বর্তমানে বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা করে অনেক বেকার স্বাবলম্বী হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। দেশে অনেকগুলো মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থাকলেও, বিকাশ তাদের মধ্যে অন্যতম। এটাকে বলা হয় মানব এটিএম। অর্থাৎ ব্যাংকে জমানো টাকা আমরা যেমন এটিএম বুথ থেকে তুলতে পারি। একইভাবে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং এ জমানো টাকা কোন একজন বিকাশ এজেন্ট থেকে তুলতে পারি।
যার কারণে দিন দিন এই মোবাইল ব্যাংকিং এর চাহিদা বেড়ে চলেছে। আমরা অনেকেই দেখি আমাদের চারপাশে অনেক বিকাশ এজেন্ট রয়েছে। আর আমরা অনেকেই চাই বিকাশ একাউন্ট রেজিস্টার করতে। আজকের পোস্টে জানাবো বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট তৈরি করার জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে, কিভাবে আবেদন করতে হয়, বিকাশ এজেন্ট একাউন্টে কমিশন কিরকম ইত্যাদি তথ্য।
Table of Contents
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট কি
বিকাশের একাউন্ট দুই রকমঃ ১. পার্সোনাল বা গ্রাহক একাউন্ট ও ২. এজেন্ট একাউন্ট। গ্রাহক একাউন্ট সবার জন্য। সেজন্য এখানে কিছু রেস্ট্রিকশন আছে, বিশেষ করে লেনদেনের লিমিটেশন; যেটা একজন ব্যবসায়ীর জন্য উপযোগী না।
কিন্তু এজেন্ট একাউন্ট মূলত ব্যবসায়ীদের জন্য, এখানে বড় পরিমাণ টাকা লেনদেন করা যায়। একজন বিকাশ এজেন্ট যত বেশি টাকা লেনদেন করতে পারবে, তার ইনকাম তত বেশি হবে। একজন বিকাশ এজেন্ট যত পরিমান টাকা ক্যাশ ইন এবং ক্যাশ আউট করতে পারবে – তার আয় তত বেশি হবে।
এছাড়া একজন বিকাশ এজেন্ট যদি কোন গ্রাহকের পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়, এজন্যও সে কমিশন পেতে পারে। মূলত বিকাশ এজেন্টের আয় হয় কমিশন থেকে। যত বেশি ট্রানজেকশন বা লেনদেন, তত বেশি কমিশন।
এটার পাশাপাশি, মাঝে মাঝে বিকাশ বিভিন্ন রকম অফার বা অতিরিক্ত কমিশন দেয়। যেখান থেকেও একজন এজেন্ট যথেষ্ট পরিমাণ আয় করতে পারেন। বিকাশে টাকা লেনদেনের পাশাপাশি একজন এজেন্ট মোবাইল এক্সেসরিজ ও টেলিকম রিলেটেড ব্যবসা করতে পারেন।
বিকাশ এজেন্টরা কেমন কমিশন পায়
বিকাশ এজেন্ট কমিশন সাধারণত দুই রকমের হতে পারে। যেমন, আপনি বিকাশ USSD কোড ডায়াল করে লেনদেন করলে একরকম কমিশন এবং বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ থেকে লেনদেন করলে অন্যরকম কমিশন।
বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ থেকে লেনদেন | 4.30 টাকা প্রতি হাজারে |
USSD Code ব্যবহার করে লেনদেন | 4.10 টাকা প্রতি হাজারে |
আপনি যদি ৯০ শতাংশ লেনদেন বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ দিয়ে করেন, তাহলে আপনি বোনাস হিসেবে প্রতি হাজারে ০.২০ টাকা পাবেন। অর্থাৎ বিকাশ এজেন্ট অ্যাপ থেকে লেনদেন করলে আপনি কমিশন হিসেবে প্রতি হাজারে ৪.৫০ টাকা পাবেন।
এজেন্ট হওয়ার শর্তাবলী
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য কিছু শর্ত সবসময় মেনে চলতে হবে। বিকাশ এজেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার আগে আপনাকে এসব শর্ত ভবিষ্যতে মেনে চলতে পারবেন কিনা তা ভেবে দেখবেন।
বিকাশ এজেন্ট অ্যাকাউন্টের শর্তগুলো হলঃ
1. প্রথমবারে ১ লক্ষ টাকা অ্যাকাউন্টে রিচার্জ করতে হবে।
2. প্রতিমাসে ন্যূনতম ৫ টি বিকাশ পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
3. এজেন্ট অ্যাকাউন্টে সর্বনিম্ন ৭,০০০ টাকা ব্যালেন্স রাখতে হবে।
4. প্রতিদিন কমপক্ষে ২,০০০ টাকা লেনদেন করতে হবে।
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার নিয়মাবলী
যদি কেউ এজেন্টশীপ নিতে চায়, তাহলে তাকে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট শর্তগুলো পূরণ করতে হবে। এরপর বিকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি বা স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে গিয়ে এজেন্ট হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে। এছাড়াও বর্তমানে অনলাইনে বিকাশ ওয়েবসাইট থেকেও এজেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করতে পারেন।
আপনার আবেদন যাচাই-বাছাই করার পর আপনাকে ফোনের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে। যদি আপনার সকল ডকুমেন্টস সঠিক থাকে এবং বিকাশ কর্তৃপক্ষ যদি আপনাকে এজেন্টশীপ দিতে চায়, আপনার ডকুমেন্টসগুলোর হার্ডকপি ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে জমা দিতে হবে।
বিকাশ এজেন্ট হতে যা যা লাগবে
বিকাশ এজেন্ট হতে আপনার যা প্রয়োজন তা হলো:
- একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা দোকান: বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য আপনাকে নিজের অথবা ভাড়ায় নেওয়া একটি দোকান থাকতে হবে। দোকান বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ছাড়া আপনি এজেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন করতে পারবেন না।
- ট্রেড লাইসেন্স: বৈধ ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক।
- টিন সার্টিফিকেট: টিন (Taxpayer Identification Number) সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
- প্রিপেইড সিম কার্ড: নিজ নামে রেজিস্ট্রেশন করা একটি প্রিপেইড সিম কার্ড, যার মাধ্যমে অন্য কোন বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা নেই।
- জাতীয় পরিচয়পত্র: বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা আবশ্যক।
- ছবি ইত্যাদি: প্রয়োজনীয় ছবিসহ অন্যান্য ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।
বিকাশ এজেন্ট হতে কত টাকা লাগে
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার নির্দিষ্ট কোন ফি বা চার্জ নেই। তবে কিছু শুরুর ব্যয় ও বিনিয়োগ আপনাকে করতে হবে।
- প্রথমবারের রিচার্জ: এজেন্ট একাউন্ট খোলার সময় প্রথমেই ১ লক্ষ টাকা ব্যালেন্স রিচার্জ করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে এই লিমিট ২০-৫০ হাজার টাকাও হতে পারে।
- ব্যবসায়িক ব্যয়: যদি আপনার আগে থেকেই একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহলে অতিরিক্ত কোন খরচ প্রয়োজন নেই। তবে নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে কিছু খরচ হতে পারে।
- ব্যালেন্স বজায় রাখা:
- গ্রামাঞ্চলে ব্যবসা করার জন্য এজেন্ট একাউন্টে ২০-৫০ হাজার টাকা ব্যালেন্স রাখা দরকার।
- জেলা শহর বা টাউনে ব্যবসা করতে গেলে ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা সবসময় ব্যালেন্স রাখা উচিত।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে এবং নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের কপি
- টিন সার্টিফিকেট
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র
- ছবি
একাউন্ট খোলার উপায়ঃ
- বিকাশ বিক্রয় প্রতিনিধির মাধ্যমে: আপনার এলাকায় বিকাশ বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করুন।
- বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে সরাসরি গিয়ে: আপনার এলাকার বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিন।
- অনলাইনে আবেদন: বিকাশ ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে একাউন্ট খোলার অনুরোধ পাঠাতে পারেন।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স আপনি ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভা অফিস থেকে পেয়ে যাবেন। সম্ভবতঃ বছরে ১০০/২০০ টাকা করে দিতে হয়। আর টিন সার্টিফিকেট আপনি আয়কর অফিস থেকে পেয়ে যাবেন, তবে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছোট হলে প্রথম দিকে এসব লাগবেনা।
আপনার আবেদন গৃহীত হলে বিকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি অথবা ডিস্ট্রিবিউটর অফিস থেকে আপনি একটি এজেন্ট সিম পেয়ে যাবেন। এরপর থেকে আপনি আপনার বিকাশের এজেন্ট ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
আশাকরি, পোষ্টটি পড়ে আপনি জানতে পারছেন বিকাশের এজেন্ট হওয়ার জন্য আপনাকে কি কি করতে হবে, কোথায় যোগাযোগ করতে হবে, কি কি ডকউমেন্টস লাগবে ইত্যাদি। এরকম আরো ইনফরমেটিভ ও তথ্যবহুল পোষ্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোষ্টগুলাও পড়ে দেখতে পারেন।