প্রাথমিক উপবৃত্তি পোর্টালের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন কিছু কিছু সময় জরুরী হয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অর্থ মোবাইল ফিন্যান্স সার্ভিস নগদ এর মাধ্যমে অর্পণ করা হচ্ছে। সরকার প্রতি ৬ মাস অন্তর এই সাহায্যের অর্থ প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকের নগদ মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাঠায়। পরিতাপের বিষয় এই যে, অনেক অভিভাবকের অসচেতনতার কারণে তারা প্রায়শই তাদের মোবাইল নম্বর বদলে ফেলে, অথবা সিম হারানোর পর তা পুনরায় চালু না করে নতুন সিম ক্রয় করে ব্যবহার করে।
অনেক অভিভাবক স্বয়ং জানেন না যে তারা কোন এনআইডি ব্যবহার করে সিম কিনেছিলেন। তাই যখন সিমটি নষ্ট হয়ে যায় অথবা হারিয়ে যায়, তখন সেই সিম পুনরুদ্ধার করা তাদের জন্যে অসাধ্য হয়ে পড়ে। উপবৃত্তির অর্থ বিতরণের পর, এই বিষয়ে অসচেতন অভিভাবকেরা প্রায়শই স্কুলে এসে অভিযোগ করে বলে তাদের মোবাইলে কোনো টাকা আসেনি। এইজন্যে, এই সব অভিভাবকের জন্য উপবৃত্তির টাকা পুনরায় পেতে, তাদের মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
আজকের এই লেখায় আমি দেখাবো কীভাবে উপবৃত্তি পোর্টালে মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করবেন। তবে এই পরিবর্তন করতে হলে আপনার উপজেলা শিক্ষা অফিস অথবা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সহায়তায় ID এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে তারপরেই মোবাইল নম্বর পরিবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।
প্রাথমিক উপবৃত্তি পোর্টালে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করার নিয়ম
উপবৃত্তি পোর্টালে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে আপনার ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ চালু করুন। এরপর অপেরা, ফায়ারফক্স, ক্রোম বা যেকোন ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে/সার্চ বারে pesp.finance.gov.bd এই ঠিকানাটা লিখে ইন্টার বাটনে একবার প্রেস করুন অথবা সরাসরি এই লিংকে ক্লিক করুন। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি PESP এর ফুল ফর্ম হল Primary Education Stipend Programme অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রোগ্রাম। যাহোক, উক্ত লিংকে আসার পর এরকম একটি ইন্টারফেইস দেখতে পাবেন।
মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করার জন্য এবার আপনার কাছে থাকা ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ-ইন বাটনে ক্লিক করুন। লগইন করার পর বামপাশের ড্যাশবোর্ডের নিচে বেনিফিশিয়ারি শিক্ষার্থী অপশনে ক্লিক করুন।
তারপর শিক্ষার্থীর তথ্য আপডেট অপশনে ক্লিক করুন। এবার পেইজের উপরের দিক থেকে বিদ্যালয়ে নাম সিলেক্ট করুন। যে শ্রেণীর শিক্ষার্থীর মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করবেন সেই শ্রেণী সিলেক্ট করে খুঁজুন বাটনে ক্লিক করুন। আপনার সামনে সিলেক্টকৃত শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থীর তথ্য দেখতে পাবেন।
এবার যে শিক্ষার্থীর মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতে চান তাকে খুঁজে নিন এবং ডান তার পাশে থাকা কলম আইকনে ক্লিক করুন। এটা মূলত এডিট বা সম্পাদনা করার একশন বাটন। কলম আইকনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে উক্ত শিক্ষার্থীর সকল তথ্য এডিট অপশন চলে আসবে। এবার আপনার ইচ্ছে মতো মোবাইল নম্বর পরিবর্তন সহ যেকোন তথ্য সম্পাদনা করুন। শিক্ষার্থীর সকল তথ্য আপডেট করার পর আরো একবার রিভিউ করে নিন। তারপর নিচে থাকা সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন। তথ্যটি সংরক্ষণ হয়ে গেলে আপনার কাজ শেষ।
এই নিয়মে আপনি অতি সহজেই আপনার স্কুলের যেকোনো ছাত্রছাত্রীর উপবৃত্তি পোর্টালে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন তো বটেই, অন্যান্য সকল তথ্য নবায়ন বা পরিবর্তন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি পোর্টালে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন বেশ সহজ হলেও এখনও সহযোগী শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষকের ব্যবহৃত আইডি থেকে এই পরিবর্তন সম্ভব নয়। এমন এক্সেস তাদের দেওয়া হয়নি। তাই আপনি যদি নিজের স্কুলের কোনো ছাত্রছাত্রীর তথ্য বা মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে চান, তখন সহায়ক উপজেলা শিক্ষা অফিসার অথবা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাহায্য নিতে হবে। পোর্টালে মোবাইল নম্বর পরিবর্তন যদিও সহজ, তবে সিনিয়র কর্তৃপক্ষের আইডি দ্বারা কাজটি করার বাধ্যবাধকতার কারণে শিক্ষকদের জন্য এটি কখনও কখনও জটিল হয়ে পড়ে। সুতরাং, অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং আপনাকে নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করা উচিত যেন পরবর্তীতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা এড়ানো যায়।
উপবৃত্তি নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ চাহিদা প্রেরণ করে পরে একাউন্ট খোলা যাবে কী?
উত্তরঃ যাবে, তবে এক্ষেত্রে নগদ ছাড়া অন্য একাউন্টগুলোতে টাকা ঢুকবে না। বাউন্স ব্যাক হবে। তাই দ্রুত অভিভাবকদের দেয়া মোবাইল একাউন্টগুলো নগদ করতে হবে।
প্রশ্নঃ নগদ একাউন্ট কী স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে?
উত্তরঃ না, অবশ্যই নগদ একাউন্ট খুলতে হবে।
প্রশ্নঃ পেমেন্ট হিস্টোরি কী ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করা যাবে?
উত্তরঃ পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা যাবে।
প্রশ্নঃ যাদের নগদ একাউন্ট আছে এখন কী শুধু তাদের চাহিদা প্রেরণ করবো?
উত্তরঃ না, সকল শিক্ষার্থীর চাহিদা প্রেরণ করতে হবে। সকল অভিভাবকের নম্বরে নগদ একাউন্ট খুলতে হবে।
প্রশ্নঃ স্কুলে দেওয়া বিকাশ/রকেট/অন্য একাউন্ট। অভিভাবকের এনআইডি দিয়ে অন্য নম্বরে নগদ খুলেছে। এখন কী করবে?
উত্তরঃ অন্য নম্বরে খোলা নগদ একাউন্ট বন্ধ করে স্কুলে দেওয়া নম্বরে নগদ একাউন্ট খুলতে হবে।
প্রশ্নঃ মোবাইল নম্বর সংশোধন বা পরিবর্তন করা যাবে কী?
উত্তরঃ ইনশাআল্লাহ, সকল সমস্যার সমাধান হবে। তবে আগে যেভাবে নির্দেশনা আসে সেভাবে কাজ করতে হবে। তারপর পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
প্রশ্নঃ শিক্ষার্থীর যে শ্রেণিতে থাকার কথা তা না দেখিয়ে পোর্টালে অন্য শ্রেণি দেখাচ্ছে। করণীয় কী?
উত্তরঃ যখন এডিট অপশন যুক্ত করবে তখন হালনাগাদ করতে হবে।
প্রশ্নঃ ট্রান্সফার গ্রহণ হয় না কেন?
উত্তরঃ আপাতত ট্রান্সফার অপশন বন্ধ আছে। প্রয়োজনে এ অপশন আবার চালু হবে।
প্রশ্নঃ কোন কোন শিক্ষার্থীর টাকা বাউন্স ব্যাক বা ফেরত গেছে তা কিভাবে দেখবো?
উত্তরঃ পোর্টালে ডিসবার্সমেন্ট সিট/পেমেন্ট হিস্টোরি/পে-রোল রিপোর্ট যুক্ত হলে সব দেখতে পাবেন।
প্রশ্নঃ আইডি পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করণীয় কী?
উত্তরঃ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের হোয়াটসআপ গ্রুপের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিভাগে যোগাযোগ করে সমাধান করতে হবে।
প্রশ্নঃ অনেক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। আবার অনেকে অবসরে গেছেন। তাহলে কী নতুন করে আইডি পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে?
উত্তরঃ আগামী অর্থবছর আইডি পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হবে। তাই এবছর পুরাতন আইডি পাসওয়ার্ড দিয়েই কাজ করতে হবে।
প্রশ্নঃ নগদ একাউন্টের ক্ষেত্রে কোন ম্যাসেজ আসে না কেনো?
উত্তরঃ এবার ডিপিও, ইউইইও, এইউইইও স্যারদের মোবাইলে ম্যাসেজ যাবে। উনারা প্রতিটি স্কুলে জানিয়ে দেবেন।
প্রশ্নঃ সকল শিক্ষার্থীর টাকা একসাথে আসে না কেনো?
উত্তরঃ এবার জেলা/উপজেলা ভিত্তিক সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলার সকল শিক্ষার্থীদের টাকা একসাথে প্রেরণ করা হবে।
প্রশ্নঃ নগদের হেল্প লাইন থেকে একাউন্টের পিন রিসেটসহ যেকোনো সেবা পেতে বেগ পেতে হয় কেন?
উত্তরঃ নগদের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সেবা সহজীকরণ করার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক ক্যাম্পেইন করবে নগদ কর্তৃপক্ষ।
কেন বার বার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করা উচিত না
মোবাইল নাম্বার ব্যক্তিগত ও পেশাগত যোগাযোগের এক অপরিহার্য অংশ। যারা বার বার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করেন, তারা একাধিক ঝামেলায় পড়তে পারেন এবং তাদের সামাজিক ও পেশাগত জীবনে এর প্রতিকূল প্রভাব পড়তে পারে।
প্রথমত, নিয়মিত নাম্বার পরিবর্তনের ফলে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। পরিচিত ও পেশাজীবনের মানুষজন নতুন নাম্বার জেনে উঠতে সময় নিয়ে থাকেন, এতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যোগাযোগ অসম্পূর্ণ থাকে।
দ্বিতীয়ত, ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় দুর্ভোগ ডেকে আনে। অনেক অনলাইন পরিষেবা, যেমন ব্যাঙ্কিং, সামাজিক মাধ্যম, মোবাইল অ্যাপ ইত্যাদি ফোন নাম্বার দিয়ে ভেরিফিকেশন চায়। বারবার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করলে এই পরিষেবাগুলো ব্যবহার করা কঠিন হয় এবং প্রতিবার নতুন নম্বর দিতে হয়।
তৃতীয়ত, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সমস্যা হয়। অনেক নিরাপত্তা সিস্টেম এসএমএস বা কল বেসড Two-step Verification (২FA) হিসেবে ফোন নাম্বার ব্যবহার করে। বার বার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করলে, নিরাপত্তার এই স্তরগুলির প্রযুক্তিগত সুরক্ষা নষ্ট হয় এবং অ্যাকাউন্টগুলি হ্যাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সিস্টেম থেকে যদি পুরানো নম্বরের আবার কোন নোটিফিকেশন পাঠায়, সেটি অন্য কেউ পাওয়ার পর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারেন।
চতুর্থত, মোবাইল নম্বর পরিবর্তন বা সম্পাদনার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং প্রায়ই হয়রানির শিকার হতে হয়। যেমনঃ যদি ব্যাংক একাউন্টের মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতে পারে তাহলে প্রথমে ব্যাংকে যাওয়া, ফরম পূরণ করা, আইডেন্টিফিকেশন প্রদান ইত্যাদি। নতুন নম্বর সক্রিয় করা এবং আগের নম্বর নিষ্ক্রিয় করতে হলে এগুলো করা উচিত। কিন্তু এতে করে আপনার কাজের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে।
পঞ্চমত, বার বার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন সামাজিক যোগাযোগে আরেক সমস্যা। প্রিয়জন, বন্ধুমহল, ক্লায়েন্ট এবং অন্যান্য পেশাজীবনের লোকেরা বার বার নতুন নাম্বার মনে রাখতে বিরক্ত হয়ে পড়েন বা অনিচ্ছুক হয়ে যায়। মোবাইল নম্বর পরিবর্তন প্রক্রিয়া কখনও কখনও সম্পর্কের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলে।
এ সমস্ত কারণে আমাদের উচিত রেজিস্ট্রি কৃত মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা এবং রেজিস্ট্রেশন তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা। যাতে পরবর্তীতে ওই মোবাইল নাম্বারটি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে আবার পুনরুদ্ধার করা যায়।