অল্প খরচে সংসার চালাবেন কিভাবে

অল্প খরচে সংসার চালাবেন কিভাবে-cybersheba.com
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

অল্প খরচে সংসার চালাতে গিয়ে এখন সবাই হিমশিম খাচ্ছে। দুর্মূল্যের এই বাজারে কিভাবে অল্প খরচে সংসার চালানো যায় সেটা নিয়ে সবাই চিন্তায় আছে। যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা হয় তাহলে এটা অবশ্যই সম্ভব। তাই যারা অনেকদিন ধরে ভাবছেন কিভাবে অল্প খরচে সংসার চালাবেন তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি।

অল্প খরচে সংসার চালানোর উপায়

এজন্য প্রথমে আপনার মনের ভিতরে সংযমী ভাব আনতে হবে। সংসারের জন্য অল্প খরচ বা বেশি খরচ – দুটোই নির্ভর করে আমাদের মনের উপর। আপনি যদি বাজারে গিয়ে দরাজ দিলে বাজার করতে থাকেন, তাহলে আপনার খরচের পরিমাণ হু হু করে বেড়ে যাবে। কিন্তু তার পরিবর্তে কেনাকাটায় যদি একটু সংযমী হন, তাহলে আপনি অনেক অহেতুক খরচ থেকে বেঁচে যাবেন।

এজন্য কখনো ক্ষুধা পেটে বাজারে যাবেন না। কারণ মানুষ যখন ক্ষুধার্ত থাকে, তখন সে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে থাকে। তাই বাজারে যাওয়ার আগে কিছু না কিছু খেয়ে পেট ভরে যাবেন। এছাড়া নিচে আরো কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো, যেটার মাধ্যমে আপনি সংসারের খরচ কমাতে পারবেন।

পুরো সপ্তাহের বাজার একবারে করা

আপনি যদি আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য প্রতিদিন বাজারে যান, তাহলে সে ক্ষেত্রে খরচ বেশি হয়ে যাবে। এজন্য চেষ্টা করুন পুরো সপ্তাহের বাজার একবারে করার জন্য। তাই বাজারে যাওয়ার আগে একটা লিস্ট বা ফর্দ তৈরি করুন যে বাজারে গিয়ে আপনাকে কি কি কিনতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী সপ্তাহের বাজারে একবারে করে নিয়ে আসুন।

bazar-অল্প খরচে সংসার-cybersheba.com.png

দিন অনুযায়ী ভাগ করা

সাধারণত বাজার থেকে আসার পর খাদ্য সংরক্ষণের জন্য আমরা ফ্রিজ ব্যবহার করি। তো ফ্রিজে আপনি দিন হিসাবে খাবার ভাগ করে রাখতে পারেন। এতে করে খাবার অপচয় হবে না আবার বেশিও লাগবে না। যদি একটা উদাহরণ দেই তাহলে বুঝতে পারবেন। যেমনঃ আপনার ৪ সদস্যের পরিবারের জন্য প্রতিদিন দুইটা করে মাছ রাখবেন, ৫০০ গ্রাম ওজনের ঝোল তরকারি এবং ২৫০ গ্রাম ওজনের ভাজি তরকারি।

তবে তরকারির ধরণ ভেদে এই পরিমাণ একটু কম-বেশি হতে পারে। অল্প খরচে সংসার চালানোর জন্য এভাবে মশলা, তরকারী ও মাছ ভাগ ভাগ করে রাখতে পারেন।

গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা

রান্না শুরুর আগে সকল প্রকার তরকারি ও মসলাপাতি কেটেকুটে রাখতে হবে। যেন চুলায় রান্না শুরু করার পর অকারনে চুলা জ্বালিয়ে রাখতে না হয়। বারবার চুলা জ্বালানোর চেয়ে, একবার জ্বালিয়ে সকল কাজ সমাধা করার চেষ্টা করবেন। বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য বৈদ্যুতিক ফ্যানগুলোতে রেগুলেটর লাগাতে পারেন, যেন যতোটুকু পরিমাণ দরকার সেই পরিমাণ স্পিডে ফ্যান ঘুরে। প্রয়োজন না হয় তাহলে ফ্রিজের সুইচ অফ করে রাখতে পারেন।

সাইকেলের উপর নির্ভরশীলতা

আপনি যদি বাইক বা প্রাইভেটকার ব্যবহারে অভ্যস্ত হন এবং পাশাপাশি চান আপনার সংসারের খরচ কমে আসুক, তাহলে অল্প খরচে সংসার চালানোর জন্য সাইকেলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে দিন। অল্প দূরত্বের পথ হেঁটে যাওয়া-আসা করুন এবং একটু বেশি দূরত্বের পথ সাইকেল ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার শরীর তো ভালো থাকবেই, পাশাপাশি অনেক অর্থের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।

সৌখিন জিনিস এড়িয়ে চলুন

প্রয়োজন অতিরিক্ত কসমেটিক্স সামগ্রী এড়িয়ে চলুন। সাবান, শ্যাম্পু, পেস্ট, ক্লিনিং পাউডার ইত্যাদি যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পরিমাণ কিনুন। সকল প্রকার বিলাসী দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন। মনে রাখবেন, মানুষের বিলাসিতার শেষ নাই। তাই একবার বিলাসিতাকে প্রশ্রয় দিলে আপনি কখনোই খরচ সংকুলান করে উঠতে পারবেন না।

প্রয়োজন ছাড়া কোন জিনিস কিনবেন না

আমাদের যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই জিনিস কেনা উচিত। তাই লোক দেখানোর জন্য অথবা বিভিন্ন কোম্পানির অফারের ফাঁদে পড়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। ঈদ, পূজা বা যেকোনো উপলক্ষে বিভিন্ন রকম কোম্পানি বিভিন্ন রকম অফার দেয় – যদি আপনার প্রয়োজন না হয় তাহলে অফার অনেক লোভনীয় হলেও ওই জিনিস কিনবেন না। অল্প খরচে সংসার চালানোর জন্য এটা একটা কার্যকরী উপায়।

মিনিম্যালিস্ট হোন

মিনিম্যালিস্ট বলতে বুঝায়, কৃপণতা না করে যতটুকু দরকার ততটুকু কেনা। যেমন, আপনার প্রয়োজনীয় পোশাক আছে; এরপরেও বাজারে গিয়ে যদি কোন শোরুমে নতুন ডিজাইনের পোশাক দেখেন সেটা কেনা থেকে বিরত থাকা। অথবা আপনার ব্যবহৃত ফোনটিতে সামান্য স্ক্র্যাচ পড়েছে, আরো একটা নতুন ফোন না কিনে সেটা দিয়ে চালিয়ে নেওয়াই হল মিনিম্যালিস্ট লাইফ লিড করা। অর্থাৎ, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস না কেনা; আবার কৃপণতাও নয়।

বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া

আমরা অনেক সময় শখ করে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে চটপটি, ফুচকা, চিকেন ফ্রাই, ফালুদা, স্যান্ডউইচ সহ বিভিন্ন রকম চাইনিজ খাবার খেয়ে থাকি। রেস্টুরেন্ট গুলো এইসব খাবারের জন্য অনেক টাকা বিল করে। কিন্তু খুব অল্প খরচে আপনি চাইলে এসব খাবার বাড়িতে তৈরি করেও খেতে পারেন। এর ফলে দুইটা লাভ হবেঃ এক, স্বাস্থ্যকর খাবার পাবেন এবং দুই, খরচের পরিমাণ কমে যাবে।

দেশীয় পণ্যের ব্যবহার

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসব আসবাব ও কসমেটিক্স ব্যবহার করি, বাজারে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন প্রতিটা জিনিসেরই একাধিক উৎপাদক রয়েছে। অর্থাৎ যেসব উৎপাদকদের আমরা ব্র্যান্ড বলে জানি, তাদের পণ্যের গুণগতমান কিছুটা ভালো এবং দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। কিন্তু আপনি খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, একই পণ্য আমাদের অনেক দেশীয় কোম্পানি উৎপাদন করে এবং দাম বেশ কম।

তাই অল্প খরচে সংসার চালানোর জন্য যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন না। ব্র্যান্ডের জিনিস এড়িয়ে চলুন। একই কোয়ালিটির পণ্য কিন্তু কম দামে দেশীয় পণ্য কিনুন।

সর্বশেষ

সবাইকে আমি যেই পরামর্শ দিয়ে আপনাকেও একই পরামর্শ দেবো – যেটা আমি নিজেও মেনে চলি। আপনার আয় যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন এবং ব্যয় যতই বেশি হোক না কেন, অবশ্যই চেষ্টা করবেন কিছু না কিছু সঞ্চয় করার। এজন্য কোন ব্যাংকে নির্দিষ্ট বছর মেয়াদী ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) একাউন্ট খুলতে পারেন। অথবা যে কোন উপায়ে চাইলে টাকা সঞ্চয় করে রাখতে পারেন। তবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবেন যে আপনি অবশ্যই সঞ্চয় করবেন। আপনার সংসার সুখের হোক। অল্প খরচে সংসার চালানোর এই উপায়গুলি আশাকরি আপনার কাজে লাগবে।

Picture of Ali Hayder

Ali Hayder

আমি আলী হায়দার, সাইবার সেবা'র একজন নিমিত ব্লগার। অনলাইন আর্নিং, আইটি প্রফেশন, কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি বিষয়ের উপর আমার ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এই ওয়েবসাইটে ই-সার্ভিস নিয়ে নিয়মিত লেখা-লেখি করছি।

ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/alihayder2050/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *