক কর্ণার

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনাকে ৩টি ধাপে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম জেনে পরিশোধ করতে হবে। যেটার প্রথম ধাপ হলো নাগরিক নিবন্ধন। প্রথমে আপনার মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিয়ে নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আপনি একবার নিবন্ধন করলে পরিবর্তিতে আর কখনও নিবন্ধ করতে হবে না।

১ম ধাপঃ  নাগরিক কর্নারে ক্লিক করার পর আপনাকে নাগরিক নিবন্ধন পেইজে নিয়ে আসা হবে। যেখানে মোবাইল নাম্বার দেওয়ার পর ক্যাপচা হিসাবে দুটি সংখ্যার যোগফল বসাতে হবে। নিচের চিত্রটি খেয়াল করুন।

অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ

সব গুলো তথ্য বসানোর পর পরিবর্তী পদক্ষেপ বাটনে ক্লিক করুন। সব তথ্য ঠিক থাকলে আপনার দেওয়া প্রদত্ত ফোন নম্বারে একটি কোড যাবে। কোডটি বসিয়ে যাচাই করুন অপশনে ক্লিক করুন।

তারপর আপনাকে পরবর্তী পেইজে নিয়ে আসা হবে। যেখানে আপনাকে একটি পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। আপনার ইচ্ছেমতো একটি পাসওয়ার্ড বসিয়ে সংরক্ষণ করুন বাটনে ক্লিক করুন। অবশ্যই পাসওয়ার্ডটি দিয়ে পরবর্তীতে উক্ত সাইটে লগইন করতে এবং জমির খাজনা অনলাইনে পরিশোধ করতে প্রয়োজন হবে। তাই পাসওয়ার্ডটি সেভ অথবা নোট করে রাখুন। মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করার পর আপনি ড্যাশবোর্ডে চলে আসবেন। এই সাইটটি রেস্পন্সিভ ও মোবাইল-ডেস্কটপ ভিউ একই হওয়ার কারণে স্ক্রিনশটগুলো ডেস্কটপ থেকেই দিচ্ছি।

অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ

২য় ধাপঃ এই ধাপে আপনার প্রোফাইলটিকে ১০০% সম্পন্ন করতে হবে। প্রোফাইলটি সম্পন্ন করতে কম্পিউটারের বাম পাশ থেকে প্রোফাইল ট্যাবে ক্লিক করুন। আর মোবাইল ব্যবহারকারীরা বাম পাশের 3ডট (…) থেকে প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করুন।

অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ

এখানে এন.আই.ডি নাম্বার ইনপুট দিলে উপরের ছবিতে দেখনো সব তথ্য দেখতে পাবেন।

এ পর্যায়ে আপনাকে বেশ কিছু তথ্য দিয়ে খতিয়ান নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য খতিয়ান ট্যাবে ক্লিক করুন। যে সকল তথ্য দিতে হবে সেগুলো হলোঃ

  • বিভাগ
  • জেলা
  • উপজেলা
  • মৌজা ও
  • খতিয়ান নাম্বার যুক্ত করতে হবে।

আপনার কাছে যদি হোল্ডিং নাম্বার থাকে সেটি দিতে পারেন। যদি হোল্ডিং নাম্বার না থাকে, সেক্ষেত্রে না দিলেও চলবে। সব গুলো তথ্য দেওয়ার পর সংযুক্তি অপশনে ক্লিক করে খতিয়ান বা দাখিলার একটি স্বচ্ছ ছবি সংযুক্ত করতে হবে। খেয়াল করুন, আপনার প্রদত্ত ছবিটির সাইজ ১ MB’র বেশি হলে হবে না। তাই ছবিটি ১ MB নিচে রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ফটোশপ বা কোন সফটওয়্যার দিয়ে কাট-ছাট করে নিন। TinyPNG ব্যবহার করে যেকোন ছবির কোয়ালিটি না কমিয়ে সাইজ কম্প্রেস করতে পারেন।

তারপর সর্বশেষ মালিকের ধরন নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সম্পত্তি নিজের নামে থাকে, তবে নিজ অপশনটি বেছে নিন। অন্যথায়, যদি সম্পত্তি উত্তরাধিকারে পাওয়া হয়, উত্তরাধিকার অপশনটি নির্বাচন করুন এবং সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন।

স্ক্রোল করে নিচে চলে এলে, আপনি ‘অপেক্ষমান দাখিলা‘ দেখতে পাবেন। এটি নির্দেশ করে যে ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রায় ২ থেকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার তথ্য পরীক্ষিত হবে। যদি সমস্ত তথ্য সঠিক থাকে, তবে তারা এটি নিশ্চিত করবে এবং আপনি পরবর্তীতে পেমেন্ট পরিশোধ করে রসিদ পেতে পারবেন।

‘খতিয়ান’ অপশন থেকে আপনার জমির সমস্ত খতিয়ানের তথ্য নির্বাচন করুন এবং সংযুক্ত করুন। কয়েকদিন পরে, আবার এই ওয়েবসাইটে আসুন এবং ‘নাগরিক কর্নার’ থেকে লগইন অপশনে প্রবেশ করে ফোন নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

লগইন করার পর উপরের দিকে প্রোফাইল পার্সেন্টেজ চেক করতে পারেন। যদি এটি ১০০% না হয়, তাহলে ‘প্রোফাইল’ অপশনে গিয়ে আপনার বর্তমান ঠিকানা ও ইমেইল ঠিকানা নিশ্চিত করুন এবং সেগুলো সংরক্ষণ করুন। এর ফলে, প্রোফাইল পার্সেন্টেজ ১০০% সফলভাবে পূর্ণ হবে। সেই পেজের উপরের দিকের ছবিতে আপনি ১০০% পূর্ণ দেখতে পাবেন। এই ধাপগুলো উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে অনলাইনে আপনার জমির খাজনা সহজেই পরিশোধ করা যাবে।

উপরে দেওয়া ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন ১০০% দেখাচ্ছে। এবার অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম জেনে নিচের নিয়মে খাজনা পরিশোধ করুন।

অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম

প্রোফাইলে লগিন করা অবস্থায় বাম পাশের মেনুবার থেকে হোল্ডিং ট্যাবে ক্লিক করুন। সেখানে আপনি আপনার খাজনা গুলোর স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন। যদি দেখেন অনুমোদিত তাহলে আপনাকে Congratulation, আর যদি পূর্বের ন্যায় দেখেন তাহলে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ

এপর্যায়ে আপনি যে জমির খাজনা পরিশোধ করবেন তার পাশে বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করুন। সেখানে জমি সম্পর্কিত তথ্য অর্থাৎ খাজনা পরিশোধের সময়, বকেয়া টাকা, কত টাকা কর পরিশোধ করতে হবে ইত্যাদি তথ্য  দেখতে পাবেন।

অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম জেনে এখন আপনি যদি কর পরিশোধ করতে চান তাহলে একটু নিচ থেকে অনলাইন পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার সামনে বাংলাদেশের কতগুলো মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক একাউন্ট দেখাবে। এখন আপনি যেটির মাধ্যমে কর পরিশোধ করতে চান সেটি সিলেক্ট করুন। তারপর আপনার সামনে বকেয়া টাকা সহ বিস্তারিত তথ্য দেখাবে।

সবগুলো দেখে পেমেন্ট করতে চাইলে ই-পেমেন্ট অপশনে ক্লিক করুন। তারপর আপনার ব্যাংকিং তথ্য ও পাসওয়ার্ড দিয়ে কনর্ফম করলেই আপনার অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম অনুসারে সফলভাবে পরিশোধিত হয়ে যাবে।

সফল ভাবে পেমেন্ট করা শেষে ৭২ ঘান্টা পর আপনি আবারও সাইটে লগইন করে দাখিলা অপশনে ক্লিক করে আপনার রসিদটি সংগ্রহ করতে পারবেন। এভাবে খুব সহজে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম জেনে খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।

অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ করার সুবিধা

প্রাথমিক ভূমিকাঃ জমির খাজনা মানে সরকারের কাছে জমির উপর নির্ধারিত কর পরিশোধ করা। গতানুগতিক পদ্ধতিতে জমির খাজনা পরিশোধ একটি সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন প্রক্রিয়া।

অনলাইন পরিশোধের সুবিধাঃ অনলাইনে পরিশোধ কার্যক্রমের সুবিধা হলো সময় সাশ্রয়, আরামদায়ক এবং নির্ভেজাল অভিজ্ঞতা।

সাশ্রয়ঃ অনলাইন পদ্ধতিতে জমির খাজনা পরিশোধের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের মূল্যবান সময় বাচাতে পারেন, যা তারা অন্য উপকারী কাজে লাগাতে পারেন।

সুবিধাঃ অনলাইন পরিশোধের প্রক্রিয়া প্রায় সব সময় খোলা থাকে এবং এটি করার জন্য কোনো ভৌতিক অফিসে যাওয়া লাগে না। এই পদ্ধতিতে, পরিশোধকারী তাদের ঘরে বসেই যে কোনো সময়ে পেমেন্ট করতে পারেন।

পরিশোধের নিশ্চয়তাঃ অনলাইন পরিশোধে একটি লেনদেনের রেকর্ড সূচনা হয়, যা পরবর্তীকালে প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এই ডিজিটাল রেকর্ড অবলম্বনের মাধ্যমে খাজনা পরিশোধের সঠিকতা এবং সময়মতো হয়েছে কিনা তা যাচাই করা সহজ হয়।

নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতাঃ অনলাইন পদ্ধতি আধুনিক নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করে তাই তথ্যচুরি বা জালিয়াতির ঝুঁকি কম। গ্রাহকরা তাদের প্রতিটি লেনদেনের উপর সবিস্তার ট্র্যাক রাখতে পারেন, যা প্রক্রিয়াকে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ করে তোলে।

গ্রাহক সেবাঃ যেকোনো ধরনের প্রশ্ন বা অসুবিধা খুব সহজে অনলাইন সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। এর মানে, জমির খাজনা পরিশোধের প্রতি ধাপে গ্রাহকরা মানস্থিতিক সাপোর্ট পেতে পারেন।

পরিবেশ বান্ধবঃ কাগজ-বিহীন লেনদেন পরিবেশের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে, কারণ এর ফলে কাগজের ব্যবহার কমে যায় এবং বৃক্ষ নিধন হ্রাস পায়।

সবমিলিয়ে, অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধ একটি আধুনিক, নিরপেক্ষ, এবং সহজলভ্য পদ্ধতি যা নাগরিকদের জীবনযাত্রায় সহজতা আনে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের কাজকেও নিয়মিত করে তোলে।

কোন সমস্যা হলে কমেন্ট করুন বা আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *