ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স মূলত একটি অনুমোদিত ডকুমেন্ট যা একজন ড্রাইভারকে তার নিজ দেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে বিদেশে বৈধভাবে গাড়ি চালানোর সুযোগ দেয়। এটি আসলে একটি অনুবাদিত সংস্করণ, যেখানে আপনার নাম, ছবি, জন্মতারিখ, এবং ড্রাইভিং তথ্য একাধিক আন্তর্জাতিক ভাষায় উল্লেখ থাকে।
বর্তমান বিশ্বে ভ্রমণ আগের চেয়ে অনেক সহজ ও দ্রুত হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা কিংবা বিনোদনের উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ করে থাকেন। বিদেশ ভ্রমণের সময় অনেকেই নিজে গাড়ি চালিয়ে চলাচল করতে চান। তবে অন্য দেশে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স যথেষ্ট নয়। এজন্য প্রয়োজন হয় ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট (IDP)।
Table of Contents
- কেন ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন
- ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী
- ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের ধাপসমূহ
- ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য খরচ ও ফি
- ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ও নবায়ন
- বিভিন্ন দেশে ব্যবহার বিধি
- ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের সুবিধা
- প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
- শেষ কথা
কেন ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স বা ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং পারমিট (IDP) হলো এমন একটি নথি যা বিদেশে ভ্রমণের সময় গাড়ি চালানোর বৈধতা প্রদান করে। এটি মূলত আপনার জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুবাদিত ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সংস্করণ। ফলে আপনি যখন ভিন্ন ভাষাভাষী কোনো দেশে যান, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সহজেই আপনার ড্রাইভিং যোগ্যতা যাচাই করতে পারে।
IDP প্রয়োজনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিদেশে গাড়ি চালানোর আইনি স্বীকৃতি। অনেক দেশে শুধুমাত্র জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানো যায় না। সেক্ষেত্রে IDP দেখাতে হয়। বিশেষ করে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার অনেক দেশে এটি বাধ্যতামূলক। ফলে বিদেশে নিরাপদ ও আইনসম্মত ভ্রমণের জন্য IDP অপরিহার্য।
ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতেও এই লাইসেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু এটি একাধিক ভাষায় অনূদিত থাকে, তাই পুলিশের কাছে বা ট্রাফিক কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার তথ্য প্রদর্শন করা সহজ হয়। অনেক সময় কেবল জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স ভাষাগত কারণে বোঝা যায় না, কিন্তু IDP থাকলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই আপনার পরিচয় ও যোগ্যতা প্রমাণ করা সম্ভব হয়।
বিদেশে গাড়ি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স অপরিহার্য। প্রায় সব গাড়ি ভাড়া কোম্পানি বিদেশী চালকের কাছ থেকে IDP চায়। এটি থাকলে তারা নিশ্চিত হয় যে আপনি বৈধ ও প্রশিক্ষিত ড্রাইভার। ফলে গাড়ি ভাড়া পাওয়া সহজ হয়।
এছাড়াও, দুর্ঘটনা, বিমা দাবি বা আইনি সমস্যায় পড়লে IDP অনেক বড় সহায়ক হতে পারে। কারণ বিদেশে আপনার ড্রাইভিং সম্পর্কিত আইনি স্বীকৃতি থাকলে সমস্যার সমাধান দ্রুত হয়। কিছু দেশে বিমা কোম্পানিগুলোও দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে IDP না থাকলে জটিলতা তৈরি করে।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, IDP আপনাকে ১৫০টিরও বেশি দেশে বৈধভাবে গাড়ি চালানোর সুযোগ দেয়। এটি একটি বৈশ্বিক নথি যা ভ্রমণকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং যেকোনো দেশে ভ্রমণকে আরও সহজ ও নিরাপদ করে তোলে।
সংক্ষেপে বলা যায়, বিদেশ ভ্রমণে যারা নিজে গাড়ি চালাতে চান তাদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু আইনগত বৈধতা নয়, বরং ভাষাগত সহায়তা, গাড়ি ভাড়া, বিমা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপনার ড্রাইভিং যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের পারমিট (IDP) পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হয়। এটি নিশ্চিত করে যে আবেদনকারী বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী এবং আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলতে সক্ষম। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- বয়সের শর্তঃ IDP আবেদন করার জন্য সাধারণত আপনার ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে। তবে কিছু দেশে পেশাগত ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য উচ্চ বয়স সীমা প্রযোজ্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পেশাগত ড্রাইভারদের জন্য ২১ বা ২২ বছরের ন্যূনতম বয়স থাকতে হতে পারে।
- বৈধ জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ IDP একটি নতুন লাইসেন্স নয়, এটি আপনার বিদ্যমান জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুবাদ ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তাই আবেদনকারীর কাছে অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে যা আইনি এবং অকার্যকর বা বাতিল নয়।
- জাতীয় লাইসেন্সের কার্যকালঃ IDP সাধারণত আপনার জাতীয় লাইসেন্সের মেয়াদের সঙ্গে সমন্বয় করে ইস্যু করা হয়। যদি আপনার জাতীয় লাইসেন্স শীঘ্রই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, তবে IDP আবেদন করার সময় তা বৈধ থাকতে হবে। কিছু দেশে IDP সর্বাধিক ১ থেকে ৩ বছরের জন্য ইস্যু করা হয়, যা আপনার মূল লাইসেন্সের মেয়াদের উপরে নির্ভর করে।
- মেডিকেল শর্তঃ কিছু দেশে IDP আবেদন করার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার সার্টিফিকেট প্রয়োজন। এই মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখায় যে আপনি ড্রাইভিংয়ের জন্য শারীরিকভাবে সক্ষম। সাধারণত চোখের দৃষ্টি, শ্রবণ এবং সাধারণ শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।
এই শর্তাবলী পূরণ করলে বিদেশে নিরাপদে এবং বৈধভাবে গাড়ি চালানোর জন্য IDP পাওয়া যায়।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (IDP) পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এগুলো মূলত আপনার পরিচয়, ড্রাইভিং যোগ্যতা এবং আইনগত বৈধতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। সঠিক কাগজপত্র প্রস্তুত থাকলে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত হয়।
১. বৈধ জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ IDP আসলে আপনার জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সের আন্তর্জাতিক সংস্করণ। তাই আপনার নিজের দেশের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। লাইসেন্সের মেয়াদ অবশ্যই সক্রিয় থাকতে হবে, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে IDP পাওয়া যায় না।
২. পাসপোর্টের কপি ও বৈধ ভিসাঃ বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনার পরিচয় যাচাইয়ের জন্য পাসপোর্টের কপি এবং প্রয়োজনীয় ভিসা জমা দিতে হয়। এটি প্রমাণ করে যে আপনি বৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন।
৩. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): বাংলাদেশের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অন্যতম প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এটি আপনার নাগরিকত্ব ও পরিচয় নিশ্চিত করে।
৪. পাসপোর্ট সাইজের ছবিঃ সাধারণত ২ থেকে ৪ কপি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হয়। ছবিগুলো স্পষ্ট এবং নির্ধারিত মাপের হওয়া জরুরি, কারণ এগুলো IDP কার্ডে ব্যবহৃত হয়।
৫. মেডিকেল সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে): কিছু ক্ষেত্রে আপনার শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হতে পারে। এটি মূলত চোখ, শ্রবণশক্তি এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য যাচাই করে।
৬. আবেদন ফরম পূরণ: IDP এর জন্য একটি নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। এই ফরমে ব্যক্তিগত তথ্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কিত তথ্য এবং যোগাযোগের ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হয়।
৭. ফি জমার রসিদ: ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিতে হয়। ফি জমার রসিদ অবশ্যই সংযুক্ত করতে হয়, নতুবা আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
৮. অন্যান্য প্রমাণপত্র: কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি যেমন ইউটিলিটি বিল (বর্তমান ঠিকানা প্রমাণের জন্য), কর্মসংস্থান সম্পর্কিত নথি বা ভ্রমণ টিকেটের কপি জমা দিতে হতে পারে।
উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত ও জমা দিলে আপনার ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে। ভুল বা অসম্পূর্ণ কাগজপত্র জমা দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে। তাই আবেদন করার আগে প্রতিটি কাগজপত্রের বৈধতা ও হালনাগাদ অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করা উচিত।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের ধাপসমূহ আবেদনের ধাপসমূহ
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (IDP) পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়। সঠিকভাবে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করলে আবেদন প্রক্রিয়া সহজ ও ঝামেলামুক্ত হয়। নিচে ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলোঃ
- ধাপ ১: যোগ্যতা যাচাই- প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার কাছে বৈধ জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। লাইসেন্সের মেয়াদ অবশ্যই সক্রিয় থাকতে হবে। যদি আপনার লাইসেন্স শীঘ্রই মেয়াদোত্তীর্ণ হয় তবে আগে সেটি নবায়ন করতে হবে।
- ধাপ ২: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত- জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, মেডিকেল সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োজন হয়) এবং ফি জমার রসিদসহ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখুন।
- ধাপ ৩: আবেদন ফরম সংগ্রহ ও পূরণ- বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) বা অনুমোদিত সংস্থা থেকে নির্ধারিত আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইনেও ফরম পূরণের সুযোগ থাকতে পারে। ফরমে সঠিক তথ্য প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি।
- ধাপ ৪: ফি জমা প্রদান- IDP এর জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। এটি অনলাইন পেমেন্ট, ব্যাংক বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (যেমন বিকাশ/নগদ/রকেট) এর মাধ্যমে করা যায়। ফি জমার রসিদ আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
- ধাপ ৫: কাগজপত্র জমা- সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদন ফরম সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার আগে কাগজপত্রগুলো ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি, যাতে কোনো ভুল না থাকে।
- ধাপ ৬: যাচাই প্রক্রিয়া- আবেদন জমা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনার নথি যাচাই করবে। জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য তথ্য সঠিক হলে আবেদন অনুমোদন প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হবে।
- ধাপ ৭: লাইসেন্স প্রস্তুতকরণ- সব নথি যাচাই শেষে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করা হয়। সাধারণত এটি একটি বই আকারের বা কার্ড আকারের নথি হয়ে থাকে, যেখানে আপনার তথ্য একাধিক ভাষায় অনুবাদিত থাকে।
- ধাপ ৮: লাইসেন্স গ্রহণ- লাইসেন্স প্রস্তুত হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাকযোগে আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
- ধাপ ৯: লাইসেন্স ব্যবহার- লাইসেন্স পাওয়ার পর বিদেশ ভ্রমণের সময় এটি অবশ্যই নিজের সাথে রাখতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, IDP কেবল জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরিপূরক নথি। সুতরাং বিদেশে গাড়ি চালানোর সময় সর্বদা মূল ড্রাইভিং লাইসেন্সও সাথে রাখতে হবে।
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করলে সহজেই ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। তবে দেশ ও সংস্থা ভেদে প্রক্রিয়ায় কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে। তাই আবেদন করার আগে অবশ্যই সর্বশেষ তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য খরচ ও ফি
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (IDP) করার সময় কিছু নির্দিষ্ট খরচ ও ফি গুনতে হয়। এগুলো দেশভেদে, মেয়াদভেদে এবং আবেদনের ধরণভেদে ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে সাধারণত বিআরটিএর (BRTA) মাধ্যমে আবেদন করা হয়। নিচের ছকে বিস্তারিত খরচ ও ফি তুলে ধরা হলোঃ
খরচের ধরণ | আনুমানিক পরিমাণ (টাকা) | বিবরণ |
---|---|---|
আবেদন ফি | ২০০০ – ২৫০০ | ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের মূল সরকারি ফি, যা BRTA নির্ধারণ করে থাকে। |
সার্ভিস চার্জ | ২০০ – ৫০০ | আবেদন প্রক্রিয়া ও সার্ভিস হ্যান্ডলিং ফি হিসেবে নেওয়া হয়। |
ছবি তোলা | ১০০ – ২০০ | পাসপোর্ট সাইজ ছবি তোলার জন্য খরচ। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ছবি নিজেই জমা দিতে হয়। |
ফটোকপি ও ডকুমেন্ট প্রস্তুতি | ৫০ – ১০০ | জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও লাইসেন্সের কপি করার খরচ। |
ডেলিভারি চার্জ | ১০০ – ২০০ | লাইসেন্স ডাকযোগে পাঠানো হলে অতিরিক্ত ডেলিভারি চার্জ দিতে হতে পারে। |
মোট খরচ | ২৫০০ – ৩৫০০ | সকল খরচ মিলিয়ে সাধারণত বাংলাদেশে এতটুকু খরচ হয়। |
⚠️ নোটঃ
- খরচ সময় ও নীতিমালা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
- বিদেশে IDP করার ক্ষেত্রে ফি আরও বেশি হতে পারে (৫০ – ১৫০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত)।
- অনলাইন আবেদন করলে অতিরিক্ত অনলাইন পেমেন্ট চার্জ যুক্ত হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ ও নবায়ন
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (IDP) একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধ থাকে। সাধারণত বাংলাদেশসহ বেশিরভাগ দেশে এই পারমিটের মেয়াদ ১ বছর। তবে অনেক দেশের ক্ষেত্রে মেয়াদ ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত হতে পারে। বিদেশ ভ্রমণ বা দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানের ক্ষেত্রে এই মেয়াদের বিষয়টি আগে থেকেই জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
- লাইসেন্সের মেয়াদঃ
- বাংলাদেশে ইস্যুকৃত IDP সাধারণত ১ বছরের জন্য কার্যকর।
- এক বছর পর IDP স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়ে যায়।
- বিদেশে দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা থাকলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়।
- মেয়াদ শেষ হওয়ার পর IDP নবায়ন না করলে এটি ব্যবহার করা বেআইনি বলে গণ্য হবে।
- নবায়ন প্রক্রিয়াঃ
- প্রথমে আপনার জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স বৈধ কিনা তা যাচাই করুন। মেয়াদোত্তীর্ণ জাতীয় লাইসেন্স দিয়ে IDP নবায়ন সম্ভব নয়।
- আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং পূর্বের লাইসেন্সের তথ্য উল্লেখ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন— জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ছবি এবং পুরনো IDP জমা দিতে হবে।
- ফি প্রদান করতে হবে, যা নতুন আবেদন করার মতোই। সাধারণত নবায়নের ফি নতুন IDP ইস্যুর সমান হয়।
- আবেদন অনুমোদিত হলে নতুন IDP ইস্যু করা হবে, যা পরবর্তী মেয়াদ পর্যন্ত বৈধ থাকবে।
- বিদেশে অবস্থানকালে নবায়নঃ
- যদি আপনি বিদেশে অবস্থানকালে IDP এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তবে সাধারণত বাংলাদেশ থেকে নতুন করে আবেদন করতে হয়।
- কিছু ক্ষেত্রে দূতাবাস বা কনস্যুলেট সীমিত পরিসরে সহায়তা করতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশে থেকে নবায়ন সম্ভব নয়।
- গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শঃ
- ভ্রমণের আগে আপনার IDP এর মেয়াদ যাচাই করে নিন।
- যদি ভ্রমণ এক বছরের বেশি হয়, তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন IDP আবেদন করা উচিত।
- নবায়নের সময় সব কাগজপত্র হালনাগাদ (আপডেটেড) অবস্থায় থাকতে হবে।
- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নবায়ন করলে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা এড়ানো যায়।
সংক্ষেপে, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ সীমিত হলেও নিয়মিত নবায়নের মাধ্যমে আপনি বিদেশে নির্বিঘ্নে গাড়ি চালানোর সুযোগ বজায় রাখতে পারবেন।
বিভিন্ন দেশে ব্যবহার বিধি
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (IDP) বিশ্বব্যাপী ১৫০টিরও বেশি দেশে গ্রহণযোগ্য। তবে প্রতিটি দেশে এর ব্যবহার পদ্ধতি ও শর্তাবলী কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। কোথাও এটি সরাসরি ব্যবহার করা যায়, আবার কোথাও সীমিত সময় বা নির্দিষ্ট শর্তে এটি কার্যকর। তাই বিদেশ ভ্রমণের আগে যে দেশে যাচ্ছেন সেই দেশের আইন সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।
- ইউরোপীয় দেশসমূহে ব্যবহার বিধিঃ
- ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে (যেমন জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন) IDP বৈধ।
- সাধারণত ১ বছরের জন্য IDP ব্যবহার করে গাড়ি চালানো যায়।
- যদি দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান (১ বছরের বেশি) করতে চান তবে সেই দেশের স্থানীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হয়।
- কিছু দেশে IDP এর পাশাপাশি আপনার জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখাতে হয়।
- উত্তর আমেরিকায় ব্যবহার বিধিঃ
- যুক্তরাষ্ট্র- বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে IDP বৈধ, তবে স্থানীয় আইন ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত পর্যটক হিসেবে ১ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
- কানাডা- সব প্রদেশে IDP গ্রহণযোগ্য। তবে কিছু প্রদেশে ইংরেজি অনুবাদ যুক্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সও থাকতে হয়।
- এশিয়ার দেশসমূহে ব্যবহার বিধিঃ
- জাপান- শুধুমাত্র ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনের আওতাধীন IDP সেখানে বৈধ।
- সিঙ্গাপুর- IDP সাধারণত ১২ মাস পর্যন্ত কার্যকর। তবে দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানে স্থানীয় লাইসেন্স নিতে হয়।
- মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড- পর্যটকদের জন্য IDP বৈধ এবং সহজে গাড়ি ভাড়া নেওয়া যায়।
- ভারত- বিদেশি নাগরিকদের IDP দিয়ে নির্দিষ্ট সময় গাড়ি চালানো অনুমোদিত।
- মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে ব্যবহার বিধিঃ
- সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)- পর্যটক ভিসায় IDP বৈধ, তবে বসবাসের ভিসা থাকলে স্থানীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স আবশ্যক।
- সৌদি আরব- IDP ব্যবহার করা যায়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় অনুমতি বা অনুমোদিত ভাড়া কোম্পানি থেকে গাড়ি নিতে হয়।
- কাতার ও কুয়েত- IDP স্বল্প সময়ের জন্য বৈধ, তবে দীর্ঘমেয়াদী বসবাসকারীদের জন্য স্থানীয় লাইসেন্স প্রয়োজন।
- আফ্রিকা মহাদেশে ব্যবহার বিধিঃ
- সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)- পর্যটক ভিসায় IDP বৈধ, তবে বসবাসের ভিসা থাকলে স্থানীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স আবশ্যক।
- সৌদি আরব- IDP ব্যবহার করা যায়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় অনুমতি বা অনুমোদিত ভাড়া কোম্পানি থেকে গাড়ি নিতে হয়।
- কাতার ও কুয়েত- IDP স্বল্প সময়ের জন্য বৈধ, তবে দীর্ঘমেয়াদী বসবাসকারীদের জন্য স্থানীয় লাইসেন্স প্রয়োজন।
- আফ্রিকা মহাদেশে ব্যবহার বিধিঃ
- দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশরসহ অনেক আফ্রিকান দেশে IDP বৈধ।
- তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু দেশে বিদেশিদের গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে।
- অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ব্যবহার বিধিঃ
- অস্ট্রেলিয়া- প্রতিটি প্রদেশের আইন ভিন্ন হলেও সাধারণত ১ বছরের জন্য IDP ব্যবহার করা যায়।
- নিউজিল্যান্ড- IDP বৈধ, তবে জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সের সাথে রাখতে হয়।
সবশেষে বলা যায়, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকারীদের জন্য একটি অপরিহার্য নথি। তবে দেশের আইন ভেদে নিয়ম পরিবর্তিত হতে পারে, তাই ভ্রমণের আগে গন্তব্য দেশের ড্রাইভিং আইন অবশ্যই যাচাই করে নেয়া উচিত।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের সুবিধা
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (IDP) শুধু একটি কাগজপত্র নয়, এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। যারা বিদেশে ঘুরতে যান, পড়াশোনা করতে যান কিংবা চাকরির কারণে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন, তাদের জন্য এই লাইসেন্স অনেক সুবিধা প্রদান করে। নিচে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
- বিদেশে বৈধভাবে গাড়ি চালানোর অনুমতিঃ IDP থাকলে আপনি সহজেই ১৫০টিরও বেশি দেশে আইনগতভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন। অনেক দেশে শুধুমাত্র জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স যথেষ্ট নয়, সেখানে গাড়ি চালানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্স বাধ্যতামূলক।
- গাড়ি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে সহজতাঃ বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক রেন্ট-এ-কার কোম্পানি IDP ছাড়া গাড়ি ভাড়া দেয় না। তাই ভ্রমণের সময় নিজে গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে এই লাইসেন্স অপরিহার্য।
- নিরাপত্তা ও আইনগত সুরক্ষাঃ বিদেশে ভ্রমণের সময় যেকোনো দুর্ঘটনা বা আইনগত জটিলতায় পড়লে IDP আপনার পরিচয় ও বৈধ ড্রাইভার হওয়ার প্রমাণ দেয়। এটি আপনাকে আইনগতভাবে সুরক্ষিত রাখে।
- গ্লোবাল স্বীকৃতিঃ জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স শুধু আপনার দেশে বৈধ থাকে, কিন্তু IDP আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এটি আপনার লাইসেন্সকে বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা দেয়।
- পড়াশোনা ও গবেষণার সুবিধাঃ যেসব শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যান, তারা প্রায়ই পার্ট-টাইম কাজ বা গবেষণার জন্য গাড়ি চালাতে হয়। IDP থাকলে তারা সহজেই গাড়ি চালাতে পারেন।
- একাধিক দেশে ভ্রমণের সময় সুবিধাঃ একই ভ্রমণে যদি আপনি একাধিক দেশে যান, তবে প্রতিটি দেশে আলাদা লাইসেন্স করতে হয় না। একটি IDP থাকলেই একাধিক দেশে গাড়ি চালানো যায়।
- সহজ পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহারঃ কিছু দেশে হোটেল বুকিং, গাড়ি ভাড়া বা পুলিশের কাছে পরিচয় প্রদর্শনের সময় IDP একটি অতিরিক্ত পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়।
সবশেষে বলা যায়, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স কেবল বিদেশে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় না, বরং এটি ভ্রমণকে সহজ, নিরাপদ ও স্বাধীন করে তোলে। তাই যারা বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য IDP সংগ্রহ করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (IDP) নিয়ে অনেকেরই বিভিন্ন প্রশ্ন থাকে। এখানে সবচেয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও তাদের বিস্তারিত উত্তর তুলে ধরা হলো, যা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে করা যায়?
উত্তরঃ বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আপনার অবশ্যই একটি বৈধ স্মার্ট জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BRTA) তে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। আবেদন অনুমোদনের পর IDP সংগ্রহ করা যায়।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যাওয়ার আগে কি IDL করতে হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ভ্রমণের আগে বাংলাদেশেই এটি করতে হবে।
প্রশ্নঃ কি শুধু পর্যটকরা IDP ব্যবহার করতে পারে?
উত্তরঃ না, শুধুমাত্র পর্যটক নয়। যারা বিদেশে চাকরি করতে যান, শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করতে যান বা দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান করেন, তাদের জন্যও IDP সমানভাবে কার্যকর।
প্রশ্নঃ IDL ছাড়া কি বিদেশে গাড়ি চালানো সম্ভব?
উত্তরঃ বেশিরভাগ দেশে নয়। তবে কিছু দেশে স্থানীয় লাইসেন্স নিয়ে চালানো যায়।
প্রশ্নঃ IDL কি অনলাইনে করা যায়?
উত্তরঃ বর্তমানে সরাসরি BRTA অফিসে আবেদন করতে হয়। ভবিষ্যতে অনলাইনে করার সুবিধা আসতে পারে।
উপরের প্রশ্নোত্তর থেকে সহজেই বোঝা যায় কেন ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স অত্যন্ত জরুরি এবং কীভাবে এটি সংগ্রহ করতে হয়।
শেষ কথা
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (IDP) শুধু একটি কাগজপত্র নয়, বরং এটি বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য এক ধরনের বৈধ সুরক্ষা ও সুবিধার প্রতীক। যারা বিদেশে গিয়ে নিজের গাড়ি চালাতে চান বা গাড়ি ভাড়া নিতে চান, তাদের জন্য এটি অপরিহার্য। বিশ্বব্যাপী ১৫০টিরও বেশি দেশে এই লাইসেন্স স্বীকৃত হওয়ায় এটি এক ধরনের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সনদ হিসেবেও কাজ করে।
বাংলাদেশ থেকে IDP পেতে হলে প্রথমে বৈধ জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। এরপর BRTA এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন জমা দিতে হয়। কাগজপত্র জমা, ফি পরিশোধ এবং নিয়ম মেনে আবেদন সম্পন্ন করলে IDP সহজেই পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে, এটি আপনার মূল জাতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিকল্প নয়; বরং সহায়ক একটি দলিল। বিদেশে গাড়ি চালানোর সময় সবসময় জাতীয় লাইসেন্স এবং IDP একসাথে বহন করা বাধ্যতামূলক।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে IDP থাকার ফলে ভাড়ার গাড়ি নেওয়া সহজ হয়, ট্রাফিক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সমস্যা হয় না এবং স্থানীয় নিয়ম মেনে নিরাপদে চলাফেরা করা যায়। যারা বিদেশে চাকরি, পড়াশোনা বা দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানের জন্য যাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
পরিশেষে বলা যায়, বিদেশ ভ্রমণের আগে অন্যান্য কাগজপত্রের মতোই ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি। এটি কেবল আপনার ভ্রমণকে সহজ করে না, বরং আইনি জটিলতা থেকে রক্ষা করে। তাই যারা বিদেশে নিজে গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা করছেন, তাদের উচিত আগে থেকেই IDP সংগ্রহ করা এবং প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা।
সঠিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে সময়মতো আবেদন করলে IDP পাওয়া মোটেও কঠিন নয়। আর একবার এটি হাতে পেলে বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হবে আরও স্বচ্ছন্দ, নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য।